📚 ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস সাজেশন: তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন (প্রশ্নের মান-২,৩,৫)📚
1.মৌর্য আমলে প্রচলিত দুধরনের ভূমি-রাজস্বের নাম কী?
উঃ মৌর্য আমলে প্রচলিত দু ধরনের ভূমি রাজস্ব হল ভাগ ও বলি।
2.তৃতীয় বৌদ্ধসংগীতি কোথায় ও কার আমলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
উঃ তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি সম্রাট অশোকের আমলে পাটলিপুত্রে হয়েছিল।
3.জৈন ধর্মে ত্রিরত্ন' বলতে কী বোঝো?
উঃ সৎ বিশ্বাস, সৎ জ্ঞান ও সৎ আচরণের উপর জৈনরা জোর দিতেন। এই তিনটিকে একসঙ্গে জৈন ধর্মে ত্রিরত্ন বলা হয়।
4.আটবিক কাদের বলা হত?
5.বরাহমিহিরের লেখা দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
6.রাজা হর্ষবর্ধনের লেখা দুটি নাটকের নাম উল্লেখ করো।
উঃ রাজা হর্ষবর্ধনের লেখা তিনটি নাটক হল নাগানন্দ, প্রিয়দর্শিকা ও রত্নাবলী।
7.তোরণ কাকে বলে?
উত্তর : স্তূপের চারিদিকে চারটি বড়ো দরজা থাকত সেগুলিকে তোরণ বলা হয়।
8.দুজন গ্রিক ঐতিহাসিকের নাম লেখো।
9.তামিল সাহিত্যের দুটি মহাকাব্যের নাম লেখো।
উঃ তামিল সাহিত্যের দুটি মহাকাব্য হলো-শিলাপ্পাদিকারম ও মনিমেখলাই।
10.বিশাখদত্ত কে ছিলেন? তাঁর লেখা দুটি নাটকের নাম লেখো।
উঃ 👉 বিশাখদত্ত ছিলেন গুপ্ত যুগের একজন বিখ্যাত নাট্যকর।
👉 বিশাখদত্তের লেখা দুটি নাটক হল মুদ্রারাক্ষস ও দেবী চন্দ্রগুপ্তম।
11.'অগ্রহার ব্যবস্থা' কী?
উত্তর : গুপ্ত আমলে বাংলায় পাওয়া তাম্রলেখগুলিতে জমি কেনা-বেচার কথা জানা যায়। বহুক্ষেত্রে প্রথমে একটি জমি কেনা হত, পরে ওই জমি ব্রাহ্মণ বা বৌদ্ধ বিহারকে দান করা হত। দান করা ওই জমিগুলি করের আওতায় পড়ত না। গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী আমলে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে এই জমিদানকে অগ্রহার ব্যবস্থা বলা হত।
12.ভারতবর্ষ সম্পর্কে চিনা পর্যটক সুয়ান জাং-এর অভিজ্ঞতা লেখো।
13.কৌটিলীয় 'অর্থশাস্ত্র' গুরুত্বপূর্ণ কেন?
14.চৈত্য কী?
15.মৌর্য সম্রাটরা গুপ্তচর কেন নিয়োগ করতেন? 16.প্রাচীন ভারতে জলসেচ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল কেন? 17.বিহার ও স্তূপের মধ্যে পার্থক্যগুলি লেখো। 18.'ক্ষত্রপ' কাদের বলা হত?
19.আচার্য ও উপাধ্যায় কাদের বলা হত?
উঃ আচার্য ও উপাধ্যায় ছিলেন প্রাচীন ভারতের বৈদিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত দু-ধরনের শিক্ষক আচার্যের বাড়িতেই ছাত্ররা থাকত ও খেত। আচার্যরা বিনা বেতনে ছাত্রদের পড়াতেন।
উপাধ্যায়রা এক একটি নির্দিষ্ট বিষয় পড়াতেন। পড়ানোর বিনিময়ে তাঁরা বেতন নিতেন নারী উপাধ্যায়কে বলা হতো। উপাধ্যায়া।
20.মেগাস্থিনিসের চোখে ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজব্যবস্থা কেমন ছিল?
21.সাতবাহন আমলে দক্ষিণ ভারতের গ্রামজীবন কেমন ছিল?
22.জীবক কে ছিলেন?
23.টীকা লেখো: মিনান্দার।
24.'এলাহাবাদ প্রশস্তি' কার লেখা? এতে কোন্ সম্রাটের কথা বলা হয়েছে?
25.'আইহোল প্রশস্তি' কার লেখা? এতে কোন্ সম্রাটের কথা বলা হয়েছে?
26.দুটি বিখ্যাত মহাবিহারের নাম লেখো।
27.জৈন ধর্মের মূল চারটি নীতি লেখো।
28.ত্রিপিটক কী?
29.'হর্ষচরিত' গ্রন্থটি কে রচনা করেন? এর বিষয় কী ছিল?
30.চিকিৎসাশাস্ত্রকে 'উপবেদ' বলা হত কেন?
31.'স্তূপ-চৈত্য-রিহার' বলতে কী বোঝো?
32. তক্ষশিলা মহাবিহার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
33.যবনিকা কী?
34.দ্বাদশ অঙ্গ কী?
35.মহাকবি কালিদাসের লেখা দুটি বিখ্যাত কাব্যের নাম লেখো।
36.গুরুকুল ব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়?'
37.ইন-তু' কী?
উঃ সুয়ান জাং-এর লেখায় ভারতবর্ষ ইন-তু নামে পরিচিত হয়েছে। তাঁর মতে ইন-তু-র লোকেরা নিজেদের দেশকে বিভিন্ন নামে ডাকে। দেশটির পাঁচটি ভাগ - উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্য। ইন-তু-তে আশিটি রাজ্য আছে।
38.কাকে শকারি বলা হয় এবং কেন?
39.হর্ষবর্ধন কোথাকার রাজা ছিলেন? হর্ষবর্ধনের বাবার নাম কী ছিল?
40.স্ত্রীধন বলতে কী বোঝ?
উত্তর : গুপ্তযুগে মেয়েদের কমবয়সে বিয়ে দেওয়ার রীতি চালু ছিল। মেয়েরা বিয়ের সময় কিছু সম্পদ পেতেন। সেই সম্পদের ওপরে কেবল ওই মেয়েরই অধিকার ছিল। একে স্ত্রীধন বলা হত। মেয়েরা নিজের ইচ্ছামতো ওই সম্পদের ব্যবহার করতেন। তবে স্ত্রীধন প্রথা সমস্ত বর্ণের মধ্যে চালু ছিল না।
✍️প্রশ্নের মান-৩:
1.কুষাণ আমলে সমাজ জীবনের পরিচয় দাও।
উত্তর : কুষাণ আমলে সমাজ জীবনের ভিত্তি ছিল পরিবার। বাবা ছিলেন পরিবারের প্রধান। দক্ষিণ ভারতে অবশ্য কিছু ক্ষেত্রে মায়ের নাম সন্তানের নামের সঙ্গে যুক্ত হত। সমাজে নারীর অবস্থান ছিল পুরুষের নীচে। পরিবারে মেয়ের বদলে ছেলে জন্মালে মানুষ বেশি আনন্দ পেত। শিক্ষার ক্ষেত্রেও মেয়েরা পিছিয়ে ছিল। অল্পবয়সে তাদের বিয়ে দেওয়ার কথা বলা হত।
2.মেগাস্থিনিসের চোখে ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজব্যবস্থা কেমন ছিল?
উঃ মেগাস্থিনিস ভারতে যে চাররকম বর্ণ ব্যবস্থা ছিল তা জানতেন না। তিনি পেশাদার ও বৃত্তিজীবী নানা জাতি শিল্পী ও ব্যবসায়ী, যোদ্ধা, গুপ্তচর বা পর্যটক এবং সচিব বা মন্ত্রী। তিনি লিখেছেন ভারতে দাস প্রথা প্রচলিত ছিল না। নানা জন দেখেছেন। তিনি জনসমাজকে সাতটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। ব্রাক্ষ্মণ বা পণ্ডিত, কৃষক, পশুপালক, শিকারি, সব মানুষ নগরে বাস করত না।
3.মৌর্য আমলে যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর : মৌর্য আমলে সাম্রাজ্যের রাজধানীর সঙ্গে নানা এলাকার যােগাযােগ উন্নত হয়েছিল। এসময় রাজপথগুলি দেখােশানা করার জন্য নানা রাজকর্মচারী নিয়োেগ করা হত। পথগুলি চিহ্নিত করার জন্য এবং দিক বোঝানোর জন্য ফলক লাগানো হত, যেগুলি বর্তমানকালের মাইল ফলকের মতো ছিল।
4.নালন্দা মহাবিহার সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উত্তর : গুপ্তযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাকেন্দ্র ছিল নালন্দা মহাবিহার। এখানে কোনো ধর্ম ও বর্ণের ছাত্ররা পড়তে পারত। তবে এখানে ছাত্রদের কঠিন পরীক্ষায় পাশ করে সেখানে ভরতি হতে হত। এই মহাবিহারে থাকা খাওয়া ও পড়ার জন্য কোনো খরচ লাগত না। লেখাপড়া শেষ হবার পর নালন্দাতে রীতিমতো পরীক্ষা দিতে হত। চিন, তিব্বত, কোরিয়া, সুমাত্রা, জাভা থেকে বহু ছাত্ররা নালন্দায় পড়তে আসত। সেই সময়ের অনেক বিখ্যাত পণ্ডিত নালন্দায় পড়াতেন।
5.দক্ষিণ ভারতের তামিল সাহিত্য সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব ২০০ থেকে খ্রিস্টীয় ৩০০ অব্দের মধ্যে বিভিন্ন ভাষায় নানা রকমের সাহিত্য লেখা হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতে তামিল সাহিত্যের লেখার প্রচলন শুরু হয়। মাদুরাই নগরীতে তিনটি সাহিত্য সম্মেলন হয়েছিল। এই সম্মেলনগুলি সঙ্গম নামে পরিচিত হয়। তাই তামিল সাহিত্যকে সঙ্গম সাহিত্য বলা হয়। প্রাচীন সঙ্গম সাহিত্যের অন্যতম সেরা উদাহরণ একটি কবিতা সংকলন। এই কবিতাগুলিতে সাধারণ মানুষ, কৃষক, গ্রাম ও নগর জীবনের নানা কথা পাওয়া যায়। তামিল ভাষায় ব্যাকরণ চর্চাও এই সময় শুরু হয়েছিল।
6.গন্ধার ও মথুরার শিল্পরীতি কেমন ছিল?
উত্তর : শক-কুষাণ যুগে গন্ধার ও মথুরার শিল্পরীতি ছিল খুবই বিখ্যাত। বুদ্ধের জীবন ও বৌদ্ধ ধর্ম ছিল এই দুই শিল্পরীতির মূল বিষয়। গন্ধার ভাস্কর্যে প্রধানত গ্রিক ও রোমান প্রভাব দেখা যায়। মথুরা রীতির ভাস্কর্যে লাল চুনাপাথরের বেশি ব্যবহার হত।
7.গুপ্ত আমলের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে টীকা লেখ।
উত্তর: গুপ্তযুগে শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখতে পাওয়া যায়। এখানেও পাঠ্য বিষয় বলতে লিপি, ভাষা এবং বৈদিক সাহিত্য ছিল প্রধান। পাশাপাশি ব্যাকরণ, নাটক, আইন, রাজনীতি ও যুদ্ধবিদ্যা পড়ানো হত। পেশাভিত্তিক শিক্ষার ওপরেও এই সময়ে জোর দেওয়া হত।
8.সুয়ান জাং সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উত্তর : ভারত থেকে চিনে শিক্ষকদের যাতায়াতের ফলে ভারতীয় সংস্কৃতি ও বৌদ্ধধর্ম বিষয়ে চিনের উৎসাহ তৈরি হয়। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম দিকে সুয়ান জাং চিন থেকে উপমহাদেশে আসেন। ৬০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিনি উপমহাদেশে পৌঁছান। এই সময় হর্ষবর্ধন ছিলেন কনৌজের শাসক। পরবর্তী চোদ্দো বছর সুয়ান জাং বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়ান। নালন্দা মহাবিহারে পণ্ডিত শীলভদ্রের কাছে তিনি শিক্ষালাভ করেন।
9.ফ্যাসিয়ান কে ছিলেন? তাঁর সম্পর্কে কী জানা যায়?
উত্তর: ফাসিয়ান ছিলেন একজন বৌদ্ধ পণ্ডিত। ৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে পাঁচজন সন্ন্যাসী সমেত ফাসিয়ান ভারতে তিনি কাশ্মীর হয়ে উপমহাদেশে এসেছিলেন। পরে উত্তর ভারতের বহু অঞ্চলে গিয়েছিলেন। তিন বছর পাটলিপুত্রে থেকে তিনি বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃত ভাষা সাহিত্য চর্চা করেছিলেন। দু-বছর তিনি তাম্রলিপ্ততেও ছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা বই ছিল ফো-কুয়ো-কি। তিনি ভারত ও সিংহল থেকে অনেক বৌদ্ধ পুথি দেশে ফেরার সময় নিয়ে গিয়েছিলেন।
10.টীকা লেখ -সুদর্শন হ্রদ।
উঃ প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে রাজকীয় উদ্যোগে জলসেচ ব্যবস্থার একটা প্রধান উদাহরণ সুদর্শন হ্রদ। মৌর্য আমল থেকে গুপ্ত আমল পর্যন্ত ঐ হ্রদের ব্যবহার ছিল। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসনকালে কাথিয়াওয়াড় অঞ্চলে ঐ হ্রদটি বানানো হয়েছিল। ওয়াড় কথার মানে শহর। হর। এটি একটি নদীভিত্তিক বড়ো মাপের সেচ প্রকল্প (সেতু)। অশোকের শাসনকালে সেচ প্রকল্পটিতে কয়েকটি সেচ খালও যোগ করা হয়। শকশাসক রুদ্রদামন ঐ হ্রদটির সংস্কার করেন (১৫০ খ্রিস্টাব্দ) বাঁধটিকে আরো বড়ো ও শক্ত করা হয়। ও এই পুরো কাজের বর্ণনা রুদ্রদামন জুনাগড়ে একটি শিলালেখতোেদাই করিয়েছিলেন। গুপ্ত সম্রাট স্কন্দগুপ্তের শাসনের প্রথম বছরেই আবার হ্রদটি মেরামতির দরকার হয় (১৩৬ গুপ্তাব্দ বা ৪৫৫/৪৫৬ খ্রিস্টাব্দ)। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতক পর্যন্ত সুদর্শন হ্রদের টানা ব্যবহার হয়েছিল।
11.গন্ডোফারনেস সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উত্তর : গন্ডোফারনেস ছিলেন পহ্লব রাজা।আনুমানিক ২০ বা ২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি শাসন শুরু করেন। সম্ভবত শকদের হারিয়ে প্রাচীন গন্ধারের একটি অংশ তিনি দখল করেন। উত্তর পশ্চিম অঞ্চল থেকে পাঞ্জাবের কিছু অংশ এবং পুরো সিন্ধু উপত্যকা গন্ডোফারনেসের অধীনে ছিল। তিনি এই বিরাট অঞ্চলের শাসক হিসেবে নিজের মুদ্রায় 'রাজাধিরাজ' করতেন। তাঁর আমলে সেন্ট থমাস খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য উপমহাদেশে আসেন।
12.মেগাস্থিনিসের চোখে ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজব্যবস্থা কেমন ছিল?
উঃ মেগাস্থিনিস ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজের চারটি বর্ণের কথা জানতেন না। তবে পেশাদার বা বৃত্তিজীবী নানা জাতি তিনি দেখেছিলেন। তাঁর মতে, ভারতের জনসমাজ সাতটি জাতিতে বিভক্ত ছিল। যেমন- ব্রাহ্মণ বা পণ্ডিত, কৃষক, পশুপালক ও শিকারি, শিল্পী ও ব্যবসায়ী, যোদ্ধা, গুপ্তচর বা পর্যটক এবং সচিব বা মন্ত্রী। মেগাস্থিনিস বলেছেন যে, ভারতে দাসপ্রথা ছিল না।) মেগাস্থিনিসের মতে, প্রাচীনকালে ভারতবাসীরা নগরে বাস করত না। তারা কখনও অন্য কোনো জাতিকে আক্রমণ করে না। অপর জাতিরাও ভারতবাসীদের আক্রমণ করত না। আলেকজান্ডারই একমাত্র যিনি ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। মেগাস্থিনিসের মতে, ভারতে কখনও দুর্ভিক্ষ হয়নি। তবে মেগাস্থিনিসের সর্ব কথাগুলি কিন্তু ঠিক নয়।
13.সুয়ান জাং এর লেখায় ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজব্যবস্থা কেমন ছিল?
উঃ সুয়ান জাং-এর লেখায় ভারতবর্ষ ইন-তু নামে পরিচিত হয়েছে)। তাঁর মতে ইন-তু-র লোকেরা নিজেদের দেশকে বিভিন্ন নামে ডাকে। দেশটির পাঁচটি ভাগ উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্য। ইন-তু-তে আশিটি রাজ্য আছে। প্রতিটি রাজ্যে নিজস্ব রাজা থাকলেও তারা বড়ো সম্রাটের অনুগত ছিল।
সুয়ান জাং ইন-তুকে মূলত গরমের দেশ বলেছেন। সেখানে নিয়মিত বৃষ্টি হয়। উত্তর ও পূর্ব অঞ্চলের মাটি খুবই উর্বর। দক্ষিণ অঞ্চল বনে ঢাকা। পশ্চিম অঞ্চলের মাটি পাথুরে ও অনুর্বর। ধান ও গম প্রধান কৃষিজ ফসল। জনগণের মধ্যে জাতিভেদ ছিল।
শহরের বাড়িগুলি ইট ও টালি দিয়ে তৈরি হতো। বাড়ির বারান্দা তৈরি করা হতো কাঠ দিয়ে। গ্রামের বাড়িগুলির দেয়াল ও মেঝে ছিল মাটির। নানান রকম দামি ধাতু ও পাথরের ব্যাবসা চলত। শাসকরা জনগণের সুযোগ সুবিধের কথা মাথায় রাখতেন।
14.তক্ষশিলা মহাবিহার সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উঃ 'গন্ধার মহাজনপদের রাজধানী ছিল তক্ষশিলী। গ্রিক, পারসিক, কুষাণ, শক নানা বিদেশি শক্তি নানা সময়ে তক্ষশিলা দখল করে। ফলে সেখানে নানা দেশের মানুষ ও পণ্ডিত লোকের আনাগোনা ছিল। বৌদ্ধধর্ম তক্ষশিলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ধীরে ধীরে শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে তক্ষশিলা বিখ্যাত হয়ে ওঠে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্ররা তক্ষশিলায় যেত উচ্চশিক্ষার জন্য। ষোলো থেকে কুড়ি বছর বয়সের ছাত্ররা সেখানে ভর্তি হতে পারত। ধর্ম বা বর্ণ নয় বরং যোগ্যতা যাচাই করেই ছাত্রদের নেওয়া হতো। মোটামুটি আটবছর তারা সেখানে লেখাপড়া করত। রাজা ও ব্যবসায়ীরা এই মহাবিহার চালানোর জন্য টাকাপয়সা বা জমি দান করতেন।
এখানে পরীক্ষার পদ্ধতি ছিল বেশ সহজ। মনে হয় লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। তবে লেখাপড়ার মান ছিল বেশ ভালো। এই মহাবিহারের কয়েকজন বিখ্যাত ছাত্র ছিলেন জীবক, পাণিনি এবং চাণক্য।
✍️প্রশ্নের মান-৫:
1.ভারতীয় উপমহাদেশে গ্ৰীকদের শাসন সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর : মৌর্য শাসনের শেষ দিকে উপমহাদেশের উত্তর পশ্চিম অংশে গ্রিক শাসন দেখা গিয়েছিল। পুষ্যমিত্র সুঙ্গের সময়েই গ্রিক রাজারা বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে নেন। এই গ্রিক রাজাদের অনেকেই ছিলেন ব্যাকট্রিয়ার বাসিন্দা। হিন্দুকুশ পর্বতমালার উত্তর পশ্চিমে অর্থাৎ এখনকার আফগানিস্তানের উত্তর পূর্ব অঞ্চলে ছিল বাহুিক দেশ বা ব্যাকট্রিয়া। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শেষে ব্যাকট্রিয়া ছিল গ্রিক শাসক সেলিউকাসের অধীনে। উত্তর পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চল, গন্ধারের তক্ষশিলা চাতুরান্ত ব্যাকট্রিয়ার গ্রিক শাসকদের শাসন ছিল। উপমহাদেশের এই গ্রিস শাসকদের বলা হয় ব্যাকট্রীয় গ্রিক বা ইন্দো-গ্রিক শাসক। খ্রিস্টপূর্ব ১৩০ অব্দ নাগাদ মধ্য এশিয়ার যাযাবর গোষ্ঠীর আক্রমণে ব্যাকট্রিয়ার গ্রিক শাসন শেষ হয়ে যায়।
2.গুপ্ত ও পল্লব আমলে শিল্পচর্চার বর্ননা দাও।
উত্তর: গুপ্ত আমলে শিল্পচর্চার সঙ্গে ধর্মীয় ধ্যানধারণার যোগাযোেগ দেখা যায়। পাথরের পাশাপাশি এই যুগে পোড়ামাটিরও ব্যবহার ছিল। স্তূপ ও চৈত্য বানানো গুপ্ত আমলেও দেখা যায়। গুপ্ত আমলে প্রথম স্থাপত্য হিসেবে ইট বা পাথর দিয়ে মন্দির বানানো শুরু হয়। পাশাপাশি পাহাড় ও পাথর কেটে মন্দির তৈরির চল ছিল। পল্লব আমলে পাথর কেটে রথের মতো দেখতে মহাবলীপুরমের মন্দির তৈরি হয়েছিল। এই যুগে মন্দিরগুলির দেওয়ালে নানা দেবদেবীর মূর্তি খোদাই করা হয়েছিল। যেমন কৈলাস মন্দিরে রামায়ণের প্যানেল, দশাবতার মন্দিরের ভাস্কর্য। গুপ্তযুগের চিত্রশিল্পের সবথেকে বিখ্যাত উদাহরণ মধ্যভারতের অজন্তা গুহার চিত্র। অজন্তা ছাড়াও ইলোরা এবং বাঘ গুহাতেও বেশ কিছু ছবি পাওয়া গেছে।
3.মৌর্য আমলের শিল্পচর্চার বিবরণ দাও।
উত্তর: হরপ্পা সভ্যতার পর ভারতীয় উপমহাদেশে মৌর্য আমলে শিল্পের উদাহরণ পাওয়া যায়। মৌর্য শিল্পে পাথরের ব্যাপক ব্যবহার হয়েছিল। অশোক ও পরবর্তী মৌর্য সম্রাটরা আজীবিকদের জন্য পাথর কেটে গুহাবাস বানিয়ে দিয়েছিলেন। অশোক-এর আমলে সারনাথ ও সাঁচী স্তূপগুলি ফের বানানো হয়েছিল। মৌর্য শিল্পের অন্যতম নজির অশোকের আমলে বানানো স্তম্ভগুলি। একটি পাথর থেকেই স্তম্ভগুলি তৈরি হত, এর ভিত মাটিতে পোঁতা থাকত। কোনো ঠেকা ছাড়াই স্তম্ভগুলি সোজা হয়ে থাকত। একটা পাথর কেটে তৈরি হত বলেই স্তম্ভগুলোকে মূলত ভাস্কর্য বলা যেতে পারে। স্তম্ভের উপরে বসান থাকত প্রাণীর মূর্তি। সিংহ, হাতি, ষাঁড় প্রভৃতি প্রাণীর মূর্তি সেক্ষেত্রে ব্যবহার হত। এমনি একটি বিখ্যাত স্তম্ভ অশোকস্তম্ভ সারনাথে রয়েছে। মৌর্য শিল্পে মানুষের মূর্তি বিশেষ দেখা যায়নি। এই শিল্প শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি হওয়ায় জনসাধারণের জীবনযাপনের চিত্র এতে ধরা পড়েনি। তাই মৌর্য শিল্পের ছাপ পরবর্তী যুগের শিল্পে বিশেষ দেখা যায়নি।
4.প্রাচীন ভারতের জোতির্বিজ্ঞান,গণিত ও জোতিষচর্চার বর্ননা দাও।
উত্তর: প্রাচীন ভারতে জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত ও জ্যোতিষচর্চা দীর্ঘদিন একসঙ্গে চলেছিল। পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি মিলিয়ে বৌদ্ধদের গণিত বিজ্ঞান তৈরি হয়েছিল। জৈনরা তাকেই বলতেন সংখ্যায়ন। মহাবীর ও বুদ্ধদেব দুজনেই গণিতের চর্চা করেছিলেন। নাগার্জুন ছিলেন একজন গণিতবিদ। সেই সময় শিক্ষায় গণিতের স্থান ছিল প্রথম সারিতে।
গুপ্তযুগে জ্যোতির্বিজ্ঞান অনেকটাই জ্যোতিষচর্চার কাজে ব্যবহার হত। আর্যভট্ট তাঁর বইতে গণিত সম্বন্ধে ও গ্রহ নক্ষত্র বিচারে নানা আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি সংখ্যা হিসেবে শূন্যের ব্যবহারও করেন। সেই চর্চা থেকেই দশমিকের ধারণাও শুরু হয়েছিল। আর্যভট্ট বলেছিলেন পৃথিবী গোলাকার, নিজের অক্ষের ওপর ঘুরছে। তাঁর মতে পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়লে চন্দ্রগ্রহণ হয়। আর্যভট্টের পরবর্তীকালে বরাহমিহির 'সূর্যসিদ্ধান্ত' ও 'পঞ সিদ্ধান্তিকা' বইতে পুরনো অনেক ধারণা বদলে দিয়েছিলেন। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও তার আগাম লক্ষণ কী তা নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। আবার ভূমিকম্পের আগে বিভিন্ন প্রাকৃতিক লক্ষণ বিষয়ক আলোচনাও করেছেন। বরাহমিহিরের পরবর্তী সময়ে ব্রহ্মগুপ্ত ছিলেন বিখ্যাত গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তাঁর হাতেই প্রাচীন ভারতের গণিত সব থেকে বেশি বিকশিত হয়েছিল। 'ব্র্যক্ষ্মসিদ্ধান্ত' ছিল তাঁর রচিত বিখ্যাত বই।
5.মৌর্য আমলের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা কেমন ছিল?
উত্তর: অর্থনীতি:
মৌর্য আমলের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর হলেও মানুষ নানা পেশার কাজ ও ব্যাবসাবাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
[a] কৃষিজীবী : মৌর্য আমলে উর্বর জমিতে নানারকম ফসল ফলানো হত। তাই সমাজের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
[b] কারিগর ও বণিক : মৌর্য আমলে কারিগর ও বণিকদের তদারকি করত রাষ্ট্র। খনি ও খনিজ সম্পদের ওপর রাষ্ট্রের একচেটিয়া অধিকার ছিল।
[c] নারীশ্রমিক ও কর্মচারী: গৃহস্থালির কাজের বাইরে নারীরাও সুতো উৎপাদনের কাজে, গুপ্তচর ও রাজকর্মচারী হিসেবে যুক্ত হত। জীবনযাত্রা: মৌর্য আমলের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে ধনী দরিদ্র ভেদাভেদ ছিল।
জীবনযাত্রা:
এই সময়ের জীবনযাত্রার কয়েকটি দিক হল-
[a] পোশাক-পরিচ্ছদ: সমাজের ধনী ও রাজপরিবারের নারী-পুরুষ দামি পোশাক ও অলংকার পরতেন এবং সাধারণ মানুষরা পরতেন সুতিবস্ত্র। এসময় পশম ও রেশমের কাপড় ব্যবহার করা হত। এছাড়া ব্যবহার করা হত দামি পাথর ও সোনার অলংকারও।
[b] ঘরবাড়ি : এ সময় মাটি, পাথর, ইট বা কাঠ দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করা হত। ঘরের ভিতরে ও বাইরে লাগানো হত পলেস্তারা। অনেকে ঘরের দেয়ালে ছবি আঁকতেন। বাড়ির আসবাবপত্রের মধ্যে খাট বা চৌকি, মাদুর, তোশক, চাদর, বালিশ প্রভৃতি ছিল প্রধান।