🌹একাদশ শ্রেণির ইতিহাস(সেমিস্টার-২): অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:অধ্যায়-১:রাষ্ট্রের প্রকৃতি(প্রশ্নের মান-৩,৪,৮)🌹

📚একাদশ শ্রেণির ইতিহাস(সেমিস্টার-২): অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:অধ্যায়-১:রাষ্ট্রের প্রকৃতি(প্রশ্নের মান-৩,৪,৮)📚

 

 

 

 

 

 

 

✍️প্রশ্নের মান-৩:

 

১.কৌটিল্যকে ভারতের ম্যাকিয়াভেলি বলা হয় কেন? 
উত্তর: কৌটিল্য, যিনি চাণক্য নামেও পরিচিত, তার রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক চিন্তাধারা বাস্তববাদী হওয়ার কারণে তাকে ভারতের ম্যাকিয়াভেলি বলা হয়। তার রচিত "অর্থশাস্ত্র" এবং ম্যাকিয়াভেলির "দ্য প্রিন্স" উভয়ই শাসন এবং শাসকের ক্ষমতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। কৌটিল্য যেমন রাজ্য পরিচালনায় কঠোর এবং প্রয়োজনমতো নির্মম নীতির প্রয়োগের উপর জোর দিয়েছেন, তেমনি ম্যাকিয়াভেলিও শাসকদের ক্ষমতা ধরে রাখতে কঠোর বাস্তববুদ্ধি এবং কৌশলগত আচরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। উভয়ের চিন্তাধারায় রাজনীতিকে একটি বাস্তবিক, প্রয়োজনমুখী শাসনব্যবস্থা হিসেবে দেখা হয়েছে, যেখানে শাসকের ক্ষমতা রক্ষার্থে যেকোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া বৈধ। উভয়ের রচনাই রাজ্যের স্থিতিশীলতা, শক্তি বজায় রাখা, এবং শাসকের কৌশলী নেতৃত্বের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। এই মিলের কারণে কৌটিল্যকে ভারতের ম্যাকিয়াভেলি বলা হয়, যদিও তাদের রচনার প্রেক্ষাপট এবং শাসনব্যবস্থার ধারণা ভিন্ন ছিল।

২.বারনি রচিত ফতোয়া-ই-জাহান্দারি থেকে মধ্যযুগের সুলতানের অন্যান্য কর্তব্যগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: জিয়াউদ্দিন বারনির "ফতোয়া-ই-জাহান্দারি"তে মধ্যযুগীয় সুলতানের দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বারনি মতে, সুলতানের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য ছিল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং আইনের শাসন বজায় রাখা। সুলতানকে প্রজাদের সুরক্ষা ও তাদের ধর্মীয় এবং সামাজিক অধিকার রক্ষা করতে হতো। ধর্মীয়ভাবে, সুলতানের কাজ ছিল ইসলামিক নীতিগুলির প্রচার ও সংরক্ষণ করা। তাকে ধর্মীয় সহনশীলতা বজায় রাখতে হলেও ইসলামি আইন অনুসরণ করাই তার প্রধান লক্ষ্য ছিল। সামরিকভাবে, সুলতানকে রাজ্যের প্রতিরক্ষা এবং সামরিক শক্তি বজায় রাখতে হতো। তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকেও মনোনিবেশ করতেন, যেমন কৃষি উন্নতি, বাণিজ্যের প্রসার এবং প্রজাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। সুলতানের এইসব কর্তব্যগুলো তার শাসনক্ষমতার বৈধতা এবং প্রজাদের প্রতি তার দায়িত্ববোধের প্রতিফলন।

৩.টমাস ক্রমওয়েল কে ছিলেন? ইংল্যান্ডের রাজনীতিতে তার উত্থান কীভাবে হয়েছিল?
উত্তর: টমাস ক্রমওয়েল ছিলেন ইংল্যান্ডের একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, যিনি অষ্টম হেনরির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। তিনি ইংল্যান্ডের চার্চের সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রথমে, ক্রমওয়েল কার্ডিনাল উলসির সহকারী হিসেবে কাজ করেন, কিন্তু উলসির পতনের পর তিনি হেনরির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হয়ে ওঠেন। ক্রমওয়েলের রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয় যখন তিনি রাজাকে সমর্থন করে ইংল্যান্ডের চার্চকে রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সহায়তা করেন। তিনি হেনরির দ্বিতীয় বিবাহ বৈধ করার জন্য চার্চ অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ক্রমওয়েলের প্রশাসনিক দক্ষতা এবং কৌশলগত নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি ইংল্যান্ডের রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। তার আর্থিক ও আইনগত সংস্কারগুলি তাকে ইংল্যান্ডের শাসনব্যবস্থায় শীর্ষস্থানে নিয়ে যায়।

৪.হবসের রাষ্ট্রধারণায় প্রকৃতির রাজ্য কীরূপ ছিল? 
উত্তর: হবসের মতে, প্রকৃতির রাজ্য ছিল একটি অরাজক এবং সহিংস অবস্থা, যেখানে কোন আইন বা শাসন ছিল না। এই অবস্থায় প্রত্যেক মানুষ নিজের স্বার্থে কাজ করত এবং একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করত। হবস একে "সবার বিরুদ্ধে সবার যুদ্ধ" (bellum omnium contra omnes) নামে উল্লেখ করেন। প্রকৃতির রাজ্যে কোন নিরাপত্তা বা স্থায়িত্ব ছিল না, এবং মানুষের জীবন ছিল "নিঃসঙ্গ, দরিদ্র, গর্হিত, নৃশংস এবং সংক্ষিপ্ত"। এই অবস্থার পরিত্রাণ পেতে মানুষ একটি সামাজিক চুক্তি করে, যার মাধ্যমে তারা তাদের স্বাধীনতা ত্যাগ করে এবং একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধীনে আসে। এই সার্বভৌম রাষ্ট্রকে হবস "লেভায়াথান" বলে অভিহিত করেন, যা আইন প্রয়োগ করে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এই রাষ্ট্র ছাড়া, হবস মনে করতেন, মানবজীবন বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ থাকবে।

৫.ম্যান্ডারিনদের যোগ্যতা ও নিয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: চীনের ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা ছিল একটি মেধাভিত্তিক প্রশাসনিক নিয়োগ ব্যবস্থা, যা পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচন করত। এই পরীক্ষাগুলি কনফুসিয়ান শিক্ষার উপর ভিত্তি করে নেওয়া হতো, যেখানে নৈতিকতা, সাহিত্য, ইতিহাস, এবং প্রশাসনিক জ্ঞান পরীক্ষা করা হতো। প্রার্থীরা প্রাদেশিক, আঞ্চলিক এবং জাতীয় স্তরের পরীক্ষার মাধ্যমে ম্যান্ডারিন পদের জন্য বিবেচিত হতেন। পরীক্ষাগুলি অত্যন্ত কঠিন ছিল এবং শুধুমাত্র মেধাবীরা প্রশাসনিক পদে উন্নীত হতে পারত। এই ব্যবস্থা চীনের সামাজিক শ্রেণীভেদ উপেক্ষা করে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচন করত এবং সুশাসন নিশ্চিত করত। ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা চীনে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং প্রশাসনের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক ছিল, কারণ এটি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ কর্মকর্তাদের তৈরি করেছিল।

৬.মনসবদারি প্রথা কী? মনসবদারী প্রথার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।
উত্তর: মনসবদারি প্রথা মুঘল সাম্রাজ্যের সামরিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল, যার মাধ্যমে মনসবদারদের সামরিক র‌্যাঙ্ক প্রদান করা হতো এবং তাদের সামরিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব নির্ধারণ করা হতো।  
বৈশিষ্ট্যগুলি:  
১. মনসবদারদের বিভিন্ন র‌্যাঙ্ক দেওয়া হতো, যা তাদের অধীনে সৈন্যসংখ্যা নির্ধারণ করত।  
২. মনসবদাররা জমি বা রাজস্বের মাধ্যমে পারিশ্রমিক পেতেন, যা তাদের সৈন্য রক্ষণাবেক্ষণে ব্যবহৃত হতো।  
৩. মনসবদারদের র‌্যাঙ্ক ছিল "জাট" এবং "সওয়ার"—জাট মনসব সৈন্যদের সংখ্যা নির্দেশ করত, এবং সওয়ার মনসব ঘোড়সওয়ার সৈন্যদের সংখ্যা নির্দেশ করত।  
৪. মনসবদাররা সামরিক ও প্রশাসনিক দুই ধরনের দায়িত্ব পালন করত।  
৫. মনসবদাররা সরাসরি মুঘল সম্রাটের অধীনে কাজ করত এবং তাদের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতে হতো।  
এই প্রথা মুঘল সাম্রাজ্যের সামরিক ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

 

✍️প্রশ্নের মান-৪:

১. পেরিক্লিস কে ছিলেন? তার সংস্কারমূলক কার্যকলাপ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।  
উত্তর: পেরিক্লিস ছিলেন প্রাচীন এথেন্সের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা ও কূটনীতিক, যিনি খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে এথেন্সের সোনালী যুগের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত। তার শাসনকালে, এথেন্সে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটে এবং শহরটি সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, এবং সামরিকভাবে সমৃদ্ধ হয়। পেরিক্লিসের সংস্কারমূলক কার্যকলাপের মধ্যে অন্যতম ছিল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা। তিনি জনপ্রতিনিধিদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন, যা সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে।

এছাড়াও, পেরিক্লিস সামরিক শক্তি বাড়াতে এবং বিদেশে এথেন্সের প্রভাব বিস্তারের জন্য যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। তার সময়ে, পার্থেনন নির্মাণ, যা এথেন্সের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি প্রতীক, তা ঘটে। পেরিক্লিসের যুগে শিল্প ও স্থাপত্যের উন্নতি ঘটে, যা এথেন্সকে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

পেরিক্লিসের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যে, শহরের উন্নতি এবং স্থিতিশীলতার জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ জরুরি। তিনি রাজনৈতিক সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এথেন্সের উন্নয়নে সহায়তা করেছেন, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়।

২. রাষ্ট্রে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে সিসেরোর অভিমত সংক্ষেপে আলোচনা করো।  
উত্তর: সিসেরো, প্রাচীন রোমের একজন বিখ্যাত দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ন্যায় ও আইন রাষ্ট্রের ভিত্তি এবং এটির সঠিক বাস্তবায়নই একটি সফল সমাজের প্রতিষ্ঠা করে। সিসেরোর মতে, ন্যায়ের মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রাকৃতিক আইন, যা মানবতার মৌলিক নৈতিকতা এবং বিবেকের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।  

তিনি মনে করতেন যে, আইন শুধু মানুষের তৈরি নয়, বরং এটি প্রকৃতির নীতি অনুসারে কাজ করা উচিত। সিসেরো আরও উল্লেখ করেন যে, রাষ্ট্র যদি ন্যায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত না হয়, তবে তা একটি অরাজক সমাজে পরিণত হবে। তার দৃষ্টিতে, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা মানব সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখে, এবং রাষ্ট্রের শাসক ও শাসিত উভয়ের জন্য ন্যায়সঙ্গত আচরণের গুরুত্ব অপরিসীম।  

এইভাবে, সিসেরোর চিন্তাধারা আধুনিক রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে তিনি ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক দায়িত্বের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট সম্পর্ক স্থাপন করেন।

৩. টীকা লেখ- ক্রমওয়েল ও রিফরমেশন পার্লামেন্ট।  
উত্তর: টমাস ক্রমওয়েল ছিলেন ইংল্যান্ডের এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা, যিনি অষ্টম হেনরির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। রিফরমেশন পার্লামেন্ট (১৫২৯-১৫৩৬) ছিল একটি উল্লেখযোগ্য সংসদ, যার মাধ্যমে ইংল্যান্ডের চার্চের সংস্কার করা হয়। ক্রমওয়েল এই পার্লামেন্টে আইন প্রণয়ন করেন, যা ক্যাথলিক চার্চের প্রভাব হ্রাস করে এবং ইংল্যান্ডের চার্চকে স্বাধীনতা দেয়।  

রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, ইংল্যান্ডের চার্চ নিজেদের আইন ও নিয়ম প্রতিষ্ঠা করে এবং রাজা হেনরি নিজেকে চার্চের প্রধান ঘোষণা করেন। ক্রমওয়েল সংস্কার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চার্চের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং নতুন ধর্মীয় নীতিমালা প্রতিষ্ঠা করেন। এর ফলে ইংল্যান্ডে প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার কার্যকর হয়।  

ক্রমওয়েল এর নেতৃত্ব এবং দূরদর্শীতা তাকে ইংল্যান্ডের রাজনীতিতে প্রভাবশালী করে তোলে এবং এই রিফরমেশন পার্লামেন্ট ইংল্যান্ডের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

৪. রাষ্ট্রের আধুনিক সার্বভৌমিকতা তত্ত্বের প্রবক্তা কে? জাঁ বোদা সরকারের কটি ও কি কি শ্রেণীবিভাগ করেছেন?  
উত্তর: আধুনিক রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন জঁ বোদিন (Jean Bodin)। তিনি ১৬শ শতকের একজন ফরাসি দার্শনিক ও রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ছিলেন, যিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণাকে বিশদভাবে বিশ্লেষণ করেন। বোদিনের মতে, একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব হলো তার উপর সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকার ধারণা, যা কোনো বাহ্যিক শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। তিনি রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দিতে এবং তার প্রতিষ্ঠিত আইন ও নিয়মাবলী অনুসারে পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন।  

জঁ বোদিন সরকারী ক্ষমতার শ্রেণীবিভাগ করেছেন তিনটি প্রকারে:  
১. **আদেশিক সরকার (Monarchical Government)**: যেখানে একজন রাজা বা রানি পুরো রাজ্যের শাসক হিসেবে থাকেন এবং রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ এককভাবে তাদের হাতে থাকে।  
২. **গণতান্ত্রিক সরকার (Democratic Government)**: যেখানে জনগণের প্রতিনিধিরা নির্বাচনের মাধ্যমে শাসন করেন এবং রাষ্ট্রের শাসন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ থাকে।  
৩. **অলিগার্কি সরকার (Oligarchical Government)**: যেখানে একটি ছোট অভিজাত শ্রেণি বা গোষ্ঠী রাষ্ট্রের শাসন নিয়ন্ত্রণ করে।  

বোদিনের এই শ্রেণীবিভাগ রাষ্ট্রের বিভিন্ন শাসন ব্যবস্থার মৌলিক কাঠামো বিশ্লেষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।  

৫. চীনের ম্যান্ডারিন ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।  
উত্তর: চীনের ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা একটি প্রশাসনিক কাঠামো ছিল যা প্রাচীন চীন থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:  

১. **কোটাভিত্তিক নিয়োগ**: ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা ছিল কোটাভিত্তিক, যেখানে প্রশাসনিক পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা যাচাই করা হতো।  

২. **সরকারি পরীক্ষা**: সরকারী পরীক্ষাগুলি শিক্ষাগত এবং সাংস্কৃতিক জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হত, যা ম্যান্ডারিনদের বুদ্ধিমত্তা এবং নৈতিকতা যাচাই করত।  

৩. **সাংস্কৃতিক প্রভাব**: ম্যান্ডারিনরা কনফুসিয়ান শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত ছিল, যা প্রশাসনিক নীতিমালা ও শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করত।  

৪. **শৃঙ্খলা ও দায়িত্ব**: ম্যান্ডারিনরা প্রশাসনের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে দায়বদ্ধ ছিল।  

৫. **বৈচিত্র্য**: চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে ম্যান্ডারিনদের ভিন্ন ভিন্ন শাসন কাঠামো ও নীতি ছিল, যা স্থানীয় সংস্কৃতি ও সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।  

৬. **শাসনের অবিচ্ছিন্নতা**: ম্যান্ডারিন ব্যবস্থা প্রাচীন চীনের শাসন ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা তৈরি করেছিল, যা সাম্রাজ্যভিত্তিক শাসনকে সমর্থন করেছিল।  

৬. মৌর্য শাসন ব্যবস্থার উপাদানরূপে অর্থশাস্ত্রের গুরুত্ব আলোচনা করো।  
উত্তর: মৌর্য শাসন ব্যবস্থা ভারতের প্রাচীন ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে অর্থশাস্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। মৌর্য শাসকদের মধ্যে চাণক্য (কৌটিল্য) ছিলেন একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তার রচিত "অর্থশাস্ত্র" গ্রন্থটি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অর্থনীতির ভূমিকা এবং নীতির বিশদ বিশ্লেষণ প্রদান করে।  

১. **রাজস্ব ব্যবস্থা**: মৌর্য সাম্রাজ্যে রাজস্ব আদায়ের একটি সুসংগঠিত ব্যবস্থা ছিল, যা রাজ্যের উন্নয়ন ও সামরিক খরচের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করত। অর্থশাস্ত্র রাজস্ব আদায়ের কৌশল এবং শাসকদের জন্য করের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

২. **বাণিজ্য ও শিল্প**: মৌর্য শাসন আমলে বাণিজ্য এবং শিল্পের উন্নয়ন ঘটে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যক ছিল। চাণক্য বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্বের উন্নতির উপায় হিসেবে বিবেচনা করেন।  

৩. **রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা**: মৌর্য শাসকদের জন্য অর্থশাস্ত্র শাসনের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং দেশ পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।  

৪. **সামরিক ব্যয়**: রাজ্যের সুরক্ষা ও সামরিক খরচের জন্য অর্থশাস্ত্র ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য ছিল।

৫. **সামাজিক কল্যাণ**: মৌর্য রাজত্বের অর্থশাস্ত্র জনগণের কল্যাণের জন্য নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়নে সাহায্য করত, যা সাম্রাজ্যের সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক ছিল।  

এইভাবে, মৌর্য শাসন ব্যবস্থায় অর্থশাস্ত্রের গুরুত্ব বিভিন্ন দিক থেকে সুস্পষ্ট এবং এটি প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

✍️প্রশ্নের মান-৮:

 

 ১. বাড়ানির ফতোয়া-ই-জাহান্দারিতে রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ধারণা কী ছিল তা আলোচনা করো।

উত্তর: বাড়ানি, যিনি ইসলামিক ইতিহাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক, তার "ফতোয়া-ই-জাহান্দারি" গ্রন্থে রাজতন্ত্র এবং রাষ্ট্রনীতির মৌলিক ধারণাগুলি বর্ণনা করেছেন। এই রচনায় তিনি রাজতন্ত্রের কাঠামো এবং তার কার্যক্রমের ভিত্তি তুলে ধরেন। রাজতন্ত্রের মধ্যে জনগণের কল্যাণ এবং ধর্মীয় নীতির প্রতি দায়িত্বশীলতার ওপর তার বিশেষ জোর ছিল।

রাজতন্ত্রের মৌলিক নীতিমালা:
বাড়ানির মতে, রাজতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের সেবা করা এবং তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। রাজা শুধুমাত্র একজন শাসক নন, তিনি জনগণের সেবক। এ কারণে রাজতন্ত্রকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। রাজা যদি জনগণের স্বার্থ রক্ষা না করেন তবে তিনি রাজ্যের সমর্থন হারাবেন। রাজত্বের ক্ষেত্রে ন্যায়ের ভূমিকা অপরিহার্য।

রাজা ও জনগণের সম্পর্ক:
রাজা এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ককে বাড়ানি একটি মৌলিক দিক হিসেবে গণ্য করেন। রাজা জনগণের সমস্যার সমাধান করতে এবং তাদের কল্যাণে কাজ করতে বাধ্য। এ জন্য রাজাকে নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত হতে হবে। রাজা যদি জনগণের বিশ্বাস ভঙ্গ করেন, তবে তার রাজত্ব বিপদে পড়তে পারে। বাড়ানি রাজাকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে তাকে জনগণের জন্য ন্যায়পরায়ণ এবং সদয় হতে হবে।

শক্তি ও ন্যায়:
রাজত্বের শক্তি ধর্মীয় আদেশের ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। বাড়ানি রাজাকে বলছেন, রাজা যদি ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত হন তবে তার রাজত্ব স্থায়ী হবে না। ধর্মীয় আদর্শ অনুযায়ী রাজাকে কাজ করতে হবে। শক্তির প্রয়োগ যখন জনগণের স্বার্থে হয়, তখন তা মঙ্গলজনক।

রাষ্ট্রের কার্যকারিতা:
রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজাকে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাজত্বের স্থায়িত্ব এবং জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য ন্যায় ও ধর্মের ভিত্তিতে কাজ করা অপরিহার্য। রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থে ন্যায়ের মাপকাঠিতে চলতে হবে।

নেতৃত্বের গুণাবলী:
রাজা হওয়ার জন্য অবশ্যই কিছু গুণাবলী থাকা দরকার। রাজাকে হতে হবে ন্যায়পরায়ণ, দয়ালু এবং জ্ঞানী। একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের জন্য রাজা যদি জনগণের কল্যাণে কাজ করেন তবে রাজত্বও সফল হবে। রাজা হিসেবে তাকে সচেতন থাকতে হবে যে তার সিদ্ধান্তের ফলে জনগণের জীবনে কী প্রভাব পড়বে।

সমাপনী মন্তব্য:
বাড়ানি "ফতোয়া-ই-জাহান্দারি" গ্রন্থের মাধ্যমে রাজতন্ত্রের নৈতিক ভিত্তি এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতিগুলি বিশ্লেষণ করেছেন। রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে ন্যায়, ধর্ম এবং জনগণের কল্যাণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। রাজা এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে ন্যায় এবং সদয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
                                 ---
 

২. হেরোডোটাস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ও তাঁর রাষ্ট্রচিন্তা সম্পর্কে আলোকপাত করো।

উত্তর: হেরোডোটাস (Herodotus) একজন প্রাচীন গ্রীক ইতিহাসবিদ, যিনি "ইতিহাসের পিতা" হিসেবে পরিচিত। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৪ সালে বিয়োনে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর মূল কাজ "ইতিহাস" (Histories) প্রাচীন ইতিহাস, যুদ্ধ, সংস্কৃতি এবং জনগণের জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

কাজের মূল বিষয়বস্তু:
হেরোডোটাসের কাজ মূলত গ্রীক এবং পার্সিয়ান যুদ্ধের কাহিনী বর্ণনা করে। তিনি শুধুমাত্র যুদ্ধের ঘটনাবলী নয়, বরং যুদ্ধের পেছনে কাজ করা কারণ এবং প্রভাব সম্পর্কে বিশ্লেষণ করেছেন। এই গ্রন্থে তিনি বিভিন্ন জাতি, তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বিবরণ দিয়েছেন, যা ইতিহাসের জন্য এক মূল্যবান সম্পদ।

মানব আচরণের গুরুত্ব:
হেরোডোটাস মানব আচরণের বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইতিহাসের ঘটনাবলীকে ব্যাখ্যা করেন। তার মতে, ইতিহাসের ঘটনাবলী শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলস্বরূপ নয়, বরং মানবিক স্বভাব এবং সামাজিক সম্পর্কের ফলেও প্রভাবিত হয়। তিনি বিশ্বাস করেন যে মানুষের সিদ্ধান্ত এবং কার্যকলাপ ইতিহাসকে তৈরি করে।

ধর্মের প্রভাব:
হেরোডোটাসের রাষ্ট্রচিন্তায় ধর্মের গুরুত্ব অত্যন্ত স্পষ্ট। তিনি দেখান যে ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুশাসন রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তি তৈরি করে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মীয় নীতি এবং জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। ধর্ম রাজ্যের কর্মকাণ্ডে এক শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।

গণতন্ত্রের গুরুত্ব:
তিনি গণতন্ত্রের গুরুত্বকেও আলোকপাত করেছেন। তার মতে, একটি সফল রাষ্ট্রের জন্য নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। জনগণ যদি শাসনে অংশগ্রহণ করে তবে তা রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। রাজ্যের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সরকারের দায়িত্ব পালন করা উচিত।

বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি:
হেরোডোটাস ইতিহাস লেখার পদ্ধতিতে একটি বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে ইতিহাস লেখার সময় সত্যিকারের তথ্য এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণকে একত্রিত করা প্রয়োজন। তার কাজ ভবিষ্যৎ ইতিহাসবিদদের জন্য একটি আদর্শ স্থাপন করে।

সমাপনী মন্তব্য:
হেরোডোটাসের চিন্তাধারা আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করেছে। তাঁর কাজ ইতিহাস এবং রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানব জীবন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে।
                                ---

৩. অ্যারিস্টোটলের আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণাটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: অ্যারিস্টোটল (Aristotle) একজন প্রখ্যাত গ্রীক দার্শনিক, যিনি "পলিটিক্স" (Politics) নামে একটি মৌলিক কাজ রচনা করেন। তার আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সকল নাগরিকের কল্যাণ এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা হয়।

রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য:
অ্যারিস্টোটলের মতে, রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য হলো নাগরিকদের সুখ এবং কল্যাণ অর্জন করা। রাষ্ট্রের কাঠামো নাগরিকদের স্বার্থ এবং কল্যাণের ভিত্তিতে গঠিত হওয়া উচিত। রাষ্ট্রকে সকল নাগরিকের মধ্যে নৈতিকতা এবং গুণাবলীর বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করতে হবে।

শ্রেণীবিভাগ:
তিনি রাষ্ট্রকে তিনটি মূল শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন: রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র এবং গণতন্ত্র। রাজতন্ত্রের মধ্যে একজন রাজা বা রাজকীয় শ্রেণী রাষ্ট্র পরিচালনা করে, অভিজাততন্ত্রে একটি বিশেষ শ্রেণী শাসক হিসেবে কাজ করে এবং গণতন্ত্রে জনগণ সরাসরি অংশগ্রহণ করে।

নাগরিকের ভূমিকা:
অ্যারিস্টোটলের মতে, নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রাষ্ট্রের স্থায়িত্বের জন্য অপরিহার্য। নাগরিকরা রাষ্ট্রের সম্পদ এবং সামাজিক পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাদের নৈতিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা রাষ্ট্রের উন্নতি সাধনে সাহায্য করে।

নৈতিকতার গুরুত্ব:
রাষ্ট্রের কার্যক্রমের ভিত্তিতে নৈতিকতার গুরুত্ব রয়েছে। রাষ্ট্রকে পরিচালিত করার জন্য শাসকের নৈতিক দায়িত্ব পালন করা উচিত। রাজা বা শাসকের উচিত জনগণের কল্যাণে কাজ করা এবং নৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে শাসন পরিচালনা করা।

সঠিক নেতৃত্ব:
রাষ্ট্রের সঠিক পরিচালনার জন্য নেতৃত্বের দায়িত্বশীলতা অপরিহার্য। রাজা বা শাসকের উচিত জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং তাদের স্বার্থে কাজ করা। নেতৃত্বের গুণাবলী রাষ্ট্রের কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

উপসংহার:
অ্যারিস্টোটলের চিন্তা আধুনিক রাজনৈতিক দর্শনের জন্য একটি ভিত্তি স্থাপন করেছে। তার আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা, জনগণের কল্যাণ এবং নৈতিকতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সক্ষম। তার চিন্তাধারা আধুনিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপরেখা প্রদান করে।
                                 ---

৪. আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদ হিসেবে নিকোলো ম্যাকিয়াভেলির ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি (Niccolò Machiavelli) একজন প্রখ্যাত রাষ্ট্রচিন্তাবিদ এবং রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, যিনি রেনেসাঁর যুগে ইতালিতে বসবাস করতেন। তাঁর লেখা "দ্য প্রিন্স" (The Prince) আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার একটি মৌলিক কাজ, যা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক কৌশলের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব:
ম্যাকিয়াভেলি রাজনীতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের স্থায়িত্বের গুরুত্ব উল্লেখ করেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, রাজা বা শাসকের উচিত কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রয়োজনে অ-নৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। রাজ্যের স্থায়িত্বের জন্য এটি অপরিহার্য, কারণ বাস্তব জীবনে পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে নৈতিকতা সবসময় অনুসরণ করা সম্ভব নয়।

বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি:
ম্যাকিয়াভেলির ভাবনা বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে। তিনি বলেন যে, রাজনীতিকে নৈতিকতার চেয়ে প্রায়োগিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত করতে হবে। রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিটি সিদ্ধান্ত বাস্তব পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে নেওয়া উচিত।

জনগণের সমর্থন:
রাজ্যের স্থায়িত্বের জন্য জনগণের সমর্থন অর্জন করা অপরিহার্য। ম্যাকিয়াভেলি বলেন, রাজা যদি জনগণের কল্যাণে কাজ করেন তবে তিনি জনগণের আস্থা ও সমর্থন পাবেন। জনগণের স্বার্থের জন্য কাজ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

নেতৃত্বের নৈতিকতা:
ম্যাকিয়াভেলি রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে নৈতিকতার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি মনে করেন যে, একজন সফল শাসককে কখনো কখনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হতে পারে, তবে তাঁর উচিত জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল থাকা।

উপসংহার:
ম্যাকিয়াভেলির কাজ আধুনিক রাষ্ট্রের কৌশলগত দিকগুলোকে বোঝাতে সাহায্য করে এবং রাজনীতির জটিলতা ও বাস্তবতাকে বিশ্লেষণ করে। তার চিন্তাধারা আধুনিক রাজনৈতিক তত্ত্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কৌশল এবং শক্তির সঠিক ব্যবহার রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য অপরিহার্য।
                                 ---