📚সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস সাজেশন(দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ণ)📚
✍️ প্রশ্নের মান-২:
১.'আমির' কাদের বলা হয়? 'দুরবাশ' ও খিলাত' শব্দের অর্থ কী ?
উঃ 👉দিল্লির সুলতানির ইতিহাসে শাসনকার্যে নিযুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমির বলা হতো। আমিরগণকে একত্রে বলা হতো ওমরাহ।
👉 'দুরবাশ' হলো সুলতানি আমলে স্বাধীন শাসকের প্রতীক দণ্ড।
👉খলিফার অনুমােদনপ্রাপ্ত শাসককে যে আনুষ্ঠানিক পােশাক প্রদান করা হত তাকে খিলাত বলে।
২.প্রথম পানিপথের যুদ্ধের গুরুত্ব কী?
উঃ পানিপথের প্রথম যুদ্ধ বাবরের আক্রমণকারী বাহিনী এবং লোদি সাম্রাজ্যের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল, যা 1526 সালের 21 এপ্রিল উত্তর ভারতে সংঘটিত হয়েছিল। এটি মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা করে। এটি ছিল গানপাউডার আগ্নেয়াস্ত্র এবং ফিল্ড আর্টিলারি জড়িত প্রথমতম যুদ্ধগুলির মধ্যে একটি।
৩.দিল্লি কেন সুলতানদের রাজধানী হয়ে উঠেছিল?
উঃ দিল্লিতে সুলতানি শাসন বেড়ে ওঠার সময়কালে মধ্য এশিয়ায় এক দুর্ধর্ষ জাতি ছিল মোঙ্গলরা। এই মোঙ্গলরা ইরাকের বাগদাদ শহরের অনেক ক্ষতি করেছিল। মুসলমান সভ্যতার একটি বড়ো কেন্দ্র ছিল বাগদাদ। বাগদাদের দুরবস্থার ফলে দিল্লির গুরুত্ব বেড়ে যায়, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে বহু লোক এনে দিল্লিতে বাস করতে শুরু করে। দিল্লি হয়ে ওঠে সুফি সাধকদের অন্যতম পীঠস্থান। এজন্য দিল্লির নাম হয়ে যায় হজরত-ই দিল্লি।
৪.কত খ্রিস্টাব্দে দহসালা ব্যবস্থা চালু হয়? 'দহ' শব্দটির অর্থ কী?
অথবা, দহশালা ব্যবস্থা সম্পর্কে যা জান লেখ।
উঃ ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে আকবর দহশালা ব্যবস্থা চালু করেন। আকবর বুঝেছিলেন রাজধানীর শস্যের মূল্যের সঙ্গে অন্য জায়গার শস্যের মূল্য মিলছে না। রাজধানীর শস্যমূল্য ছিল বেশি, সেই হিসাবে চললে কৃষকদের আরো বেশি রাজস্ব দিতে হবে। তাই আকবর প্রত্যেক বছরের এবং প্রতিটি এলাকার আলাদা হিসাব চালু করেন। আগের দশ বছরের তথ্যের ভিত্তিতে চালু এই ব্যবস্থাকে বলে দহশালা বন্দোবস্ত। এই রাজস্ব ব্যবস্থা চালু করতে আকবরকে সাহায্য করেন তাঁর রাজস্ব মন্ত্রী টোডরমল। তাই এই ব্যবস্থার নাম হয় টোডরমলের বন্দোবস্ত।
৫.‘হৌজ' বা 'তালাও' শব্দটির অর্থ কী? আলাউদ্দিন খলজি যে হৌজ খনন করেন তার নাম কী ?
উঃ👉 হৌজ' বা 'তালাও' শব্দটির অর্থ হলো জলাধার।
👉আলাউদ্দিন খলজি যে হৌজ খনন করেন তার নাম হলো 'হৌজ-ই আলাই '।
৬.‘হাভেলি’ও ‘মকান' কী?
উঃ👉শাহজাহানাবাদের সবচেয়ে বড় ও সুন্দর বাড়িগুলিকে বলা হত হাভেলি।
👉শাহজাহানাবাদের নীচুস্তরের বাড়িগুলিকে কী বলা হত মকান বা কোঠি।
৭. সুলতান ইলতুৎমিসের সামনে প্রধান যে সমস্যাগুলি ছিল তার দুটি সমস্যা উল্লেখ কর।
উঃ ইলতুৎমিশ যখন দিল্লির সুলতান হন তখন তাঁর সামনে তিনটি সমস্যা দেখা দেয়। এগুলি হল—
(১) বিদ্রোহী শক্তিগুলোকে কীভাবে তিনি দমন করতে পারবেন।
(২) সেই সময় মধ্য এশিয়ার দুর্ধর্ষ মোঙ্গল শক্তি ছিল একটা বড়ো আতঙ্ক,
সব দেশের সব রাজশক্তির কাছেই। তিনি কীভাবে এই মোঙ্গল শক্তিকে মোকাবিলা
করবেন, তা ছিল ইলতুৎমিশের কাছে একটা বড়ো সমস্যা।
(৩) কীভাবে সুলতানিতে একটা রাজবংশ তৈরি করা যাবে, যাতে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারী গোলমাল ছাড়াই সিংহাসনে বসতে পারবেন।
৮. রুপায়া ও দাম কি?
উঃ 👉মুঘল আমলে রুপোর মুদ্রা রুপায়া নামে পরিচিত ছিল।
👉মুঘল আমলে তামার মুদ্রা দাম নামে পরিচিত ছিল।
৯. ঘর্ঘরার যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে কাদের মধ্যে হয়েছিল?
উঃ মামুদ লােদির সম্মিলিত বাহিনীর সঙ্গে ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে পাটনার উত্তরে গঙ্গা ও ঘর্ঘরা (বা গােগরা) নদীর সঙ্গমস্থলে বাবরের নেতৃত্বে মুঘল বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধ ঘর্ঘরার বা গােগরার যুদ্ধ নামে পরিচিত।
১০. সুল ই কুল বলতে কী বোঝো?
উঃ বহু ধর্মসমন্বিত সুবিশাল ভারতবর্ষে সাম্রাজ্য গঠন ও তার স্থায়িত্ব রক্ষার জন্য আকবর ‘সুলহ-ই কুল' নীতি গ্রহণ করেন।
সুলহ-ই-কুল-এর অর্থ: ‘সুলহ-ইকুল’-এর অর্থ হল পরধর্মসহিষ্ণুতা| এই নীতি অনুযায়ী যে-কোনাে ধর্মের মানুষই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্মাচরণ করতে পারবেন| রাষ্ট্র কারও প্রতি পক্ষপাত করবে না ।
১১. আল বুকার্ক এর অবদান কি?
উঃ আরব সাগরের বাণিজ্যে আরবদের হঠিয়ে নিজেদের আধিপত্য জমাতে পোর্তুগিজ
নৌ- সেনাপতি ডিউক অফ আলবুকার্ক ভারতে আসেন। তাঁর হাত ধরেই গোয়ায়
পোর্তুগিজদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
১২. করোরী কাদের বলা হত?
উঃ মুঘল আমলে যে-সমস্ত কর্মচারী রাজস্ব আদায় এবং কানুনগোদের তথ্য মিলিয়ে দেওয়ার কাজে নিযুক্ত থাকতেন, তাদের করোরী বলা হত।
১৩. হাবশী কারা?
উঃ ইলিয়াসশাহি ও হোসেনশাহি শাসনের মাঝে বাংলায় আবিসিনিয় সুলতানরা
শাসন করেছিলেন। এরা আফ্রিকার আবিসিনিয়া বা ইথিওপিয়া থেকে এসেছিলেন।
বাংলায় এদের হাবশি বলা হয়।
১৪. বন্ধেগান ই চিহালগানি বলতে কি?
উঃ বন্দেগান-ই চিহ্নলগানি কথাটির অর্থ হলো চল্লিশ জন বান্দা বা অনুগামী।
এই কথাটি দিয়েই ইলতুৎমিশের অনুগত যোদ্ধাদের বোঝানো হতো। এরা ছিল ত্রয়োদশ
শতকের সুলতানি শাসনব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ।
১৫. ‘আমুক্তমাল্যদ’ গ্রন্থ কে রচনা করেন? গ্রন্থের বিষয়বস্তু কি?
উঃ 👉 বিজয়নগরের একজন সম্রাট শ্রী কৃষ্ণ দেব রায় তেলুগু ভাষায় অমুক্তমাল্যদ গ্ৰন্থটি রচনা করেছিলেন।
👉'আমুক্তমাল্যদ' নামক গ্রন্থে তিনি তেলেগু ভাষায় রাজার কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
১৬. পাট্টা ও কবুলিয়াত কি?
উঃ মুঘল আমলে পাট্টা ছিল একটি লিখিত দলিল যাতে আয়তন, শ্রেণী, জমির উর্বরতা এবং রাজস্ব প্রদান করা হয়। একইভাবে, কাবুলিয়ত ছিল একজন কৃষকের স্বাক্ষর বা বুড়ো আঙুলের ছাপ সহ পাট্টার একটি অনুলিপি। পাট্টা ছিল কৃষকদের জন্য, আর কাবুলিয়ত ছিল সরকারের জন্য।
১৭. মনোসবদার কাদের বলা হত?
উঃ সম্রাট আকবরের শাসনব্যবস্থায় প্রশাসনিক পদগুলিকে মনসব বলা হতো আর সেই পদাধিকারীদের বলা হতো মনসবদার। এদের কাজ ছিল বাদশাহের জন্য সৈন্য প্রস্তুত রাখা, সৈন্যদের দেখাশোনা করা এবং যুদ্ধের সময় সৈন্য যোগান দেওয়া।
১৮. শেরশাহ কিভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছিলেন?
উঃ শেরশাহ’র শাসন আমলে (১৫৩৮-১৫৪৫) ডাক ব্যবস্থার সার্বিক সংস্কার সাধন করা হয়। তিনি পূর্বের ডাক রানার ব্যবস্থার পরিবর্তে পুরোপুরি ঘোড়ার সাহায্যে ডাক পরিবহণ ব্যবস্থা চালু করেন এবং বাংলাদেশের সোনারগাঁও থেকে সিন্ধুনদের তীর পর্যন্ত গ্রান্ট ট্রাঙ্ক রোড নামে খ্যাত ৪,৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক রাস্তা তৈরি করেন।
১৯.‘বারো ভুঁইয়া’ বলতে কী বোঝো? কয়েকজন বারো ভুঁইয়ার নাম লেখ।
উঃ আকবরের পুত্র জাহাঙ্গিরের সময় বাংলার স্থানীয় জমিদার ও আফগানরা
বারবার মুঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। এই বিদ্রোহিরা একসঙ্গে 'বারো
ভূঁইয়া' নামে পরিচিত ছিলেন। এদের মধ্যে প্রতাপাদিত্য, চাঁদ রায়, কেদার
রায়, ঈশা খান ছিলেন উল্লেখযোগ্য। জাহাঙ্গীর শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী বারো
ভূঁইয়াদের নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিলেন।
২০. কি কি ভাবে মধ্যযুগের ভারতে শহর গড়ে উঠতো?
উঃ মধ্যযুগের ভারতে নানা শহর বা নগর গড়ে উঠত। শহর গড়ে উঠত রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক
ও প্রশাসনিক কারণে। অনেক সময় ধর্মীয় স্থান, যেমন-মন্দির ও মসজিদকে কেন্দ্র
করে শহর গড়ে উঠত। মধ্যযুগের শহরগুলির আকার-আয়তন ও ধরন নানা যুগে বদলেছে।
২১. ইউরোপীয় কোম্পানির কুটি গুলো কেমন ছিল?
উঃ ইউরোপীয় কোম্পানির কুঠিগুলিতে ইউরোপীয় বণিকরা নিজেদের মতো করে বাড়িঘর তৈরি
করত। কুঠিগুলি তারা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে দুর্গের মতো সুরক্ষিত করে রাখত।
সেখানে তাদের বাসগৃহ ও মালের গুদাম থাকত।
২২. হুন্ডি কি?
উঃ তুর্কি শাসকদের আমলে কাগজের ব্যবহার শুরু হলে সরাফরা এক ধরনের কাগজ
চালু করে, একে হুন্ডি বলা হত। বণিকরা কোনো এক জায়গায় সরাফকে টাকা জমা
দিয়ে হুন্ডি কাগজ কিনে নিয়ে অন্য জায়গায় তা ভাঙিয়ে নিত। এর ফলে
বণিকদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা নিয়ে যাওয়ার খুব সুবিধা
হয়েছিল।
২৩. আবুল ফজল কে ছিলেন?
উঃ আবুল ফজল আল্লামি ছিলেন আকবরের আমলের এক বিখ্যাত ঐতিহাসিক। ১৫৫১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর লেখা আকবরনামা গ্রন্থে। তিনি আকবরের প্রশংসাই করেছেন। ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুঘল দরবারে আসেন। পরবর্তীকালে আবুল ফজল আকবরের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে আবুল ফজল মারা যান।
২৪. 'রুমি' কৌশল কী ?
উঃ ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপতের প্রথম যুদ্ধে বাবর তুর্কিদের থেকে শেখা এক ধরনের কৌশল ব্যবহার করেছিলেন। একে 'রুমি' কৌশল বলে।
২৫.ইবনবতুতা সম্পর্কে যা জানো লেখ।
উঃসুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনকালে উত্তর আফ্রিকার মরক্কো দেশ থেকে পর্যটক ইবনবতুতা এদেশে এসেছিলেন। তাঁর লেখা ভ্রমণ বিবরণীর নাম কিতাব-উর-রিহলা। এই গ্রন্থটি মহম্মদ বিন তুঘলকের যুগ সম্পর্কে জানার একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।
২৬.সিজদা ও পাইবস কী ?
উঃ। সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন সুলতানের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতীকরূপে দুটি প্রথার প্রচলন করেন। প্রথা দুটি হলো 'সিজদা' ও পাইবস'। সিজদার অর্থ হলো সুলতানকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করা। আর সুলতানের পদযুগল চুম্বন করাকে বলা হতো পাইবস ।
২৭. উলেমা কাদের বলা হতো ?
উঃ। আরবি ভাষায় ইলম্ মানে হলো জ্ঞান। আলিম মানে হলো জ্ঞানী। ইসলামি শাস্ত্রে যাঁরা বিশেষভাবে জ্ঞানী ছিলেন তাদের আলিম বলা হতো। একের বেশি আলিমকে বলা হতো উলেমা।
২৮.তুরুস্ক দণ্ড কী?
উঃ। কোনো কোনো হিন্দু রাজারা জিজিয়া করের মতো এক ধরনের কর তাদের মুসলমান প্রজাদের উপর চাপিয়েছিলেন। ওই করকে বলা হতো তুরুষ্কদণ্ড।
✍️ প্রশ্নের মান-৩:
১. সুলতানি আমলে দিল্লি শহরের ব্যবসা-বাণিজ্য কেমন ছিল?
উঃ শহরগুলিতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ও বাড়ি-ঘর তৈরির কাঁচামাল জোগান দেবার জন্য আমদানি-রপ্তানির বাণিজ্য গড়ে ওঠে। আবার সুলতানি আমলে রাষ্ট্র কৃষকদের কাছ থেকে নগদে কর নেবার ফলে কৃষকরা নগদ অর্থ জোগাড় করতে ব্যবসায়ীদের কাছে উৎপন্ন ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হত। সেই শস্য নিয়েও বাণিজ্য চলত। সুলতানি আমলে জল ও স্থলপথে অন্তর্বাণিজ্য সম্পন্ন হত। জনবহুল শহরগুলোর অধিবাসীদের প্রয়োজনে গ্রাম থেকে নানা রকম খাদ্যশস্য, খাবার তেল, কাঁচা তুলো, ঘি, আনাজ, ফল, লবণ ইত্যাদি শহরে যেত। আর এক শহর থেকে অন্য শহরে রপ্তানি হত দামি শৌখিন জিনিসপত্র, যেগুলো ধনী, অভিজাতদের জন্যই তৈরি করত কারিগররা।
সুলতানি আমলে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথে বহির্বাণিজ্যের সমধিক সম্প্রসারণ ঘটেছিল। গুজরাত ও মালাবারের বন্দরগুলো থেকে পশ্চিম দিকে আরব সাগর, পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরের তীরবর্তী দেশগুলিতে প্রধানত বস্ত্ৰ মশলা, নীল ও খাদ্যশস্য যেত। আর ওইসব দেশ থেকে আসত ঘোড়া, কাচের তৈরি সামগ্রি, সাটিন কাপড়, ইত্যাদি।
২. টীকা লেখ- সুলতানা রাজিয়া।
উঃ ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা রাজিয়া দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন । রাজিয়া ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন ।তিনিই একমাত্র নারী যিনি দিল্লির সিংহাসনে বসেন । নারী হয়েও তিনি সমস্ত প্রকার পুরুষোচিত গুণের অধিকারী ছিলেন এবং এই কারণেই ইলতুৎমিস তাঁকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান । কিন্তু তখনকার রক্ষণশীল ও ঈর্ষাকাতর মুসলিম আমির-ওমরাহগণ তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেও অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং বিভেদনীতির মাধ্যমে তিনি নিজের অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে তোলেন । কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভিজাত সম্প্রদায়ের ষড়যন্ত্রে তিনি সিংহাসনচ্যুত হন ।
৩. টীকা লেখ- শ্রী চৈতন্যদেব।
উঃ চৈতন্য মহাপ্রভু (১৪৮৬ খ্রিঃ – ১৫৩৩ খ্রিঃ) ছিলেন ভারতবর্ষে আবির্ভূত এক বহু লোকপ্রিয় বৈষ্ণব সন্ন্যাসী ও ধর্মগুরু মহাপুরুষ এবং ষোড়শ শতাব্দীর বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক। তিনি গৌড়বঙ্গের নদিয়া অন্তর্গত নবদ্বীপে (অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলা) হিন্দু ব্রাহ্মণ পণ্ডিত শ্রীজগন্নাথমিশ্র ও শ্রীমতী শচীদেবীর গৃহে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
৪. টীকা লেখ- দীন-ই- ইলাহী।
উঃ দীন-ই-ইলাহী বা "ঈশ্বরের ধর্ম" ছিল মুঘল সম্রাট আকবর কর্তৃক 1582 খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যবস্থা। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম ও হিন্দু ধর্মকে এক বিশ্বাসের সাথে সংযুক্ত করা এবং তার সাথে খ্রীস্টান, জুরোস্ট্রিয়ান-বাদ এবং জৈন ধর্মের দিকগুলিও যুক্ত করা।
৫. আলাউদ্দিন খলজী কিভাবে মোঙ্গল আক্রমণ বিরোধিতা করেছেন?
উঃ আলাউদ্দিন খলজির সময়ে দিল্লি দুবার মোঙ্গলদের হাতে আক্রান্ত হয়। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি বিরাট এক সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন মোঙ্গলদের প্রতিরোধ করার জন্য। সৈনিকদের থাকবার জন্য সিরি নামে এক নতুন শহর তৈরি করা হয়। সেনাবাহিনীকে রসদ জোগানোর জন্যে দোয়াব অঞ্চলের কৃষকদের ওপর বেশি হারে কর চাপানো হয়। দুর্গনির্মাণ, পন্যসংগ্রহ ও মূল্যনিয়ন্ত্রণ করে সফলভাবে আলাউদ্দিন মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করেন।
৬. ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে রাজপুতদের সম্পর্ক কেমন ছিল?
উঃ হিন্দু ধর্ম ও সমাজবিরোধী আইন গুলি কার্যকর করার পথে মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের প্রধান অন্তরায় রাজপুত রায় ছিল। ফলে ঔরঙ্গজেব উদ্যোগী হন এবং রাজপুত শক্তি মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব মোগল সাম্রাজ্যের ঘোরতর শত্রুতে ধর্মীয় সংকীর্ণতা দ্বারা পরিচালিত হয়ে পরিণত করেন ।
৭. ইলিয়াস শাহী ও হোসেন শাহী আমলে বাংলার সংস্কৃতির পরিচয় দাও।
উঃ ইলিয়াস শাহি এবং হোসেন শাহির আমলে বাংলার সংস্কৃতির উন্নয়ন হয়েছিল। এই সময়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়। হোসেন শাহের আমলে বাংলা লেখালেখির চর্চা বাড়ে। ইলিয়াসশাহি ও হোসেনশাহি সুলতানরা ছিলেন অন্য ধর্মমত বিষয়েও উদার। সুলতানদের ধর্মীয় উদারতা বাংলায় সব ধর্মের মানুষকে কাছাকাছি আসতে সাহায্য করেছিল। এই সময়েই বাংলায় শ্রীচৈতন্যের নেতৃত্বে ভক্তিবাদের প্রচার শুরু হয়।
৮. হুমায়ূন আফগানদের কাছে হেরে গিয়েছিলেন কেন?
অথবা, মুঘল আফগান দ্বন্দ্ব সম্পর্কে যা জানো লেখ।
উঃ এই সময়ে যারা মুঘল বিরোধী ছিল তারা সবসময় একজোট ছিল না। যেমন
রাজপুত-আফগানের মধ্যে মৈত্রী ছিল না। কিন্তু আফগান নেতা শের খানের কাছে
পরাজিত হয়ে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল।
হুমায়ুনের এই পালিয়ে বেড়ানোর মধ্যেই ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দে আকবরের জন্ম হয়।
শের শাহের পুত্র ইসলাম শাহের মৃত্যুর পর যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়
সেই সুযোগে হুমায়ুন দেশে ফেরেন। কিন্তু খুব বেশিদিন হুমায়ুন শাসন করতে
পারেননি। দিল্লির পুরোনো কেল্লার পাঠাগারের সিঁড়ি থেকে পড়ে তিনি মারা
যান।
৯. মুঘল শাসকরা কিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎসাহ দিতেন?
উঃ মুঘল শাসকরা বাণিজ্য করতে বণিকদের উৎসাহ দিতেন। মালের ওপর শুল্ক ছাড়
দিয়ে, কুঠি বানানোর অনুমতি দিয়ে তাঁরা বণিকদের সুবিধা করে দিতেন। মুঘল
অভিজাতদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি বাণিজ্য করত। তবে এই প্রয়াস এ ছিল খুবই
সীমিত। মুঘল সম্রাটরা, রাজপুত্ররা ও অভিজাতরা নিজেদের প্রয়োজনে ও শখ
মেটাতে নিজেদের কারখানায় কারিগরদের দিয়ে নানা ধরনের শৌখিন জিনিস, অস্ত্র,
বিলাসদ্রব্য তৈরি করাতো। তবে এগুলো বাণিজ্যের স্বার্থে তৈরি - হত না।
১০. ইকতা কি? কেন সুলতানরা ইকতা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন?
উঃ দিল্লির সুলতান সাম্রাজ্যের সীমানা ক্রমশ বৃদ্ধি করেছিলেন। সুলতানরা
যেসব রাজ্যের জয় করলেন সেই রাজ্যগুলি হল সুলতানদের এক একটি প্রদেশ। দিল্লি
সুলতানির প্রদেশ গুলিকে ইকতা বলা হত।
দিল্লির সুলতানদের ইকতা ব্যবস্থা চালু করার কারণ—
রাজ্যের শাসন পরিচালনাঃ ইকতার শাসনকর্তাকে বলা হতো
ইকতাদার। ইকতাদাররা রাজ্য বা প্রদেশের শাসক। সুলতানরা তাদের দায়িত্ব ইক্তা
ধারদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে সাম্রাজ্যের শাসন পরিচালনা করতেন।
রাজস্ব আদায় ও শান্তি বজায় রাখাঃ ইকদাদাররা তার
শাসনাধীন রাজ্যের রাজস্ব আদায় করতেন তিনি নিজের প্রয়োজনীয় অর্থ রেখে
বাড়তি রাজস্ব সুলতানকে দিতেন তিনি রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলা দায়িত্ব পালন
করতেন।
সেনাবাহিনী পালনঃ ইকদাদারদের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল
সামরিক দায়িত্ব পালন করা ইকতাদাররা হলেন সামরিক নেতা। ছোট ইত্যাদিদের
শুধুমাত্র সামরিক দায়িত্ব পালন করতে হতো।
১১. শেরশাহের সংস্কার গুলি লেখ।
উঃ (১) কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনার জন্য তিনি চারজন মন্ত্রী নিয়োগ করেছিলেন। শাসন কার্যের সুবিধার জন্য শেরশাহ সাম্রাজ্যকে ৪৭টি সরকারে ও প্রতিটি সরকারকে পরগনায় বিভক্ত করেন।
(২) রাজস্ব সংস্কার হিসাবে জমি জরিপ করে জমির উৎপন্ন ফসলের বা অংশ রাজস্ব নেবার ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া পাট্টা ও কবুলিয়ত এর প্রচলন ঘটান।
(৩) যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি কল্পে শেরশাহ বাংলার সোনার গাঁ থেকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে পেশোয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত সড়ক ই আজম' নামে একটি সড়ক নির্মাণ করেন। যা পরিবর্তীতে গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড নামে খ্যাত হয়।
(৪) পথিক ও বণিকদের সুবিধার জন্য রাস্তার ধারে অনেক সরাইখানা তৈরি করা। হয়েছিল।
(৫) ঘোড়ার মাধ্যমে ডাক-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছিলেন।
(৬) সামরিক সংস্কার হিসেবে শেরশাহ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে আনতে 'দাগ' ও হুলিয়া' প্রথা চালু করেন।
১২. টীকা লেখ- দাক্ষিণাত্য ক্ষত।
উঃ সপ্তদশ শতকে ঔরঙ্গজেবের সময় মারাঠাদের শক্তি অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
ঔরঙ্গজেব ভেবেছিলেন যে দক্ষিণী রাজ্যগুলিকে জয় করতে পারলে অনেক বেশি
রাজস্ব সেখান থেকে আদায় করা যাবে এবং মারাঠাদেরও দমন করা সহজ হবে। কিন্তু
তিনি যা ভেবেছিলেন তা হয়নি। বহু বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মুঘলদের অনেক
আর্থিক ক্ষতি হয় এবং মারাঠা নেতা শিবাজীকেও স্বাধীন রাজা বলে মেনে নিতে
হয়। দাক্ষিণাত্য যুদ্ধে মুঘলদের এই ক্ষত আর সারে নি। পঁচিশ বছর ধরে যুদ্ধ
করে শেষে দাক্ষিণাত্যেই ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেব মারা যান।
১৩. টীকা লেখ- দিল্লির লাল কেল্লা।
উঃ দিল্লিতে অবস্থিত লালকেল্লার আয়তন আগ্রা দুর্গের দ্বিগুণ, এর
পূর্বদিকে যমুনা নদী ও পশ্চিমে ছিল পরিখা, দুর্গের চারটি বড়ো দরজা ও দুটি
ছোটো দরজা ছিল। এর মধ্যে একভাগে ছিল রাজপরিবারের বাসস্থান ও অন্যদিকে ছিল
বিভিন্ন দপ্তর। সেই সময় এটি বানাতে খরচ হয়েছিল ৯১ লক্ষ টাকা। দুর্গ ও
শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া জলবাহী নালাগুলিকে বলা হত নেহর-ই-বিহিশত বা
স্বর্গের খাল। এগুলিকে ইসলামি রীতিতে সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধির প্রতীক ভাবা হত।
১৪. কেন এবং কোথায় শাহজাহান বাদ শহরটি গড়ে উঠেছিল?
উঃ যমুনা নদীর পাড় ভেঙে আগ্রা শহরটি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছিল। শহরের পথঘাট ও হয়ে উঠেছিল ঘিঞ্জি। মুঘল বাদশাহের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের জন্য আগ্রার প্রাসাদদুর্গ আর যথেষ্ট বড়ো ছিল না। তাই ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহানাবাদ শহরটি তৈরি হয়েছিল। এতে ভারতের রাজনীতিতে দিল্লি শহরের গুরুত্বকেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল। ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে শাহজাহান আগ্রা থেকে শাহজাহানাবাদে চলে আসেন।
১৫. খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতকে কেন দিল্লি একটা গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হয়েছিল?
উঃ ভৌগোলিকভাবে দিল্লির অবস্থান আরাবল্লি শৈলশিরার একটি প্রাপ্ত ও
যমুনা নদীবিধৌত সমতলের সংযোগস্থলে। এখানে আরাবল্লির পাথর দিয়ে জমির ঢাল
অনুযায়ী সুরক্ষিত দুর্গ নির্মাণ করা সহজ ছিল। আবার যমুনা নদী এখানে প্রধান
জলপথ এবং শহরের পূর্ব দিকের প্রাকৃতিক সীমানা। ফলে বহু যুগ ধরেই একদিকে
রাজন্যবর্গ, অন্যদিকে বণিকবৃন্দ এই অঞ্চলটির দিকে আকৃষ্ট হয়েছে। মধ্যযুগে
দিল্লি শহরের উৎপত্তি ও বিকাশের দুটি ভাগ ছিল। একটি হল ত্রয়োদশ-চতুর্দশ
শতকের দিল্লি, অপরটি হল সপ্তদশ শতকে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের তৈরি
শাহজাহানাবাদ। কুতুবউদ্দিন আইবকের আমলে দিল্লি তৈরি হয়েছিল
রাজপুত শাসকদের শহর কিলা রাই পিথোরাকে কেন্দ্র করে। এটাই ছিল সুলতানি আমলের
প্রথম দিল্লি বা কুতুব দিল্লি। জালালউদ্দিন খলজির আমলে একে ঘিরেই শহর-ই-নও
বা নতুন শহর তৈরি হয়। মহম্মদ বিন তুঘলকের আমলে কুতুব দিল্লি সিরি ও তাঁর
নিজের তৈরি জাহানপনাহকে একটি প্রাচীর দিয়ে ঘিরে আরও বড়ো শহর হিসাবে গড়ে
তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ শেষ হয়নি। তাই বলা যেতে পারে,
এত কিছুর মধ্যে কিন্তু সুলতানি আমলের প্রথম দিল্লি সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ
শহর হয়ে উঠেছিল।
১৬. মনসবদারী ব্যবস্থা সম্পর্কে যা জানো লেখ।
উঃ আকবরের শাসনব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন ছিল মনসবদারি
ব্যবস্থা। তাঁর শাসনব্যবস্থায় প্রশাসনিক পদগুলিকে মনসব বলা হতো আর সেই
পদাধিকারীদের বলা হতো মনসবদার। এদের কাজ ছিল বাদশাহের জন্য সৈন্য প্রস্তুত
রাখা, সৈন্যদের দেখাশোনা করা এবং যুদ্ধের সময় সৈন্য যোগান দেওয়া। পদ
অনুসারে মনসবদারদের বিভিন্ন স্তর ছিল। সবচেয়ে উপরের স্তরে থাকতেন রাজ
পরিবারের সদস্যরা। উচ্চপদস্থ মনসবদারদের বলা হতো আমীর। মনসবদারদের নিয়োগ
করতেন বাদশাহ স্বয়ং এবং তাঁদের পদোন্নতিও তাঁর উপরই নির্ভর করত। মনসবদারি
ব্যবস্থা বংশানুক্রমিক ছিল না।
১৭.আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য অভিযানের বিবরণ দাও।
উত্তর: ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে বারবার অভিযান কারীরা ভারতে এসেছে। মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খান ঝড়ের গতিতে যে অভিযান চালান তার সামনে বাকি রাষ্ট্রগুলি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আলাউদ্দিন খলজির সময়ে তাদের দ্বারা দিল্লি দুবার আক্রান্ত হয়। আলাউদ্দিন পাঞ্জাব দিল্লী অভিযান করেন। তারপর তিনি চিতোর রণতম্বর ও কারা অভিযান করেন। তাতেও তিনি ক্ষান্ত হননি। এরপর তিনি গুজরাট জয় করে ১৩০৫ খ্রিস্টাব্দে মান্দু জয় করেন। তিনি মাদুরাই লাক্ষাদ্বীপ জয় করেন। তার অভিযান এত দূর প্রসারিত হয়েছিল যে তিনি দক্ষিণ ভারতের তাঞ্জোর পান্ড পর্যন্ত জয় করেন। তিনি কাকতীয় হোয়সেল অঞ্চলকেও বাদ দেননি। তিনি ছিলেন দুর্ধর্ষ। তাই তার অভিযানও ছিল দুর্ধর্ষ। তার অভিযানেও কোন দেশ বাদ ছিল না। এভাবে তিনি দাক্ষিণাত্য অভিযানে সফল হয়েছিলেন।
১৮.দাগ ও হুলিয়া কী?
উঃ সুলতান আলাউদ্দীন খলজির সেনাবাহিনি মূলত পদাতিক ও ঘোড়সওয়ার নিয়ে তৈরি কতো। সুলতান সেনাবাহিনীতে জালিয়াতি বন্ধ করে সংস্কার করার উদ্দেশ্যে 'দাগ' ও হুলিয়া ব্যবস্থা দুটি চালু করেছিলেন। সেনাবাহিনি সমস্ত ঘোড়া পরীক্ষা করে তাদের চিহ্নিত করে 'দাগ' দেওয়া হতো। ফলে ঘোড়া পর্যবেক্ষণের সময় কোনো ঘোড়াকে দুবার পেশ করা বা সতেজ ঘোড়ার বদলে দুর্বল বা খারাপ ঘোড়া পেশা করার জালিয়াতি বন্ধ হয়। হুলিয়া' ব্যবস্থা চালু করার ফলে কোনো অদক্ষ ব্যক্তি নাম ভাঙিয়ে সেনাবাহিনিতে যোগ দিতে বা অন্যের নামে বেতন নিতে পারত না।
১৯.জিজিয়া কর কী ?
উঃ। মুসলমান শাসকরা অমুসলমান প্রজাদের থেকে মাথাপিছু একটি কর আদায় করতেন। এর বিনিময়ে অ-মুসলমানদের জীবন, অধিকার ও সম্পত্তির সুরক্ষা দেওয়া হতো। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে আরবের সেনাপতি মহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধু প্রদেশে প্রথম জিজিয়া কর চালু করেন। দিল্লি সুলতানিতে ব্রাক্ষ্মণ, নারী, নাবালক ও দাসদের জিজিয়া কর দিতে হতো না। সন্ন্যাসী, অন্ধ ও খোঁড়া ও উন্মাদ ব্যক্তিরা গরিব হলে তাদের জিজিয়া কর দিতে হতো না।
২০.আকবরের নবরত্ন সভা ও রাজা বীরবল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
উঃ। আকবরের দরবারে বহু বিশিষ্ট মানুষদের মধ্যে ন-জনকে একত্রে বলা হত নবরত্ন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন রাজা বীরবল। আকবরের সময় তিনি ওয়াজির-এ-আজম বা প্রধানমন্ত্রী হন। বীরবল ছিলেন খুবই বুদ্ধিমান। তাঁর জন্ম হয় মধ্যপ্রদেশের একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর প্রকৃত নাম ছিল মহেশ দাস। তাঁর বুদ্ধির জোরেই তিনি আকবরের সভায় স্থান পান। আকবর তাঁর নাম দেন বীরবল। তাঁকে রাজা উপাধিও দেওয়া হয়।
✍️ প্রশ্নের মান-৫:
১. মুঘল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে সম্রাট আকবরের কৃতিত্ব আলোচনা কর।
উঃ আকবর সিংহাসনে আরােহণের পর একটানা চল্লিশ বছর ধরে বিভিন্ন রাজ্য জয়। করে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন।
রাজ্যজয় : বৈরাম খাঁর অভিভাবকত্ব ও সাহায্য নিয়ে আকবর চার বছরের (১৫৫৬-১৫৬০ খ্রিঃ) মধ্যে দিল্লি ও আগ্রা আজমির, জৌনপুর ও গােয়ালিয়র জয় করেন।
আকবরের ধর্মনীতি :-ধর্মসহিষ্ণু ও উদার মনােভাবাপন্ন আকবর ‘আধ্যাত্মিক সংকট’ নিরসনের জন্য ‘দার-উল ইসলাম’ ও ‘দার-উল-হার্ব’- এর দেশ ভারতবর্ষকে ‘সলহইকল’ বা ধর্মসহিষ্ণুতার দেশে পরিণত করেছিলেন। প্রথমে তীর্থকর’(১৫৬৩) ও পরে। ১৫৬৪ খ্রিঃ তিনি হিন্দুদের উপর থেকে “জিজিয়া কর’ তুলে দেন।
দীন-ই-ইলাহী: দীন-ই-ইলাহী বা "ঈশ্বরের ধর্ম" ছিল মুঘল সম্রাট আকবর কর্তৃক 1582 খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যবস্থা। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম ও হিন্দু ধর্মকে এক বিশ্বাসের সাথে সংযুক্ত করা এবং তার সাথে খ্রীস্টান, জুরোস্ট্রিয়ান-বাদ এবং জৈন ধর্মের দিকগুলিও যুক্ত করা।
২. আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কার গুলি লেখ।
উঃ রাজকোশের আয় বাড়াতে আলাউদ্দিন খলজি কতকগুলি অর্থনৈতিক সংস্কার করেন। পূর্ববর্তী সুলতানদের প্রচলিত ইকতা প্রথা তিনি বাতিল করেন। ধর্মীয় কারণে দেওয়া নিষ্কর জমি ও সম্পত্তি তিনি ফিরিয়ে নেন। সমস্ত জমি জরিপ করিয়ে রাজস্বের হার বাড়ানো হয়। এর পাশাপাশি সুলতান আলাউদ্দিন সুলতানির খরচ কমানোর চেষ্টা চালান। তিনি গঙ্গা-যমুনার মধ্যবর্তী দোয়াব অঞ্চলের অধিবাসীদের কাছ থেকে উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক অংশ রাজস্ব হিসেবে আদায় করেন। ভূমি রাজস্ব ছাড়াও গৃহকর, গোচারণভূমি কর, জিজিয়া কর প্রভৃতি কর তিনি আদায় করার নির্দেশ দেন। তাঁর অন্যতম অর্থনৈতিক সংস্কার ছিল বাজারদর নিয়ন্ত্রণ। আলাউদ্দিন বাজারের সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঠিক করে দেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মুদ্রাস্ফীতি রোধ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা এবং জনগণকে সস্তায় প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করা। এজন্যে তিনি বিভিন্ন রাজকর্মচারী নিয়োগ করেন। আলাউদ্দিন রেশন ব্যবস্থার প্রচলনও করেন। এইভাবে তিনি অর্থনৈতিক সংস্কার দ্বারা জনকল্যানমূলক কাজ করেন।
৩.সুলতান ইলতুৎমিসের সামনে প্রধান সমস্যা গুলি কি ছিল বর্ণনা কর।
উঃ ইলতুৎমিশ যখন দিল্লির সুলতান হন তখন তাঁর সামনে তিনটি সমস্যা দেখা দেয়। এগুলি হল—
(১) বিদ্রোহী শক্তিগুলোকে কীভাবে তিনি দমন করতে পারবেন।
(২) সেই সময় মধ্য এশিয়ার দুর্ধর্ষ মোঙ্গল শক্তি ছিল একটা বড়ো আতঙ্ক, সব দেশের সব রাজশক্তির কাছেই। তিনি কীভাবে এই মোঙ্গল শক্তিকে মোকাবিলা করবেন, তা ছিল ইলতুৎমিশের কাছে একটা বড়ো সমস্যা।
(৩) কীভাবে সুলতানিতে একটা রাজবংশ তৈরি করা যাবে, যাতে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারী গোলমাল ছাড়াই সিংহাসনে বসতে পারবেন।
৪.দাক্ষিণাত্যে বিজয়নগর রাজ্যের উত্থান কিভাবে হয়েছিল তা লেখ।
উঃ বিজয়নগর রাজ্যের উৎপত্তি রহস্যজালে আবৃত। কথিত আছে মুহম্মদ বিন্ তুঘলকের রাজত্বকালে হিন্দুর স্বাতন্ত্র্য ও ধর্মরক্ষা এবং মুসলমান শক্তি প্রতিহত করার জন্য সঙ্গম নামে এক ব্যক্তির পাঁচ পুত্র দাক্ষিণাত্যে বিজয়নগর রাজ্য স্থাপন করেন। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, এই জনশ্রুতি ভিত্তিহীন। তাঁরা বলেন যে, হোয়েসলরাজ তৃতীয় বল্লাল বিজয়নগরে কিংবা তার নিকটবর্তী আনেগুণ্ডি নামক স্থানে দুর্গ স্থাপন করেছিলেন এবং সঙ্গমের পুত্রগণ এই বংশের রাজগণের সামন্ত ছিলেন। সে যা হোক, এই আনেগুণ্ডি দুর্গকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে বিজয়নগর রাজ্য গঠিত হয়েছিল।
৫. আলাউদ্দিন খলজি কিভাবে বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন?
উঃ আলাউদ্দিনের সময় দিল্লির বাজারদর নিয়ন্ত্রণ সুলতানের হাতে যথেষ্ট ছিল। আলাউদ্দিন পুরোপুরি একটি বিরাট সৈন্যদল গঠন করেন এবং সমস্ত সৈন্যদের বেতন নির্দিষ্ট করে দেন। তিনি বাজারের সমস্ত জিনিসের দর নির্দিষ্ট করে দেন। তিনি বাজারদর দেখাশোনা করার জন্য ‘শাহানা ই মান্দি’ ও ‘দেওয়ান ই রিয়াসৎ’ নামে দুই রাজ কর্মচারী নিয়োগ করেন। আমার মতে একটি ভালো বিষয়। এছাড়া সুলতানের ঠিক করা দামের চেয়ে কোন বিক্রেতা দাম বেশি নিলে এবং ক্রেতাকে ঠকালে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। আমার মতে এটিও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আলাউদ্দিন সাধারন মানুষের সুবিধার্থে রেশন ব্যবস্থা চালু করেন। প্রজাটা যাতে সঠিক সময়ে খাদ্যশস্য ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে পারে তাই সুলতানরা সবসময় তা তাদের কাছে মজুদ রাখতেন। তাদের সঠিক সময় প্রয়োজনীয় জিনিস যোগান দিতে সুলতান খুবই দায়িত্বশীল ছিলেন। আমি মনে করি সুলতান ঠিকভাবেই বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করতেন।