🌹একাদশ শ্রেণির ইতিহাস: সেমিস্টার-২: অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:অধ্যায়-২: পরিবর্তনশীল ঐতিহ্য(প্রশ্নের মান-৩,৪,৮)🌹

📚 একাদশ শ্রেণির ইতিহাস: সেমিস্টার-২: অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:অধ্যায়-২: পরিবর্তনশীল ঐতিহ্য(প্রশ্নের মান-৩,৪,৮)📚

 

 

 

 

 

✍️প্রশ্নের মান-৩:

1. ক্রুসেড বলতে কী বোঝো?  

উত্তর: ক্রুসেড বলতে মধ্যযুগে ইউরোপের খ্রিস্টানরা পবিত্র ভূমি জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক অভিযানকে বোঝায়। মোট নয়টি ক্রুসেড সংঘটিত হয়েছিল (প্রথম ক্রুসেড ১০৯৬-১০৯৯ খ্রিস্টাব্দে এবং নবম ক্রুসেড ১২৭১-১২৭২ খ্রিস্টাব্দে)। ধর্মীয় উন্মাদনা ও খ্রিস্টধর্মের নামে এই যুদ্ধে খ্রিস্টান যুবকদের ক্রুশ চিহ্ন ধারণ করে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য প্ররোচিত করা হয়েছিল। এশিয়া ও আফ্রিকার মুসলমানদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের দীর্ঘদিনের বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব এবং পবিত্র ভূমির দখল নিয়ে এই যুদ্ধগুলো সংঘটিত হয়েছিল। ক্রুসেডগুলি কেবল ধর্মীয় যুদ্ধ নয়, বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টাও ছিল।

 

 2.ক্রুসেডের সামাজিক কারণ কী?  
উত্তর: ক্রুসেডের সামাজিক কারণগুলো বেশ কয়েকটি প্রধান দিক নির্দেশ করে:

ধর্মীয় উন্মাদনা: খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। পবিত্র ভূমির পুনরুদ্ধারের জন্য ধর্মীয় প্রতিজ্ঞা ও একাত্মতা তাদেরকে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

সমাজের পরিবর্তন: মধ্যযুগের ইউরোপে সমাজের স্তরবিন্যাসে পরিবর্তন ঘটছিল। অভিজাত এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে যুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদা অর্জনের আগ্রহ ছিল।

অর্থনৈতিক সুবিধা: অনেক যুবক যুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নতুন ভূমি, সম্পদ এবং ধন-সম্পত্তির আশায় আকৃষ্ট হয়েছিল। ক্রুসেডের সময় শাসক এবং যোদ্ধাদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল।

যুদ্ধবাজদের চাহিদা: ওই সময়ে যুদ্ধবাজ বা ভাড়া যোদ্ধাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল, যারা ক্রুসেডের মাধ্যমে যুদ্ধ করার সুযোগ খুঁজছিল।

সামাজিক মেলবন্ধন: ক্রুসেডে অংশগ্রহণকারী খ্রিস্টানরা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল, যা একটি বৃহত্তর সামাজিক নেটওয়ার্ক গঠনে সহায়ক ছিল।

3.ক্রুসেডের রাজনৈতিক কারণ কি?

উঃ ক্রুসেডের রাজনৈতিক কারণগুলো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশ করে:

ধর্মীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা: ক্রুসেডের মাধ্যমে খ্রিস্টান নেতৃত্ব, বিশেষ করে পোপের প্রভাব ও কর্তৃত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। পোপ ক্রুসেডের ডাক দিয়ে ধর্মীয় নেতা হিসেবে তার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।

ভূমি দখল ও সম্প্রসারণ: ইউরোপীয় শক্তিগুলি পবিত্র ভূমি দখল করার মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছিল। মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নতুন অঞ্চল ও সম্পদ অর্জন করার লক্ষ্য ছিল।

অভিজাত শ্রেণির সমর্থন: ক্রুসেডের সময়, বিভিন্ন অভিজাত ও জমিদাররা যুদ্ধে অংশ নিয়ে তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন। তারা যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে নতুন ভূমি ও সম্পত্তি লাভের আশায় ছিলেন।

অভ্যন্তরীণ সংঘাত: ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অভ্যন্তরীণ সংঘাতের সময় ক্রুসেডকে একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখা হয়েছিল। বাইরে একটি শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে অভ্যন্তরীণ বিভাজন দূর করার প্রচেষ্টা ছিল।

মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ: ক্রুসেডগুলো মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের প্রতিরোধের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছিল, যা তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিকে প্রতিষ্ঠিত করার একটি উপায় ছিল।

এই সকল রাজনৈতিক কারণে ক্রুসেডগুলি শুধু ধর্মীয় অভিযান নয়, বরং ইউরোপের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শক্তির ভারসাম্য তৈরির একটি প্রচেষ্টা ছিল।

4.ক্রুসেডের দুটি প্রভাব ও ফলাফল লেখো ।

উত্তর:

ক্রুসেড, যা মূলত খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মধ্যে পবিত্র ভূমির দখল নিয়ে সংঘটিত যুদ্ধগুলো, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে একটি গভীর প্রভাব ফেলেছে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ও ফলাফল নিচে আলোচনা করা হলো:

প্রভাবসমূহ:
1. ধর্মীয় উত্তেজনা বৃদ্ধি: ক্রুসেডের মাধ্যমে ইউরোপ ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যে ধর্মীয় উত্তেজনা তীব্রতর হয়। এতে ক্রিশ্চিয়ান ও মুসলিমদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতার সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে সভ্যতার সংঘর্ষের রূপ নেয়। ক্রুসেড ধর্মীয় চেতনা ও শত্রুতার বিস্তার ঘটায়, যা পরবর্তীতে ইউরোপীয় কলোনিয়ালিজমেও ছাপ ফেলে।
 
2. সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক বিনিময়: ক্রুসেডের ফলে ইউরোপ ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক এবং বৈজ্ঞানিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। মুসলিম জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, স্থাপত্যশৈলী ও গণিতবিদ্যার সাথে ইউরোপের পরিচয় ঘটে। এর ফলে ইউরোপে নবজাগরণের (Renaissance) বীজ রোপিত হয় এবং এর পাশাপাশি বাণিজ্যিক রাস্তাগুলোর বিস্তার ঘটে।

ফলাফল:
1. ইউরোপের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন: ক্রুসেডের ফলে অনেক কৃষক ও সৈন্য মধ্যপ্রাচ্যে যাত্রা করেছিল। এতে ইউরোপের সামাজিক কাঠামোতে পরিবর্তন ঘটে এবং অর্থনীতিতে এক নতুন গতির সঞ্চার হয়। বণিক শ্রেণির উত্থান ঘটে এবং ইউরোপে নগরায়ণ শুরু হয়।

2. যুদ্ধ কৌশল ও সামরিক উন্নয়ন: ক্রুসেডের সময় ব্যবহৃত বিভিন্ন সামরিক কৌশল ও অস্ত্রশস্ত্র ইউরোপে ফিরে আসে এবং এর ফলে সামরিক কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি ঘটে। এটি পরবর্তীকালে ইউরোপের সামরিক শক্তির উন্নতিতে সহায়ক হয়।

সার্বিকভাবে, ক্রুসেড ইউরোপ ও মুসলিম বিশ্বের উপর গভীর প্রভাব ফেলে এবং পরবর্তী ইতিহাসে এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়।

5.ম্যানর ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো?

উত্তর :

ম্যানর ব্যবস্থা মধ্যযুগীয় ইউরোপে চালু এক ধরনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো, যা মূলত জমিদারী ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। এটি ফিউডাল সিস্টেমের অংশ হিসেবে কৃষি উৎপাদন এবং সামাজিক সম্পর্কের কেন্দ্রীয় ধারণা ছিল। ম্যানর ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

জমির মালিকানা: জমিদার, যাদের বলা হয় লর্ড বা বরন, মূলত রাজা থেকে জমি পেতেন। এই জমির উপরে তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকত।
 
শ্রম ও দায়িত্ব: জমিদারদের অধীনে কৃষক ও ভূমিহীন শ্রমিক থাকতেন, যারা বিনিময়ে লর্ডকে শ্রম দিতেন এবং কিছু ক্ষেত্রে ফসলের ভাগ দিয়ে থাকতেন।

আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক: লর্ড এবং কৃষকদের মধ্যে নির্ভরশীল সম্পর্ক ছিল। কৃষকরা নিরাপত্তা ও বাসস্থানের বিনিময়ে জমিদারের জন্য কাজ করতেন।
 
আর্থিক নিয়ন্ত্রণ: লর্ডরা তাদের অধীনস্থদের কাছ থেকে কর সংগ্রহ করতেন, যা ম্যানর ব্যবস্থার আর্থিক ভিত্তি ছিল।

স্বশাসিত কমিউনিটি: প্রত্যেক ম্যানর ছিল স্বনির্ভর ও আত্মনির্ভরশীল, যার মধ্যে ছিল চাষাবাদ, কারিগর, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

এই ব্যবস্থা মধ্যযুগীয় ইউরোপের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

7. নাইট কাদের বলা হয়?  

উত্তর: নাইট বলতে মধ্যযুগীয় ইউরোপে এক বিশেষ শ্রেণির সম্মানিত ও প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদের বোঝানো হয়, যারা রাজা বা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের অধীনে শপথ নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। তারা ছিল বিশেষভাবে অস্ত্র ও যুদ্ধকৌশলে দক্ষ এবং তাদের শিভ্যালরি মেনে চলার জন্য পরিচিতি লাভ করেছিল। শিভ্যালরি অনুসারে নাইটদের দায়িত্ব ছিল সাহসিকতা, সততা, ও দুর্বলদের রক্ষা করা। তারা সাধারণত অশ্বারোহী সৈনিক ছিলেন এবং সমাজে তাদের মর্যাদা ছিল অত্যন্ত উচ্চ। নাইটদের শপথের মধ্যে শত্রুদের প্রতি দয়া দেখানো, নারীদের সম্মান করা, এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। যুদ্ধের পাশাপাশি নাইটরা ধর্মীয় ও সামাজিক কাজেও অংশ নিতেন, যা তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করেছিল। নাইটদের সাহসিকতা এবং নৈতিকতার মানসিকতা মধ্যযুগীয় সমাজে অনন্য মর্যাদা প্রদান করেছিল।

4. শিভ্যালরি বলতে কী বোঝো?  
 উত্তর: শিভ্যালরি বলতে মধ্যযুগীয় নাইটদের জন্য নির্ধারিত একগুচ্ছ আদর্শ ও নৈতিক আচরণবিধিকে বোঝানো হয়। এটি নাইটদের বীরত্ব, সাহসিকতা, দয়া, সততা, ও ন্যায়বিচারের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের মানসিকতা নির্দেশ করে। শিভ্যালরির অধীনে, নাইটদের দুর্বলদের রক্ষা করা, শত্রুদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা, এবং নারীদের সম্মান করার প্রতিশ্রুতি ছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসিকতা প্রদর্শনের পাশাপাশি, শিভ্যালরি তাদের সামাজিক এবং ধর্মীয় দায়িত্ব পালনেও উৎসাহিত করত। নাইটদের এই নীতিগুলি মধ্যযুগীয় ইউরোপে এক উচ্চ মর্যাদা প্রদান করেছিল এবং তাদের আচরণে শৃঙ্খলা ও আদর্শবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। শিভ্যালরি শুধু নাইটদের জন্য নয়, পুরো সমাজে একটি নৈতিকতার আদর্শ হিসেবে কাজ করেছিল, যা সাহস, দয়া ও ন্যায়বিচারের মূল্যবোধকে উন্নত করে।

9. ট্রুবাদুর কাদের বলা হয়?  
উত্তর: ট্রুবাদুর বলতে মধ্যযুগীয় ইউরোপ, বিশেষ করে ফ্রান্সের প্রভেন্স অঞ্চলের একদল গায়ক ও কবিকে বোঝানো হয়, যারা প্রেম, সৌন্দর্য, ও সাহসিকতা নিয়ে গান ও কবিতা রচনা করতেন। ট্রুবাদুরদের ভূমিকা ও বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:

- **প্রেম ও রোমান্স**: ট্রুবাদুররা মূলত আদর্শ প্রেম ও রোমান্স নিয়ে গান রচনা করতেন, যেখানে প্রেমিক ও প্রেমিকার আবেগ, বেদনা, ও আকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হতো।
 
- **শিভ্যালরি ও নাইটদের প্রশংসা**: ট্রুবাদুরদের গানগুলোতে নাইটদের বীরত্ব ও শিভ্যালরি নীতির প্রশংসা করা হতো, যা মধ্যযুগীয় সমাজে নাইটদের মর্যাদা বৃদ্ধি করত।
 
- **সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব**: ট্রুবাদুরদের গান কেবল বিনোদনের মাধ্যমই ছিল না; এটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিকাশেও অবদান রাখত এবং শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

- **গানের মাধ্যম**: তাদের গান সরাসরি জনসাধারণের মধ্যে পরিবেশিত হতো, যা তখনকার মানুষের জীবনে আনন্দ ও বিনোদন যোগাতো।

ট্রুবাদুরদের কারণে মধ্যযুগীয় ইউরোপে প্রেম ও সাহসিকতার এক নতুন ধারা গড়ে ওঠে।

10. নবজাগরণ বলতে কী বোঝো?  
উঃ উত্তর: নবজাগরণ বলতে ১৪শ থেকে ১৭শ শতাব্দীর মধ্যে ইউরোপে ঘটে যাওয়া সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক পুনর্জাগরণকে বোঝায়। এটি মূলত প্রাচীন গ্রিক ও রোমান চিন্তাধারার পুনর্জাগরণ ঘটায় এবং সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। নবজাগরণের কিছু মূল বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো:

- মানবতাবাদ: এই সময়ে মানবতাবাদী চিন্তা বিকশিত হয়, যা মানুষের গুণাবলি, স্বাধীন চিন্তা, ও ক্ষমতাকে গুরুত্ব দেয়। এটি ব্যক্তির স্বাধীনতা ও মানবিক বিকাশের ওপর জোর দেয়।

- কলা ও সাহিত্য: নবজাগরণকালে শিল্প ও সাহিত্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আসে। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, মাইকেলেঞ্জেলো প্রমুখ চিত্রশিল্পী ও লেখকরা চিত্রকলায় এবং সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করেন।

- বিজ্ঞান ও যুক্তির উদ্ভাবন: এই সময়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উৎসাহ দেয়া হয় এবং কপারনিকাস, গ্যালিলিও প্রমুখ বিজ্ঞানী যুক্তি ও পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন আবিষ্কার করেন।

- ধর্মীয় সংস্কার: নবজাগরণ ধর্মের ওপর ব্যক্তিগত বিশ্বাসের প্রভাব বাড়ায় এবং ক্যাথলিক চার্চের নিয়ন্ত্রণ কমে আসে, যা পরবর্তীকালে ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের পথপ্রদর্শক হয়।

নবজাগরণ ইউরোপীয় সমাজে নতুন ভাবধারার সূচনা করে, যা আধুনিক সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

11. মানবতাবাদ বলতে কী বোঝায়?  
উঃ উত্তর: মানবতাবাদ হলো একটি চিন্তাধারা যা মানুষের মর্যাদা, স্বাধীনতা, এবং বিকাশকে গুরুত্ব দেয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

- মানুষের মূল্যায়ন: মানবতাবাদ মানুষের নিজস্ব ক্ষমতা ও স্বাধীনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেয়।
- বিজ্ঞান ও যুক্তি: এটি বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের মাধ্যমে জ্ঞান লাভ এবং সত্য অনুসন্ধানে উৎসাহিত করে।
- শিল্প ও সাহিত্য: মানবতাবাদ মানুষের অভিজ্ঞতা, আবেগ, এবং চিন্তা প্রকাশে উৎসাহ দেয়, যা শিল্প ও সাহিত্যে প্রভাব ফেলে।
- শিক্ষা ও নৈতিকতা: মানবতাবাদ শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের উন্নতি এবং নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে।
- ধর্মীয় কুসংস্কার মুক্তি: এটি অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মুক্ত চিন্তা ও গবেষণার পক্ষে।

এভাবে, মানবতাবাদ মানুষের সামগ্রিক উন্নতি এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

12. চিত্রকলার ক্ষেত্রে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অবদান কী ছিল?  
উঃ লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি রেনেসাঁস যুগের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী, যিনি তার অসামান্য চিত্রশৈলীর জন্য পরিচিত। তার বিখ্যাত চিত্রকর্ম "মোনা লিসা" এবং "দ্য লাস্ট সাপার" চিত্রকলার ইতিহাসে অনন্য স্থান দখল করে আছে। তিনি মানুষের মুখমণ্ডল এবং আবেগ ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে অভাবনীয় দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। এছাড়াও, তার আঁকা চিত্রে পটভূমি, আলো-ছায়ার ব্যবহার এবং মানুষের শারীরিক গঠনের সূক্ষ্ম নিখুঁত বিবরণ তিনি চিত্রকলায় বাস্তবতার সুনিপুণভাবে ব্যবহার করেছিলেন।

13. নবজাগরণের নেতিবাচক প্রভাব কী ছিল?  
উঃ নবজাগরণ ইতিবাচক পরিবর্তনের পাশাপাশি কিছু নেতিবাচক প্রভাবও ফেলেছিল। এটি ধর্ম ও বিজ্ঞানকে মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে আসে এবং অনেক ক্ষেত্রে ধর্মীয় কর্তৃত্ব ও ঐতিহ্যবিরোধী মনোভাব গড়ে ওঠে। সমাজে ধর্মের গুরুত্ব কমে যায় এবং মানবতাবাদ, যুক্তি ও বিজ্ঞান সম্পর্কিত চিন্তা বাড়তে থাকে। এর ফলে সামাজিক দ্বন্দ্ব এবং ধর্মীয় অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। এর নেতিবাচক প্রভাবে রোমান ক্যাথলিক চার্চ এবং সামাজিক কাঠামোতে পরিবর্তনের হুমকি দেখা দেয় এবং এটি কিছু ধর্মীয় সংঘাতেরও কারণ হয়ে ওঠে।

14. পোপ ও রাজার মধ্যে সংঘাত কীভাবে ধর্মসংস্কার আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিলেন?  
উঃ পোপ ও রাজার মধ্যে ক্ষমতার সংঘাত ধর্মসংস্কার আন্দোলনের জন্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। পোপের কর্তৃত্ব এবং সম্পদ সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করে রাজারা ধর্মসংস্কারকে সমর্থন করেন। এ সংঘাতের ফলে জনগণের মাঝে পোপের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়, এবং অনেকেই চার্চের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। ফলে ধর্মীয় স্বাধীনতার দাবি আরো প্রবল হয়। পোপের কর্তৃত্ব এবং আভিজাত্যবাদী শাসনের মধ্যে সংঘাত ধর্মসংস্কারের জন্য রাজনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলে এবং ধর্মীয় পুনর্জাগরণকে ত্বরান্বিত করে।

15. মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার ধর্মসংস্কার আন্দোলনকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?  
উঃ মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার ধর্মসংস্কার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এর মাধ্যমে বাইবেলসহ অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ সহজলভ্য হয়ে ওঠে এবং সাধারণ মানুষ নিজেরাই ধর্মীয় গ্রন্থ পড়ার সুযোগ পায়। এতে বাইবেল ও অন্যান্য ধর্মীয় পাঠের নতুন ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করতে পারে মানুষ। তারা চার্চের নিয়ম ও প্রচলিত ধারণা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে এবং ব্যক্তিগত ধর্মচর্চার ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে সংস্কার আন্দোলন শক্তিশালী হয় এবং একে নতুন গতিশীলতা প্রদান করে।

16. ধর্মসংস্কার আন্দোলনের জন হাসের ভূমিকা কী ছিল?  
উঃ জন হাস ছিলেন চেক প্রজাতন্ত্রের একজন ধর্মসংস্কারক, যিনি ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন। তিনি ক্যাথলিক চার্চের দুর্নীতি ও সম্পদপ্রবণতার সমালোচনা করেন এবং বাইবেলের সঠিক শিক্ষা প্রচারের চেষ্টা করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ধর্মীয় নেতৃত্বের ক্ষমতা জনগণের কাছে থাকা উচিত, এবং ধর্মচর্চায় ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রয়োজন রয়েছে। তার এই মতবাদের জন্য চার্চ তাকে শাস্তি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। জন হাসের আত্মত্যাগ পরবর্তীতে প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনের ভিত্তি গড়ে তোলে এবং পরবর্তী ধর্মসংস্কার আন্দোলনকে উৎসাহিত করে, যা ইউরোপজুড়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

✍️প্রশ্নের মান-৪:

1. ক্রুসেডে নারীদের অবদান কী ছিল?

উঃ ক্রুসেডে নারীদের অবদান ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যদিও তাদের ভূমিকা সাধারণত যুদ্ধের সরাসরি অংশ ছিল না। তবে, তারা যুদ্ধের সমর্থনে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছিল। তাদের অবদান ছিল:

1. চিকিৎসা ও সেবা প্রদান: নারীরা রোগী এবং আহত সেনাদের সেবা দিতে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করেছিল। বিশেষ করে নার্স এবং সেবিকা হিসেবে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

2. ধর্মীয় এবং মানসিক সহায়তা: নারীরা ধর্মীয় যাত্রার অংশ হিসেবে যুদ্ধে যাওয়া সৈন্যদের মানসিক সমর্থন ও প্রেরণা প্রদান করেছিল। অনেক নারী পুরোহিত বা ধর্মীয় নেত্রীর মতো কাজ করেছিল।

3. লজিস্টিক সহায়তা: নারীরা যুদ্ধের সরঞ্জাম, খাদ্য এবং অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ ও সরবরাহে সাহায্য করেছে।

4. বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব: কিছু নারী, যেমন জোান অফ আর্ক, নিজেদের নেতৃত্বের মাধ্যমে ইতিহাসে অনন্য অবদান রেখেছে, যদিও তিনি পরবর্তীতে ছিল না ক্রুসেডের অংশ, তবে তার আদর্শ প্রভাবিত ছিল।

এইসব ভূমিকা ক্রুসেডের ইতিহাসে নারীদের অবদানকে স্মরণীয় করে রেখেছে।

2. ক্রুসেডের খ্রিষ্টানদের ব্যর্থতার কারণ কী ছিল?

উঃ ক্রুসেডে খ্রিষ্টানদের ব্যর্থতার প্রধান কয়েকটি কারণ ছিল:

1. অপ্রতুল সংগঠন এবং নেতৃত্বের অভাব: বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা খ্রিষ্টান সেনাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল। তাদের একত্রিত করে কার্যকর নেতৃত্ব দেওয়া কঠিন ছিল।

2. স্থানীয় পরিবেশ এবং আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থতা: মধ্যপ্রাচ্যের গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়া ইউরোপীয় সৈন্যদের জন্য কঠিন ছিল। এতে তাদের শারীরিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।

3. স্থানীয় মুসলিম সেনাদের শক্তিশালী প্রতিরোধ: মুসলিম বাহিনী একত্রিত হয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। বিশেষ করে সালাউদ্দিনের মতো যোগ্য নেতা তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

4. অর্থ এবং সম্পদের অভাব: দীর্ঘ যাত্রা এবং যুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রচুর সম্পদ প্রয়োজন ছিল, যা ক্রমে কমে আসায় সৈন্যদের মনোবল কমেছিল।

5. ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক বিরোধ: খ্রিষ্টানদের নিজেদের মধ্যেই বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিরোধ ছিল, যা তাদের ঐক্য দুর্বল করে দেয়।

এই কারণগুলো ক্রুসেডে খ্রিষ্টানদের ব্যর্থতার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

3. ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে জন ওয়াইক্লিফের অবদান কী ছিল?

উঃ ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে জন ওয়াইক্লিফের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী। তাঁর কার্যক্রম মূলত চারটি প্রধান দিক থেকে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছিল:

1. ধর্মীয় গ্রন্থের অনুবাদ: ওয়াইক্লিফ বাইবেলের লাতিন ভাষা থেকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন, যাতে সাধারণ মানুষ ধর্মগ্রন্থ সহজেই বুঝতে পারে। এটি ধর্মীয় জ্ঞান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন আনে।

2. পাপমুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান: ওয়াইক্লিফ চার্চের ‘ইনডালজেন্স’ বা পাপমুক্তির ধারণার সমালোচনা করেন, যা চার্চের আর্থিক দুষ্টচক্র ভাঙতে সহায়ক হয়।

3. পোপের ক্ষমতা সীমিত করার আহ্বান: তিনি চার্চের অত্যধিক রাজনৈতিক ক্ষমতার সমালোচনা করেন এবং খ্রিস্টধর্মকে আদর্শ অনুসরণ করতে বলেন।

4. ললার্ড আন্দোলন প্রতিষ্ঠা: ওয়াইক্লিফের শিষ্যরা "ললার্ড" নামে পরিচিত একটি আন্দোলন শুরু করেন, যা পরবর্তী ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে অনুপ্রেরণা জোগায়।

 জন ওয়াইক্লিফের এই কার্যক্রম ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপনে সহায়ক হয়েছিল।

4. ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে উইরিখ জুইংলির অবদান কী ছিল?

উঃ উইরিখ জুইংলি ছিলেন সুইজারল্যান্ডের অন্যতম প্রধান ধর্ম সংস্কারক, যিনি ক্যাথলিক চার্চের কিছু রীতিনীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন এবং ধর্ম সংস্কার আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তাঁর অবদান নিম্নরূপ:

1. প্রচলিত কুসংস্কার ও চিত্রপূজার বিরোধিতা: জুইংলি চার্চে মূর্তি ও চিত্রপূজার প্রচলিত রীতির বিরোধিতা করেন এবং সেগুলি সরিয়ে একটি সরল ও শুদ্ধ উপাসনা প্রবর্তনের আহ্বান জানান।

2. বাইবেলভিত্তিক উপাসনা: তিনি বাইবেলের গুরুত্ব ও আধিপত্য পুনঃস্থাপন করেন এবং বিশ্বাস করতেন যে বাইবেলই খ্রিস্টানদের একমাত্র ধর্মীয় নির্দেশিকা হওয়া উচিত।

3. সাধারণ মানুষের জন্য ধর্ম: জুইংলি সাধারণ মানুষের ধর্মীয় শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেন এবং উপাসনা পদ্ধতিকে সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।

4. ইউরোপে ধর্ম সংস্কার প্রসারে ভূমিকা: মার্টিন লুথারের সমসাময়িক হওয়ায় জুইংলির চিন্তাধারা দ্রুত ইউরোপের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, যা পরবর্তী ধর্ম সংস্কার আন্দোলনকে শক্তিশালী করে।

উইরিখ জুইংলির এই অবদান ধর্ম সংস্কার আন্দোলনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে সাহায্য করে।

5. জেসুইট সংঘের কার্যকলাপ সংক্ষেপে লেখো।

উঃ জেসুইট সংঘ, বা সোসাইটি অফ জেসাস, ১৬শ শতকে ইগনাশিয়াস লয়োলা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ক্যাথলিক চার্চের একটি ধর্মীয় সংগঠন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল খ্রিস্টধর্ম প্রচার এবং শিক্ষা বিস্তার। তাদের কার্যকলাপ সংক্ষেপে নিম্নরূপ:

1. ধর্মপ্রচার ও খ্রিস্টধর্মের বিস্তার: জেসুইট সংঘ বিভিন্ন দেশে মিশনারি পাঠিয়ে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করে, বিশেষত এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকায়।

2. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থাপন: জেসুইটরা শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করে এবং বিশ্বজুড়ে অসংখ্য স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়াও বিজ্ঞান ও দর্শন শেখানো হয়।

3. গরিব ও অসহায়দের সেবা: জেসুইট সংঘ গরিব, অসুস্থ ও অসহায়দের সেবা করে এবং সমাজে মানবতার প্রচার করে।

4. চার্চ সংস্কার আন্দোলন: প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশনের প্রেক্ষাপটে জেসুইটরা ক্যাথলিক চার্চকে পুনর্গঠন ও সংহত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

জেসুইট সংঘের এই কার্যকলাপ ক্যাথলিক চার্চকে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী করে তোলে।

6. পবিত্র ধর্ম আদালতের কাজ কী ছিল?

উঃ পবিত্র ধর্ম আদালত (ইনকুইজিশন) ছিল একটি ধর্মীয় আদালত যা খ্রিস্টান ধর্মে বিপথগামী বা ধর্মের বিরোধী কার্যকলাপ প্রতিরোধ করতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর কাজের মধ্যে প্রধানত নিম্নলিখিত দিকগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল:

1. হেরেসি বা ধর্মবিরোধিতা দমন: পবিত্র ধর্ম আদালত মূলত 'হেরেটিক' বা ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও শাস্তি প্রদান করতে ব্যবহৃত হত। তারা বিশ্বাস করতেন যে ধর্মীয় ত্রুটি সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং তাই তা নির্মূল করা উচিত।

2. ধর্মীয় নীতি এবং বিশ্বাসের শুদ্ধতা রক্ষা: আদালত চার্চের নীতিমালা ও বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোনো বিরোধিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করত এবং তা শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করত।

3. পৃথক মতবাদী বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর দমন: ইনকুইজিশন একাধিক ধর্মীয় গোষ্ঠী যেমন আলবিজেনস, কাথারস, এবং প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনের অনুসারীদের দমন করত।

4. জোর করে ধর্মান্তরিত করা: অনেক সময়, বিচারকার্য চলাকালীন জোর করে অনুশোচনা ও ধর্মান্তরের চেষ্টা করা হত।

পবিত্র ধর্ম আদালতের কার্যকলাপ অতীতে অত্যন্ত কঠোর এবং নিষ্ঠুর ছিল, এবং এর ফলে অনেক নির্দোষ ব্যক্তিও নিগৃহীত ও নিহত হয়েছে।

7. চিস্তি ও সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

উঃ চিস্তি ও সুরাবর্দি দুটি সুপরিচিত সুফী সম্প্রদায়, যারা ভারত উপমহাদেশে ইসলামের আধ্যাত্মিক প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

চিস্তি সম্প্রদায়:
এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন খাজা মঈনুদ্দীন চিস্তি, যিনি ১২শ শতকে ভারতের রাজস্থানে এসে বসবাস শুরু করেন। চিস্তি সম্প্রদায়ের মূল শিক্ষা ছিল মানুষের প্রতি সহানুভূতি, ধর্মীয় সহনশীলতা, দুনিয়া থেকে নিরাসক্তি, এবং আল্লাহর প্রতি গভীর ভক্তি। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য মানবতার সেবা অপরিহার্য। খাজা মঈনুদ্দীন চিস্তির শিষ্যরা বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের তাত্ত্বিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রচার করেছিল। চিস্তি দরগাহগুলো সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল, যেখানে আসা-যাওয়া ও প্রার্থনা করতে আসা মানুষের মধ্যে শান্তি ও সহমর্মিতা প্রচারিত হতো।

সুরাবর্দি সম্প্রদায়:
সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আবু নাসর সুরাবর্দি, যিনি ১১শ শতকে ইরানে এই সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন। এই সম্প্রদায়ের মূল শিক্ষাগুলি ছিল ইসলামী শাস্ত্র, আধ্যাত্মিক সাধনা এবং জ্ঞানের প্রতি গভীর মনোযোগ। সুরাবর্দি সম্প্রদায় আধ্যাত্মিক অনুশীলন এবং মুসলিম ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেন, এবং তারা বিশ্বাস করতেন যে ধর্মের প্রকৃত উপলব্ধি আসবে শুধুমাত্র গূঢ় জ্ঞান ও চিত্তশুদ্ধির মাধ্যমে। ভারতীয় উপমহাদেশে সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের শাখাগুলি সম্রাটদের সহায়তা পেয়েছিল এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও তাদের তাত্ত্বিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই দুটি সম্প্রদায়ই ভারতীয় ইসলামী সংস্কৃতিতে তাদের গভীর প্রভাব রেখে গেছে।

8. কনফুসিয়াসবাদ এর মূলকথা কী?

উঃ কনফুসিয়াসবাদ একটি প্রাচীন চিনা দার্শনিক চিন্তা, যা কনফুসিয়াস (কং ফু-জি) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূলকথা ছিল নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, মানবিকতা এবং সামাজিক সম্পর্কের উন্নয়ন। কনফুসিয়াসবাদের মূল ধারণাগুলি নিম্নরূপ:

1. ন্যায় ও নৈতিকতা: কনফুসিয়াস বিশ্বাস করতেন যে সমাজের শান্তি এবং উন্নতির জন্য ব্যক্তির উচিত সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হওয়া।
   
2. পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা: তিনি পরিবারের মধ্যে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। পিতামাতা, গুরু এবং সিনিয়রদের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল তার দার্শনিক চিন্তার মূল অংশ।
   
3. সামাজিক শৃঙ্খলা: কনফুসিয়াস মনে করতেন যে সমাজে প্রতিটি ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে এবং সবাইকে সে অনুযায়ী আচরণ করতে হবে।

4. শিক্ষা ও আত্মউন্নয়ন: শিক্ষা ও আত্ম-উন্নতি কনফুসিয়াসের দার্শনিকতায় প্রধান স্থান পেয়েছে, যা মানুষের চরিত্র ও সমাজের উন্নতির জন্য অপরিহার্য।

কনফুসিয়াসবাদ সমাজের শৃঙ্খলা, নৈতিকতা এবং মানবিক সম্পর্কের প্রতি গভীর মনোযোগ দেয়।

9. তাওবাদের মূল লক্ষ্য কী?

উঃ তাওবা বা তাওবা, ইসলামী ধারণায়, একটি পুণ্যকর্মের প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার পাপ থেকে ফিরে আসে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তাওবাদের মূল লক্ষ্য হল:

1. পাপের প্রতি অনুশোচনা: তাওবা করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার পূর্বের ভুল ও পাপের জন্য আন্তরিকভাবে অনুশোচনা ও আফসোস করে।
 
2. আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা: তাওবার মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে, নিজের পাপের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এবং পুনরায় সৎ পথে চলার সংকল্প করে।
   
3. আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি: তাওবা মানবিক আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা ব্যক্তি নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে।

4. সৎ জীবন যাপন: তাওবা করার পর, ব্যক্তি তার জীবনকে সৎ পথে পরিচালিত করতে চেষ্টা করে এবং পূর্বের ভুলগুলি পুনরায় না করার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করে।

তাওবাদের মাধ্যমে ব্যক্তি তার আত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করে।

10. শিন্টো ধর্মের প্রভাব সংক্ষেপে লেখো।

উঃ শিন্টো ধর্ম, যা জাপানে মূলত প্রতিষ্ঠিত, একটি প্রাক-একমতাবাদী ধর্ম যা প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদিত। এর প্রভাব বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল:

1. প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা: শিন্টো ধর্মে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানকে পবিত্র বলে মনে করা হয়, যেমন পর্বত, নদী, গাছ, ইত্যাদি। এটি জাপানের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় চিন্তাধারায় প্রকৃতির সংরক্ষণ এবং শ্রদ্ধার ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

2. সংস্কৃতি ও রীতি: শিন্টো ধর্মের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান এবং উৎসব, যেমন কিম্বোৎসু (নতুন বছরের উৎসব) এবং মিকোশি (পবিত্র মন্দির ভ্রমণ), জাপানী সমাজের একটি অপরিহার্য অংশ।

3. রাজনৈতিক প্রভাব: শিন্টো ধর্ম জাপানী সম্রাটদের একটি আধ্যাত্মিক ভিত্তি প্রদান করেছিল, যাদেরকে অনেক সময় দেবতার মতো পূজ্য হিসেবে দেখা হত।

4. আধ্যাত্মিকতা ও রীতি: শিন্টো ধর্মের প্রভাব জাপানের বিভিন্ন আধ্যাত্মিক ও সামাজিক জীবনেও স্পষ্ট ছিল, যেমন মানুষের মধ্যে পরিশুদ্ধতা, নৈতিকতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা।

শিন্টো ধর্ম জাপানের সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

               <<<<<<<<<<<>>>>>>>>>>