📚 Bengali Major:Sec-1: বাংলা ব্যাকরণ: Semester -1📚
✍️প্রশ্নের মান-২:
প্রশ্ন (১): নামপদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: বাক্যে ব্যবহৃত বিভক্তিযুক্ত শব্দকে নামপদ বলে। উদাহরণ-এসো বই পড়ি।
প্রশ্ন (২): নামপদ কয়প্রকার ও কী কী?
উত্তর: নামপদ চার প্রকারের। যথা-বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয়।
প্রশ্ন (৩): নিম্নলিখিত পদগুলি কোন্ পর্যায়ের তা লেখো। রবীন্দ্রনাথ, বিশ্রী, তাঁর, পর্যন্ত।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ-বিশেষ্য পদ
বিশ্রী-বিশেষণ পদ
তাঁর-সর্বনাম পদ
পর্যন্ত-অব্যয় পদ।
প্রশ্ন (৪): যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে তাকে কী বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: যে ক্রিয়ার দুটি করে কর্ম থাকে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন-আমাকে একটি গান শোনাও।
প্রশ্ন (৫): নিম্নলিখিত রেখাঙ্কিত পদগুলি নির্ণয় করো।
ক. বৃষ্টিপড়ে টাপুর টুপুর। খ. আমি বই পড়ে।
উত্তর: ক. টাপুর টুপুর-ধ্বন্যাত্মক অব্যয় পদ।
খ. পড়ে-অসমাপিকা ক্রিয়া।
প্রশ্ন (৬): জাতিবাচক বিশেষ্য কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: যে বিশেষ্য পদে কোনো জাতির নাম বোঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্যপদ বলে। উদাহরণ-মানুষ, হিন্দু ইত্যাদি।
প্রশ্ন (৭): নিম্নরেখাঙ্কিত পদগুলি নির্ণয় করো।
ক. মূর্খ তুই এসব কি বুঝবি।
খ. কি জন্যে এখানে আসবি?
উত্তর: ক. মূর্খ-সর্বনামের বিশেষণ। খ. জন্যে-পদান্বয়ী অব্যয়।
প্রশ্ন (৮): সকর্মক এবং অকর্মক ক্রিয়ার একটি করে উদাহরণ দাও।
উত্তর: সকর্মক ক্রিয়া-আমি বই পড়ি। অকর্মক ক্রিয়া-আমি পড়ি। দিয়ে ক্রিয়াপদকে কয়ভাবে ভাগ করা যায়? কী কী?
প্রশ্ন (৯): গঠনভঙ্গীর দিক দিয়ে ক্রিয়াপদকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তর: গঠনভঙ্গীর দিক দিয়ে ক্রিয়াপদকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-মৌলিক ক্রিয়া, প্রযোজিকা ক্রিয়া, নামধাতুজ ক্রিয়া, সংযোগমূলক ক্রিয়া এবং যৌগিক ক্রিয়া।
প্রশ্ন (১০): বাক্যে অন্যপদের বিচারে ক্রিয়াপদ কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর: বাক্যে অন্যপদের বিচারে ক্রিয়াপদ তিন প্রকারের। যথা-সকর্মিকা,অকর্মিকা ও দ্বিকর্মিকা।
প্রশ্ন (১১): ক্রিয়ার বিশেষণ কাকে বলে? কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর: কোনো ক্রিয়া কী অবস্থায় কোথায় কখন কীরূপে সম্পন্ন হয়, যে বিশেষণ পদ তা জানিয়ে দেয় তাকে ক্রিয়ার বিশেষণ পদ বলে।
ক্রিয়ার বিশেষণ তিন প্রকারের। যথা-অবস্থাবাচক, কালবাচক এবং স্থানবাচক।
✍️প্রশ্নের মান -৫/১০:
১.পদ কাকে বলে? বাংলা ভাষার পদের শ্রেণী বিভাগ করে যে কোনো দুটি মূল পদকে নিয়ে বিশদে আলোচনা কর।
উত্তর: শব্দ বা ধাতু বিভক্তিযুক্ত হয়ে বাক্যে স্থান লাভের যোগ্যতা লাভ করলে বিভক্তি যুক্ত সেই শব্দ বা ধাতুকে পদ বলে। যেমন-'এসো বই পড়ি'। এখানে তিনটি একক, 'এসো', 'বই' এবং 'পড়ি'। এই তিনটি শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে বলে এগুলি হল এক একটি পদ।
বাংলা ভাষায় মোট পদের বিভাগ পাঁচটি। এগুলো হলো -
বিশেষ্য,বিশেষণ,সর্বনাম,অব্যয় ও ক্রিয়াপদ।
উপরোক্ত শ্রেণী বিভাগের বিশেষ্য এবং বিশেষণ সম্পর্কে আলোচিত হল-
👉 বিশেষ্য:
যে শব্দে কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, জাতি, গুণ, ধর্ম, অবস্থা, কাজ, সমষ্টি ইত্যাদির নাম বোঝায়, তাকে বিশেষ্য পদ বলে। যেমন-রবীন্দ্রনাথ, সোনা ইত্যাদি। বিশেষ্য পদকে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
ক. সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্যপদে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, স্থান, দেশ, নদী, পর্বত, সমুদ্র, গ্রন্থ, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির বিশেষ নাম বোঝায় তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন-রামকৃষ্ণদেব (বিশেষ্য একজন মানুষের নাম/অবতারবরিষ্ঠ), গঙ্গা(একটি নদীর নাম) ইত্যাদি।
খ. জাতিবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্যপদে কোনো জাতি বা এক ধর্ম বিশিষ্ট সকল ব্যক্তি বস্তু বা প্রাণীকে বোঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন-'সবার উপরে মানুষ সত্য' (এক শ্রেণীর জীবের নাম মানুষ), আমি হিন্দু ('হিন্দু' এক শ্রেণীর ধর্মের নাম) ইত্যাদি।
গ. বস্তুবাচক বিশেষ্যঃ যে বিশেষ্যপদে সাধারণভাবে কোনো জিনিসের নাম বুঝায়, তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন-আমার অনেক টাকা চাই ('টাকা' এখানে বস্তু),আমি খাটে শুয়ে থাকি ('খাট' এখানে বস্তু) ইত্যাদি।
ঘ. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্যপদে কোনো জাতিবাচক বিশেষ্যের সমষ্টি বোঝায়, তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন-বাসে খুব ভিড় ('ভিড়' অর্থে অনেক সমষ্টি লোকের সমাগম), আবার, জনতার চাপে সরকার পিছু হটায় ('জনতা' বলতে এখানে বহু লোকের সমষ্টি বোঝায়)।
ঙ. সংখ্যাবাচক বিশেষ্য: এক, দুই, তিন প্রভৃতি সংখ্যাবাচক শব্দগুলি বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃতহলে তখন তাকে সংখ্যাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন-উনিশে আর বিশে কী এমন তফাৎ?
চ. গুণবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্যপদে প্রাণী বা বস্তুর দোষ, গুণ, ধর্ম, প্রভৃতি ইত্যাদি বোঝায় তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলা হয়। যেমন-মেয়েটির চমৎকার বুদ্ধি(গুণ বোঝাচ্ছে 'বুদ্ধি' পদটিতে)।
ছ. অবস্থাবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্যপদে প্রাণী বা বস্তুর অবস্থা বোঝায় তাকেই অবস্থাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন- 'দারিদ্র্যে' নাহিক ভয়', (দারিদ্র্যতা এখানে অবস্থা বোঝাচ্ছে)।
জ. ভাববাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্যপদে প্রাণীর মনের কোনো বিশেষ ভাব বোঝায় তাকেই ভাববাচক বিশেষ্য বলে। যেমন-ক্রোধ আমাদের চরম শত্রু। ('ক্রোধ' এখানে মনের ভাব প্রকাশ করছে)।
ঝ. ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য: যে বিশ্যেপদে কোনো কাজের নাম বোঝায় তাকেই ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন-রোদনেতে কী আর ফলিবে? ('রোদনেতে' ক্রিয়ার নাম বোঝাচ্ছে)।
👉বিশেষণ:
• যে পদ বিশেষ্যপদের গুণ, ধর্ম, অবস্থা, পরিমাণ, ক্রম, সংখ্যা ইত্যাদি জানায় তবে তাকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন- চমৎকার ছেলে। এখানে 'ছেলে', বিশেষ্যপদ, কিন্তু 'চমৎকার' শব্দটি ছেলেটির 'গুণ' বোঝাচ্ছে, তাই এটি একটি বিশেষণ পদ।
বিশেষণ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। যেগুলি হল-
ক. গুণবাচক: যে বিশেষণ বিশেষ্যের গুণটি নির্দিষ্ট করে প্রকাশ করে তাকে গুণবাচক বিশেষণ বলে। যেমন-রেওয়াজী কণ্ঠ। এখানে কণ্ঠের গুণ বোঝাতে 'রেওয়াজী' পদটি বিশেষণ পদ রূপে প্রযুক্ত হয়েছে।
খ. অবস্থাবাচক: যে বিশেষণ বিশেষ্যের অবস্থার পরিচয় বহন করে তাকে অবস্থাবাচক বিশেষ বলে। যেমন-ফুটন্ত দুধ। 'দুধ' বিশেষ্যের অবস্থা বোঝাচ্ছে 'ফুটন্ত' পদের দ্বারা। তাই 'ফুটন্ত' পদটি বিশেষণ পদ।
গ. পরিমাণবাচক: যে বিশেষণ বিশেষ্যের পরিমাণটুকু বুঝিয়ে দেয় তাকে পরিমাণবাচক বা মাত্রাবাচক বিশেষণ বলে। যেমন-পরীক্ষায় সফল হতে গেলে দ্বিগুণ পরিশ্রম চাই। এখানে 'দ্বিগুণ' পদটির দ্বারা পরিমাণটি প্রকাশ করছে।
ঘ. সংখ্যাবাচক: যে পদের দ্বারা বিশেষ্যের সংখ্যাকে প্রকাশ করে, তাকে সংখ্যাবাচক বিশেষণ বলে। যেমন-লক্ষ যুগ।
ঙ. পূরণবাচক: যে পদের দ্বারা বিশেষ্যের পূরণ বাচক অবস্থাকে বোঝায়, তাকে পূরণবাচক বিশেষণ বলে। যেমন-নবমী নিশিত।
চ. বর্ণবাচক: যে পদ বিশেষ্যের বর্ণকে প্রকাশ করে, তাকে বর্ণবাচক বিশেষণ বলে। যেমন-কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আমার নাচন।
ছ. সংজ্ঞাবাচক: সংজ্ঞাবাচক উত্তর তদ্ধিত প্রত্যয় যোগে গঠিত বিশেষণকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষণ বলে। যেমন-ঢাকাই মসলিন ছিল ভারতের গৌরব।
জ. উপাদানবাচক: বিশেষ্যটি কোন উপাদানে গতি যদি কোনো পদ জানিয়ে যায় তাহলে তা উপাদানবাচক বিশেষণ হয়। যেমন-কাঁকুড়ে পথ।
ঝ. প্রশ্নবাচক: যে পদের দ্বারা বিশেষ্যের প্রশ্নবোধক অবস্থাকে বোঝায়, তাকে প্রশ্নবাচক বিশেষণ হয়। যেমন-কোন বইখানা চাও?
ঞ. সর্বনামীয় বিশেষণ: সর্বনামকে বিশেষণ রূপে প্রয়োগ করলে তাকে সর্বনামীয় বিশেষণ বলে। যেমন-কোনো কোনো ছেলে ফাঁকি দেয় বইকি।
ট. অব্যয়ের বিশেষণ: যে বিশেষণ পদে অব্যয়ের দোষ, গুণ অবস্থা বোঝায়, তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে। যেমন-ধিক ধিক ওরে শত ধিক তোকে।
ঠ. বিশেষণের বিশেষণ: যে বিশেষণ পদে অন্য একটি বিশেষণ পদের দোষ গুণ অবস্থা বোঝায়, তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে, যেমন-বড় অন্ধকার রাত।
ড. বিশেষ্যের বিশেষণ: যে বিশেষণ পদে বিশেষ্যের দোষ গুণ অবস্থা বোঝায়, তাকে বিশেষ্যের বিশেষণ পদ বলে। যেমন-অন্ধকার রাত।
ঢ. ক্রিয়ার বিশেষণ: যে বিশেষণ পদে ক্রিয়াপদের দোষ গুণ অবস্থা বোঝায় তাকে ক্রিয়ার বিশেষণ বলে। যেমন-ধীরে ধীরে পড়ো।
২.শব্দ ও পদের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো। বাংলা ভাষায় পদের শ্রেণী বিভাগ করে যে কোনো দুটি মূল পদকে নিয়ে বিশদে আলোচনা করো।
উত্তর: একাধিক বর্ণ সুষ্ঠুভাবে যোগ করে অর্থপূর্ণ ও শ্রুতিমধুর যে কথাটি পাওয়া যায়, তার নাম শব্দ। অন্যদিকে শব্দ বা ধাতু বিভক্তি যুক্ত হয়ে বাক্যে স্থানলাভের যোগ্যতা গেলে বিভক্তিযুক্ত সেই শব্দ বা ধাতুকে পদ বলা হবে। যেমন-'বীণা' একটি শব্দ। কিন্তু যখন বিভক্তি যুক্ত হয়ে বাক্যে প্রয়োগ করা হচ্ছে তখন পদ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলা ভাষায় মোট পদের বিভাগ পাঁচটি। এগুলো হলো-
বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় ও ক্রিয়া।
উপরোক্ত শ্রেণী বিভাগের সর্বনাম ও অব্যয়ের সম্পর্কে আলোচিত হল-
👉সর্বনাম:
• যে পদ বিশেষ্য পদের পরিবর্তে বসে বিশেষ্যেরই ভাব বোঝায় তাকে সর্বনাম পদ বলে। যেমন-'শ্যাম বাজারে গেল। শ্যাম ফল কিনল। তারপর শ্যাম বাড়ি ফিরে এল।' এখানে শ্যাম সর্বনামটি বারবার ব্যবহার করায় শ্রুতি সুখকর হচ্ছে না। কিন্তু যদি আমরা বলি-'শ্যাম বাজারে গেল। সে ফল কিনল। তারপর সে বাড়ি ফিরে এল।'এই 'শ্যাম' এর পরিবর্তে 'সে' ব্যবহারই হয় সর্বনাম পদ।
• সর্বনাম পদকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
ক. ব্যক্তিবাচক সর্বনাম: যে সর্বনামে কোনো ব্যক্তিকে বোঝায় সেই সর্বনাম হয় ব্যক্তিবাচক সর্বনাম পদ। যেমন-আমি, আমরা ইত্যাদি।
খ. নির্দেশক সর্বনাম: যে সর্বনাম কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করে, তাকে নির্দেশক সর্বনাম পদ বলে। যেমন-এ, এরা ইত্যাদি।
গ. অনির্দেশক সর্বনাম: যে সর্বনাম কোনো অনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তু বা ভাবের পরিবর্তে বসে, তাকে অনির্দেশক সর্বনাম বলে। যেমন-কেউ, কিছু ইত্যাদি।
ঘ. প্রশ্নবাচক সর্বনাম: যে সর্বনাম পদে কোনো কিছু জানবার ইচ্ছা থাকে তাকে প্রশ্নবাচক সর্বনাম বলে। যেমন-কে, কী ইত্যাদি।
ঙ. সংযোগবাচক সর্বনাম: যে সর্বনাম পদে দুই বা তার বেশী ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে সংযোগ বোঝায়, তাকে সংযোগবাচক বা সম্বন্ধবাচক সর্বনাম বলে। যেমন-যে, যারা ইত্যাদি।
চ. আত্মবাচক সর্বনাম: যে সর্বনাম পদে কারও সাহায্য না নেওয়ায় ভাবটি বিশেষ জোরের সঙ্গে বোঝান হয়, তাকে আত্মবাচক সর্বনাম বলে। যেমন-নিজ, নিজে ইত্যাদি।
ছ. সাকল্যবাচক সর্বনাম: যে সর্বনাম পদ সমষ্টিবাচক ব্যক্তি, বস্তু বা ভাবের পরিবর্তে প্রয়োগ করা হয়, তাকে সাকল্যবাচক সর্বনাম বলে। যেমন-সব, সবে (বল বল বল সবে) ইত্যাদি।
জ. অন্যাদিবাচক সর্বনাম: অন্য, অপর, অমুক প্রভৃতি কয়েকটি অন্যাদি বাচক সর্বনাম বলে।
👉অব্যয়:
বিভক্তি, লিঙ্গ, বচন ভেদে যে পদের কোনো পরিবর্তন হয় না, তাকে অব্যয় পদ বলে। যেমন-'শ্রীকৃষ্ণ বলশালী, সুতরাং ক্রোধশূন্য এবং ক্ষমাশীল।' অব্যয় পদকে নিম্নোক্ত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন-
ক. পদান্বয়ী অব্যয়পদ: যে পদ বাক্যমধ্যস্থ এক পদের সঙ্গে অন্যপদের অন্বয় বা সম্বন্ধ দেখিয়ে দেয়, তাকে পদান্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন-সঙ্গে, সহিত ইত্যাদি।
খ. সমুচ্চয়ী অব্যয়: যে অব্যয় একাধিক পদের বা বাক্যের সংযোগ বিয়োগ সংকোচন প্রভৃতি সাধন করে, তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় পদ বলে। যেমন-'কামনা ত্যাগ করলে ধনী হয়, আর লোভ ত্যাগ করলেই সুখী হয়।'
গ. অনন্বয়ী অব্যয়: যে অব্যয়ের সঙ্গে বাক্যের অন্য কোনো পদের ব্যাকরণগত কোনো অন্বয় বা সম্বন্ধ নেই, তাকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন-শাবাস! শাবাশ! তোরা বাঙালীর মেয়ে।'
ঘ. ধ্বন্যাত্মক অব্যয়: যে সকল অব্যয় বাস্তব ধ্বনির ব্যঞ্জনা দেয় অথবা অনুকৃতিগ্রাহ্য অনির্বচনীয় কোনো সূক্ষ্ম ভাব বা অবস্থার দ্যোতনা দেয়, তাদেরকে ধ্বন্যাত্মক বা অনুকার অব্যয় বলে। যেমন-'বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর।'
৩. ক্রিয়াপদ কাকে বলে? ক্রিয়াপদ সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করো।
উত্তর: যে পদে কোনো কাজ করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমন-আমি বই পড়ি। • ক্রিয়াপদ বাক্যের প্রধানতম উপাদান, ক্রিয়া ছাড়া অতিক্ষুদ্র বাক্যও রচনা করা সম্ভব নয়। বাক্যের এই প্রধানতম উপাদানটিকে কয়েকটি স্তরে বিন্যস্ত করে তার বিভাগগুলি আলোচনা করে এর মর্মবিন্দুতে পৌঁছানোর চেষ্টা করা যেতে পারে-
■ প্রথম স্তর: গঠন ভঙ্গির দিক দিয়ে ক্রিয়াপদ পাঁচ প্রকারের। যথা-১. মৌলিক ক্রিয়া, ২. প্রযোজিকা ক্রিয়া, ৩. নামধাতুজ ক্রিয়া, ৪. সংযোগমূলক ক্রিয়া, ৫.যৌগিকক্রিয়া।
১. মৌলিক ক্রিয়া: অন্য কোনো ধাতু বা প্রত্যয়ের সাহায্য না নিয়েই সিদ্ধ ধাতুর উত্তর সরাসরি ধাতু বিভক্তি যোগ করে যে ক্রিয়াপদ পাওয়া যায়, তাকে মৌলিক ক্রিয়া বলে। যেমন-সাধূ + ইতে = সাধিতে।
২. প্রযোজিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার দ্বারা কাকে কোনো কাজে প্রবৃত্ত করা বোঝায়, তাকে প্রযোজিকা ক্রিয়া বলে। যেমন দেখ (সিদ্ধ ধাতু) + আ (প্রত্যয়) + দেখা (প্রযোজক ধাতু) + ইব (ধাতু বিভক্তি) দেখাইব (প্রযোজিকা ক্রিয়া)।
৩. নামধাতুজ ক্রিয়া: নামধাতুর উত্তর ক্রিয়াবিভক্তি যোগে যে ক্রিয়াপদ পাওয়া যায়, তাকে নামধাতুজ ক্রিয়া বলে। যেমন-হাতা ইয়াছিল হাতাইয়াছিল।
৪. সংযোগমূলক ক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ, বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের উত্তর কর, হ, দি, পা প্রভৃতি মৌলিক ধাতু যখন ধাতু বিভক্তি যোগে একটিমাত্র ক্রিয়ার অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে সংযোগমূলক ক্রিয়া বলে। যেমন- 'শাস্তি দেওয়া তারেই সাজে সোহাগ করে যে।'
৫. যৌগিক ক্রিয়া: -ইয়া ও-ইতে বিভক্তি যুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়া যখন সমাপিকা ক্রিয়ার অব্যবহিত পূর্বে বসে উভয়ে মিলে একটিমাত্র ক্রিয়ার অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন-'কী বলিতে চাই, সব ভুলে যাই।'
দ্বিতীয় স্তর: বাক্যে অন্য পদের সঙ্গে সম্পর্কের বিচারে ক্রিয়াপদ তিন প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-১. সকর্মিকা ক্রিয়া, ২. অকর্মিকা ক্রিয়া, ৩. দ্বিকর্মিকা ক্রিয়া।
১. সকর্মিকা ক্রিয়া: কর্মকে অবলম্বন করে যে ক্রিয়া পূর্ণতা পায় তাই সকর্মিকা ক্রিয়া। অর্থাৎ যে ক্রিয়ার কোনো কর্ম থাকে। যেমন-আমি বই পড়ি। এখানে 'পড়া' ক্রিয়াটির কর্ম হল-'বই'। তাই এটি সকর্মিকা ক্রিয়া।
২. অকর্মিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়ার কর্ম নাই, যে ক্রিয়ার দ্বারা কেবল সত্তা, অবস্থান বা ঘটনা বোঝায়, তাই অকর্মিকা ক্রিয়া। অর্থাৎ যে ক্রিয়ার কোনো কর্ম থাকে না। যেমন-আমি পড়ি। এই 'পড়ি' ক্রিয়ার কোনো কর্ম নেই। তাই একটি অকর্মিকা ক্রিয়া।
৩. দ্বিকর্মিকা ক্রিয়া: যে সমস্ত সকর্মিকা ক্রিয়ার একটি প্রাণীবাচক এবং অন্য একটি বস্তুবাচক কর্ম থাকে তাকে দ্বিকর্মিকা ক্রিয়া বলে। অর্থাৎ যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে। যেমন-আমাকে একটি গান শোনাও। এখানে 'গান' মুখ্য কর্ম, এটি বস্তুবাচক। অন্যদিকে 'আমাকে' গৌণ কর্ম, এটি প্রাণীবাচক, একটি প্রাণীবাচক এবং অন্যটি অপ্রাণীবাচক কর্ম থাকায় এটি দ্বিকর্মিকা ক্রিয়া।
তৃতীয় স্তর: অর্থ সম্পর্কের দিক দিয়ে ক্রিয়াকে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা-১. সমাপিকা ক্রিয়া, ২. অসমাপিকা ক্রিয়া। ১. সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়াপদে বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ প্রকাশ পায়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন-কবি কাব্য লেখেন। বাক্যটির কোনো অসম্পূর্ণতা নেই। পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশ করছে। তাই এটি সমাপিকা ক্রিয়া।
২. অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়াপদে বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ প্রকাশ পায় না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন-'আমি বই পড়ে'- বললে মনের ভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ হয় না। কিন্তু 'আমি বই পড়ে কলেজে গেলাম' এটি যদি বলা হয়, তাহলে বাক্যটির দ্বারা সম্পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশিত হল। তাই 'পড়ে' ক্রিয়াটি অসমাপিকা ক্রিয়া।
......................