📚অষ্টম শ্রেণির ভূগোল:অধ্যায় ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:অধ্যায়-২:অস্থিত পৃথিবী(প্রশ্নের মান-১,২,৩,৫)📚
১.পাতসংস্থান তত্ত্বের জনক কে?
উঃ পিঁচো।
২.মহীসঞ্চরণ মতবাদের প্রবক্তা কে?
উঃ আলফ্রেড ওয়েগনার।
৩.পাত সঞ্চালনের প্রধান কারণটি কি?
উঃ বহিঃগুরুমণ্ডলের পরিচলন স্রোত।
৪.পৃথিবীতে মোট কটি পাত আছে?
উঃ 6টি বড়ো এবং 20 টি মাঝারি ও ছোটো পাত আছে।
৫.দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে গেলে তাদের কি বলে?
উঃ অপসারী পাত।
৬.প্যানজিয়া কি?
উঃ প্রায় 30 কোটি বছর আগে পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগ একটি বিশাল ভূখণ্ডরূপে অবস্থান করত। তাকে বলা হত প্যানজিয়া।
৭.পাতসংস্থান তত্ত্ব ধারণাটির উদ্ভব কখন ঘটে?
উঃ1960-এর দশকে।
৮.পৃথিবীর পাতগুলি গড়ে কত কিমি পুরু?
উঃ 70 - 150 কিমি।
৯.'পাত' কথাটি প্রথম কে প্রয়োেগ করেন?
উঃ জোট উইলসন।
১০.গঠনকারী পাত সীমানা কাকে বলা হয়?
উঃ অপসারী পাত সীমানাকে গঠনকারী পাত সীমানা বলা হয়।
১১.অপসারী পাত সীমানায় কিরূপ ভূমিরূপ গঠিত হয়?
উঃ মধ্য-সামুদ্রিক শৈলশিরা।
১২.যখন দুটি পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয় তাকে কি বলে?
উঃ অভিসারী পাত সীমানা।
১৩.বিনাশকারী পাত সীমানা কাকে বলে?
উঃ অভিসারী পাতদ্বয়ের সীমানাকে বলে বিনাশকারী পাত সীমানা।
১৪.নিমজ্জিত পাত সীমানায় কোন পর্বতের-এর সৃষ্টি হয়?
উঃ ভঙ্গিল পর্বত।
১৫.কোন দুটি পাতের সংঘর্ষে হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে?
উঃ ভারতীয় পাত ও ইউরেশীয় পাতের সংঘর্ষে সৃষ্টি হয়েছে হিমালয় পর্বত।
১৬.ভঙ্গিল পর্বতসৃষ্টির জন্য কোন পাত সীমানা দায়ী?
উঃ অভিসারী পাত সীমানা।
১৭. ভূগর্ভের উত্তপ্ত ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে এলে তাকে কী বলে?
উত্তর: লাভা।
১৮. কোন্ ধরনের পাত সীমানায় বিদার অগ্ন্যুৎপাত ঘটে?
উত্তর: অপসারী এবং নিরপেক্ষ পাত সীমানায়।
১৯. ভারতে বিদার অগ্ন্যুৎপাতের ফলে কোন ধরনের মালভূমি তৈরি হয়েছে?
উত্তর: দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে।
২০. ভারতের কোথায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে লাভা সঞ্চিত হয়ে?
উত্তর: দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে।
২১. ম্যাগমা কী?
উত্তর: ভূ-অভ্যন্তরের গলিত, সান্দ্র পদার্থ লাভা।
২২. ভারতের একটি আগ্নেয় পর্বতের নাম লেখো।
উত্তর: ব্যারেন।
২৩. দীর্ঘ ফাটল বরাবর যে অগ্ন্যুৎপাত হয় তাকে কী বলে?
উত্তর: বিদার অগ্ন্যুদগম বা নিঃসারী অগ্ন্যুদগম।
২৪. অগ্ন্যুৎপাতের উৎসের নাম কী?
উত্তর: আগ্নেয়গিরি।
২৫. সিসিলির স্ট্রম্বোলি কী ধরনের আগ্নেয়গিরি?
উত্তর: সক্রিয় আগ্নেয়গিরি।
২৬. সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কী?
উত্তর: প্রায়শই অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়ে চলা আগ্নেয়গিরি।
২৭. একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির নাম লেখো।
উত্তর: হাওয়াই দ্বীপের মৌনালোয়া।
২৮. ভারতের একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির নাম লেখো।
উত্তর: ব্যারেন।
২৯. পৃথিবীর একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরির নাম করো।
উত্তর: জাপানের ফুজিয়ামা।
৩০. ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরিটি কোন দেশে অবস্থিত?
উত্তর: ইন্দোনেশিয়া।
৩১. মায়ানমারের একটি (মৃত) আগ্নেয়গিরির নাম লেখো।
উত্তর: পোপো
৩২. একটি মৃত আগ্নেয়গিরির নাম লেখো।
উত্তর: মেক্সিকোর পারকুটিন।
৩৩. 'আ আ লাভা কী?
উত্তর: ইন্দোনেশিয়ার আগ্নেয়গিরির সান্দ্র লাভা
৩৪. অত্যন্ত পাতলা লাভা হাওয়াই দ্বীপে কী নামে পরিচিত?
উত্তর: পা হো হো লাভা।
৩৫. মাউন্ট ফুজি কোন্ ধরনের পর্বত?
উত্তর: সুপ্ত আগ্নেয়গিরি।
৩৬. ইউরোপের একটি আগ্নেয়গিরির নাম লেখো।
উত্তর: ভিসুভিয়াস।
৩৭. কোন্ আগ্নেয়গিরি হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ইন্দোনেশিয়ার তিনটি শহর ধ্বংস করে দেয়?
উত্তর : ক্রাকাতোয়া।
৩৮. ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতে কোন্ শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়?
উত্তর: পম্পেই শহর।
৩৯. ভূমিকম্পের কোন্ তরঙ্গ বৃত্তের মতো ছড়িয়ে পড়ে?
উত্তর: র্যালে তরঙ্গ।
৪০. রিখটার স্কেলে প্রতিটি মাত্রার ভূমিকম্প তার আগের মাত্রার চেয়ে কত গুণ বেশি শক্তিশালী হয়?
উঃ 10 গুন।
৪১. সিসমোগ্রাম কী?
উত্তর : ভূমিকম্পের রেখাচিত্র।
৪২. কোন্ প্রকার পাত সীমান্তে তীব্র ভূমিকম্প হয়?
উত্তর : অভিসারী/বিনাশকারী।
৪৩. প্রায়শই ভূমিকম্প হয় এরকম একটি অভিসারী সংঘর্ষ সীমানার উদাহরণ দাও।
উত্তর: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল।
৪৪. ভূমিকম্পের কোন্ তরঙ্গ সবচেয়ে বিধ্বংসী?
উত্তর: L তরঙ্গ।
৪৫. ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি ও তীব্রতা মাপা হয় কোন্ যন্ত্রের সাহায্যে?
উত্তর: রিখটার স্কেল।
৪৬. রিখটার স্কেলের সূচক মাত্রা লেখো।
উত্তর: 0-10।
৪৭. দুটি আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের উদাহরণ দাও।
উত্তর : অগ্ন্যুদগম ও ভূমিকম্প।
৪৮. ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রে ঢেউ-এর উচ্চতা বেড়ে প্রবল শক্তিতে উপকূল অঞ্চলে আছড়ে পড়লে তাকে কী বলে?
উত্তর : সুনামি।
৪৯. ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার কাছে ভারত মহাসাগরের নীচে সুনামি কত সালের কত তারিখে হয়েছিল?
উত্তর : 2004 সালের 26 ডিসেম্বর।
৫০. সান আদ্রিজ চ্যুতির ওপর অবস্থিত একটি শহরের নাম লেখো।
উত্তর : লস এঞ্জেলস/ সান ফ্রান্সিসকো।
৫১. কত সালে ভূমিকম্পের ফলে সান ফ্রান্সিসকো ধ্বংস হয়?
উত্তর: 1906 সালে।
৫২. ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে কত গভীরে অবস্থিত?
উত্তর : সাধারণত 50-100 কিমি গভীরে।
৫৩. 'P' বা প্রাথমিক তরঙ্গের গতিবেগ কত?
উত্তর : সেকেন্ডে প্রায় 6 কিমি।
৫৪. কোন্ ভূকম্পীয় তরঙ্গ সাম্র পদার্থের মধ্য দিয়ে যেতে পারে না?
উত্তর : 's' তরঙ্গ।
✍️ প্রশ্নের মান-২/৩:
১. অভিসারী বা বিনাশকারী পাত সীমানা কাকে বলে?
অভিসারী বা বিনাশকারী পাত সীমানা: যে সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পর মুখোমুখি এগিয়ে আসে, তাকে অভিসারী পাত সীমানা বলে।
→ উদাহরণ: ইউরেশীয় ও ভারতীয় এই দুটি পরস্পরমুখী পাত সীমানা অভিসারী পাত সীমানার অন্তর্গত।
২. নিরপেক্ষ পাত সীমানা কাকে বলে?
→ নিরপেক্ষ পাত সীমানা: যে ধরনের পাত সীমানায় দুটি ভূত্বকীয় পাত পরস্পর ঘর্ষণ করে পাশাপাশি অগ্রসর হয়। ফলে ভূমিকম্প, চ্যুতি প্রভৃতি সৃষ্টি হয়। তাকেই নিরপেক্ষ পাত সীমানা বলা হয়।
→ উদাহরণ: ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত সান আন্দিজ চ্যুতি এই প্রকার পাত সীমানার উদাহরণ।
৩. বিনাশকারী পাত সীমানার বৈশিষ্ট্য গুলি লেখো।
- বিনাশকারী পাত সীমানার বৈশিষ্ট্য :
বিনাশকারী পাত সীমানার বৈশিষ্ট্যগুলি হল -
১. পারস্পরিক সংঘর্ষ: দুটি ভূত্বকীয় পাত পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে মুখোমুখি এগিয়ে যায়।
২. ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি : দুটি মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষের ফলে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হয়।
৩ . ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত: বিনাশকারী পাত সীমানা বরাবর প্রায়শই ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।
৪. ভূত্বকের বিনাশ: ভারী পাতের নীচে হালকা পাতের নিমজ্জন ঘটে এবং ভূত্বকের বিনাশ হয়।
৫. দ্বীপপুঞ্জের সৃষ্টি: দুটি পরস্পরমুখী পাত সামুদ্রিক হলে সংঘর্ষের ফলে পাতের ওপরের পলি ভাঁজ খেয়ে দ্বীপপুঞ্জ সৃষ্টি হয়।
৪. পাত' বলতে কী বোঝ?
অথবা
শিলামণ্ডলীয় 'পাত' বলতে কী বোঝ?
→ সংজ্ঞা: শিলামণ্ডলের অন্তর্গত সমস্ত ছোটো-বড়ো, পাতলা, অনমনীয় ও কঠিন অংশগুলি বহিঃগুরুমণ্ডলের অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের ওপর ভাসমান অবস্থায় রয়েছে এবং এই অংশগুলিকে পাত বলে। এই পাতগুলি অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের পরিচলন স্রোতের প্রভাবে সচল অবস্থায় রয়েছে। অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের ওপরের অনেক পরিমাণ তাপ এবং চাপের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে এবং এর ফলে এই পাতগুলি সচল অবস্থায় রয়েছে।
৫. অপসারী পাত সীমানাকে গঠনকারী পাত সীমানা বলে কেন?
→ অপসারী পাত সীমানাকে গঠনকারী পাত সীমানা বলার কারণ: দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য দুটি পাতের সংযোগস্থলে ফাটল বৃদ্ধি পাওয়া যায় যার ফলে ভূ-অভ্যন্তরের ম্যাগমা বেরিয়ে এসে শীতল ও কঠিন হয়ে নতুন মহাসাগরীয় ভূত্বক এবং মধ্য-সামুদ্রিক শৈলশিরা (যেমন-মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা) গঠন করে। অপসারী পাত সীমানায় সাধারণত নতুন ভূত্বক গঠিত হয় বলে একে গঠনকারী পাত সীমানাবলে। একে গঠনকারী পাত সীমানা বলে কারণ হল এই সীমানার মাধ্যমে নতুন ভূত্বকের গঠন সৃষ্টি হয়, যা আগের ভূত্বকের বিনাশ এবং পরিবর্ধন বাধা দেয়।
৬. অভিসারী পাত সীমানাকে বিনাশকারী পাত সীমানা বলে কেন?
• অভিসারী পাত সীমানাকে বিনাশকারী পাত সীমানা বলার কারণ: যে সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তাকে অভিসারী পাত সীমানা বলে। এই পাত সীমানায় ভারী পাতটি নিম্নগামী হয়ে হালকা পাতটির নীচে প্রবেশ করে। এর ফলে ভারী পাতটি গুরুমণ্ডলের প্রচণ্ড উয়তায় গলে যায় অর্থাৎ পাতের বিনাশ হয়। তাই অভিসারী পাত সীমানাকে বিনাশকারী পাত সীমানাবলে। এই পাত সীমানা বরাবর ভূত্বকের বিনাশ ঘটে ও সমুদ্রখাত সৃষ্টি হয়।
৭. টীকা লেখো: মহীসঞ্চরণ তত্ত্ব অথবা, 'মহীসঞ্চরণ তত্ত্ব'-এর মূলকথা কী?
→ মূলপ্রবক্তা: মহীসঞ্চরণ তত্ত্ব মূল প্রবক্তা হলেন আলফ্রেড ওয়েগনার।
মূলকথা: ১৯১২ সালে আলফ্রেড ওয়েগনার
মহীসঞ্চরণ তত্ত্ব অনুসারে, প্রায় 30 কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগ একটিমাত্র ভূখণ্ড হিসেবে অবস্থান করত, যার নাম প্যানজিয়া এবং প্যানজিয়াকে ঘিরে একটিমাত্র সমুদ্র অবস্থান করত, যার নাম প্যানথালাসা। পরবর্তী সময়ে প্যানজিয়া অনেকগুলি খণ্ডে ভেঙ্গে যায় এবং বিভিন্ন দিকে সঞ্চারিত হয়। মহাদেশীয় ভূত্বক (SIAL) বিচ্ছিন্নভাবে মহাসাগরীয় ভূত্বক (SIMA)-এর ওপর সঞ্চারিত হতে শুরু করে। বিভিন্ন দিকে মহাদেশগুলির এই স্থানান্তর বা চলনকে ওয়েগনার তাঁর তত্ত্বে মহীসঞ্চরণ নামে অভিহিত করা হয়।
৮. অগ্ন্যুদগম কী?
◆ সংজ্ঞা:অগ্ন্যুদগম হল একটি প্রকারের ভূকম্প।
যখন অভ্যন্তরের গলিত সান্দ্র ম্যাগমা, গ্যাস ও জলীয় বাষ্প ভূপৃষ্ঠের কোনাে দুর্বল অংশ, ফাটল বা গহ্বরের মধ্য দিয়ে বিস্ফোরণ-সহ প্রচণ্ড গতিবেগে বা শান্তভাবে ওপরে উঠে আসে এবং ভূপৃষ্ঠের ওপর শীতল হয়ে জমাট বাঁধে। এই ঘটনাকে অগ্ন্যুদগম বলে। অগ্ন্যুৎপাতের উৎসগুলি আগ্নেয়গিরি নামে পরিচিত।
৯. আগ্নেয় পর্বত কাকে বলে?
→ সংজ্ঞা: ভূত্বকের দুর্বল ফাটল বা ছিদ্র পথের মধ্যে দিয়ে যখন ভূ-অভ্যন্তরের গলিত, সান্দ্র ম্যাগমা, গ্যাস, ছাই, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ-সহ জোরে বা শান্তভাবে বাইরে বেরিয়ে আসে, তখন সেই প্রক্রিয়াকে অগ্ন্যুৎপাত বলে। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে আগ্নেয় পদার্থসমূহ ফাটলের চারিদিকে সঞ্চিত হয়ে যে পর্বত গঠিত হয়, তাকে আগ্নেয় পর্বত বলে।
→ উদাহরণ: জাপানের ফুজিয়ামা, ইতালির ভিসুভিয়াস, ভারতের ব্যারেন, ইন্দ্রোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া প্রভৃতি।
১০. সুপ্ত আগ্নেয়গিরি কাকে বলে?
→ সংজ্ঞা: সুপ্ত আগ্নেয়গিরি হল সেই আগ্নেয়গিরি যেগুলি বহু বছর ধরে অগ্ন্যুদগম না ঘটলেও ভবিষ্যতে ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধরনের আগ্নেয়গিরি দীর্ঘকাল নিষ্ক্রিয় থেকে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
উদাহরণ: ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া,জাপানের ফুজিয়ামা এই ধরনের আগ্নেয়গিরির একটি উদাহরণ।
১১. মৃত আগ্নেয়গিরি কাকে বলে?
→ সংজ্ঞা: মৃত আগ্নেয়গিরি হল সেই আগ্নেয়গিরি যেগুলি অতিপ্রাচীনকালে অগ্ন্যুৎপাত ঘটতে সক্ষম ছিল, তবে ভবিষ্যতে আর কখনোই অগ্ন্যুৎপাত ঘটার সম্ভাবনা নেই। এই ধরনের আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে হ্রদ বা জলাশয় সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ: মেক্সিকোর পারকুটিন মায়ানমারের পোপো এই ধরনের আগ্নেয়গিরি।
১২. অগ্ন্যুৎপাতকে ভূগাঠনিক প্রক্রিয়া বলা হয় কেন?
- অগ্ন্যুৎপাতকে ভূগাঠনিক প্রক্রিয়া বলার কারণ: অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ম্যাগমা বাইরে বেরিয়ে আসার সময় ম্যাগমার বহির্মুখী চাপের ফলে শিলা ফেটে যায় এবং এই ফাটল বরাবর ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে লাভারূপে নির্গত হয়। ফলে শীতল হয়ে জমাট বাঁধার পর নতুন নতুন ভূমিরূপ তৈরি করে। এক্ষেত্রে অভিসারী পাত সীমানায় বারবার অগ্ন্যুৎপাতের ফলে আগ্নেয় পর্বত এবং অপসারী পাত সীমানায় বিদার অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে লাভা মালভূমির সৃষ্টি হয়। এইসব কারণের জন্য অগ্ন্যুৎপাতকে ভূগাঠনিক প্রক্রিয়া বলা হয়।
১৩. পা হো হো লাভা কী?
→ সংজ্ঞা: হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে অত্যন্ত পাতলা লাভা বেরিয়ে বহুদূর প্রবাহিত হয়, তাকে পা হোে হাে লাভা বলে।
বৈশিষ্ট্য: এর বৈশিষ্ট্য গুলি হল-
১. এই লাভা অত্যন্ত পাতলা হওয়ার পর ভূপৃষ্ঠে নির্গত হওয়ার পর্যাপ্ত সময় পর্যন্ত প্রবাহিত হয়।
২. এই লাভা প্রবাহের উপরের স্তরে দ্রুত ঠান্ডা হয়ে কুঁচকে গিয়ে পাকানো দড়ির মতো দেখতে হয়।
১৪. আ আ লাভা কী এবং কোন্ স্থানে এটি দেখা যায়?
→ সংজ্ঞা: হাওয়াই দ্বীপের ভাষায় "আ আ লাভা" হিসেবে পরিচিত এই ধরনের লাভা ইন্দোনেশিয়ার আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে গাঢ়, সান্দ্র, এবং ধীরগতিসম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোটা আস্তরণ হিসেবে জমাট বাঁধে এবং খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত হয়। এই ধরনের লাভা খুবই আঠালো প্রকৃতির হওয়ায় দ্রুত বেশিদূর প্রবাহিত হতে পারে না।
→ অবস্থান: ইন্দোনেশিয়ার আগ্নেয়গিরিগুলি থেকে এরকম লাভা নির্গত হয়।
১৫. সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কাকে বলে?
→ সক্রিয় আগ্নেয়গিরি: যেসব আগ্নেয়গিরি উৎপত্তি হওয়ার পর থেকে অবিরামভাবে অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়ে চলেছে, তাদের সক্রিয় বা জীবিত আগ্নেয়গিরি বলে। এই ধরনের আগ্নেয়গিরি দুইপ্রকার – -
১. অবিরাম আগ্নেয়গিরি: অবিরাম আগ্নেয়গিরি হল সেই ধরনের আগ্নেয়গিরি যেখান থেকে প্রায়শই লাভা বের হয়।
> উদাহরণ : ইটালির ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি।
২. সবিরাম আগ্নেয়গিরি: সবিরাম আগ্নেয়গিরি হল সেই ধরনের আগ্নেয়গিরি যেখান থেকে কিছু দিন অন্তর অন্তর লাভা বা আগ্নেয় পদার্থ নির্গত হয়।
→ উদাহরণ:ইটালির স্ট্রম্বোলি ইত্যাদি।
১৬. ভূমিকম্পের কেন্দ্র কাকে বলে?
• সংজ্ঞা : ভূত্বকের অভ্যন্তরে বা ভূগর্ভের যে স্থান থেকে কম্পনের উৎপত্তি হয়, তাকে বলে ভূমিকম্পের উৎসস্থল বা ভূমিকম্পের কেন্দ্র (locus)।
• বৈশিষ্ট্য : ১. কেন্দ্রের পরিসর ভূমিকম্পের কেন্দ্র কোনো একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে অবস্থান করে।
• কেন্দ্রের গভীরতা : ভূমিকম্পের কেন্দ্র সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে 50-100 কিলোমিটার গভীরতার মধ্যে থাকে।
১৭. ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র কী?
ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ঠিক উল্লম্ব দিকে ভূপৃষ্ঠের যে বিন্দুতে ভূকম্প তরঙ্গ প্রথম এসে পৌঁছায়, সেই বিন্দুকে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র (epicenter) বলে। এটি ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত ভূমিকম্প কেন্দ্রের নিকটতম স্থান। এই অঞ্চলই ভূমিকম্পের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১৮. ভূকম্প তরঙ্গ কী?
• ভূমিকম্পের ফলে যে শক্তি উৎপন্ন হয়, সেই শক্তি ভূমিকম্পের কেন্দ্র, উপকেন্দ্র থেকে পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই তরঙ্গকে ভূকম্প তরঙ্গ বলে।
১৯. ভূকম্পীয় তরঙ্গ কয়প্রকার ও কী কী?
• ভূকম্পীয় ভরঙ্গের প্রকারভেদ : ভূকম্পীয় তরঙ্গকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা -১. P তরঙ্গ বা অনুদৈর্ঘ্য বা প্রাথমিক তরঙ্গ,২. S তরঙ্গ বা অনুপ্রস্থ বা গৌণ তরঙ্গ,৩. L তরঙ্গ বা পৃষ্ঠ বা পার্শ্ব তরঙ্গ।
২০. S তরঙ্গ বা অনুপ্রস্থ বা গৌণ তরঙ্গ কাকে বলে?
• ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন যে তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠের বা ভূগর্ভের কেবল কঠিন অংশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে, তাকে S তরঙ্গ (secondary wave) বলে।
বৈশিষ্ট্য: S তরঙ্গের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
১. এর গতিবেগ প্রায় সেকেন্ডে 3-5 কিমি। ২. এই তরঙ্গ বস্তুকণার ওপর-নীচে ওঠানামার মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। S তরঙ্গ P তরঙ্গের পরে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রে পৌঁছোয়।
২১. P তরঙ্গ বলতে কী বোঝ?
• ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন যে তরঙ্গ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় মাধ্যম দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাকে P তরঙ্গ (primary wave) বলে।
২২. বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?
• কোনো বিপর্যয় ঘটার পূর্বেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, সাবধানতা অবলম্বন (মানুষ-সহ বিভিন্ন জীবজন্তুর প্রাণহানি রোেধ এবং সম্পত্তি নষ্টের পরিমাণ কমানো]), বিপর্যয় চলাকালীন পরিকল্পিত ব্যবস্থাগ্রহণ এবং বিপর্যয় ঘটার পরে দ্রুত ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য পরিচালনা করা এবং বিপর্যয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে একত্রিত করে বিপর্যয় মোকাবিলাকেই বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা বলা হয়।
২৩. প্রশান্ত মহাসাগরীয় অগ্নিবলয় কাকে বলে?
• পৃথিবীর অধিকাংশ জীবন্ত আগ্নেয়গিরি প্রশান্ত মহাসাগরকে বলয়ের মতো ঘিরে রেখেছে।
এজন্য প্রশান্ত মহাসাগরের দু'দিকের উপকূলীয় ভূমিকম্পপ্রবণ ও আগ্নেয়গিরি অধ্যুষিত অঞ্চলকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অগ্নিবলয় (Pacific Ring of fire) বলা হয়।
বিস্তার: এই বলয়টি দক্ষিণ আমেরিকার হর্ন অন্তরীপ থেকে শুরু করে আন্দিজ পর্বত এবং উত্তর আমেরিকার রকি পর্বত হয়ে এশিয়া মহাদেশের শাখালিন দ্বীপপুঞ্জ, জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া হয়ে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত।
আগ্নেয়গিরি: পৃথিবীর 70 শতাংশ ভূমিকম্প এই বলয়ে সংঘটিত হয়। এই বলয়ের আগ্নেয়গিরিগুলির মধ্যে কয়েকটি: হল ফুজিয়ামা, পিনাটুবো, ক্লাকাতোয়া, সেন্ট হেলেন্স, কোটোপ্যাক্সি, পোপোক্যাটিপেটল প্রভৃতি।
২৪. ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে কী কী করা উচিত? অথবা, ভূমিকম্প হঠাৎ শুরু হলে কী করা উচিত?
• ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় : ভূমিকম্প হঠাৎ হয় বলে এটি ভয়ানক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। তাই ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে যে পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা উচিত তা হল
১. ভূমিকম্পের সময় দ্রুত বাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে খোলা জায়গায় আসা উচিত।
২. ভূমিকম্পের সময় ঘর থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব না হলে শক্ত টেবিলের বা আসবাবের নীচে ঢুকে পড়া উচিত।
৩. বাড়ি থেকে বেরোেবার আগে সম্ভব হলে টর্চ, শুকনো খাবার, পানীয় জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়া প্রয়োজন।
৪. ভূমিকম্প চলাকালীন বহুতল বাড়ির ঝুল বারান্দা ও লিফট ব্যবহার করা উচিত নয়।
২৫. পৃথিবীর নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলগুলি ভূমিকম্পপ্রবণ কেন?
• পৃথিবীর নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ হওয়ার কারণ: পৃথিবীর সকল নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিকম্পপ্রবণ।
কারণ -
১. অভিসারী পাত সীমানায় অবস্থান : এই অঞ্চলগুলি অভিসারী পাত সীমানায় অর্থাৎ দুটি পাতের সংঘর্ষস্থলে অবস্থিত। এক্ষেত্রে হালকা পাতের নীচে ভারী পাতটি অনবরত প্রবেশ করার ফলে যে ঘর্ষণ ও সংঘর্ষ হয় তার ফলে ওই অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়।
২. পর্বতের উত্থান প্রক্রিয়া: নবীন ভঙ্গিল পর্বতের উত্থান প্রক্রিয়া এখনও চলতে থাকায় অঞ্চলটি ভূমিকম্পপ্রবণ।
৩. অন্যান্য : এই অঞ্চলে প্রায়ই ভূমিধস ও অন্যান্য কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
✍️ প্রশ্নের মান-৫:
১. আগ্নেয় পর্বত কীভাবে সৃষ্টি হয় তা চিত্র-সহ ব্যাখ্যা করো।
১. অভিসারী পাত সীমানায় সৃষ্ট আগ্নেয় পর্বত: অভিসারী পাত সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পরের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে পাত সীমানায় বিস্ফোরণসহ অগ্ন্যুৎগম ঘটে। এর ফলে উৎক্ষিপ্ত লাভা ও পদার্থসমূহ ফাটল বা গহ্বরের চারিদিকে সঞ্চিত হয়ে শঙ্কু আকৃতির পর্বতের সৃষ্টি করে। সঞ্চয়ের ফলে সৃষ্টি হওয়ায় জন্য এর আর-এক নাম সঞ্চয়জাত পর্বত।
২. অপসারী পাত সীমানায় সৃষ্ট আগ্নেয় পর্বত: সমুদ্র তলদেশে অপসারী পাত সীমানা বরাবর দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে গেলে যে ফাটল সৃষ্টি হয়, সেই ফাটল দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরের ম্যাগমা ক্রমাগত বেরিয়ে আসে। এই ম্যাগমা থেকেই পরে নতুন ভূত্বক এবং মধ্য-সামুদ্রিক শৈলশিরা গঠিত হয়।
৩. তপ্তবিন্দু: কখনো কখনো পাতের মধ্যস্থলে তপ্তবিন্দু (hotspot) থেকে তৈরি হওয়া ঊর্ধ্বমুখী পরিচলন স্রোতের প্রভাবে উঠে আসা ম্যাগমা আগ্নেয় পর্বতের সৃষ্টি করে।
→ উদাহরণ: জাপানের মাউন্ট ফুজি, ইটালির ভিসুভিয়াস, ভারতের ব্যারেন প্রভৃতি হল আগ্নেয় পর্বত।
২. আগ্নেয়গিরি কত প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকারের একটি করে উদাহরণ দাও।
→ আগ্নেয়গিরির প্রকারভেদ: আগ্নেয়গিরি তিনপ্রকার, যথা – ১. সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, ২. সুপ্ত আগ্নেয়গিরি এবং ৩. মৃত আগ্নেয়গিরি।
১. সক্রিয় আগ্নেয়গিরির: সিসিলি দ্বীপের এটনা, লিপারি দ্বীপের স্ট্রম্বোলি, হাইয়াই দ্বীপের মৌনালোয়া, ভারতের ব্যারেন।
২. সুপ্ত আগ্নেয়গিরি: জাপানের ফুজিয়ামা, ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া।
৩. মৃত আগ্নেয়গিরি: মেক্সিকোর পারকুটিন, মায়ানমারের পোপো।
৩. বিদার অগ্ন্যুদগম সম্পর্কে কী জান?
→ সংজ্ঞা: অপসারী ও নিরপেক্ষ পাত সীমানায় যখন ভূ-অভ্যন্তরের ম্যাগমা কোনো বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে শান্তভাবে ছোটো-বড়ো ফাটলের মধ্যে দিয়ে লাভারূপে বাইরে বেরিয়ে আসে, তখন তাকে বিদার বা ফিসার অগ্ন্যুদগম বলে।
বৈশিষ্ট্য:
এর বৈশিষ্ট্য গুলি হল –
১. এই ধরনের অগ্ন্যুৎপাতে কোনও জ্বালামুখ থাকে না।
২. এক্ষেত্রে ভূত্বকের ফাটলগুলি বেশ লম্বা হয়।
৩. কোনোরকম বিস্ফোরণ ছাড়াই নিঃশব্দে লাভা ভূপৃষ্ঠে নির্গত হয়।
৪. এই ধরনের লাভা তরল প্রকৃতির হয়।
→ উদাহরণ: ভারতে অবস্থিত দাক্ষিণাত্যের লাভা মালভূমি বা ডেকান ট্যাপ এই জাতীয় অগ্ন্যুদগমের ফলে সৃষ্ট।
৪. অগ্ন্যুগমের কারণ কী? অথবা, অগ্ন্যুগম কীভাবে হয়?
> অগ্ন্যুগমের কারণ: বিভিন্ন কারণে অগ্ন্যুদগম হতে পারে। এগুলি হল -
১. ভূপৃষ্ঠে দুর্বল ফটিলের অবস্থান: ভূত্বক গঠনকালে ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূগর্ভ পর্যন্ত কিছু দুর্বল ফাটল বা ছিদ্রপথ অবস্থান করতে পারে। এই দুর্বল স্থানগুলি অগ্ন্যুগমের উৎসরূপে কাজ করতে পারে, যার ফলে ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের বেশ উপরে উঠে আসতে পারে এবং তার চাপ ও গলনাঙ্ক কমে যায়।
২. সান্দ্র শিলার উপস্থিতি: ভূ-অভ্যন্তরে গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সান্দ্র শিলা চাপ ও উষ্ণতা বাড়তে থাকে। তবে, গুরুমণ্ডলের উচ্চ তাপমাত্রা নেই তাই প্রবল চাপে শিলা গলে না, বরং তা পিচ্ছিল হয়ে প্লাস্টিকের মতো প্রবাহিত হয়। এর কারণ হল চাপ বাড়ার ফলে শিলার গলনাঙ্ক বেড়ে যাওয়া। এটি ভূত্বকের মধ্যে উচ্চ তাপমাত্রা এবং প্রবল চাপে প্রবাহিত হওয়ার ফলে সৃষ্ট হয় এমন সান্দ্র শিলা পর্বত। কিছু ক্ষেত্রে বহিঃগুরুমণ্ডলের কোনো অংশের শিলা গলে যখন এই তরল ম্যাগমা ঘনত্ব পার্শ্ববর্তী শিলার তুলনায় কম হয়, তখন ম্যাগমা ওপরে উঠে শুরু করে এবং তার চাপ ও গলনাঙ্ক কমে যায়। এই তরল ম্যাগমা জলীয় অংশ গ্যাস ও জলীয় বাষ্পে রূপান্তরিত হয় ও প্রবল চাপে ভূপৃষ্ঠে কোনো দুর্বল ফাটল দিয়ে উৎক্ষিপ্ত হয়।
৩. পাতসংস্থান: পৃথিবীতে মোেট 6 টি বড়ো এবং 20 টি মাঝারি ও ছোটো পাত রয়েছে। অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের পরিচলন স্রোতের প্রভাবে এই পাতগুলি তাদের সীমানা বরাবর কখনও একে অপরের মুখোমুখি বা বিপরীত দিকে বা পাশাপাশি ঘর্ষণ করে অগ্রসর হলে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।
৫. ভূমিকম্পের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দাও। অথবা,
ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক কারণ ব্যাখ্যা করো।
• ভূমিকম্পের কারণ: পৃথিবীর স্থিতিস্থাপক অভ্যন্তরে কোনো সঞ্চিত শক্তি হঠাৎ মুক্ত হয়ে ভূত্বক কেঁপে উঠলে তাকে ভূমিকম্প বলে। ভূমি ভূমিকম্পের জন্য দায়ী প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক কারণগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল –
• প্রাকৃতিক কারণ : ভূমিকম্পের জন্য দায়ী প্রাকৃতিক কারণগুলি হল-
১. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত: আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময় গ্যাস, জলীয় বাষ্প ও উত্তপ্ত তরল পদার্থ প্রচণ্ড জোরে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসলে ভূমিকম্প হতে পারে।
২.ধস : বৃষ্টিপাতের ফলে পার্বত্য অঞ্চলে ধস নামলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
৩. পাতের সঞ্চরণ : পাতসংস্থান তত্ত্ব অনুযায়ী দুটি পাত পরস্পরের অভিমুখে অগ্রসর হলে বা পরস্পর থেকে দূরে সরে গেলে বা পাশাপাশি ঘর্ষণ করে অগ্রসর হলে পাতের সংযোেগরেখা বরাবর শিলাচ্যুতি ঘটে এবং ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়।
৪. হিমানী সম্প্রপাত : পার্বত্য অঞ্চলে বিশাল বরফের স্তূপ হিমানী সম্প্রপাতরূপে ধসে পড়লে ভূমিকম্প হয়।
৫. ভঙ্গিল পর্বতের উত্থান : ভূ-আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বতের উত্থানের সময় প্রবল ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
৬. উল্কাপাত : মহাকাশ থেকে খসে পড়া উল্কার আঘাতেও ভূমিকম্প হয়।
যেমন – আমেরিকার অ্যারিজোনায় উল্কাপাতের ফলে একটি বিরাট গহ্বরের সৃষ্টি হয়েছিল, যাকে শয়তানের খাদ' নাম দেওয়া হয়।
৬. ভূমিকম্পের ফলাফল সম্বন্ধে যা জান লেখো।
• ভূমিকম্পের ফলাফল: ভূমিকম্পের ফলাফল বা প্রভাবগুলি হল -
১. জীবন ও সম্পত্তিছানি : ভূমিকম্প ঘটার ফলে অনেকসময় বাড়িঘর চাপা পড়ে বা ভেঙে যায়। এর ফলে অনেক মানুষ ও গৃহপালিত জন্তুর মৃত্যু হয় এবং সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নষ্ট হয়।
২. পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়া:ভূমিকম্পের ফলে রাস্তাঘাট, রেললাইন বেঁকে যাওয়া, বসে যাওয়া এবং ধসের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
৩. জলাধার ভেঙে হঠাৎ বন্যার সম্ভাবনা : বড়ো জলাধারের বিপুল জলরাশির চাপে ভূমিকম্প হলে বাঁধ ভেঙে হঠাৎই বন্যা ঘটতে পারে।
যেমন – মহারাষ্ট্রের কয়নাতে 1967 সালে এইভাবে ভূমিকম্প ও তার ফলে বন্যা হয়েছিল।
৪. সুনামির সৃষ্টি : সমুদ্র তলদেশে সৃষ্ট ভূমিকম্প প্রবল সামুদ্রিক ঢেউ সৃষ্টি করে। ওই ঢেউ উপকূলভাগে আছড়ে পড়ে উপকূলবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক জীবন ও সম্পত্তি হানি ঘটায়। যেমন-2004 সালে ভারত মহাসাগরের তলদেশে (সুমাত্রার নিকট) সৃষ্ট ভূমিকম্পে যে সুনামি সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে 11 টি দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং প্রায় ও লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হয়।
৫. নতুন ভূভাগ সৃষ্টি: অনেকসময় আন্তঃসাগরীয় এলাকা ভেসে উঠে নতুন ভূভাগ তৈরি করে। যেমন -সম্প্রতি 2013 সালে করাচির নিকট এরুপ একটি কাদার দ্বীপ তৈরি হয়েছে।
৬. বন্দর গঠনে সহায়তা: ভূমিকম্পের ফলে অনেকসময় উপকূলবর্তী ভূমিভাগ নিমজ্জিত হয়ে বন্দর গঠনের পক্ষে সাহায্য করে।
৭. অপসারী বা গঠনকারী পাত সীমানা কাকে বলে?এই পাত সীমানার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো?
• অপসারী বা গঠনকারী পাত সীমানা: যে সীমানা বরাবর দুটি ভূত্বকীয় পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়।ফলে ভূঅভ্যন্তরভাগে যে ফাটলের সৃষ্টি হয় তা দিয়ে ম্যাগমা বেরিয়ে এসে শীতল ও জমাটবদ্ধ হয়ে নতুন ভূত্বক গঠন করে। একে অপসারী পাত সীমানা বা গঠনকারী পাত সীমানা বলে।
→ উদাহরণ: আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা বরাবর এই পাত দেখা যায়।
⇒ বৈশিষ্ট্য: গঠনকারী পাত সীমানার বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
১. এই পাত সীমানায় দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়।
২. দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে মধ্যবর্তী অংশে যে ফাটল সৃষ্টি হয়, তা দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরভাগ থেকে ম্যাগমা বেরিয়ে এসে শীতল ও জমাটবদ্ধ হয়ে নতুন ভূত্বক গঠন করে।
৩. সমুদ্রের তলদেশে দুটি পাত পরস্পর বিপরীত দিকে সরে গিয়ে মধ্য-সামুদ্রিক শৈলশিরা গঠন করে।
.......................