📚বি.এ পরিবেশবিদ্যা (VAC):1st Semester:অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর: অধ্যায় -২: প্রাকৃতিক সম্পদসমুহ।📚

✍️প্রশ্নের মান-৫/১০:

1.প্রাকৃতিক সম্পদ কাকে বলে? ইহা কয় প্রকার ও কী কী? উদাহরণ সহ লেখো।

উঃ 👉যে সম্পদ প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সরাসরি পাওয়া যায়, তাকে প্রাকৃতিক সম্পদ (Natural resources) বলে। যেমন- সূর্যকিরণ, অক্সিজেন, খনিজ পদার্থ, ভৌমজল, মাটি ইত্যাদি।

👉 প্রাকৃতিক সম্পদ মূলতঃ চার প্রকার।এগুলি হলো-

১.পুনর্ভব বা নবীকরণযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ: 

যে প্রবহমান সম্পদগুলিকে প্রকৃতি বারবার নবীকরণ করে, সেই সম্পদগুলিকে পুনর্ভব সম্পদ (Renewable resources) বলে। যেমন- বায়ু, তাপ, বৃষ্টির জল ইত্যাদি।

২.অপুনর্ভব বা অনবীকরণযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ:

উঃ যে সকল সম্পদের ভাণ্ডার সীমিত, যা সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং ব্যবহারের পর সম্পদের ঘাটতি পূরণ করা কোনোভাবে সম্ভব নয়, সেই সকল প্রাকৃতিক সম্পদকে নবীকরণ-অযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। যেমন-জীবাশ্ম জ্বালানি, ধাতব খনিজ সম্পদ, অধাতব খনিজ সম্পদ প্রভৃতি।

৩.প্রচলিত বা চিরাচরিত শক্তি: যে সমস্ত শক্তি সম্পদ মানুষের দ্বারা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় তাকে প্রচলিত বা চিরাচরিত শক্তি বলে। যেমন-কয়লা, খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, পারমাণবিক শক্তি, জলবিদ্যুৎ, তাপবিদ্যুৎ প্রভৃতি।

৪.অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত শক্তি:প্রচলিত শক্তি ব্যতিরেকে বিকল্প ধরনের কম ব্যবহৃত শক্তিগুলিকে অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত শক্তি বলে।যেমন-সৌর শক্তি, বায়ুশক্তি, সামুদ্রিক শক্তি, ভূ-তাপীয় শক্তি, জীবভর ভিত্তিক শক্তি, জৈব গ্যাস শক্তি প্রভৃতি।

2.বনজ সম্পদ কাকে বলে? বনজ সম্পদের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করো। 

উঃ 👉 বনভূমি থেকে যেসব জিনিস আমরা সম্পদরূপে পেয়ে থাকি তাদের বনজ সম্পদ বলে। যেমন-জ্বালানি,নানা ওষুধ,আঠা, ও ধুনো জাতীয় পদার্থ ইত্যাদি।

👉বনজ সম্পদের ব্যবহার:

1. কাঠ (Wood): বনজ সম্পদ হিসাবে সর্বাধিক ব্যবহৃত দ্রব্যটি হল কাঠ। প্রকৃতি অনুসারে কাঠ দুধরনের হয়ে থাকে। যথা-নরম কাঠ এবং শক্ত কাঠ। শক্ত কাঠ উৎপাদনকারী কয়েকটি অতি পরিচিত উদ্ভিদ হল-শাল, সেগুন, জাবুল, লগউড্, মেহগিনি, আবলুস, শিমূল, আয়রণ উড, দেবদারু প্রভৃতি। নরম কাঠ উৎপাদনকারী কয়েকটি উদ্ভিদ হল- পপুলার, পাইনাস, সাইকাস, সেড্রাস, পাইসিয়া, ফার, বালসাম প্রভৃতি। গৃহ নির্মাণ, আসবাব তৈরি, বৈদ্যুতিক খুঁটি নির্মাণ এবং রেলের স্লিপার তৈরিতে শক্ত কাঠ ব্যবহৃত হয়। অপরপক্ষে-কাগজ, বোর্ড, নিউজ প্রিন্ট তৈরিতে নরম কাঠ ব্যবহৃত হয়।

2. তৃণ, বাঁশ এবং বেত (Grasses, Bamboos and Canes): তৃণভূমি (Grassland) এবং অরণ্য (Forest) থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রজাতির তৃণ গবাদি পশুর খাদ্য (Fodder), গ্রামাঞ্চলে মাটির বাড়ির ছাদ নির্মাণ, কাগজ তৈরির কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও খসখস ও বেতের চেয়ার টেবিল তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়।

3. ওষুধ (Medicine): বিভিন্ন প্রকার ঔষধ উৎপাদনকারী উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত অ্যালকালয়েড

4. মশলা (Spices): অরণ্য থেকে প্রাপ্ত প্রধান মশলা উৎপাদনকারী উদ্ভিদগুলি হল- দারুচিনি, বড় এলাচ, ছোট এলাচ প্রভৃতি।

5. পাতা (Leaf): শাল গাছের পাতা ছাঁচে ফেলে থালা, বাটি প্রস্তুত করা হয়। এছাড়াও কেন্দুগাছের পাতা বিড়ি পাতা হিসাবে বিড়ি তৈরিতে কাজে লাগে। রান্নায় সুগন্ধী পাতা হিসাবে তেজপাতা ব্যবহার করা হয়।

6. ট্যানিন ও রং (Tannin and Dyes): আমলকী, বহেরা, হরিতকী, ওক, হেমলক,আখরোট প্রভৃতি উদ্ভিদের দেহ নিঃসৃত রস এবং অ্যাভারাম ও বাবলার পুষ্প থেকে ট্যানিন সংগ্রহ করা হয়। ট্যানিন কাঁচা চামড়া পাকা করার কাজে ব্যবহৃত হয়।

7. তেল (Oil): চন্দন, ইউক্যালিপ্টাস, লেমন গ্রাস, সিট্রোনেল্লা নামক উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত তেল সাবান, ফিনাইল, ওষুধ ও অন্যান্য প্রসাধন সামগ্রী প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।

৪. আঠা ও রেসিন (Gums and resin): স্টারকুলেসী (Sterculaceae) এবং লেগুমিনোসী (Leguminosae) গোত্রভুক্ত কয়েকপ্রকার উদ্ভিদের বাকল থেকে আঠা পাওয়া যায়। এই আঠা বয়ন শিল্পে, খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুতিতে, দাঁতের মাজন ও সিগারেট প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।

সকল প্রকার পাইন উদ্ভিদ থেকে রেসিন পাওয়া গেলেও কেবলমাত্র চীর পাইন (Pinus roxburghi) থেকেই রেসিন সংগ্রহ করা হয়। রেসিন প্রধানত বার্ণিশ শিল্পে, কৃত্রিম কপূর প্রস্তুতিতে, মোম, রঙ, সাবান, ফিনাইল প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।

9. তন্তু (Fibre): কয়েক প্রকার উদ্ভিদের স্ক্লেরেনকাইমা তন্তু, জাইলেম তত্ত্ব এবং ফ্লোয়েম তত্ত্ব দড়ি, গদি ও বালিশ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

 10. খাদ্যদ্রব্য (Edible Products): অরণ্য থেকে ফল, ফুল, তৈলবীজ, মাশরুম, তেঁতুল,আমলকী, খেজুর, মহুয়া প্রভৃতি পাওয়া যায়। অরণ্য থেকে প্রাপ্ত প্রধান প্রধান ফলগুলি হল-আম, জাম, বেল, কয়েত বেল, খেজুর, তাল, আমলকী, মহুয়া, পিয়াল, ক্যাঁদ প্রভৃতি। এছাড়াও নারকেল, আখরোট, চীনাবাদাম প্রভৃতি তৈলবীজ পাওয়া যায়।

3.বনহনন বা ডিফরেসটেসন বা অরণ্য ধ্বংস কাকে বলে? অরণ্য ধ্বংসের কারণ ও ফলাফলগুলি আলোচনা করো।

উঃ 👉প্রধানত মানুষ তার বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক চাহিদা মেটানোর জন্য নির্বিচারে বনভূমির কাঠ দীর্ঘ দিন ধরে কেটে নিলে অরণ্যের বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশের যে ক্ষতি হয় তাকে বনহনন বা অরণ্যের ধ্বংসসাধন (Deforestation) বলে।

👉অরণ্য ধ্বংসের কারণ:

১. দাবানল: দাবানল বনভূমি বিনষ্ট করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে দাবানল এর ঘটনা বাড়ছে। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া প্রভৃতি মহাদেশের ব্যাপক বনভূমি দাবানলের কবলে স্থায়ীভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। 

২.সামুদ্রিক ঝড়: টাইফুন, সুনামি (Tsunami), টর্নেডো প্রভৃতি ভয়ংকর ঝড় প্রতিবছর বহু হেক্টর বনভূমি ধ্বংস করে।

৩.ধস: পাহাড়ি অঞ্চলে ধসের ফলে বিশাল আয়তন বনভূমি প্রতিবছর নষ্ট হয়। অতিবৃষ্টি,ভূমিকম্প, পাহাড়ি ঢালে জলনিকাশি ব্যবস্থার অভাব ইত্যাদি নানা কারণে পাহাড়ের কোথাও-না-কোথাও প্রতি বছর ধস হয়। 

৪.অ্যাসিড বৃষ্টি: বিশ্বের শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলির আশপাশে সালফিউরিক অ্যাসিড বৃষ্টির ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, বর্জ্য, রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মিশে অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটায়। এর ফলে বনাঞ্চলের ক্ষতি হয়।

৫.কৃষিজমির ক্রমবর্ধমান চাহিদা:  প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে গড়ে প্রায় 25 লক্ষ হেক্টর জমি চাষ-আবাদের আওতায় আনা হয়। এই জমির প্রায় সবটাই বনভূমিকে ধ্বংস করে পাওয়া যায়।

৬.নগরায়ণ ও পরিবহন পথের সম্প্রসারণ: মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতির পথ প্রশস্ত করতে দরকার নতুন শহর, শিল্প, যাতায়াত-যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পরিকাঠামোগত সুবিধা। সেজন্য দরকার প্রচুর সস্তা জমি, যা বন কেটে সহজেই পাওয়া যায়।

৭.বাসস্থানের চাহিদা: 2020 সালের হিসেবে পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৪8.3 কোটি লোক বাড়ছে। যার অধিকাংশই এশিয়া ও আফ্রিকার বিকাশশীল দেশগুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য ন্যূনতম বাসস্থানটুকু জোগান দিতে হলে প্রতি বছরে কয়েকশত বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বসতি স্থাপনের প্রয়োজন হয়, এবং সে-কারণেও বনভূমি ক্রমশ অবলুপ্ত হয়ে চলেছে।

৮.জ্বালানির চাহিদা : পৃথিবীর বিকাশশীল দেশগুলিতে জ্বালানির অতিরিক্ত দাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ফলে দরিদ্র জনসাধারণ জ্বালানির জন্য বনের গাছপালার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে এবং বনভূমি ধ্বংস হয়। 

👉 অরণ্য ধ্বংসের ফলাফল:

(1) ভূমিক্ষয়ের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস: ওয়ার্লড ওয়াচ ইন্সটিটিউটের (World Watch Institute) মতে পৃথিবীতে গড়ে প্রতি বছর প্রায় 7700 কোটি টন মাটি ক্ষয় হয়। এর মধ্যে 2400 কোটি টন হল উর্বর মাটি  মাটিকে উর্বরতা জোগায় যে পুষ্টিমৌলগুলি (nutrients), যেমন- নাইট্রোজেন, ফসফরাস, সালফার, পটাশিয়াম, লোহা, তামা, দস্তা, আয়োডিন ইত্যাদি সেগুলিও একইসঙ্গে ধুয়ে মুছে যায়। ফলে জমি অনুর্বর হয়ে ওঠে।

(2) বন্যা ও খরার প্রকোপ বৃদ্ধি: বনভূমি বিনষ্ট হলে নদীখাতে অতিরিক্ত পলি জমা হয়। ফলে নদীর গভীরতা কমে যায়। বর্ষার উদ্বৃত্ত জল, তখন নদীর পক্ষে আর বহন করা সম্ভব হয় না। নদীতে বন্যা দেখা দেয়। অন্যদিকে বনভূমি বাতাসে যে জলীয় বাষ্প জোগান দেয়, বনভূমি ধ্বংস হলে, জলীয় বাষ্পের সেই জোগান ব্যাহত হয়। বৃষ্টির পরিমাণ কমে যায়। খরা দেখা দেয়।

(3) মরুভূমির প্রসার: বায়ু ও মাটিতে গাছপালা যে আর্দ্রভাব বজায় রাখে, গাছপালার ঘনত্ব হ্রাস পেলে সেই আর্দ্রতা কমে যায়। মরুসংলগ্ন অঞ্চলে স্বাভাবিকভাবেই মরুভূমির আয়তন প্রসারিত হয় বা অন্যান্য জায়গায় অনাবৃষ্টির প্রভাবে মরুসদৃশ অবস্থার (desertification) সৃষ্টি হয়। প্রসঙ্গত, ভারতের পরিবেশ মন্ত্রক United Nations Convention to Combat Desertification-কে মরুকরণ সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে, তার ভিত্তিতে লক্ষ করা যায় যে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশের বেশি এলাকা মরুকরণ-জমির অবক্ষয়-খরা (DLDD অর্থাৎ Desertification-Land Degradation-Drought)-র সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে।

(4) বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি ও পৃথিবীর তাপীয় ফলের পরিবর্তন: বনভূমি ধ্বংস হলে বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণায়ন(global warming) ও জলবায়ু পরিবর্তনের (climate change) সমস্যা বাড়ে। (5) পাহাড়ি অঞ্চলে ধসজনিত সমস্যা বৃদ্ধি: কারণ বনভূমির অভাবে মাটি উদ্ভিজ্জের সুরক্ষা হারায়। মাটি আলগা হয়। ফলে ধস নামে।

(6) পতিত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি: বনভূমির অভাবে মাটিতে পুষ্টিমৌলের জোগান কমে। পতিত জমি আয়তনে বাড়ে।

(7) জীববৈচিত্র্যের (biodiversity) ক্ষতি: কারণ বনভূমি হল অসংখ্য কীট-পতঙ্গ- পাখি-সরীসৃপের আবাস স্থল। এই ব্যাপারে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে যেখানে, তা হল আমাজনের বৃষ্টিঅরণ্য, ইন্দোনেশিয়া এবং বোর্নিও, এবং আফ্রিকার কঙ্গো অববাহিকা।

4.জলজ সম্পদ কাকে বলে? জলজ সম্পদের অতিব্যবহার ও অপব্যবহারগুলি লেখ।

উঃ 👉জল মানুষের অপরিহার্য, পুনর্নবীকরণযোগ্য, বহমান, প্রাকৃতিক সম্পদ। জলের উৎস হল বৃষ্টিপাত, নদী, পুকুর, সাগর, মহাসাগর ইত্যাদি। 

👉জলের অতিব্যবহার (Excessive use of water):

1. কৃষিক্ষেত্রে আর্দ্র সময়ের ফসলকে শুকনো মৃত্তিকায় চাষ করলে পর্যাপ্ত জলের ব্যবহার হয়।

2. শহরাঞ্চল বা টাউনশিপ এলাকায় অবিরাম জল সরবরাহ।

3. বিভিন্ন শিল্পের ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে জলের পুনঃব্যবহার না করা।

4. বৃষ্টির জল সংরক্ষণ না করে মাছচাষ, সেচের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় ভৌম জলের ব্যবহার।

5. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে মাত্রাতিরিক্ত জলের ব্যবহার।

👉জলের অপব্যবহার (Misuse of water):

1. কৃষিক্ষেত্রে বৃষ্টির জল বা জলাশয়ের জলকে ব্যবহার না করে সাবমার্সিবল্ বা মিনির সাহায্যে ভৌম জলের ব্যবহার করা। 2. বৃষ্টির জলকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করে ভৌম জল দ্বারা জলাশয়গুলিকে ভর্তি করে মাছচাষ করা।

3. গৃহস্থালীর কিছু কাজে এবং বাগান পরিচর্যার ক্ষেত্রে বৃষ্টির জলের পরিবর্তে ভৌম জলের ব্যবহার করা।

4. পৌর জল সরবরাহের ক্ষেত্রে ট্যাপের মাধ্যমে পানীয় জলের যথেষ্ট অপচয় হয়।

5. মানুষের সচেতনতার অভাবে পরিমিত জলের পরিবর্তে অধিক পরিমাণ জলের ব্যবহার।

6. শহরে রাস্তাঘাট, স্মৃতিসৌধ এবং গাড়ি পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ভৌম জলকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হয়।

5.বৃষ্টির জল সংরক্ষণের উপায়গুলি লেখ।

উঃ বৃষ্টির জল সংরক্ষণের পদ্ধতি : বৃষ্টিপাত হলে তার বেশিরভাগ অংশই মাটির ওপর দিয়ে গড়িয়ে নদীর, মাধ্যমে সমুদ্রে চলে যায়। বৃষ্টির এই জলকে যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তবে মানুষের প্রয়ােজনীয় জলের চাহিদা অনেকটাই মেটে। দুটি পদ্ধতিতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করা যায়— 

1. ভূপৃষ্ঠের জলপ্রবাহকে আটকে রেখে : খােলা জায়গা বা মাঠের ওপর দিয়ে নালিপথে প্রবাহিত বৃষ্টির জলাধারকে কোনাে জলাধারের সঙ্গে সংযুক্ত করে সেখানে ওই জল সংরক্ষণ করা যায়। ওই জলাধারের জল কৃষিতে, শিল্পে, গৃহস্থালির কাজে, পানীয় জলের আধার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে জলের জোগান কিছুটা বাড়ে। একই সাথে ভৌমজলের স্তরও সমৃদ্ধ হয়।

2. বাড়ির ছাদে বৃষ্টির জল ধরে রেখে : বৃষ্টির জল বাড়ির ছাদে পড়লে পাইপের মাধ্যমে তাকে সংগ্রহ করে মাটির নীচের জলাধারে বা পাতকুয়াতে জমা করা যায়। অনেকগুলি জলাধার নির্মাণ করলে ওই জলাধারের জল যেমন সারাবছরই ব্যবহার করা যেতে পারে l তেমনই এর মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জলভাণ্ডারকে রিচার্জ করা যায়।

6.বায়ুশক্তি কাকে বলে? এর ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখ।সৌরশক্তি কাকে বলে? এর ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখ।

উঃ 👉বায়ুর গতিবেগকে কাজে লাগিয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তাকে বায়ুশক্তি বা বাতশক্তি (wind energy) বলে। উইন্ড টারবাইন (wind turbine) যন্ত্রের সাহায্যে বাতশক্তি উৎপন্ন হয়।

👉 বায়ুশক্তির সুবিধা:

বায়ুশক্তি বা বাতশক্তি হল অবাধ ও প্রবহমান সম্পদ। এই সম্পদ শেষ হয়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে স্বল্প গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন হয়। বায়ুশক্তি উৎপাদনের জন্য রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ও অন্যান্য খরচ কম। বায়ুশক্তি উৎপাদনের প্রযুক্তি সরল ও সহজলভ্য। খুব অল্প সময়ে কোনো এলাকায় বাতশক্তি উৎপাদনের পরিকাঠামো গড়ে তোলা যায়।

■ বায়ুশক্তির অসুবিধা:

বায়ুশক্তির প্রধান অসুবিধা হল- (1) বর্তমান প্রযুক্তিতে বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ তাপবিদ্যুতের তুলনায় বেশি। (2) বায়ুশক্তি উৎপাদনের সময় নির্গত উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গ শব্দদূষণ ঘটায়। (3) বাতাসের দিক ও গতিবেগের তারতম্য হলে, বাতশক্তি উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। (4) বায়ুশক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলির বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা কম। (5) বাতশক্তি এখনও ভারীশিল্পে ব্যবহারের উপযোগী নয়।

👉সূর্য থেকে আগত সৌররশ্মিকে কাজে লাগিয়ে যে শক্তি উৎপাদন করা হয় তাকে সৌরশক্তি বলে। এটি একটি অপ্রচলিত শক্তিসম্পদ। এই সৌরশক্তি ব‍্যবহারের ক্ষেত্রে যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও পরিলক্ষিত হয়।

সৌরশক্তির সুবিধা ও অসুবিধাগুলি হল নিম্নরূপ---

👉 সৌরশক্তির সুবিধাঃ

🕳 অফুরন্ত সম্পদ: সৌরশক্তি প্রবহমান ও অফুরন্ত, এর ফুরিয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যতদিন সূর্য থাকবে ততদিন এই শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব।

🕳 পরিবেশমিত্রতা: সৌরশক্তি উৎপাদন ও ব্যবহারের মাধ্যমে কোনোপ্রকার পরিবেশ দূষণ ঘটে না। তাই এটি পরিবেশমিত্র শক্তি সম্পদ।

🕳 অতি অল্প পৌনঃপুনিক ব‍্যয়: একবার সৌরপ্যানেল বসানোর পর সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পৌনঃপুনিক ব্যয় প্রায় নেই বললেই চলে।

🕳 সহজ উৎপাদন পদ্ধতি: সৌর প্যানেল ও ব্যাটারির সাহায্যে খুব সহজ পদ্ধতিতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।

🕳 সর্বত্র বিদ‍্যুৎ উৎপাদন: আবহাওয়া ঠিক থাকলে বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই সৌরশক্তি উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপন করা যায়।

👉 সৌরশক্তির অসুবিধাঃ

🕳 অধিক প্রাথমিক ব‍্যয়: সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি। একারণে অনুন্নত দেশগুলিতে এই জাতীয় শক্তি কম উৎপাদিত হয়।

🕳 আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীলতা: সৌরশক্তি উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল। সূর্যের তাপ কম থাকায় শীতপ্রধান অঞ্চলে যেমন সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সমস্যার সম্মুখীন, তেমনি বর্ষা ঋতুতেও সৌরশক্তি উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে।

🕳 সীমিত উৎপাদন ক্ষমতা: পিভি সেলের সৌরশক্তি উৎপাদন ক্ষমতা খুব সীমিত। তাই, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি শুধুমাত্র স্থানীয় এলাকার সীমাবদ্ধ চাহিদা পূরণেই সক্ষম।

🕳 উন্নত প্রযুক্তির অভাব: শিল্পের জন্য সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও সৌরশক্তির বিকাশের জন্য উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়, যা অধিকাংশ দেশেই সহজলভ্য নয়।

7.ভুমিক্ষয়ের কারণ এবং মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায়গুলি আলোচনা করো।

উঃ 👉ভুমিক্ষয়ের কারণ:

(1) খাড়া ঢাল: খাড়াই পাহাড়ি ঢালের ওপর প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে ওই বৃষ্টির জলে মাটি ধুয়ে যায়। ভূমিক্ষয় হয়।

(2) ঘন বনভূমির অভাব : মাটির ওপর গাছপালার ঘন আবরণ না থাকলে বৃষ্টির জল, নদীর জল, বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রের ঢেউ-এর আঘাতে ভূমিক্ষয় হয়।

(3) আলগা মাটি: মাটিতে চটচটে আঠালো ভাব না থাকলে, ভূমিক্ষয় সহজ হয়। সে কারণে সমুদ্রের ধারে, মরুভূমির কাছে, মালভূমির ঢালে মাটি তাড়াতাড়ি ক্ষয়ে যায়। কেন না, এই সব এলাকার মাটিতে বালির ভাগ বেশি। তাই মাটির বাঁধন আলগা।

(4) বনভূমির বিলোপ: নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলার জন্য মাটির দানাগুলি আলগা হয়ে যায়। ফলে গাছের শিকড় আর তখন মাটিকে আঁকড়ে রাখতে পারে না।

(5) পাহাড়ে ধাপ না কেটে চাষ: পাহাড়ি ঢালের ওপর চাষ-আবাদ করার জন্য ধাপ কাটা (terrace) উচিত। এই ধাপগুলি জমির সমোন্নতি রেখা (contour) বরাবর তৈরি করা না হলে বৃষ্টির জলের আঘাতে বা জলপ্রবাহের মাধ্যমে মাটি ক্ষয়ে যায়।

(6) অনিয়ন্ত্রিত পশুপালন: পাহাড়ি অঞ্চলে অতিরিক্ত পশুচারণ করা হলেও ভূমিক্ষয় হয়। কারণ গবাদি পশু ঘাসের শিকড়সহ উপড়ে খেয়ে ফেলে। তাই মাটি আলগা হয়ে যায়।

(7) ত্রুটিপূর্ণ জলসেচ ব্যবস্থা: জলসেচ ব্যবস্থা অবৈজ্ঞানিক হলে মাটির গঠন ও বাঁধন নষ্ট হয়। ফলে ভূমিক্ষয়ের হার বৃদ্ধি পায়।

(8) জমির বেঠিক ব্যবহার: জমিকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যবহার না করা হলে মাটির ক্ষয় হয়।

👉মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায় গুলি হল - 

বনভূমি সৃষ্টি - উদ্ভিদের শিকড় এক দিকে যেমন মৃত্তিকাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকে, অন্যদিকে পৃষ্টপ্রবাহ রোধ ও বৃষ্টির ফোঁটার আঘাত থেকে মৃত্তিকাকে প্রতিহত করে মৃত্তিকা ক্ষয় নিবারন করে। তাই জলপ্রবাহ ও বায়ু প্রবাহ জনিত মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমান হ্রাস পায়। এসব কারণে বনভূমি নষ্ট না করে প্রয়োজন মতো নতুন বনভূমি সৃষ্টি করে মৃত্তিকা ক্ষয় প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। 

ধাপ চাষ - পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ের ঢাল বরাবর সিঁড়ির মতো ধাপ কেটে চাষ করার অন্যতম পদ্ধতি হল ধাপ চাষ। এই ধাপ চাষের ফলে পাহাড়ের ঢাল বরাবর বৃষ্টির জল অতি দ্রুত নিচে গড়িয়ে যেতে পারে না বলে মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয়। 

ফালি চাষ - মাঝারি ঢালু পাহাড়ি অঞ্চল গুলিতে পাহাড়ের ঢাল বরাবর সমান্তরাল সারিবদ্ধ ভাবে পরপর শস্যের চাষ কে ফালি চাষ বলে। সাধারণত যে সমস্ত অঞ্চলে জমি গুলি সমভাবে একই দিকে বিস্তৃত , সেই সমস্ত স্থানে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধের অন্যতম পদ্ধতি হল ফালি চাষ। 

সমোন্নতি চাষ - এটিও পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিক্ষয় রোধে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে অনেক দূর অবধি বিস্তৃত পাহাড়ি অঞ্চলের সমান উচ্চতা যুক্ত অঞ্চল গুলি চিহ্নিত করে সেই ঢাল বরাবর বাঁধ নির্মান করা হয়। এভাবে সমোন্নতি রেখা বরাবর সৃষ্ট দুটি বাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে জলসঞ্চয় করে চাষ করার পদ্ধতিকে সমোন্নতি চাষ বলে। এই বাঁধ দিয়ে মৃত্তিকা ক্ষয় কে ব্যাপক আকারে রোধ করা সম্ভব হয়। 

মালচিং পদ্ধতির ব্যবহার - শুষ্ক অঞ্চল গুলিতে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ ও মৃত্তিকার আর্দ্রতা রক্ষা করার অন্যতম পন্থা হল মালচিং পদ্ধতির ব্যবহার। এক্ষেত্রে জমির ফসল উত্তোলনের পর ফসলের অবশিষ্টাংশ বা গাছের ডালপালা ও আগাছা জমির উপর বিছিয়ে রাখা হয়, যেন সূর্য তাপে মৃত্তিকা মধ্যস্থিত জল বাষ্পীভূত না হতে পারে। 

8.সুস্থায়ী উন্নয়ন কাকে বলে? এর লক্ষ্যগুলি আলোচনা করো।

👉পরিবেশ তথা জীবমন্ডলের উপযুক্ত স্বার্থ করে সমাজের অগ্রগতি বা উন্নয়নের প্রক্রিয়াকে সাধারণভাবে সুস্থায়ী উন্নয়ন বলা হয় । সুস্থায়ী উন্নয়নের সংজ্ঞা নানাভাবে দেওয়া হয় –

    সুস্থায়ী উন্নয়ন হল সেই উন্নয়ন যা বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করে এবং সেই সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণে কোনরূপ অসুবিধা যাতে না ঘটে, তার দিকে উপযুক্ত দৃষ্টি রাখে ।

    কোনো উন্নয়নকে সুস্থায়ী উন্নয়ন তখন বলা হবে যখন তা অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সামাজিক ও বাস্তুতান্ত্রিক বিষয়গুলিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে, জৈব এবং অজৈব সম্পদ সংরক্ষণের উপযুক্ত পদ্ধতি গ্রহণ করে । স্বল্প স্থায়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী সুবিধাগুলো ভোগের উপায় নির্ধারণ করে ।

    সুস্থায়ী উন্নয়ন হল সেই উন্নয়ন যাতে প্রাকৃতিক সহায়ক শক্তি গুলির ধারণযোগ্যতার মধ্যে মানব জীবনের এবং জীব বৈচিত্রের মান উন্নয়ন এবং পরিবেশগত অর্থনৈতিক ও সামাজিক শুস্থিতির উপযুক্ত সমন্বয় থাকে ।

👉সুস্থায়ী উন্নয়নের প্রধান লক্ষ গুলি (The Main Goals Of Sustainable Development)

(1) সামাজিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য (Social And Political Goals):

   * জনগণের অভাব দূরীকরণ, অর্থনৈতিক অগ্রসন কিংবা শোষণ থেকে জনগণকে মুক্ত করা ।

   * অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পদ্ধতিতে মানুষের অবাধ অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা ।

   * সাম্য সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা ।

  *  জনগণকে সমাজ গঠনের প্রয়োজনের তাগিদে তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সুস্থায়ী সমাজে নাগরিক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠীত করার জন্য রাজনীতির ভূমিকা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে হবে ।

(2) পরিবেশের প্রতিবন্ধীকতা প্রতিকারের লক্ষ্য(Aim To Remedy Environmental Impairments):

  *  জীব মন্ডলের মোট ধারণক্ষমতার নিচে মানুষের কাজকর্মের মাত্রা বজায় রাখা ।

   * পরিবেশের উপর কার্যকলাপের ব্যায় নির্ধারণ, বস্তু ও শক্তির ব্যবহার কমানো, বিষাক্ত ধোয়া নিষ্ক্রমণ কমানো প্রয়োজন ।

    *সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্পন্ন বহন যোগ্য সামাজিক পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

(3) বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্য(Aim To Maintain Ecological Balance)

   * জীব সহায়ক পদ্ধতির সংরক্ষণ ।

   * জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সংবর্ধন ।

   * বাস্তুতন্ত্রের সমন্বয় রক্ষা ও বৃদ্ধি এবং বিপন্ন বাস্তুতন্ত্রের পুনর্বাসন ও উন্নয়ন।

 *   বিশ্ব পরিবেশ পরিবর্তনের আশঙ্কায় প্রতিরোধমূলক এবং গ্রহণযোগ্য কৌশল উদ্ভাবন ও রূপায়ণ ।

(4) পরিবেশকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্য(Aim To Protect The Environment)

   * পৃথিবীর সহন ক্ষমতা নির্ণয় অর্থাৎ নিজের ক্ষতি না করে প্রকৃতি কতটা দিতে পারে ।

  *  ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আমরা প্রকৃতি থেকে কতটা গ্রহণ করতে পারি ।

    উপরের দুটি শর্ত মেনে বর্তমান প্রজন্মের মান উন্নয়ন করা ।

9.প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তি কাকে বলে? এদের ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখ।

উঃ 👉প্রচলিত বা চিরাচরিত শক্তি (Conventional Energy):

যে সমস্ত শক্তি সম্পদ মানুষের দ্বারা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় তাকে প্রচলিত বা চিরাচরিত শক্তি বলে।

⇒ প্রচলিত শক্তির উৎস :

কয়লা, খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, পারমাণবিক শক্তি, জলবিদ্যুৎ, তাপবিদ্যুৎ প্রভৃতি।

👉অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত শক্তি (Non-conventional Energy):

প্রচলিত শক্তি ব্যতিরেকে বিকল্প ধরনের কম ব্যবহৃত শক্তিগুলিকে অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত শক্তি বলে।

⇒ অপ্রচলিত শক্তির উৎস:

সৌর শক্তি, বায়ুশক্তি, সামুদ্রিক শক্তি, ভূ-তাপীয় শক্তি, জীবভর ভিত্তিক শক্তি, জৈব গ্যাস শক্তি প্রভৃতি।

⇒ প্রচলিত শক্তি ব্যবহারের সুবিধা:

i) প্রচলিত শক্তির উৎস প্রকৃতিতে সহজলভ্য।

ii) এই ধরনের শক্তি উৎপাদনে প্রাথমিক ব্যয় অনেক কম হয়।

প্রচলিত শক্তি ব্যবহারের অসুবিধা:

i) এই ধরনের শক্তি উৎপাদনের সময় পরিবেশ দূষণ ঘটায়।

ii) দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে এই ধরনের শক্তি সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।

অপ্রচলিত শক্তি ব্যবহারের সুবিধা:

i) এই ধরনের শক্তি উৎপাদনের সময় পরিবেশ দূষণ ঘটায় না।

ii) উৎপাদনের প্রাথমিক ব্যয় বেশি হলেও পরিবর্ত ব্যয় কম হয়।

iii) অতি দুর্গম প্রতিকূল অঞ্চলেও এই ধরনের শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব।

অপ্রচলিত শক্তি ব্যবহারের অসুবিধা:

i) এই ধরনের শক্তি প্রকৃতিতে সহজলভ্য নয়।

ii) এই ধরনের শক্তি উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি।

10.পারমানবিক শক্তি কাকে বলে? এই শক্তির সম্ভাবনা ও সুবিধাগুলি নিয়ে আলোচনা করো।

উঃ 👉পরমাণুর নিউক্লিয়াস কে ভেঙ্গে বা বিভাজন করে যে শক্তি পাওয়া যায়, তাকে পারমাণবিক শক্তি বলে।

পারমানবিক শক্তি কেন্দ্র হলো এমন এক ধরনের কেন্দ্র , যার কাজ পারমাণবিক বিক্রিয়া ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় তাপশক্তি উৎপাদন করা। এ তাপশক্তি ব্যবহার করে বাষ্প উৎপাদন করা হয়। এ বাষ্প দিয়ে চালানো হয় স্টিম টরবাইন, আর স্টিম টারবাইন দিয়ে তৈরী হয় বিদ্যুৎ

সহজ কথায় , শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করাই হল পারমানবিক শক্তি কেন্দ্রের মূল কাজ। এছাড়াও বর্তমানে পারমানবিক শক্তিকে চিকিৎসা , উদ্ভিদ ও প্রাণীর জিন পরিবর্তনের কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক দেশ এটা দিয়ে মারণাস্ত্রও তৈরী করেছে। বর্তমানে পৃথিবীতে মোট ৪৪২ টি পারমানবিক প্রকল্প চালু আছে।

👉পারমানবিক শক্তির সুবিধাসমুহ ঃ

১। এটির ব্যায়ভার কয়লার সমান , ফলে যে কোন দেশ প্রকল্পটি গ্রহণ করতে পারে।

২। এটি কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরী করেনা , ফলে গ্রীণ হাউস গ্যাস নির্গমন হয়না।

৩। অল্প জ্বালানি ব্যবহার করে প্রচুর জ্বালানি শক্তি উৎপাদন করা যায়।

৪। খুব সামান্য বর্জ্য সৃষ্টি হয়।

৫। পরমাণু জ্বলানি শক্তিকেন্দ্র অপেক্ষাকৃত স্থায়ী এবং নির্ভরযোগ্য।

পারমানবিক শক্তির অসুবিধাসমুহ ঃ

১। স্বল্প ব্যয় হলেও প্রকল্পটি অতিমাত্রায় বিপদজনক।

২। প্রকল্প বিস্ফোরিত হলে দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রভাব থাকে এবং তৎক্ষনাৎ বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।

৩। এটির নিরাপত্তার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যায় করতে হয়।

৪। এটি অপব্যাবহারের সম্ভাবনা থাকে , যেমন- বোমা তৈরী। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

                         ..........................

                           Presented by

     skacademyallinone.blogspot.com