📚সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস:অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:অধ্যায়-২:ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের কয়েকটি ধারা : খ্রিস্টীয় সপ্তম – দ্বাদশ শতক 📚
✍️ প্রশ্নের মান-১:
1. আমাদের রাজ্যের নাম কী?
উত্তর: পশ্চিমবঙ্গ।
2. মিনহাজ-ই সিরাজ কোন্ শতকের ঐতিহাসিক ছিলেন?
উত্তর: খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকের।
3. শশাঙ্ক কোন্ দেবতার উপাসক ছিলেন?
উত্তর: শিবের।
4. হর্ষবর্ধনের সভাকবি কে ছিলেন?
উত্তর: বাণভট্ট।
5. হর্ষচরিত কে রচনা করেন?
উত্তর: বাণভট্ট।
6. সকলোত্তরপথনাথ' কার উপাধি ছিল?
উত্তর: হর্ষবর্ধনের।
7. ইৎ-সিঙ্ কে ছিলেন?
উত্তর: চিনা পর্যটক।
৪. শশাঙ্কের মৃত্যুর কত বছর পর ইৎ-সিঙ্ ভারতে
এসেছিলেন?
উত্তর: ৫০ বছর পর।
9. কোন চিনা পর্যটক শশাঙ্ককে 'বৌদ্ধবিদ্বেষী' বলেছেন?
উত্তর: হিউয়েন সাঙ (সুয়ান জাং)।
10. 'শ্রেষ্ঠী' কাদের বলা হত?
উত্তর: ধনী বণিকদের।
11. শশাঙ্কের আমলে স্থানীয় প্রধানরা কী নামে পরিচিত ছিল?
উত্তর: মহত্তর।
12. বাংলায় পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উত্তর: গোপাল।
13. কোন্ গ্রন্থে 'বঙ্গ' নামটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়?
উত্তর→ ঋগ্বেদের ঐতরেয় আরণ্যকে।
14. অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা কে ছিলেন?
উত্তর: কৌটিল্য।
15. 'রঘুবংশম' কাব্যের রচয়িতা কে?
উত্তর: কালিদাস।
16. 'আইন-ই আকবরি' গ্রন্থের রচয়িতা কে?
উত্তর → আবুল ফজল।
17. পাল রাজা গোপালের উত্তরাধিকারী কে ছিলেন?
উত্তর: ধর্মপাল।
18 ধর্মপালের পিতার নাম কি?
উত্তর: গোপাল।
19. ধর্মপালের পর কে পাল সাম্রাজ্যের রাজা হন?
উত্তর: দেবপাল।
20. ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকে ইউরোপীয় ভ্রমণকারী ও বণিকরা বাংলা অঞ্চলের কী নাম দিয়েছিলেন?
উত্তর: বেঙ্গালা।
21. স্বাধীনতার পূর্বে এই বাংলা ভূখণ্ড কী নামে পরিচিত ছিল?
উত্তর: বেঙ্গল।
22. আমাদের রাজ্যের নাম কখন থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়েছে?
উত্তর: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর।
23. কত খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়?
উত্তর: ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে।
24. ভাগীরথী ও করতোয়া নদীর মধ্যবর্তী এলাকা আগে কী নামে পরিচিত ছিল?
উত্তর: বরেন্দ্র।
25. প্রাচীনকালে পদ্মা ও ভাগীরথী নদীর মাঝে ত্রিভুজের মতো দেখতে বদ্বীপ এলাকা কী নামে পরিচিত ছিল?
উত্তর: বঙ্গ।
26.সুবা' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: প্রদেশ বা রাজ্য।
27. ভাস্করবর্মার পর কে কর্ণসুবর্ণতে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উত্তর:রাজা জয়নাগ।
28. পাল রাজাদের আদি নিবাস কোথায় ছিল?
উত্তর: বরেন্দ্র।
29. শশাঙ্কের রাজধানী কোথায় ছিল?
উত্তর → কর্ণসুবর্ণ।
30. হিউয়েন সাঙ (সুয়ান জাং) কে ছিলেন?
উত্তর: চিনা বৌদ্ধ পর্যটক।
31. হিউয়েন সাঙ রাঙামাটি বা রক্তমৃত্তিকা বৌদ্ধবিহারকে কী বলেছেন?
উত্তর: লো-টো-মো-চিহ্ন।
32. প্রাচীন তাম্রলিপ্ত বর্তমানে কী নামে পরিচিত?
উত্তর: তমলুক।
33. কর্ণসুবর্ণ স্থানীয়ভাবে কোন্ রাজার প্রাসাদ বলে খ্যাত?
উত্তর : রাজা কর্ণের।
34. শশাঙ্কের মৃত্যুর পর কে কর্ণসুবর্ণ দখল করেছিলেন?
উত্তর : কামরূপের রাজা ভাস্করবর্মা।
35. কখন সেন শাসনের অবসান ঘটেছিল?
উত্তর: ত্রয়োদশ শতকে।
36. সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উত্তর: সামস্তসেন।
37. সেন রাজাদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল?
উত্তর: কর্ণাট অঞ্চলে।
38. সামস্তসেনের পর কে বাংলার সেনবংশের শাসক হন?
উত্তর: হেমন্তসেন।
39. কোন্ সেন রাজা পাল রাজা গোবিন্দপালকে পরাস্ত করেছিলেন?
উত্তর: বল্লালসেন।
40. বল্লালসেনের পর কে সেন বংশের সিংহাসনে আরোহণ করেন?
উত্তর: লক্ষ্মণসেন।
41. লক্ষ্মণসেনের রাজধানী কোথায় ছিল?
উত্তর: বিক্রমপুর।
42. চোলরাজ্য কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: বিজয়ালয়।
43. চোল রাজাদের রাজধানী কোথায় ছিল?
উত্তর : থাঞ্জাভুর বা তাঞ্জোর।
44. কখন বাংলায় সেন বংশের শাসনের সূচনা হয়েছিল?
উত্তর: একাদশ শতকে।
45. কে 'গঙ্গাইকোগুচোল' উপাধি নেন?
উত্তর : প্রথম রাজেন্দ্র চোল।
46. আরব উপদ্বীপ এশিয়া মহাদেশের কোন্ দিকে অবস্থিত?
উত্তর: পশ্চিমদিকে।
47. আরবের যাযাবর মানুষদের কী বলা হয়?
উত্তর: বেদুইন।
48. বেদুইনদের প্রধান খাদ্য কী ছিল?
উত্তর: খেজুর ও উটের দুধ।
49. মক্কার দখলদারি নিয়ে উপজাতিদের মধ্যে সংঘর্ষ লেগে থাকত কেন?
উত্তর: মক্কা দুই বাণিজ্যপথের সংযোগস্থলে অবস্থিত ছিল বলে।
50. খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপে কোন্ নতুন ধর্মের জন্ম হয়?
উত্তর: ইসলাম।
51. হজরত মহম্মদ কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে।
52. কত খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ও তাঁর অনুগামীরা মক্কা থেকে মদিনা শহরে চলে যান?
উত্তর: ৬২২ খ্রিস্টাব্দে।
53. হজরত মহম্মদের মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যাওয়াকে আরবি ভাষায় কী বলা হয়?
উত্তর: হিজরত।
54. কৈবর্ত বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল?
উত্তর: বরেন্দ্র অঞ্চলে।
55. কোন্ রাজাদের আমলে বরেন্দ্র অঞ্চলে কৈবর্ত বিদ্রোহ হয়েছিল?
উত্তর: পাল রাজাদের।
56. কৈবর্ত বিদ্রোহের পর কোন্ পাল রাজা সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন?
উত্তর: রামপাল।
57. কৈবর্ত বিদ্রোহ কখন হয়েছিল?
উত্তর : একাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে।
58. পাল রাজা রামপাল কোথায় রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর : রামাবতী।
59. দস্তিদুর্গ কে ছিলেন?
উত্তর: রাষ্ট্রকুট বংশের রাজা।
60. পাল রাজারা কোথায় রাজত্ব করতেন?
উত্তর: বাংলা, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বিস্তৃত অঞ্চলে।
61. গুর্জর প্রতিহাররা কোথায় রাজত্ব করতেন?
উত্তর: রাজস্থান ও গুজরাট অঞ্চলে।
62. রাজা ভোজ কোন্ বংশের রাজা ছিলেন?
উত্তর: গুর্জর-প্রতিহার বংশের।
63. ত্রিশক্তি সংগ্রাম কত বছর ধরে চলেছিল?
উত্তর: প্রায় দুশো বছর ধরে।
64. সুলতান মাহমুদ কোন্ দেশের সুলতান ছিলেন?
উত্তর: গজনি।
65. সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর: ভারতের ধনসম্পদ লুঠ করা।
66. সুলতান মাহমুদ কতবার ভারত আক্রমণ করেছিলেন?
উত্তর: ১৭ বার।
67. সুলতান মাহমুদ কত খ্রিস্টাব্দ থেকে ভারত অভিযান শুরু করেছিলেন?
উত্তর: ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে।
68. সুলতান মাহমুদের রাজধানী কোথায় ছিল?
উত্তর: গজনি।
69. তবকাত-ই নাসিরি' গ্রন্থের রচয়িতা কে?
উত্তর: মিনহাজ-ই সিরাজ।
70. কত খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজি মারা যান?
উত্তর: ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে।
71. কত খ্রিস্টাব্দে রাজা লক্ষ্মণসেন মারা যান?
উত্তর: ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে।
72. বখতিয়ার খলজি কত জন সৈন্য নিয়ে নদিয়া আক্রমণ করেছিলেন?
উত্তর: ১৮ জন।
73. অল বিরুনির লেখা কোন্ গ্রন্থ থেকে ভারতের
ইতিহাস জানা যায়?
উত্তর: কিতাব-অল হিন্দ।
74. ‘শাহনামা' কাব্যের রচয়িতা কে?
উত্তর: কবি ফিরদৌসি।
75. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে হয়?
উত্তর: ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে।
76. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়?
উত্তর : মহম্মদ ঘুরি ও তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহানের মধ্যে।
77. তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে কে পরাজিত হন?
উত্তর : তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহান।
78. মহম্মদ ঘুরি কত খ্রিস্টাব্দে মারা যান?
উত্তর: ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে।
79. কে দিল্লিতে সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর : কুতুবউদ্দিন আইবক।
৪০. কত খ্রিস্টাব্দ থেকে হিজরি অব্দ গণনা শুরু হয়?
উত্তর: ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে।
81. কত বছরের মধ্যে হজরত মহম্মদ আরব ভূখণ্ডের অঞ্চল দখল করেছিলেন?
উত্তর: ১০ বছরের মধ্যে।
82. কত খ্রিস্টাব্দে হজরত মহম্মদের মৃত্যু হয়?
উত্তর:৬৩২ খ্রিস্টাব্দে।
83. খলিফা' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: প্রতিনিধি বা উত্তরাধিকারী।
84. প্রথম খলিফার নাম কী?
উত্তর: আবুবকর।
85. ইসলামীয় জগতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা কে?
উত্তর: খলিফা।
86. যে সমস্ত অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের কর্তৃত্ব ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলিকে কী বলা হয়?
উত্তর: দার-উল-ইসলাম।
87. কত খ্রিস্টাব্দ নাগাদ হজরত মহম্মদ ঘোষণা করেন যে আল্লাহ্ তাঁর কাছে সত্য উন্মোচন করেছেন?
উত্তর: ৬১০ খ্রিস্টাব্দ।
৪৪. ইসলাম ধর্মের অনুগামীরা কী নামে পরিচিত?
উত্তর: মুসলমান।
89. সমগ্র দার-উল-ইসলামের প্রধান নেতা কে?
উত্তর: খলিফা।
90. খলিফার অধিকারের অঞ্চলকে কী বলা হয়?
উত্তর: খিলাফৎ।
✍️ প্রশ্নের মান-২/৩:
1. শশাঙ্কের আমলে বাংলার আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল তা লেখো।**
উত্তর :গৌড়ের অধিপতি শশাঙ্ক বাংলার রাজা ছিলেন, যিনি ৬০৬ থেকে ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনভাবে রাজ্যশাসন করেন। তাঁর আমলে বাংলায় সোনার মুদ্রা প্রচলিত ছিল। এই সময়ে নকল সোনার মুদ্রারও প্রচলন ছিল, যা মুদ্রা ধাতুবিদ্যার উন্নতির সাথে ব্যবহার করা হতো।
গৌড়ের অধিপতি শশাঙ্কের সাম্রাজ্যে বাংলার অর্থনীতি কৃষিনির্ভর ছিল। কৃষি বাংলার মুখ্য আয়ের উৎস হিসেবে গণ্য ছিল এবং অর্থনৈতিক প্রস্তুতির কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। প্রাকৃতিক প্রাকৃতিক উপাদান এবং খনিজ সম্পদগুলি সহায়ক উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
এই সময়ে বাণিজ্যের গুরুত্ব কমে গিয়েছিল এবং সমাজে স্থানীয় প্রধান বা মহত্তরদের গুরুত্ব বেড়েছিল।
2. মাৎস্যন্যায় সম্পর্কে টীকা লেখো।**
উত্তর :বাংলার রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর, তাঁর পুত্র মানবদেব সিংহাসনে বসেন। কিন্তু তিনি শুধু মাত্র আট মাস পাঁচ দিন রাজত্ব করতে পারলেন। এই সময় থেকে কনৌজ রাজ হর্ষবর্ধন, কামরূপের রাজা ভাস্করবর্মা, কাশ্মীররাজ ললিতাদিত্য এবং অন্যান্য রাজারা বারবার বাংলা আক্রমণ করেন। এই আক্রমণের ফলে বাংলায় চরম অরাজকতা সৃষ্টি হয়।
বাংলার অরাজকতা সময়ে পুকুরের বড়ো মাছ যেমন ছোটো মাছ গিলে খায় সেই রকম হয়েছিল। সবলেরা দুর্বলের উপর অত্যাচার করতো এবং অনেক দুর্বল লোকরা কঠিন সময়ে পড়ে থাকতো। বাংলার এই অবস্থাকে 'মাৎস্যন্যায়' বলা হয়।
3. খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতকের আঞ্চলিক রাজ্যগুলি কেমনভাবে গড়ে উঠেছিল?**
উত্তর :খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতকে ভারতে একাধিক আঞ্চলিক রাজ্য গড়ে উঠেছিল। এই সময়ে গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুর্বলতার কারণে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীন রাজ্য উদ্ভব হয়েছিল। এই রাজ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল থানেশ্বর, গৌড়, কনৌজ, বলভী প্রভৃতি।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে, সামন্ত বা কর্মচারী স্তরের লোকেরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধীন রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। তারা নিজ নিজ এলাকায় রাজ্য গড়ে তুলে তারা তাদের প্রতিষ্ঠান শাসকে পরিণত হয়েছিলেন। এই আঞ্চলিক রাজ্যগুলির উদ্ভব হয়েছিল গুপ্ত সাম্রাজ্যের সাম্রাজ্যের দুর্বলতার কারণে এবং এই সময়ে এই রাজ্যের প্রথম শাসকগণ ছিলেন গুপ্ত রাজাদের সামন্ত বা কর্মচারী।
4. বাংলায় পাল রাজাদের আদি নিবাস কোথায় ছিল? কীভাবে বাংলায় পাল শাসনের শুরু হয়?
উত্তর :পাল রাজাদের আদি নিবাস ছিল বাংলার বরেন্দ্র অঞ্চলে। বাংলায় পাল শাসনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গোপাল।
গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের মৃত্যুর পর প্রায় একশো বছর ধরে বাংলায় কোনো কেন্দ্রীয় শাসন ছিল না। এই সময় বাংলায় চরম অরাজক অবস্থা বা মাৎস্যন্যায় চলে। রাজা শশাঙ্কের অধীনে প্রচলিত স্বাধীন রাজত্বের পর অবস্থা অরাজক হয়ে গেল।
এই অরাজক অবস্থার অবসানের জন্য বাংলার প্রভাবশালী লোকেদের সভা হয়েছিল "প্রকৃতিপুঞ্জ" নামে, যা ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে ঘটে। এই সভায় একজন সামন্তরাজা গোপাল নামে বাংলার রাজা হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলায় পাল বংশের রাজত্ব শুরু হয়। রাজা গোপাল এর সান্তান গঙ্গার অধীনে প্রভাবশালী রাজত্ব স্থাপন করে।
5. বরেন্দ্র ও বঙ্গাল বলতে কোন্ কোন্ অঞ্চলকে বোঝায়?
উত্তর: বরেন্দ্র ও বঙ্গাল উভয়ই প্রাচীন বাংলার প্রধান অঞ্চল ছিল। এদের এলাকাগুলি বিভিন্ন বাংলা ভাষার ইতিহাসিক অঞ্চলে প্রসারিত ছিল।
বরেন্দ্র : বরেন্দ্র ছিল একটি প্রাচীন বাংলা অঞ্চল, যা ভাগীরথী নদীর মাঝে অবস্থিত ছিল। এটি আধুনিক বাংলার মধ্যভাগের অঞ্চলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বঙ্গাল : বঙ্গাল প্রাচীন বাংলার অপর একটি প্রধান অঞ্চল ছিল, যা বঙ্গের সীমান্তবর্তী বঙ্গোপসাগরের উপকূল এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করে।
6. প্রাচীনকালে বঙ্গ বলতে কোন অঞ্চলকে বোঝানো হত?
অথবা, প্রাচীন বাংলার বঙ্গ অঞ্চলটির ভৌগোলিক অবস্থানের বিবরণ দাও।
উত্তর : প্রাচীন বাংলা ভাষার অন্তর্গত বিভিন্ন জনপদের মধ্যে বঙ্গ ছিল একটি প্রধান অঞ্চল। এই অঞ্চলটি পদ্মা ও ভাগীরথী নদীর মধ্যে ত্রিভুজের মতো দেখা যেত। ভাগীরথী নদীর পশ্চিমদিকের এলাকা রাঢ় ও সুষ্ঠু নামে পরিচিত ছিল। এই অঞ্চলকে বঙ্গ নামে উল্লেখ করা হত। একাদশ-দ্বাদশ শতকে বঙ্গ বলতে বাংলাদেশের ঢাকা, বিক্রমপুর, ফরিদপুর, বরিশাল প্রভৃতি অঞ্চলকে বোঝাত।
7. 'সমতট' বলতে বাংলার কোন্ অঞ্চলকে বোঝায়?
উত্তর : মেঘনা নদীর পূর্বদিকের এলাকাকে প্রাচীন বাংলায় সমতট বলা হতো। এই অঞ্চল বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লা, নোয়াখালি অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। মেঘনা নদী সমতট অঞ্চলটি বাংলার অন্যান্য অঞ্চল থেকে আলাদা হতো এবং এটি প্রাচীন বাংলার সীমান্তবর্তী এলাকা হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হতো।
৪. হরিকেল বলতে বাংলার কোন্ অঞ্চলকে বোঝায়?
উত্তর: প্রাচীন বাংলায় হরিকেল বলতে বোঝাত সমতট অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের এলাকাকে। এই অঞ্চলের এলাকা প্রাচীন বাংলায় হরিকেল নামে পরিচিত ছিল। বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূল অঞ্চল প্রাচীন যুগে হরিকেল নামে পরিচিত ছিল। এই এলাকার প্রাচীন নাম শ্রীহট্ট ছিল হরিকেল। হরিকেল সমতট অঞ্চলটি প্রাচীন বাংলার সীমান্তবর্তী একটি মহাপ্রাচীন এলাকা ছিল, যা প্রধানতঃ চট্টগ্রাম জেলার উত্তরপূর্বাঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত ছিল।
9. শশাঙ্কের রাজধানী কোথায় ছিল? এটি কোথায় অবস্থিত?**
শশাঙ্কের রাজধানী : শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ।
কর্ণসুবর্ণের অবস্থান : স্থানীয়ভাবে রাজবাড়িডাঙায় প্রাচীন রক্তমৃত্তিকা বিহার এবং কর্ণসুবর্ণ অবস্থিত হয়েছে। এই স্থানটি বর্তমান কণসুবর্ণ অবাস পশ্চিমবঙ্গের মুরশিদাবাদ জেলার চিরুটি রেলস্টেশনের কাছে অবস্থিত। রক্তমৃত্তিকা বিহার হলো একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার, যেখানে ভগবান বুদ্ধের রক্তমৃত্তিকা শ্মশানে ধ্বংস করা হয়েছিল।
10. গোড়তন্ত্র' বলতে কী বোঝায়?**
উত্তর : গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক গৌড় রাজ্যে যে শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন তাকে বলা হয় গৌড়তন্ত্র। শশাঙ্কের শাসনব্যবস্থায় রাজ্যে এক ধরনের কর্মচারী বা আমলাশ্রেণি গঠন করা হয়, যারা গ্রামের স্থানীয় লোকেরা যেসব প্রশাসনিক কাজ করত সেই কাজে হস্তক্ষেপ করত। অর্থাৎ শশাঙ্ক গৌড়রাজ্যে এমন এক নতুন ধরনের প্রশাসন গড়ে তুলেছিলেন যাকে কেন্দ্র থেকে সমগ্র রাজ্যের গ্রামস্তর পর্যন্ত প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত হত।
11. বাংলার পাল রাজাদের ক্ষমতা কোন সময় বেড়েছিল এবং কোন্ সময় কমেছিল তা উল্লেখ করো।
উত্তর: গোপাল ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় পাল বংশের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলার পাল রাজাদের ক্ষমতা সবসময় একরকম থাকেনি- কোনো সময় বেড়েছিল, আবার কোনো সময় কমেছিল।
ক্ষমতা বৃদ্ধি:পাল রাজা গোপালের সময় থেকে দেবপালের সময় পর্যন্ত একশো বছর পালদের ক্ষমতা বেড়েছিল।
ক্ষমতা হ্রাস : পাল রাজত্বের পরবর্তী শতকে বা পরের প্রায় একশো তিরিশ বছর ধরে পাল রাজাদের ক্ষমতা কমতে থাকে।
তবে দশম শতকের শেষদিকে পালদের ক্ষমতা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে পাল শাসনের অবসান ঘটেছিল।
12. 'গৌড়বহো' বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: কবি বাকপতিরাজ (বাপ্তিরাজ বা বাপতিরাজ হিসেবেও পরিচিত) একজন প্রাচীন বাঙালি কবি ছিলেন, যার কাব্য গৌড়বহো বা গৌড়বধ নামে পরিচিত। তিনি কনৌজের শাসক যশোবর্মার রাজকবি হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। যশোবর্মার শাসনকাল প্রকৃতি ভাষায় ৭২৫-৭৩০ খ্রিস্টাব্দ ছিল। তার শাসনে বাংলা সাহিত্যে একটি উন্নতির কাল হয়েছিল এবং বাঙালি সাহিত্যিকদের অধিকাংশ কাব্য তার শাসনকালে রচিত হয়েছিল।
গৌড়বহো শব্দের অর্থ : গৌড়বহো' শব্দের অর্থ গৌড়বথ। কনৌজের রাজা যশোবর্মন মগধের রাজাকে পরাজিত (বধ) করার কাহিনি নিয়ে এই কাব্য রচিত হয়েছিল। এখানে মগধের রাজা বলতে গৌড়ের রাজাকে বোঝানো হয়েছে।
13. সেন রাজাদের আদি নিবাস কোথায় ছিল? কীভাবে তারা বাংলায় শাসন কায়েম করেছিলেন?
উত্তর :সেন রাজাদের আদি বাসস্থান ছিল দক্ষিণ ভারতের কর্ণাট অঞ্চল, অর্থাৎ মহীশূর ও তার আশেপাশের এলাকায়।
ধার্মিক ধর্মের আলোকে সামন্ত সেনের পুত্র হেমন্ত সেন এবং তার পুত্র বিজয় সেন কবি উমাপতি ধর রচিত দেওপাড়া লিপি থেকে প্রস্তুতির অনুভব করেন। তাদের সময়ে সেন বংশ প্রতিষ্ঠা করে, বিজয় সেন বিশেষভাবে ব্যক্তিগত ভাবে সেনবংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। বিজয় সেনের শাসন অবধি অনেক অঞ্চলে ছিল এবং তিনি স্বাধীন সেনবংশের সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক গণের একজন ছিলেন। তাঁর শাসনের আওতায় তিনি প্রয়াগ, বারাণসী, ও পুরীতে তাঁর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরে রাজধানীর স্থাপনা করেন। সেন বংশের বাংলা ইতিহাসে এই সময়কালে একটি উন্নতি ও সংস্কৃতির পর্ব হিসেবে স্মরণীয় করা হয়। এই সময়ে বাংলা সাহিত্য, কলা, শিক্ষা, ধর্মীয় প্রচার, ও শিল্পকলা উন্নতি পেয়েছিল। সেই সাথে বিজয় সেনের শাসনে বাংলা ভাষা ও সাংস্কৃতিক প্রচারে বৃদ্ধি হয়েছিল।
14. রাজপুত কারা ?**
উত্তর :মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাসে রাজপুতদের বিশেষ অবদান লক্ষ করা যায়। রাজপুতদের বীরত্বের কাহিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। তাই অনেক পণ্ডিত অষ্টম ও দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তীকালীন সময়কে 'রাজপুত যুগ' বলে অভিহিত করেছেন।
রাজপুতদের উৎপত্তি: রাজপুত কারা তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। অনেকে বলেন বহিরাগত হুন জাতির সাথে ভারতীয়দের সংমিশ্রণের ফলে রাজপুতদের উৎপত্তি হয়েছে। আবার অনেকে বলেন, রাজপুতরা ঐতিহ্যসম্পন্ন চন্দ্র ও সর্য বংশের উত্তরাধিকারী। আবার রাজপুতরা নিজেদের আর্যগোষ্ঠীর ক্ষত্রিয় বলে মনে করত।
15. আরব কাদের বলা হয়? 'বেদুইন' কারা?*
আরব : আরব দেশের অধিবাসীদের আরব বলা হয়। এখানের মানুষেরা নিজেদের আরব বলেই পরিচয় দেয়।
বেদুইন : আরব দেশের যাযাবর মানুষদের বেদুইন বলা হয়।
16. হিজরি সাল বলতে কী বোঝ?
উত্তর: হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) আরবি ভাষায় হিজরত করেন ৬২২ খ্রিস্টাব্দে। তিনি মক্কা শহর থেকে মদিনা শহরে চলে গিয়েছিলেন এবং এই চলে যাওয়াকে আরবি ভাষায় "হিজরত" বলা হয়। এই ইতিহাসিক ঘটনা হিজরত মাস্তিশকের (Hijrah Calendar) উত্থানের মূল হিসেবে। গণ্য হয়, যা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও অন্যান্য ইসলামী দেশের একটি ব্যবহৃত একটি সাল গণনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
17. "খলিফা' কাদের বলা হয়? খিলাফৎ' বলতে কী বোঝায়? **
খলিফা হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর তাঁর প্রধান চার সঙ্গী (আবু বক্র, আবু উবাইদা, আবু হায়াত্তাব ইবনে উমার ও আলী ইবনে আবু তালিব) একে একে মুসলমানদের নেতা নির্বাচিত হন। এঁদের বলা হয় খলিফা। আরবি ভাষায় 'খলিফা' শব্দের অর্থ প্রতিনিধি বা উত্তরাধিকারী।
খিলাফৎ : ইসলাম ধর্মের ক্ষমতা যেসব অঞ্চলে
ছড়িয়ে পড়ে তাকে বলে দার-উল ইসলাম। খলিফা হলেন দার-উল ইসলামের প্রধান নেতা। খলিফার এই অধিকারের এলাকাকে বলা হয় খিলাফৎ।
18. সুলতান মাহমুদ ভারত থেকে লুঠ করা ধনসম্পদ কীভাবে ব্যবহার করেছিলেন?**
উত্তর :গজনির সুলতান মাহমুদ ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারত আক্রমণ করেছিলেন। তার ভারত আক্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতের মন্দিরগুলি থেকে ধনসম্পদ লুঠ করা। তিনি ভারত থেকে যে সম্পদ লুঠ করেছিলেন। তা নিজের দেশের ভালো কাজে ব্যয় করেছিলেন।
যেমন (১) তিনি রাজধানী গজনি ও অন্যান্য শহরকে সুন্দর করে। সাজিয়েছিলেন। ( ২) তিনি অনেক প্রাসাদ, মসজিদ, গ্রন্থাগার, বাগিচা,খাল, জলাধার এবং আমু দরিয়ার ওপর বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন।
(৩) একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষকদের বেতন ও ছাত্রদের বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বিখ্যাত পণ্ডিত ও দার্শনিক অল বিরুনি ও কবি ফিরদৌসির পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।
19. সুলতান মাহমুদের ভারত আক্রমণের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর :সুলতান মাহমুদ ১০০০ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২৭ বছরে ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন। মাহমুদের ভারত আক্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে -
1. অনেকে মনে করেন, মাহমুদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতের ধনসম্পদ লুঠ করা। তাই তিনি ভারতে স্থায়ী সাম্রাজ্যও প্রতিষ্ঠা করেননি।
2. তিনি হিন্দু মঠ ও মন্দিরগুলি লুঠ করেন, ধর্মীয় উন্মাদনার জন্য ভারত আক্রমণ করেন। এই ধারণা উপর ভিত্তি করে মাহমুদ গাজনবি হিসেবে পরিচিত হয়েছেন।
3. ঐতিহাসিক মহম্মদ হাবিবের মতে, সুলতান মাহমুদের আসল উদ্দেশ্য ছিল সোনা ও সম্মান অর্জন করা।
✍️ প্রশ্নের মান-৫:
1. গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের রাজ্যজয়ের পরিচয় দাও। অথবা, গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের কৃতিত্ব আলোচনা করো।**
উত্তর: শশাঙ্ক ছিলেন বাংলার প্রথম সার্বভৌম রাজা। প্রথম জীবনে তিনি মহাসেনগুপ্তের সামন্ত ছিলেন। গুপ্ত বংশের দুর্বলতার সুযোগে ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বাধীন গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
1. শশাঙ্কের রাজ্যবিস্তার: শশাঙ্ক পূর্বে মগধ, বুদ্ধগয়া অঞ্চল এবং ওড়িশার একাংশ জয় করেন। শশাঙ্কের রাজত্ব উত্তর-পশ্চিম বারাণসী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁর রাজধানী হিসেবে বর্তমান মুরশিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণ উল্লেখযোগ্য।।
2. স্বাধীন সার্বভৌম রাজ্য প্রতিষ্ঠা: শশাঙ্ক প্রথম বাংলার গৌড়ে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি উত্তর ভারতেও আধিপত্য বিস্তারে সচেষ্ট হয়েছিলেন।
3. শশাঙ্ক-হর্ষবর্ধন দ্বন্দ্ব : হর্ষবর্ধন থানেশ্বরের সিংহাসনে আরোহণ করে শশাঙ্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। হর্ষবর্ধনের সঙ্গে শশাঙ্কের যুদ্ধের ফল কী হয়েছিল সে-সম্পর্কে সঠিক জানা যায় না। তবে পণ্ডিতগণ মনে করেন যে, শশাঙ্ক যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন পর্যন্ত হর্ষবর্ধন গৌড় দখল করতে পারেননি।
গৌড়তন্ত্র : গৌড়ের সিংহাসনে বসার পর শশাঙ্ক একটি সামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। এটি 'গৌড়তন্ত্র' নামে পরিচিত ছিল। পরিশেষে বলা যায়, বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্ক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। তিনি যে রাজ্যজয়ের নীতি অনুসরণ করেছিলেন পরবর্তীকালে তা অনুসরণ করে পাল বংশের রাজারা এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
2. টীকা লেখো: তরাইনের যুদ্ধ। অথবা, তরাইনের যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করো।**
উত্তর : ভারতে মুসলমান শাসনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহম্মদ ঘুরি। তিনি ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহানবে পরাজিত করে ভারতে তুর্কি শাসনের ভিত্তি রচনা করেন। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর তাঁর বিশ্বস্ত অনুচর কুতুবউদ্দিন আইবক ভারতে স্বাধীন সুলতানি শাসনের সূচনা করেন।
তরাইনের প্রথম যুদ্ধ: ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরি পূর্ব পাঞ্জাবের অধিকারের চেষ্টা করেন। তখন দিল্লি ও আজমির অঞ্চলের চৌহান বংশীয় রাজা তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহান তাঁর প্রতিপক্ষে সেনাবাহিনী সংগঠন করে তরাইনের প্রান্তরে যুদ্ধ করলেন। এই যুদ্ধে তুর্কি সেনাবাহিনী ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় এবং আহত মহম্মদ ঘুরি কোনোক্রমে পালিয়ে যান।
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ: মহম্মদ ঘুরি আবার ১১১২ খ্রিস্টাব্দে ১ লক্ষ ২০ হাজার সৈন্য ও তিনজন বিশ্বস্ত সেনাপতি (কুতুবউদ্দিন আইবক, নাসিরউদ্দিন কুবাচা ও তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ) নিয়ে তরাইনের প্রান্তরে উপস্থিত হন। এই যুদ্ধে তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহান পরাজিত ও নিহত হন।
তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব : ভারতের ইতিহাসে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রথমত, এই যুদ্ধে জয়লাভের ফলে দিল্লি তুর্কি আক্রমণকারীদের দখলে চলে যায় এবং ভারতে তুর্কি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।
দ্বিতীয়ত, এই যুদ্ধে তুর্কিদের জয়লাভের ফলে ভারতের সামরিক দুর্বলতা প্রকাশিত হয়। তৃতীয়ত, এই যুদ্ধজয়ের ফলে ভারতের হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে মুসলমান সংস্কৃতির মিলনে এক নতুন ভারতীয় সংস্কৃতির জন্ম হয়।
3. ইসলাম ধর্মের প্রচারের আগে আরব দেশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। ধর্মের প্রচার আরব দেশে কী বদল এনেছিল?"
ইসলাম ধর্মপ্রচারের আগে আরব দেশের পরিচয়: আরব দেশ ভারতের পশ্চিমে অবস্থিত আছে, এই এলাকা অনেকগুলি মরুভূমি থেকে গঠিত। এদেশের অধিকাংশ জনগণ বেদুইন নামে পরিচিত ছিল। এদেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হল মক্কা ও মদীনা। মক্কা হল ইসলামের পবিত্র শহর। মদীনা হল প্রথম ইসলামী স্থাপনার কেন্দ্রীয় স্থান এবং প্রখ্যাত মসজিদ নবী শহরের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে আরব উপজাতিদের প্রধান জীবিকা ছিল ব্যাবসা। দুটি বাণিজ্যপথের সংযোগস্থলে অবস্থিত ছিল মক্কা শহর। মক্কা দখল করা নিয়ে উপজাতিদের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই থাকত।
ইসলাম ধর্মপ্রচারের পর আরব দেশের বদল: খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপে ইসলাম ধর্মের প্রচার হয়। এই সময়ে প্রবীণ হজরত মুহাম্মাদ ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন। তিনি মক্কা ও মদীনা সহ আরবের বিশাল ভূ-খণ্ডে ইসলাম ধর্মের প্রচার করেন।
হজরত মহম্মদের ইসলাম ধর্মাচারের ফলে আরব উপজাতিদের মহম্মদের মৃত্যুর মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠে। হজরত পূর্বেই আরবের মূল ভূখণ্ডে ইসলাম ধর্ম ভালোভাবেই ছড়িয়ে পড়েছিল।
4. পাল রাজাদের বিরুদ্ধে কৈবর্ত বিদ্রোহের বিবরণ দাও।**
উত্তর : পালরাজা দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকালে (১০৭০-৭১ খ্রি.) কৈবর্ত দিব্য বা দিব্বোকের নেতৃত্বে বরেন্দ্রভূমিতে একটি বিদ্রোহ ঘটেছিল যা পরিচিত হয়েছে 'কৈবর্ত বিদ্রোহ' নামে।
নেতা:কৈবর্ত বিদ্রোহের নেতা ছিলেন দিব্য (দিব্বোক বা দিবোক), তাঁর ভাই রুদোেক (রুদ্রোক) এবং রুদোকের পুত্র ভীম।
বিদ্রোহের কারণ: কৈবর্তরা কেন বিদ্রোহ করেছিল তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতবিরোধ আছে।
প্রথমত: কৈবর্ত যশোদাস একজন পালরাজা রাজ্যপালের মন্ত্রী ছিলেন, এবং তার মাধ্যমে কৈবর্ত পরিবারের রাজনৈতিক উত্থান হয়েছিল।
দ্বিতীয়ত: কৈবর্ত দিব্য ছিলেন একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি এবং পাল রাজাদের দুর্বলতা,অভ্যন্তরীণ গোলযোগ, এবং রাজপরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগে তিনি দিব্য বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন।
দিব্যের জয় : বিদ্রোহীদের হাতে পালরাজা মহীপাল নিহত হন। বিদ্রোহে জয়লাভ করে দিব্য বরেন্দ্রতে তাঁর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন। দিব্য-র মৃত্যুর পর রূদোক ও ভীম সিংহাসনলাভ করেন।
বিদ্রোহ দমন :পালরাজা রামপাল কয়েকজন আঞ্চলিক সামন্তরাজাদের সাহায্য নিয়ে কৈবর্ত শাসক ভীমকে পরাজিত ও নিহত করেন এবং বরেন্দ্র পুনরুদ্ধার করেন। রামপাল রামাবতী নগরে তাঁর রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এই বিদ্রোহ পাল সাম্রাজ্যকে দুর্বল করে দেয়।
5. ত্রিশক্তি সংগ্রাম কাদের মধ্যে হয়েছিল? এই সংগ্রামের মূল কারণ কী ছিল?
উত্তর :সম্রাট হর্ষবর্ধনের পরবর্তীয় যুগে, এক প্রবল ত্রি-শক্তি সংগ্রাম গুর্জর-প্রতিহার, রাষ্ট্রকূট, ও পাল রাজবংশের মধ্যে চলেছিল। এই সংগ্রামে কনৌজ ভারতের রাজনৈতিক আধিপত্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মূল বিষয় ছিল। এই সংগ্রাম প্রায় ২০০ বছর ধরে চলেছিল।
সংগ্রামের মূল কারণ : কনৌজ ভারতের রাজনৈতিক আধিপত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু ছিল, যা গুর্জর-প্রতিহার, রাষ্ট্রকূট, ও পাল রাজবংশের মধ্যে ত্রিশক্তি সংগ্রামের কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়েছিল। এই শক্তিগুলির কাছে কনৌজের ওপর অধিকার স্থাপন ছিল মর্যাদার প্রতীক। একইভাবে কনৌজের অর্থনৈতিক গুরুত্বও ভারতীয় রাজাদের কনৌজ দখলে প্ররোচিত করেছিল। যে কনৌজ নিয়ন্ত্রণ করবে সেই গাঙ্গেয় উপত্যকা দখলে রাখতে পারবে। এই অঞ্চলের নদী ভিত্তিক বাণিজ্য ও খনিজ দ্রব্য ছিল আর্থিক দিক থেকে লোভনীয়। এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে কনৌজ শেষ পর্যন্ত কে দখলে রাখতে পারবে, এই নিয়ে অষ্টম শতাব্দী থেকে পাল, গুর্জর-প্রতিহার ও দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূট বংশের মধ্যে টানা লড়াই চলেছিল, যা ইতিহাসে ত্রি-শক্তি সংগ্রাম নামে পরিচিত। দীর্ঘ দুশো বছর ধরে চলা এই দ্বন্দ্বে তিনটি বংশেরই শক্তি শেষ হয়ে যায়।