📚অষ্টম শ্রেণির পরিবেশ বিজ্ঞানপ্রশ্নোত্তর:অধ্যায়-১: ভৌত পরিবেশ:তাপ📚
✍️ প্রশ্নের মান-১:
১. জল বরফে পরিণত হলে তার আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয়?
উত্তর : আয়তন বাড়ে।
২. জল অপেক্ষা বরফের ঘনত্ব কম না বেশি?
উত্তর : কম।
৩. পিতলকে গলিয়ে তরলে পরিণত করলে তার আয়তনের কীরূপ পরিবর্তন হয়?
উত্তর : আয়তন কমে।
৪. চাপ বাড়ালে বরফের গলনাঙ্কের কীরূপ পরিবর্তন হয়?
উত্তর : গলনাঙ্ক কমে।
৫. জলের আপেক্ষিক তাপ কত?
উত্তর : জলের আপেক্ষিক তাপ 1 ক্যালোরি/গ্রাম °C।
৬. এমন একটি পদার্থের নাম লেখো যার তিনটি অবস্থা নেই।
উত্তর : আয়োডিন।
৭. কঠিন থেকে তরলে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে কী বলে?
উত্তর : গলন।
৮. তরল থেকে কঠিনে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে কী বলে?
উত্তর : কঠিনীভবন।
৯. তরল থেকে বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে কী বলে?
উত্তর : বাষ্পীভবন।
১০. CGS পদ্ধতিতে তাপের একক কী?
উত্তর : ক্যালোরি।
১১. SI পদ্ধতিতে তাপের একক কী?
উত্তর : জুল।
১২. জুল ও ক্যালোরির সম্পর্ক কী?
উত্তর : 1 ক্যালোরি = 4.2 জুল।
১৩. কোন্ পদার্থের আপেক্ষিক তাপ সবচেয়ে বেশি?
উত্তর : জলের আপেক্ষিক তাপ সবচেয়ে বেশি।
১৪. বাষ্প থেকে তরলে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে কী বলে?
উত্তর : ঘনীভবন।
১৫. প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উন্নতায় কঠিন পদার্থের গলন হয় তাকে কী বলে?
উত্তর : গলনাঙ্ক।
১৬. প্রমাণ চাপে যে নির্দিষ্ট উন্নতায় তরল পদার্থ কঠিনে পরিণত হয় তাকে কী বলে?
উত্তর : হিমাঙ্ক।
১৭. বরফের গলনাঙ্ক কত?
উত্তর : 0°C।
১৮. জলের হিমাঙ্ক কত?
উত্তর : 0°C।
১৯. ধাতু সংকরের গলনাঙ্ক সেটির উপাদানগুলির গলনাঙ্ক অপেক্ষা কম না বেশি?
উত্তর : কম।
২০. নির্দিষ্ট অনুপাতের বরফ ও লবণের মিশ্রণকে কী বলে?
উত্তর : হিমমিশ্রণ।
২১. হিমমিশ্রণের একটি ব্যবহার উল্লেখ করো।
উত্তর : মাছ, মাংস সংরক্ষণের জন্য হিমমিশ্রণ ব্যবহার করা হয়।
২২. অবস্থার পরিবর্তনের জন্য যে তাপ গৃহীত বা বর্জিত হয় তাকে কী বলে?
উত্তর : লীন তাপ।
২৩. বরফ গলনের লীন তাপ কত?
উত্তর : ৪০ ক্যালোরি/গ্রাম ৷
২৪. 0°C উয়তার 1 গ্রাম বরফকে 0°C উন্নতার 1 গ্রাম জলে পরিণত করতে কত তাপ লাগে?
উত্তর : ৪০ ক্যালোরি।
২৫. ধীরে ধীরে তরলের উপরিতল থেকে বাষ্পীভূত হওয়ার ঘটনাকে কী বলে?
উত্তর : বাষ্পায়ন।
২৬. একটি নির্দিষ্ট চাপে ও একটি নির্দিষ্ট উন্নতায় তরলের সমগ্র অংশ থেকে দ্রুত বাষ্পীভূত হওয়ার ঘটনাকে কী বলে?
উত্তর : স্ফুটন।
২৭. প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে বিশুদ্ধ জলের স্ফুটনাঙ্ক কত?
উত্তর : 100°C।
২৮. তরলের ওপর চাপ বাড়ালে তরলের স্ফুটনাঙ্কের কীরূপ পরিবর্তন হয়?
উত্তর : স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায়।
২৯. বাষ্পায়ন ও স্ফুটনের একটি পার্থক্য লেখো।
উত্তর : বাষ্পায়ন যে-কোনো উষ্ণতায় ঘটে, কিন্তু স্ফুটন একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ঘটে।
৩০. সাধারণ জল ও লবণ জলের মধ্যে কার স্ফুটনাঙ্ক বেশি?
উত্তর : লবণ জলের স্ফুটনাঙ্ক বেশি।
৩১. কোনো পদার্থের সঙ্গে কোনো অশুদ্ধি মেশানো থাকলে পদার্থটির গলনাঙ্ক বাড়ে না কমে?
উত্তর : কমে।
৩২. নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্ক নেই এমন দুটি পদার্থের নাম লেখো।
উত্তর : মাখন ও চর্বি।
৩৩. দার্জিলিং-এ জলের স্ফুটনাঙ্ক কম কেন?
উত্তর : দার্জিলিং-এ বায়ুর চাপ কম, সেইজন্য দার্জিলিং-এ জলের স্ফুটনাঙ্ক কম।
৩৪. জলের বাষ্পীভবনের লীন তাপ কত?
উত্তর : জলের বাষ্পীভবনের লীন তাপ 537 ক্যালোরি/গ্রাম।
৩৫. তাপ পরিবহণে সক্ষম এমন একটি অধাতুর নাম লেখো।
উত্তর : গ্রাফাইট তাপের সুপরিবাহী।
৩৬. দুটি তাপের কুপরিবাহী পদার্থের নাম লেখো।
উত্তর : কাঠ ও কাচ তাপের কুপরিবাহী। ৩৭. পরিচলন স্রোতের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : ভূপৃষ্ঠে যে বায়ুপ্রবাহ হয় তা একটি পরিচলন স্রোত।
৩৮. মাধ্যম ছাড়া তাপ সঞ্চালিত হয় কোন্ পদ্ধতিতে?
উত্তর : বিকিরণ পদ্ধতিতে।
৩৯. সূর্য থেকে পৃথিবীতে তাপ কোন্ পদ্ধতিতে আসে?
উত্তর : বিকিরণ পদ্ধতিতে।
৪০. গরম পানীয় অনেকক্ষণ গরম রাখতে কী ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : থার্মোফ্লাস্ক।
৪১. গলনের ফলে আয়তন কমে এরূপ দুটি পদার্থের নাম লেখো।
উত্তর : বরফ এবং ঢালাই লোহা।
৪২. গলনের ফলে আয়তনে বাড়ে এমন দুটি পদার্থের নাম লেখো।
উত্তর : মোম, লোহা।
৪৩. হিমমিশ্রণ তৈরি করতে বরফের সঙ্গে কী মেশাতে হয়?
উত্তর : লবণ।
৪৪. একটি তাপের সুপরিবাহী পদার্থের নাম লেখো।
উত্তর : রুপো।
৪২. চাপ বাড়ালে বরফের গলনাঙ্কের কীরূপ পরিবর্তন হয়?
উত্তর : গলনাঙ্ক কমে যায়।
৪৩. হিমমিশ্রণে বরফ ও লবণের অনুপাত কত?
উত্তর : 3:1
৪৪. শহরে বেশি কুয়াশা দেখা যায় কেন?
উত্তর : শহরের বায়ুমণ্ডলে বেশি ধুলো থাকায় শহরে বেশি কুয়াশা দেখা যায়।
৪৫. কঠিন মাধ্যমে কোন্ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়?
উত্তর : পরিবহণ পদ্ধতিতে।
৪৬. তরল ও গ্যাসীয় মাধ্যমে তাপ কোন্ পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়?
উত্তর : পরিচলন পদ্ধতিতে।
৪৭. কোন্ পদ্ধতিতে তাপ দ্রুত সঞ্চালিত হয়?
উত্তর : বিকিরণ পদ্ধতিতে।
৪৮. শহরাঞ্চলে বেশি কুয়াশা দেখা যায় কেন?
উত্তর : শহরাঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে বেশি পরিমাণ ধূলিকণা থাকায় শহরাঞ্চলে বেশি কুয়াশা সৃষ্টি হয়।
৪৯. বায়ুপ্রবাহ হয় কোন্ স্রোতের জন্য?
উত্তর : পরিচলন স্রোতের জন্য।
৫০. তাপ পরিমাপ করার যন্ত্রের নাম কী?
উত্তর : ক্যালোরিমিটার।
৫১. বাষ্পায়ন ও স্ফুটনের মধ্যে কোন্টি সশব্দে হয়?
উত্তর : স্ফুটন।
৫২. জলে লবণ দ্রবীভূত করলে স্ফুটনাঙ্কের কী পরিবর্তন হবে?
উত্তর : দ্রবণের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যাবে।
৫৩. হিমমিশ্রণ কোন্ নীতিতে কাজ করে?
উত্তর : কোনো বিশুদ্ধ পদার্থে অপদ্রব্য মিশ্রিত করলে পদার্থটির গলনাঙ্ক হ্রাস পায়।
৫৪. কোনো তরলের স্ফুটনাঙ্ক উল্লেখ করার সময় চাপ উল্লেখ করা উচিত কেন?
উত্তর : চাপ বাড়ালে তরলের স্ফুটন প্রক্রিয়া বাধা পেয়ে স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায়। আবার চাপ কমালে তরলের বাষ্পে পরিণত হতে সুবিধা হয়। অর্থাৎ স্ফুটনাঙ্ক কমে যায়। তাই তরলের স্ফুটনাঙ্ক উল্লেখ করার সময় চাপ উল্লেখ করা উচিত।
✍️ প্রশ্নের মান-২/৩:
১. আপেক্ষিক তাপকে ‘আপেক্ষিক' বলা হয় কেন?
উত্তর : কোনো পদার্থের আপেক্ষিক তাপ নির্ভর করে পদার্থটির উপাদানের প্রকৃতির ওপর। জলের আপেক্ষিক তাপের মান 1 ধরা হয়। জলের আপেক্ষিক তাপের সঙ্গে তুলনা করে অন্যান্য পদার্থের আপেক্ষিক তাপ, S = Q/mt-এর মান নির্ণয় করা হয়; যেখানে Q = পদার্থ কর্তৃক গৃহীত বা বর্জিত তাপ, m = পদার্থের ভর, t = উষ্ণতার পরিবর্তন। এখন তুলনীয় পদার্থটি জল ছাড়া অন্য কিছু হলে নমুনা পদার্থটির আপেক্ষিক তাপের মানও আলাদা হবে। যেহেতু কোনো বস্তুর আপেক্ষিক তাপের মান অপর কোনো পদার্থের আপেক্ষিক তাপের সঙ্গে তুলনা করে পরিমাপ করা হয়, তাই 'আপেক্ষিক' শব্দটি লেখা হয়।
২. পদার্থের গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্ক কাকে বলে?
গলনাঙ্ক : কোনো নির্দিষ্ট চাপে যে উষ্ণতায় কোনো কঠিন পদার্থ গলে তরলে পরিণত হয়, সেই উন্নতাকে ওই চাপে ওই পদার্থের গলনাঙ্ক (melting point) বলে। যেমন — প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে বিশুদ্ধ বরফের গলনাঙ্ক 0°C বা 273K।
হিমাঙ্ক : কোনো নির্দিষ্ট চাপে যে উষ্ণতায় কোনো তরল পদার্থ জমে কঠিনে পরিণত হয়, সেই উন্নতাকে ওই চাপে ওই পদার্থের হিমাঙ্ক (freezing point) বলে। যেমন — প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে বিশুদ্ধ জলের হিমাঙ্ক 0°C বা 273K।
৩. হিমমিশ্র কাকে বলে? উদাহরণ দাও। ব্যবহার লেখ।
গলনাঙ্ক : মিশ্র পদার্থের গলনাঙ্ক বিশুদ্ধ পদার্থের গলনাঙ্কের তুলনায় কম হয়। যেসব মিশ্রণের সাহায্যে মূল পদার্থের গলনাঙ্কের চেয়ে অনেক কম উষ্ণতা সৃষ্টি করা যায়, সেসব মিশ্রণকে হিমমিশ্র বলে। বরফ ও সাধারণ লবণ 3:1 ওজন অনুপাতে মিশিয়ে যে হিমমিশ্র পাওয়া যায় তার উষ্ণতা – 23°C হয়।
মাছ-মাংস সংরক্ষণের জন্য হিমমিশ্র ব্যবহার করা হয়।
৪. গলনাঙ্কের মান কী কী বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : কোনো কঠিন পদার্থের গলনাঙ্কের মান নির্ভর করে -
1. পদার্থের ওপর প্রযুক্ত চাপ এবং
2. পদার্থটিতে অপদ্রবোধ উপস্থিতির ওপর।
৫. জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে—এই ঘটনার সুবিধা উল্লেখ করো।
অথবা,
শীতপ্রধান দেশে জলাশয়গুলির উপরিতলে বরফ জমে গেলেও জলচর প্রাণীরা বেঁচে থাকে কীভাবে?
উত্তর : জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে, তাই বরফের ঘনত্ব জলের তুলনায় কম। শীতপ্রধান দেশে তাপমাত্রা 0°C -এর নীচে নেমে গেলে জলাশয়গুলির ওপরের দিকের জল জমে বরফ হয়ে ভাসতে থাকে। বরফ ও জল উভয়েই তাপের কুপরিবাহী হওয়ায়, নীচে থাকা জল জমে কঠিন বরফে পরিণত হতে পারে না। ওই জলাশয়গুলির শীতপ্রধান দেশের জলাশয়গুলির ওপরে বরফ জমলেও নীচে জল থাকে ওপরে বরফের আস্তরণ থাকলেও নীচে জল থাকে। ফলে জলচর প্রাণীরা প্রচণ্ড শীতেও বেঁচে থাকতে পারে।
৬. লীন তাপ কাকে বলে? CGS পদ্ধতিতে এর একক লেখো।
উত্তর : প্রমাণ চাপে ও স্থির উষ্ণতায় একক ভরের পদার্থ তার অবস্থার সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে যে পরিমাণ তাপ গ্রহণ করে বা বর্জন করে, সেই তাপকে ওই পদার্থের ওই অবস্থার পরিবর্তনের লীন তাপ বলে।
CGS পদ্ধতিতে এর একক হল ক্যালোরি/গ্রাম।
৭. তরলের বাষ্পায়ন কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : তরলের বাষ্পায়ন যে যে বিষয়ের ওপর নির্ভর করে -
1. উষ্ণতা : তরলের উষ্ণতা বেশি হলে বাষ্পায়ন দ্রুত হয়।
2. তরলের উপর বায়ুপ্রবাহ : তরলের ওপর বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকলে বাষ্পায়ন দ্রুত হয়।
3. তরলের প্রকৃতি : বিভিন্ন তরলের বাষ্পায়নের হার বিভিন্ন হয়। যেমন, জলের তুলনায় স্পিরিট খুব তাড়াতাড়ি বাষ্পীভূত হয়।
4. তরলের ওপর চাপ : তরলের ওপর চাপ কমালে বাষ্পায়ন আরও তাড়াতাড়ি হয়।
5. উপরিতলের ক্ষেত্রফল : যদি তরলের উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেশি হয় তবে বাষ্পায়ন দ্রুত হয়।
৮. ধাতু বা কাচের পাত্র অপেক্ষা মাটির কলশিতে জল রাখলে ঠান্ডা থাকে কেন?
উত্তর : মাটির কলসির গায়ে লাখ লাখ ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। খালি চোখে এই ছিদ্রগুলি দেখা যায় না। ওই ছিদ্রগুলো দিয়ে পানি চুঁইয়ে কলসির বাইরে চলে আসে। তারপর বাষ্প হয়ে আকাশের দিকে উড়ে যেতে চায়। কিন্তু উড়তে গেলে তাপের দরকার হয়। তাপের কারণে পানি বাষ্প হয়। বাষ্প হওয়ার জন্য পানির যে তাপের দরকার, তা মাটির কলসির ভেতরের পানি থেকে আসে। ফলে কলসির ভেতরের পানির তাপ কমে যায় এবং সে কারণে পানি ঠাণ্ডা হতে থাকে।
অপরদিকে পিতলের কলসি বা কাচের জগের গায়ে কোনো ছিদ্র থাকে না। এজন্য পানি বের হতে পারে না। ফলে পানি বাষ্প হয় না। এ কারণে পিতলের কলসি, কাচের পাত্র বা জগের পানি মাটির পাত্রের মতো ঠাণ্ডা হয় না।
৯. কোনো তরলের স্ফুটনাঙ্ক বলতে কী বোঝ?
উত্তর : প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে যে তাপমাত্রায় কোনো তরলের স্ফুটন শুরু হয় ও সমগ্র তরলটি বাষ্পে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত ওই তাপমাত্রা স্থির থাকে, সেই তাপমাত্রাকে ওই তরলের স্ফুটনাঙ্ক বলে।
১০. তরলের স্ফুটনাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে -
(i) তরলের প্রকৃতি : বিভিন্ন তরলের স্ফুটনাঙ্ক বিভিন্ন। যে তরল যত বেশি উদ্বায়ী হবে তার স্ফুটনাঙ্ক তত কম হবে। যে তরল যত কম উদ্বায়ী হবে তার স্ফুটনাঙ্ক তত বেশি হবে। (ii) তরলে দ্রবীভূত পদার্থের উপস্থিতি : তরলে কঠিন পদার্থ দ্রবীভূত থাকলে স্ফুটনাঙ্ক বাড়ে, তরলে গ্যাস দ্রবীভূত থাকলে স্ফুটনাঙ্ক কমে। (iii) তরলের উপর চাপ : তরলের উপর চাপ বাড়ালে স্ফুটনাঙ্ক বাড়ে চাপ কমালে ফুটনাঙ্ক কমে।
১১. গ্রীষ্মকালে কুকুর জিভ বের করে হাঁপায় কেন?
উত্তর : কুকুরের শরীর থেকে ঘাম বের হয় না। জিভ বের করে রাখলে জিভ থেকে জল বাষ্পীভূত হয়। বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ জিভ সরবরাহ করে। ফলে জিভ ঠান্ডা হয় এবং দেহের তাপ কমে যায়। এতে কুকুর আরামবোধ করে। তাই গরমকালে কুকুর জিভ বের করে হাঁপায়।
১২. কুয়াশা কী?
উত্তর : শীতকালের ভোরবেলায় বায়ুমণ্ডলের বিস্তীরঅ্ণঞ্চল হঠাৎ খুব ঠান্ডা হয়ে গেলে ওই অঞ্চলের বায়ু তার মধ্যে থাকা জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়ে যায়। এর পরেও যদি উন্নতা কমে তখন জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, কার্বন কণা ইত্যাদিকে আশ্রয় করে ভাসতে থাকে। একেই কুয়াশা বলে।
১৩. বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা না থাকলে বৃষ্টি হত না — ব্যাখ্যা করো।
অথবা,
মেঘ কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর : ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন উৎসের জল সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুতে মেশে। উষ্ণ, আর্দ্র বায়ু হালকা বলে ওপরে উঠে যায়। ওপরে বায়ুর উষ্ণতা কমতে কমতে শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয়। এই জলকণা বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে আকাশে ভেসে বেড়ায়। ধূলিকণাকে আশ্র করে তৈরি অসংখ্য ভাসমান জলবিন্দু একসঙ্গে থেকে মেঘের সৃষ্টি করে। অর্থাৎ, ধূলিকণা না থাকলে মেঘের সৃষ্টি হত না, ফলে বৃষ্টিও হত না।
১৪. বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা মিলিয়ে যায় কেন?
উত্তর : বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়, ফলে ভূত্বক সংলগ্ন বায়ুর উষ্ণতাও বাড়ে। বর্ধিত উন্নতায় বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত বায়ু পুনরায় অসম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। ফলে, উত্তপ্ত বায়ু থেকে লীন তাপ সংগ্রহ করে কুয়াশা হিসেবে ভাসমান জলবিন্দুগুলি আবার বাষ্পে পরিণত হয়। তাই বেলা বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশা মিলিয়ে যায়।
১৫. বড়ো বড়ো শহরে বা শিল্পাঞ্চলে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয় কেন?
উত্তর : ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত বায়ু পুনরায় অসম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। ফলে, উত্তপ্ত বায়ু থেকে লীন তাপ সংগ্রহ করে কুয়াশা হিসেবে ভাসমান জলবিন্দুগুলি আবার বাষ্পে পরিণত হয়। তাই বেলা বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশা মিলিয়ে যায়।
১৬. সন্ধেবেলার তুলনায় গভীর রাতে শিশির বেশি পড়ে কেন?
অথবা,
সন্ধ্যাবেলা শিশির পড়ে না কিন্তু গভীর রাত্রে শিশির পড়ে কেন?
উত্তর : দিনেরবেলায় সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বস্তুগুলি উত্তপ্ত হয়। ফলে ওই বস্তুগুলির সংলগ্ন বায়ুস্তরও উত্তপ্ত হয়। সূর্যাস্তের পর ভূপৃষ্ঠ তাপ বর্জন করে ঠান্ডা হতে শুরু করে। তখন ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরও ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে থাকে। উষ্ণতা কমতে থাকলে একসময় ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। উষ্ণতা আরও কমলে বায়ু থেকে জলীয় বাষ্প জলকণা হিসেবে আলাদা হয়ে শিশির তৈরি হয়। শিশির পড়ার জন্য এই উপযুক্ত অবস্থা তৈরি হতে বেশ কিছু সময় লাগে। তাই সন্ধেবেলার তুলনায় গভীর রাতে বেশি শিশির পড়ে।
১৭. তাপ সঞ্চালন কাকে বলে? কী কী পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হয়?
উত্তর : পরস্পরের সংস্পর্শে থাকা দুটি বস্তুর মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য থাকলে উষ্ণতর বস্তু থেকে শীতলতর বস্তুর দিকে তাপ প্রবাহিত হয়। আবার একই বস্তুর বিভিন্ন অংশের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য থাকলে উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশেও তাপের প্রবাহ হয়। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তাপের চলাচলকে তাপ সঞ্চালন বলা হয়।
তাপ তিনটি পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হতে পারে, যথা — পরিবহণ, পরিচলন ও বিকিরণ।
১৮. শীতকালে হাতি পায়ে ধুলো মাখে কেন?
উত্তর : হাতি গায়ে ধুলো মাখলে তার গা ও ধুলোর মাঝে একটা বায়ুস্তর তৈরি হয়। আর বায়ু তাপের কুপরিবাহি বলে হাতির শরীরের যে তাপ সেটা বায়ুর স্তর ভেদ করে বাইরে যেতে পারেনা। ফলে হাতির দেহ উষ্ণই থাকে। তাই হাতি শীতকালে গায়ে ধুলো মাখে।
১৯. শীতকালে পাখিরা কখনো কখনো পালক ফুলিয়ে বসে থাকে কেন?
উত্তর : শীতকালে পাখিরা পালক ফুলিয়ে রাখে শরীর গরম রাখার জন্য। পালক ফোলানোর ফলে পালকের ফাঁকে ফাঁকে অতিরিক্ত বায়ুস্তর আবদ্ধ থাকে। বায়ু তাপের কুপরিবাহী বলে পাখীর শরীরের তাপ বাইরে আসতে পারে না। ফলে পাখির শরীর গরম থাকে।
২০. পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের দুটি সীমাবদ্ধতা লেখো।
উত্তর : পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের দুটি সীমাবদ্ধতা হল —
1. এই প্রক্রিয়ার তাপের সঞ্চালন কোনো মাধ্যম ছাড়া সম্ভব নয়।
2. অভিকর্ষহীন স্থানে এই প্রক্রিয়ায় তাপের সঞ্চালন সম্ভব নয়।
২১. পরিচলন স্রোত কাকে বলে?
উত্তর : তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ উত্তপ্ত হলে তার আয়তন প্রসারণের জন্য ঘনত্ব কমে যায়। সুতরাং, উত্তপ্ত তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ হালকা হয়ে ওপরে ওঠে ও ওপরের শীতল ভারী অংশ নীচে নেমে আসে। এর ফলে যে উল্লম্ব চক্রাকার স্রোতের সৃষ্টি হয় তাকে পরিচলন স্রোত বলে।
২২. বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর : বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালনের বৈশিষ্ট্যগুলি -
1. বিকীর্ণ তাপ শূন্যস্থানের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে।
2. বিকীর্ণ তাপ কোনো মাধ্যমের মধ্য দিয়ে চলার সময় ওই মাধ্যমকে উত্তপ্ত করে না, কিন্তু যেসব বস্তুতে বাধাপ্রাপ্ত হয় তাদের উত্তপ্ত করে।
3. বিকিরণ পদ্ধতিতে সবদিকেই তাপ প্রবাহিত হয়।
২৩. থার্মোফ্লাস্কের গঠন বর্ণনা করো।
উত্তর : থার্মোফ্লাস্ক দুই দেয়ালবিশিষ্ট একটি কাচের পাত্র। তার ভিতরের দেয়ালের বাইরের তলে ও বাইরের দেয়ালের ভিতরের তলে রুপোর প্রলেপ থাকে। ফলে দেয়াল দুটি চকচকে হয়। দেয়াল দুটির মাঝখানে যতটা সম্ভব কম ভরের বায়ু রাখা হয়। ফ্লাস্কটির মুখ কুপরিবাহী পদার্থের (যেমন–কর্ক) তৈরি ছিপি দিয়ে বন্ধ করা হয়। যাতে সহজে না ভাঙে সেজন্য পাত্রটিকে স্প্রিং-এর ওপর বসিয়ে একটি ধাতব বা প্লাস্টিকের পাত্রের মধ্যে রাখা হয়। এই পাত্র ও কাচের পাত্রের মাঝের অংশ ফেল্ট, তুলো ইত্যাদি কুপরিবাহী পদার্থ দিয়ে ভরতি থাকে।
২৪. থার্মোফ্লাস্কের কার্যনীতি বর্ণনা করো।
অথবা,
থার্মোফ্লাস্কের মধ্যে গরম পানীয় গরম থাকে আবার ঠান্ডা পানীয় অনেকক্ষণ পর্যন্ত ঠান্ডা থাকে কেন?
উত্তর : থার্মোফ্লাস্কের কার্যনীতিটি হল –
1. পাত্রটি কাচের হওয়ায় এবং কাচ তাপের কুপরিবাহী বলে পরিবহণ প্রণালীতে পাত্র থেকে তাপ সঞ্চালন হয় না।
2. দুই দেয়ালের মধ্যবর্তী অংশ বায়ুশূন্য থাকায় পরিচলন প্রণালীতেও তাপ সঞ্চালন হয় না।
3. দুই দেয়াল পারদ বা রুপোর প্রলেপযুক্ত চক্চকে হওয়ায় বিকিরণ প্রণালীতেও তাপ সঞ্চালন হয় না।
4. পাত্রের মুখে কুপরিবাহী পদার্থের ছিপি থাকার মুখ দিয়েও তাপ সঞ্চালন বন্ধ হয়। কাচপাত্র এবং বাইরের আবরণের মধ্যে কুপরিবাহী ফেল্ট এবং তুলো তাপ আদানপ্রদানকে বাধা দেয়। এইসব উপায়ে তাপের সঞ্চালন বন্ধ করে থার্মোফ্লাস্কে গরম জিনিস অনেকক্ষণ গরম এবং ঠান্ডা জিনিস অনেকক্ষণ ঠান্ডা রাখা সম্ভব হয়।