📚বি.এ আবশ্যিক পরিবেশবিদ্যাVAC):1st Semester: অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:অধ্যায়-২:বাস্তূসংস্থান ও বাস্তূতন্ত্র।📚

✍️ প্রশ্নের মান -১:

বহুবিকল্প ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:

1. ইকোলজি (Ecology) শব্দের আভিধানিক অর্থ হল- (a) বাস্তুতন্ত্র সংক্রান্ত জ্ঞানার্জন(b) বাসস্থান সংক্রান্ত জ্ঞানার্জন(c) ইকোটোন সংক্রান্ত জ্ঞানার্জন (d) ইকোস্ফিয়ার সংক্রান্ত জ্ঞানার্জন।

উঃ (b) বাসস্থান সংক্রান্ত জ্ঞানার্জন।

2. জীবজ পরিবেশের ক্ষুদ্রতম এককটি হল-(a) বায়োম(b) বায়োস্ফিয়ার(c) ইকোস্ফিয়ার(d) ইকোসিস্টেম।

উঃ (d) ইকোসিস্টেম।

3. বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদক জীব বলা হয়-(a) উদ্ভিদকুলকে

(b) প্রাণীকুলকে(c) বিয়োজককে(d) মাইক্রোবস্দের।

উঃ (a) উদ্ভিদকুলকে।

 4. বাস্তুতন্ত্রের 'Key industry' নামে পরিচিত-(a) উৎপাদক জীব(b) খাদক জীব(c) বিয়োজক জীব(d) অণুজীব ।

উঃ -(a) উৎপাদক জীব।

5. একই ধরনের খাদ্যের যোগানকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা জীবগোষ্ঠী সমূহের স্তরকে বলা হয়-(a) ইকোলজিক্যাল ইক্যুইভ্যালেন্ট(b) ইকোটোন(c) ট্রফিক লেভেল(d) ইকাড।

উঃ (c) ট্রফিক লেভেল।

6. পুকুরের বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদক জীব হল-(a) ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন সমূহ (b) জু-প্ল্যাঙ্কটন সমূহ(c) বিয়োজক সমূহ (d) নেক্টনরা।

উঃ (a) ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন সমূহ।

7.ডাফনিয়া একপ্রকার-(a) ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন(b)জু-প্ল্যাঙ্কটন(c) নেকটন্ (d) বেনথস।

উঃ (b)জু-প্ল্যাঙ্কটন।

৪. কোন খাদ্যশৃঙ্খলের অন্তর্গত প্রথম পুষ্টিস্তরটি হল-(a) উৎপাদক(b) প্রাথমিক খাদক(c) গৌণ খাদক (d) বিয়োজক।

উঃ (a) উৎপাদক।

9. জলজ বাস্তুতন্ত্রে স্বাধীনভাবে সাঁতার কেটে ঘুরে বেড়াতে সক্ষম প্রাণীদের বলা হয়-(a) প্ল্যাঙ্কটন(b) বেনথস্(c) নেক্টন(d) বিয়োজক।

উঃ (c) নেক্টন।

10.ক্রমবর্ধমান তন্ত্রভিত্তিক পর্যায়ক্রমগুলি হল- (a) গোষ্ঠী→ বাস্তুতন্ত্র→ জনসংখ্যা→ বায়োম(b) জনসংখ্যা → গোষ্ঠী→ বাস্তুতন্ত্র → বায়োম(c) বায়োম →জনসংখ্যা → গোষ্ঠী→ বাস্তুতন্ত্র (d) বাস্তুতন্ত্র → গোষ্ঠী→ জনসংখ্যা → বায়োম।

উঃ (b) জনসংখ্যা → গোষ্ঠী→ বাস্তুতন্ত্র → বায়োম।

11. নিচের কোন প্রকার বাস্তব্যবিদ্যা সিন্ইকোলজি অন্তর্গত নয়?- (a) পপুলেশন ইকোলজি(b) কমিউনিটি ইকোলজি(c) বায়োম ইকোলজি(d) অটইকোলজি।

উঃ (d) অটইকোলজি।

12. বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা মাপা হয় যে যন্ত্রের সাহায্যে, তা হল-(a) ব্যারোমিটার  (b) হাইগ্ৰোমিটার (c) হিমোসাইটোমিটার (d) রেইন গেজ।

উঃ  (b) হাইগ্ৰোমিটার।

13. নিচের কোনটি ভূসংক্রান্ত প্রভাবক(Physiographic factor)?- (a) উচ্চতা(b) ঢাল(c) পর্বতমালার গতিপথ(d) সবগুলিই।

উঃ (d) সবগুলিই।

14. লাইকেন কী ধরনের উদ্ভিদ?-(a) হাইড্রোফাইট(b) হ্যালোফাইট (c) স্যামোফাইট (d) সিমবায়োন্ট।

উঃ (d) সিমবায়োন্ট।

15. পাথরের ফাটলে যে সমস্ত উদ্ভিদ জন্মায় তাদের বলা হয়-(a) স্যামোফাইটস্(b) লিথোফাইটস্ (c) ক্যাসমোফাইটস্(d) হেলোফাইটস।

উঃ (c) ক্যাসমোফাইটস্।

16. 'ইকোস্পিসিস' ধারনার প্রবক্তা হলেন-(a) হেকেল। (b) ট্যুরেস্যন (c) ওডাম(d) বেটসন।

উঃ (b) ট্যুরেস্যন।

17. চরম সম্প্রদায়ে (Climax community) পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের উদ্ভিদ সম্প্রদায়ের মধ্যে যে উদ্ভিদ পর্যায়সমূহ দেখা যায় তাকে বলা হয়--(a) ইকাড(b) বায়োটা(c) সেরি(d) ইকোটোন।

উঃ (c) সেরি।

18. কোনো একটি অনাবৃত অঞ্চলে সফলভাবে একটা প্রজাতির প্রতিষ্ঠা পাওয়াকেই বলা হয়-(a) নুডেশন(b) ইনভ্যাশন(c) মাইগ্রেশন(d) ইকেসিস্। 

উঃ (b) ইনভ্যাশন।

19.একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে উপস্থিত উদ্ভিদ গোষ্ঠীকে বলা হয়-(a) পপুলেশন(b) কমিউনিটি (c) ফ্লোরা (d) ফনা।

উঃ (c) ফ্লোরা।

20. দুটি উদ্ভিদগোষ্ঠী অঞ্চলের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে বলে-

(a) ইকোটোন(b) ইকাড(c) ইকোটাইপ (d) ইকোটপ।

উঃ (a) ইকোটোন।

21. যে খাদ্যশৃঙ্খল পচনশীল জৈব বস্তু থেকে শুরু হয়, তা হল-(a) ডেট্রিটাস খাদ্যশৃঙ্খল(b) গ্রেজিং খাদ্যশৃঙ্খল (c) পরজীবী খাদ্যশৃঙ্খল(d) মৃতজীবী খাদ্যশৃঙ্খল।

উঃ (a) ডেট্রিটাস খাদ্যশৃঙ্খল।

22. বাস্তুতন্ত্রে স্ক্যাভেঞ্জার কারা? (a) খাদক(b) বিয়োজক(c) উৎপাদক (d) ইকাড।

উঃ (b) বিয়োজক।

23. আদর্শ বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তি কী?(a) খাদক(b)বিয়োজক

(c) উৎপাদক(d) a ও b উভয়ই।

উঃ (c) উৎপাদক।

24. বাস্তুবিদ্যার কার্যকরী এককটি হল-(a) খাদ্যশৃঙ্খল (b) বাস্তুতন্ত্র(c) খাদ্যজাল(d) বায়োম।

উঃ (b) বাস্তুতন্ত্র।

25.'জেনেকোলজি' শব্দটির প্রবক্তা হলেন-(a) কেনডাই(b) ট্যান্সলে(c) টরিসন(d) ওডাম।

উঃ (c) টরিসন।

26. জীবভর পিরামিড উল্টানো (Inverted) প্রকৃতির হতে পারে-(a) চারণভূমি বাস্তুতন্ত্রে(b) বনভূমি বাস্তুতন্ত্রে

(c) স্বাদুজল বাস্তুতন্ত্রে(d) b ও c উভয়ই।

উঃ (d) b ও c উভয়ই।

27. ইকেসিস (Ecesis) হল- (a) উদ্ভিদের নতুন পরিবেশে প্রবেশ ও অভিযোজন।(b) ক্লাইম্যাক্স গঠন।

(c) উদ্ভিদ প্রজাতির অনুপ্রবেশ (d) কোনোটিই নয়।

উঃ  (a) উদ্ভিদের নতুন পরিবেশে প্রবেশ ও অভিযোজন।

28. ট্রফিক লেভেলের পর্যায়ক্রমিক প্রকাশকে পিরামিড বলে। কোন পিরামিডটি অন্য পিরামিডের ন্যায় পরিবর্তিত হয় না?(a) সংখ্যার পিরামিড(b) জীবভর পিরামিড(c) শক্তির পিরামিড(d) কোনোটিই নয়।

উঃ (c) শক্তির পিরামিড।

29. উৎপাদক জীবে মোট উৎপাদনের (GPP) কত শতাংশ তৃণভোজীতে পরিবাহিত হয়?-(a) 7%(b) 10%(c) 40% (d) 90%

উঃ (b) 10%

30. খাদ্যশৃঙ্খলে শক্তির পরিবহন ঘটে-(a) একমুখীভাবে

(b) দ্বি-মুখীভাবে(c) বহুমুখীভাবে (d) বিক্ষিপ্ত ভাবে।

উঃ (a) একমুখীভাবে।

31. একটি জীবসম্প্রদায় যদি বাস্তুতান্ত্রিকভাবে নিজ প্রজাতির থেকে বহির্লক্ষণে ভিন্ন হয়, তখন তাকে বলা হয়-(a) ইকোস্ফিয়ার(b) ইকোটোন(c) বায়োটা(d) ইকাড।

উঃ (d) ইকাড।

32. নিচের যে পদ্ধতিতে মানুষের দেহে DDT পৌঁছায়, তা হল-(a) বায়োঅ্যাকুমুলেশন(b) বায়োম্যাগনিফিকেশন (c) ইউট্রফিকেশন (d) খাদ্যশৃঙ্খল।

উঃ (b) বায়োম্যাগনিফিকেশন।

33.সমুদ্রের নিম্নদেশে অবস্থিত জীবেদের বলা হয়-(a) প্ল্যাঙ্কটন(b)বেনথস্(c) নেকটন(d) ফাইটন।

উঃ (b)বেনথস্।

✍️প্রশ্নের মান-2:

1. ইকোলজি বা বাস্তুবিদ্যা প্রচারে সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেন? ইকোলজি বা বাস্তুবিদ্যা কাকে বলে? 

উঃ 👉 বাস্তুবিদ্যা শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন 1866 সালে জার্মান জীববিজ্ঞানী আর্নস্ট হেকেল তার ' জেনারেল মরফোলজি ডার অর্গানিজমেন' বইয়ে।

👉বাস্তুবিদ্যা (ইংরেজি: Ecology) : জীববিজ্ঞানের যে বিশিষ্ট শাখায় পরিবেশে বিন্যস্ত বিভিন্ন জীব ও তার পারিপার্শ্বিক জড় উপাদান এবং তাদের পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়া, নির্ভরশীলতা ও মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে বাস্তুবিদ্যা বা ইকোলজি বলে।

2. গোষ্ঠী বাস্তুসংস্থান বা সিন ইকোলজি বলতে কী বোঝো?

উঃ কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রজাতির জীবগোষ্ঠীকে সেই স্থানের পরিবেশ এবং ওই জীবগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তিতে যখন আলোচনা করা হয়, তখন তাকে সম্প্রদায় বাস্তুসংস্থান বা গোষ্ঠী সংস্থা (Community ecology) বা সিন্‌ইকোলজি-ও (Synecology) বলা হয়।

3. জনসংখ্যা বাস্তসংস্থান বা অটইকোলজি বা পপুলেশান ইকোলজি কাকে বলে? 

উঃ কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসকারী একটি প্রজাতির জনসংখ্যাকে যখন সেই স্থানের পরিবেশ এবং ওই জাতির জনসংখ্যার ভিত্তিতে আলোচনা করা হয়, তখন তাকে জনসংখ্যা বাস্তুসংস্থান ( Population ecology) বা অটইকোলজি-ও (Autecology) বলা হয়। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর বণ্টন বুঝতে ইকোলজি সাহায্য করে।

4. মানব বাস্তুসংস্থান বা হিউম্যান ইকোলজি কাকে বলে? 

উঃ মানুষকে কেন্দ্র করে বাস্তুতন্ত্র ও মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের আলোচনাকে মানব বাস্তুসংস্থান বা হিউম্যান ইকোলজি (Human Ecology) বলে।

5. বাস্তু তন্ত্র বা ইকো সিস্টেম কথাটি সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেন? বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম কাকে বলে? 

উঃ 👉 1935 সালে বিজ্ঞানী ট্যাসলে (A G Tansley) সর্বপ্রথম ইকোসিস্টেম (Ecosystem) কথাটি ব্যবহার করেন।

👉যে নির্দিষ্ট প্রণালীতে কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের জীবসম্প্রদায় নিজেদের মধ্যে এবং ওই অঞ্চলের জড় বা অজৈব উপাদানের সঙ্গে আদান-প্রদানের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য উৎপন্ন উপাদানের বিনিময় ঘটায়, তাকে বাস্তুরীতি বা বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) বলে।

6. বাস্তুতন্ত্রের উপাদান গুলি কি কি? 

উঃ বাস্তুতন্ত্রের উপাদান গুলি মূলত দুই প্রকার-১.সজীব উপাদান ও ২.নির্জীব উপাদান।

7. বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদান গুলি কয় প্রকার ও কি কি? 

উঃ বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদানগুলিকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (1) স্বভোজী (Autotrophs) বা উৎপাদক (Producers) ও (2) পরভোজী (Heterotrophs) বা খাদক (Consumers) উপাদান।

8. উৎপাদক ও খাদক বলতে কী বোঝো? 

উঃ 👉 যে-সমস্ত সবুজ উদ্ভিদ (ক্লোরােফিলযুক্ত) সূর্যালােক গ্রহণ করে সালােকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে নিজেদের দেহে খাদ্য উৎপন্ন করে খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি রচনা করে, তাদের উৎপাদক বলে।

👉বাস্তুতন্ত্রে যে সব উপাদান উৎপাদকের তৈরি খাদ্য উপাদানের উপর নির্ভরশীল, সেসব জীবকে খাদক বলে। এগুলো বাস্তুতন্ত্রের প্রাণী সদস্য বা ম্যাক্রোখাদক নামেও পরিচিত।

9. প্রাথমিক খাদক কাকে বলে উদাহরণ দাও। 

উঃ যে সকল প্রাণিরা কেবলমাত্র উদ্ভিদকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে তাদেরকে প্রথম স্তরের খাদক বলা হয়।

বিভিন্ন শ্রেণীর তৃণভোজী প্রাণি, যেমন জলে ভাসমান প্রাণিকণা বা জুয়োপ্লাঙ্কটন (zooplankton), কীটপতঙ্গ, গরু, ছাগল, হরিণ, ঘাসফড়িং, প্রজাপতি, ইত্যাদি প্রত্যক্ষভাবে খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল।

10. উৎপাদক ও বিয়োজকের মধ্যে পার্থক্য কি? 

উঃ শ্রেণিঃ

◆ উৎপাদক:

উৎপাদকরা স্বভোজি শ্রেণীর।

◆ বিয়োজক:

বিয়োজকরা মৃতজীবী শ্রেণীর।

👉 শক্তি গ্রহণঃ

◆ উৎপাদক:

উৎপাদকরা সূর্য থেকে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে।

◆ বিয়োজক:

মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে পুষ্টি সংগ্রহের মাধ্যমে বিয়োজকদের দেহে শক্তির সঞ্চার ঘটে।

11. খাদ্য শৃংখল কাকে বলে? 

উঃ খাদ্য শৃঙ্খল হল জীবের একটি রৈখিক ক্রম যেখানে পুষ্টি এবং শক্তি এক জীব থেকে অন্য জীবে স্থানান্তরিত হয় । এটি ঘটে যখন একটি জীব অন্য জীবকে গ্রাস করে। এটি উৎপাদক জীবের সাথে শুরু হয়, চেইন অনুসরণ করে এবং পচনশীল জীবের সাথে শেষ হয়।

13. খাদ্য জাল বলতে কী বোঝো? 

উঃ কোন বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির আন্তঃসম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা খাদ্য শৃঙ্খলগুলি বিভিন্ন ভাবে খাদ্য-খাদক সম্পর্কের ভিত্তিতে একে অপরের সাথে যুক্ত হলে, পরিবেশে বিভিন্ন খাদ্য শৃঙ্খলে মধ্যে খাদ্যের আদান-প্রদানকে কেন্দ্র করে যে জটিল জালিকার মত অবস্থা সৃষ্টি হয়; তাকে খাদ্যজাল বা খাদ্য জালিকা বা Food Web বলে।

14. খাদ্য শৃংখল কয় প্রকার ও কি কি? 

উঃ খাদ্য শৃংখল দুই প্রকার-১.গ্ৰেজিং খাদ্য শৃংখল ২.ডেট্রিটাস খাদ্যশৃংখল।

15. গ্ৰেজিং খাদ্য শৃংখল কি?

উঃ যে খাদ্যশৃঙ্খলে উৎপাদক স্তর থেকে শক্তি ধাপে ধাপে তৃণভোজী ও মাংসাশী প্রাণীদের মধ্যে সংক্রামিত হয়, তাকে গ্রেজার বা গ্রেজিং খাদ্যশৃঙ্খল (grazing food chain) বলে। গ্রেজার বা গ্রেজিং খাদ্যশৃঙ্খলকে বাংলায় চারণভূমির খাদ্যশৃঙ্খল বলা হয়। 

যেমন-উদ্ভিদ -খরগোশ → শিয়াল।

16. ডেট্রিটাস খাদ্যশৃংখল কি?

উঃ যে খাদ্যশৃঙ্খলে বিয়োজক স্তর থেকে খাদক স্তরে শক্তি ধাপে ধাপে সঞ্চারিত হয়, তাকে ডেট্রিটাস খাদ্যশৃঙ্খল (detritus food chain) বলে। যেমন-

পচা পাতা (বিয়োজক স্তর)→ ক্ষুদ্র জলজ প্রাণী বা লার্ভা-ছোটো মাছ-বড়ো মাছ(খাদক স্তর)

17. লিন্ডে ম্যানের ১০ শতাংশের সূত্রটি লেখ। 

উঃ প্রতিটি ট্রাফিক লেভেল এ গৃহীত শক্তির 10% ওই পুষ্টি স্তর এর জীবদের দেহ গঠনের কাজে লাগে যা পরবর্তী ট্রফিক লেভেলের জীবেরা গ্রহণ করতে পারে।

18. খাদ্য পিরামিড কাকে বলে? 

উঃ খাদ্য পিরামিড একটি দৃশ্যগত চিত্রায়ন যা একটি প্রদত্ত বাস্তুতন্ত্রের প্রতিটি ট্রফিক বা পুষ্টি স্তরে জীবভর বা জৈব- উৎপাদনশীলতা প্রদর্শন করে। এগুলি তিনটি বিভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে : সংখ্যা পিরামিড, জীবভর পিরামিড এবং শক্তি পিরামিড।

19. পুষ্টি স্তর বা ট্রপিক লেভেল কাকে বলে? 

উঃ গ্রিক শব্দ ‘ Trophos ‘এর অর্থ হল পুষ্টি সাধন । খাদ্য-খাদক সম্পর্কে উৎপাদক থেকে বিয়ােজক পর্যন্ত ধাপে ধাপে প্রত্যেক স্তরে শক্তি প্রবাহের জন্য খাদ্যের জোগান বজায় থাকে এবং প্রতিটি স্তরের জীবগােষ্ঠী সরবরাহকৃত খাদ্য থেকে পুষ্টি সাধন করে । জীবগােষ্ঠীর এরূপ খাদ্যের জোগান-সংক্রান্ত স্তরকে পুষ্টি স্তর বা খাদ্যস্তর বা ট্রফিক স্তর বলে ।

20. বায়োম বলতে কী বোঝো? 

উঃ একটি বায়োম  হল একটি স্বতন্ত্র ভৌগলিক অঞ্চল যেখানে নির্দিষ্ট জলবায়ু , গাছপালা এবং প্রাণীজগত রয়েছে। এটি একটি জৈবিক সম্প্রদায় নিয়ে গঠিত যা এর ভৌত পরিবেশ এবং আঞ্চলিক জলবায়ুর প্রতিক্রিয়ায় গঠিত হয়েছে। বায়োম একাধিক মহাদেশে বিস্তৃত হতে পারে।

✍️প্রশ্নের মান-5/10:

1.বাস্তুতন্ত্র কী? বাস্তুতন্ত্রের উপাদান ও ভারসাম্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

উঃ 👉 যে নির্দিষ্ট প্রণালীতে কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের জীবসম্প্রদায় নিজেদের মধ্যে এবং ওই অঞ্চলের জড় বা অজৈব উপাদানের সঙ্গে আদান-প্রদানের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য উৎপন্ন উপাদানের বিনিময় ঘটায়, তাকে বাস্তুরীতি বা বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) বলে।

👉একটি বাস্তুতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ'ল প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা। এই ভারসাম্যটি নতুন প্রজাতির উত্থান, কিছু প্রজাতির আকস্মিক মৃত্যু, প্রাকৃতিক বিপদ বা মানবসৃষ্ট কারণে ব্যাহত হতে পারে। ইকোলজিকাল ভারসাম্য একটি ধারণা যা পরিবেশকে কীভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় সংগঠিত করা হয় যেখানে প্রজাতি অন্যান্য প্রজাতি এবং তাদের পরিবেশের সাথে সহাবস্থান করে তা নির্ধারণ করে।

পরিবেশগত ভারসাম্য হ'ল এমন একটি অভিব্যক্তি যা জীবজ প্রাণীর মধ্যে ভারসাম্য যেমন মানুষ, উদ্ভিদ এবং প্রাণী এবং তাদের পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। সুরেলা সম্পর্কগুলি একটি স্বাস্থ্যকর এবং আকাঙ্ক্ষিত পরিবেশগত ভারসাম্যকে প্রতিফলিত করে। পরিবেশগত ভারসাম্য অর্জনে মানুষ মূল ভূমিকা পালন করে। কারণ মানুষের অন্যান্য জীবের চেয়ে অনেক বেশি চিন্তা করার ক্ষমতা রয়েছে।

সমস্ত জীবের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের প্রাপ্যতা এবং এর স্থায়িত্ব বাস্তুসংস্থার ভারসাম্যের অস্তিত্বকে প্রতিফলিত করে। অতএব, এই ভারসাম্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তুতন্ত্রের অস্তিত্ব এবং বেঁচে থাকার বিষয়টি নির্ভর করে। সমস্ত জীবের জীবন পরিবেশগত ভারসাম্য নিয়ে ঘটে। যথার্থ ইকোসিস্টেম প্রতিটি জীবকে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রত্ন-প্রজনন করতে সহায়তা করে। জীবের অবিচ্ছিন্ন অস্তিত্ব পরিবেশগত ভারসাম্যের কারণে।

পরিবেশগত ভারসাম্য জীব এবং পরিবেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। জীবের প্রজনন এবং বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ পরিবেশগত ভারসাম্য দ্বারা সরবরাহ করা হয়। বন্যা, খরা, সহিংস ঝড় এবং শিকারীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন শিকার এমন ঘটনা যা পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। সংক্ষেপে, পৃথিবীর অস্তিত্ব পুরোপুরি পরিবেশগত ভারসাম্যের উপর নির্ভরশীল।

আমাদের সংস্থা বাস্তুসংস্থান ভারসাম্য নিয়ে বিস্তৃত পরিসেবা সরবরাহ করে। এই পরিষেবাগুলির জন্য ধন্যবাদ, ব্যবসায়গুলি উচ্চমানের, দক্ষ এবং উচ্চ কার্যকারিতা উত্পাদন উত্পাদন করে এবং মানব স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আরও বাসযোগ্য পরিবেশ রেখে তাদের দায়িত্ব পালন করে।

2.বাস্তুতন্ত্রের উপাদান গুলির মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করো।

উঃ বাস্তুতন্ত্রের উপাদানসমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: বাস্তুতন্ত্রের উপাদানগুলিকে সামগ্রিক ভাবে দুভাগে ভাগ করা হয়। যথা-জীবজ উপাদান (Biotic components) এবং অজীবজাত উপাদান (Abiotic components)। বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদান বলতে উৎপাদক (Producer), খাদক (Consumer) এবং বিয়োজক (Decomposer) জীবকে বোঝায়।

(1) স্বভোজী বা উৎপাদক জীব (Producer): বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত যে সকল জীব নিজেদের খাদ্য নিজেরাই সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে প্রস্তুত করতে সক্ষম তাদের স্বভোজী বা উৎপাদক বলে। পরিবেশের সকল প্রকার ক্লোরোফিল যুক্ত সবুজ উদ্ভিদেরাই উৎপাদক জীব হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। 

(2) খাদক জীব বা ভোক্তা (Consumer): বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত যে সব জীব খাদ্য উৎপাদনে অক্ষম এবং খাদ্যের জন্য উৎপাদকের উপর নির্ভরশীল তাদের পরভোজী উপাদান বা খাদক জীব বলে। খাদক জীবসমূহকে দুভাগে ভাগ করা হয়। যথা-মাইক্রোকনজিউমার (Micro-consumer) এবং ম্যাক্রোকনজিউমার (Macro-consumer)।

(a) প্রাথমিক খাদক (Primary Consumer): বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গতযে সব জীব খাদ্যের জন্য সরাসরি স্বভোজী জীব অর্থাৎ সবুজ উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল তাদের প্রাথমিক খাদক (Primary Consumer) বলে। উদাহরণ: কীটপতঙ্গ, কচি শ্রেণির প্রাণীসমূহ।

(b) গৌণ খাদক (Secondary Consumer): বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত যে সব জীব খাদ্যের জন্য প্রাথমিক খাদকের উপর নির্ভরশীল তাদের গৌণ খাদক বলে। উদাহরণ: কুকুর, বিড়াল, নেকড়ে প্রভৃতি।

(c) প্রগৌণ খাদক (Tertiary Consumer): বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত যে সব জীব খাদ্যের জন্য গৌণ খাদকের উপর নির্ভরশীল তাদের প্রগৌণ খাদক (Tertiary Consumer) বলে। উদাহরণ: বাঘ, সিংহ, বাজপাখি, তিমি প্রভৃতি।

(3) অনুখাদক বা বিয়োজক (Decomposer): বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক দ্বারা মৃত উদ্ভিদ এবং প্রাণীর দেহ ও জীবদেহ থেকে নির্গত বর্জ্যপদার্থ সমূহ বিয়োজিত হয়ে অজৈব বস্তুতে পরিণত হয়। এইপ্রকার বিয়োজন বা শটন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী জীবসমূহকে বিয়োজক বলে। ডেট্রিটাস খাদক জীবেরা বিয়োজকদের সরাসরি খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। কেঁচো, কেন্নো, শকুন, মাটিতে বসবাসকারী মাইট, বিভিন্ন শ্রেণির পতঙ্গ এই পর্যায়ভুক্ত।

(4) অজীবজাত উপাদান (Abiotic components): বাস্তুতন্ত্রের অজৈব উপাদানগুলিকে তিনভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা-অজৈব পদার্থ (Inorganic matter), জৈব পদার্থ (Organic matter) এবং ভৌত উপাদান (Physical component) সমূহ।

(a) অজৈব পদার্থ (Inorganic matter): বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ যেমন- ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড প্রভৃতি হল অজৈব পদার্থ। এই মৌলগুলি জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্রের মাধ্যমে পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কাজে সহায়তা করে।

(b) জৈব পদার্থ (Organic matter): বাস্তুতন্ত্রের মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর নানারকম জৈব বস্তুর পচনের ফলে উৎপন্ন পদার্থ হল জৈব পদার্থ। বিভিন্ন প্রকার প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট প্রভৃতি পদার্থগুলি হল বাস্তুতন্ত্রের জৈব উপাদান।

(c) ভৌত উপাদান (Physical component): পরিবেশের ভৌত বা প্রাকৃতিক উপাদানগুলি হল- সূর্যালোক, বাতাস, বৃষ্টিপাত, উয়তা, জল, মাটি প্রভৃতি।

3.বাস্ততন্ত্রে শক্তি প্রবাহ ব্যাখ্যা কর।

উঃ বাস্তুতন্ত্রে শক্তির প্রবাহ (Energy flow through Ecosystem) : সবুজ উদ্ভিদেরা সৌরশক্তিকে (সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতির মাধ্যমে) প্রথমে রাসায়নিক শক্তিতে এবং পরবর্তী- কালে স্থৈতিকরূপে আবদ্ধ রাখে। খাদক জীব উৎপাদক জীবেদের সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ভক্ষণ করে, ফলে শক্তি উৎপাদক থেকে খাদকের দেহে প্রবেশ করে। এইভাবে রূপান্তরিত সৌরশক্তি এক দেহ থেকে অন্য দেহে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াকে শক্তি-প্রবাহ বা Energy flow বলে।

বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহের বৈশিষ্ট্যসমূহ :

(1) সমস্ত শক্তির মূল উৎস হল সৌরশক্তি। এই সৌরশক্তি সঞ্চিত শক্তিরূপে অন্যান্য পুষ্টিস্তরে ছড়িয়ে পড়ে।

(2) বাস্তুতন্ত্রে শক্তির প্রবাহ সর্বদা একমুখী হয়।

সূর্যালোক - উৎপাদক জীব- খাদক জীবসমূহ

(3) লিন্ডেম্যানের দশ শতাংশ সূত্র অনুযায়ী বাস্তুতন্ত্রে শক্তির ক্রমহ্রাসমান বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।

বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহের পর্যায় সমূহ:

বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহের তিনটি পর্যায় সম্পন্ন হয়ে থাকেঃ

(1) শক্তির অর্জন (Acquisition of energy) |

(2) শক্তির ব্যবহার (Use of energy)।

(3) শক্তির স্থানান্তর (Transferance of energy.) ।

4.খাদ্যশৃঙ্খল ও খাদ্য জালের মধ্যে পার্থক্য লেখ।

উঃ 👉 

👉খাদ্যজাল ও খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে পার্থক্য হলো-

খাদ্যজাল :

ক। যে কোনো বাস্তুসংস্থানে বিদ্যমান একাধিক খাদ্যশৃঙ্খল একটি অন্যটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে খাদ্যজাল তৈরি করে।

খ। এটি বিভিন্ন খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে।

গ। খাদ্যজালে দুই বা ততোধিক খাদ্যশৃঙ্খল থাকে।

ঘ। খাদ্যজাল একটি বৃহৎ প্রক্রিয়া।

ঙ। একটি পরিবেশে একটি খাদ্যজাল থাকে।

খাদ্যশৃঙ্খল :

ক। বাস্তুসংস্থানে উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে শক্তিপ্রবাহের ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকে বলে খাদ্যশৃঙ্খল।

খ। এটি জীব পরিবেশের উপাদানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে প্রকাশ করে।

গ। খাদ্যশৃঙ্খলে উৎপাদক হিসেবে সবুজ উদ্ভিদ ও খাদক হিসেবে দুই বা ততোধিক প্রাণী থাকে।

ঘ। খাদ্যশৃঙ্খল একটি ক্ষুদ্র প্রক্রিয়া।

ঙ। একটি পরিবেশে অনেক খাদ্যশৃঙ্খল থাকতে পারে।

5.বাস্তুতন্ত্র, জনসংখ্যা ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক কী?

উঃ 

6. পুকুরের বাস্তুতন্ত্র বর্ণনা কর। 

#উত্তর : একটি জলজ বা পুকুরের

বাস্তুতন্ত্রের বর্ণনাঃ

প্রকৃতিতে মিঠা জলের পুকুর একটি সম্পূর্ণ, স্বনির্ভর ও স্বনিয়ন্ত্রিত বাস্তুতন্ত্র। নিচে একটি পুকুরের

বাস্তুতন্ত্রের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল।

প্রতিটি পুকুর দুটি মূল বাস্তুতান্ত্রিক উপাদান নিয়ে

গঠিত- অজীব উপাদান এবং সজীব

উপাদান।

#অজীব উপাদান : জল, মাটি, বায়ু, অজৈব লবণ প্রভৃতি অজীব উপাদান। এগুলো জলজ উদ্ভিদকে

পুষ্টি জোগায়।

#সজীব উপাদান : পুকুরে বসবাসকারী সব জীব

সম্মিলিতভাবে সজীব উপাদানের অন্তর্ভুক্ত।

জীবগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা

যায়-

১। উৎপাদক ২। খাদক এবং ৩।বিয়োজক।

.

১। উৎপাদক : জলে ভাসমান শেওলা বা ডায়াটম প্রভৃতি ফাইটোপ্ল্যাংকটন এবং মূল দিয়ে আবদ্ধ শালুক পদ্ম, পাতাশেওলা প্রভৃতি উদ্ভিদ উৎপাদক। এ ছাড়া

হাইড্রিলা, ইউট্রিকুলেরিয়া প্রভৃতি নিমজ্জিত গাছপালাও

উল্লেখযোগ্য উৎপাদক।

.

২। খাদক: এগুলো হচ্ছে পরভোজী জীব যারা উৎপাদকের তৈরি জটিল জৈব খাদ্য থেকে পুষ্টি সংগ্রহ

করে। এদের বেশির ভাগই তৃণভোজী তবে কিছু পতঙ্গ ও বড় মাছ মাংসাশী।

#একটি পুকুরের খাদককুলকে নিচে

উল্লিখিতভাবে ভাগ করা যায়।

.

ক। প্রাইমারি খাদক (শাকাশী/

তৃণভোজী): মশার লার্ভা, জলের উপরে ভাসমান জলজ মাছি প্রভৃতি প্রাইমারি খাদক। কারণ এরা সবাই

উৎপাদকের কাছ থেকে খাদ্য ও পুষ্টি সংগ্রহ করে।

.

খ। সেকেন্ডারি খাদক (মাংসাশী/

মাংসভোজী) : ছোট ছোট মাছ,ব্যাঙ ইতাদি সেকেন্ডারি খাদক। কারণ এসব প্রাণী প্রাইমারি

খাদকদের আহার করে পুষ্টি সংগ্রহ করে।

.

গ। সর্বোচ্চ খাদক (মাংসাশী/

মাংসভোজী) : রাক্ষুসে মাছ, বক, সারস, পানকৌড়ি, গাংচিল প্রভৃতি সর্বোচ্চ খাদক। কারণ এসব প্রাণী

সেকেন্ডারি খাদকদের আহার করে পুষ্টি সংগ্রহ করে। সুনির্দিষ্ট সর্বোচ্চ খাদক নির্ধারণ করা

প্রায়ই অসম্ভব হয়ে পড়ে। পুকুরের বাস্তুতন্ত্রে রাক্ষুসে মাছই সাধারণত প্রথম পর্যায়ের সর্বোচ্চ

খাদক হিসেবে দেখা যায়। তখন এদের টারসিয়ারি খাদক বলে। পরে হয়তো দেখা গেল ওই পুকুরে

রাক্ষুসে মাছ ভক্ষণকারী বক পাখির আবির্ভাব ঘটেছে, তখন বককে বলা হবে কোয়ার্টারনারি

খাদক। অন্যদিকে, যদি কোন ব্যক্তি ওই কোয়ার্টারনারি

খাদকরূপী বককে খাওয়ার জন্য শিকার করে নিয়ে গিয়ে থাকে, তখন মানুষই হবে সর্বোচ্চ খাদক।

এসব কারণে টারসিয়ারি, কোয়ার্টারনারি প্রভৃতি নির্দিষ্ট

নামে অভিহিত না করে সর্বোচ্চ খাদক/শীর্ষ খাদক/টপ কনজিউমার বলে।

.

৩। বিয়োজক : মৃতজীবী ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকই পুকুরের প্রধান বিয়োজক। এগুলো পুকুরের জল ও কাদায় বাস করে এবংউৎপাদক ও খাদকদের মৃতদেহের পচন ঘটিয়ে কঠিন জৈব যৌগকে সরল

উপাদানে মুক্ত করে দেয়।

7. একটি বনভূমির বাস্তুতন্ত্র বর্ণনা কর।

উঃ 

একটি বন বাস্তুতন্ত্র হল একটি কার্যকরী একক বা একটি সিস্টেম যা মাটি, গাছ, পোকামাকড়, প্রাণী, পাখি এবং মানুষ এর মিথস্ক্রিয়াকারী ইউনিট হিসাবে গঠিত। একটি বন একটি বৃহৎ এবং জটিল বাস্তুতন্ত্র এবং তাই প্রজাতির বৈচিত্র্য রয়েছে।

এছাড়াও, জলাভূমি এবং তৃণভূমির মতো ছোট বাস্তুতন্ত্রের তুলনায় এটি অনেক বেশি স্থিতিশীল এবং ক্ষতিকারক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী।

একটি বন বাস্তুতন্ত্র, অন্য যেকোন বাস্তুতন্ত্রের মতো, এছাড়াও অ্যাবায়োটিক এবং জৈব উপাদান নিয়ে গঠিত। অ্যাবায়োটিক উপাদানগুলি বায়ু, জল এবং মাটির মতো অজৈব পদার্থকে বোঝায়। জৈব উপাদানের মধ্যে রয়েছে উৎপাদক, ভোক্তা এবং পচনকারী।

এই উপাদানগুলি একটি বাস্তুতন্ত্রে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে এবং এইভাবে, তাদের মধ্যে এই মিথস্ক্রিয়া এটিকে স্ব-টেকসই করে তোলে।

বন বাস্তুতন্ত্রের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য

একটি বন বাস্তুতন্ত্রের দুটি প্রধান কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য হল:

 প্রজাতির গঠন: এটি একটি বন বাস্তুতন্ত্রের উদ্ভিদ এবং প্রাণী প্রজাতির সনাক্তকরণ এবং গণনা বোঝায়।

 স্তরবিন্যাস: এটি বিভিন্ন প্রজাতির উল্লম্ব বন্টন বোঝায় যা বন বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন স্তর দখল করে। প্রতিটি জীবই পুষ্টির উৎসের ভিত্তিতে একটি বাস্তুতন্ত্রে একটি স্থান দখল করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি বন বাস্তুতন্ত্রে, গাছগুলি উপরের স্তরটি দখল করে, ঝোপঝাড়গুলি দ্বিতীয়টি দখল করে এবং ভেষজ এবং ঘাসগুলি নীচের স্তরটি দখল করে।

একটি বন ইকোসিস্টেমের উপাদান

একটি বন বাস্তুতন্ত্রের উপাদানগুলি নিম্নরূপ:

1. উৎপাদনশীলতা

যেকোন ইকোসিস্টেমের কাজ এবং টিকিয়ে রাখার জন্য মৌলিক প্রয়োজনীয়তা হল সৌরশক্তির ধ্রুবক ইনপুট। গাছপালাও একটি বন বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদক।

একটি বন বাস্তুতন্ত্রে দুটি ধরণের উত্পাদনশীলতা রয়েছে, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক। প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা বলতে সালোকসংশ্লেষণের সময় উদ্ভিদের দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতি ইউনিট এলাকায় সৌর শক্তি বা বায়োমাস উৎপাদনের হারকে বোঝায়।

এটিকে আরও ভাগ করা হয়েছে গ্রস প্রাইমারি প্রোডাক্টিভিটি (GPP) এবং নেট প্রাইমারি প্রোডাক্টিভিটি (NPP)। একটি বাস্তুতন্ত্রের জিপিপি হল সৌর শক্তির ক্যাপচারের হার বা বায়োমাসের মোট উৎপাদন। যাইহোক, গাছপালা শ্বাস-প্রশ্বাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জিপিপি ব্যবহার করে।

এইভাবে, এনপিপি হল গাছপালা বা উৎপাদকদের দ্বারা ব্যবহারের পরে অবশিষ্ট বায়োমাসের পরিমাণ। আমরা তাই বলতে পারি যে NPP হল সেই পরিমাণ যা তৃণভোজী এবং পচনশীলদের খাওয়ার জন্য উপলব্ধ। মাধ্যমিক উত্পাদনশীলতা মানে ভোক্তাদের দ্বারা খাদ্য শক্তি শোষণের হার।

2. পচন

পচন একটি অত্যন্ত অক্সিজেন-প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া। পচন প্রক্রিয়ায়, পচনকারীরা ডেট্রিটাসের জটিল জৈব যৌগগুলিকে কার্বন ডাই অক্সাইড, জল এবং পুষ্টির মতো অজৈব পদার্থে রূপান্তরিত করে।

ডেট্রিটাস হল মৃত উদ্ভিদের অবশিষ্টাংশ যেমন পাতা, বাকল, ফুল এবং এছাড়াও তাদের মল পদার্থ সহ প্রাণীদের মৃত দেহাবশেষ। পচন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত পদক্ষেপগুলি হল ফ্র্যাগমেন্টেশন, লিচিং, ক্যাটাবলিজম, হিউমিফিকেশন এবং খনিজকরণ।

ফ্র্যাগমেন্টেশন প্রক্রিয়ায়, ডেট্রিটিভরস ডেট্রিটাসকে ছোট ছোট কণাতে ভেঙ্গে ফেলে। লিচিং প্রক্রিয়ায়, জলে দ্রবণীয় অজৈব পুষ্টি মাটিতে নেমে আসে এবং অনুপলব্ধ লবণ হিসাবে স্থির হয়।

ক্যাটাবোলিজম প্রক্রিয়ার অধীনে, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের এনজাইমগুলি ডেট্রিটাসকে সহজতর অজৈব পদার্থে পরিণত করে। হিউমিফিকেশন এবং খনিজকরণ প্রক্রিয়াগুলি মাটির পচনের সময় সঞ্চালিত হয় এবং ডেট্রিটাস নয়।

হিউমিফিকেশন প্রক্রিয়ার ফলে হিউমাস জমা হয় যা খুব ধীর গতিতে পচে যায়। খনিজকরণের প্রক্রিয়ায়, জীবাণু দ্বারা হিউমাস আরও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং অজৈব পুষ্টি নির্গত হয়।

3. শক্তি প্রবাহ:

শক্তি এক দিকে প্রবাহিত হয়। প্রথমত, গাছপালা সৌরশক্তি ধারণ করে এবং তারপরে, খাদ্যকে পচনকারীতে স্থানান্তর করে। বিভিন্ন ট্রফিক স্তরের জীবগুলি খাদ্য বা শক্তি সম্পর্কের জন্য একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং এইভাবে একটি খাদ্য শৃঙ্খল গঠন করে।

শক্তি পিরামিড সবসময় খাড়া থাকে কারণ শক্তি একটি ট্রফিক স্তর থেকে পরবর্তী ট্রফিক স্তরে প্রবাহিত হয় এবং এই প্রক্রিয়ায়, কিছু শক্তি সর্বদা প্রতিটি ধাপে তাপ হিসাবে হারিয়ে যায়।

4. পুষ্টি সাইক্লিং

নিউট্রিয়েন্ট সাইক্লিং বলতে ইকোসিস্টেমের বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে পুষ্টি উপাদানের সঞ্চয় ও চলাচলকে বোঝায়। নিউট্রিয়েন্ট সাইক্লিং দুই ধরনের, বায়বীয় এবং পাললিক।

গ্যাসীয় চক্রের জন্য (অর্থাৎ নাইট্রোজেন, কার্বন), বায়ুমণ্ডল বা হাইড্রোস্ফিয়ার হল জলাধার যেখানে পাললিক চক্রের (যেমন ফসফরাস) পৃথিবীর ভূত্বক হল জলাধার।

8.উৎপাদক ও খাদকের মধ্যে পার্থক্য কি কি?

উঃ উৎপাদক ও খাদকের পার্থক‍্যঃ-

উৎপাদক ও খাদকের মধ‍্যে যেসব পার্থক‍্য পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নরুপ--

১. খাদ‍্য নির্ভরতাঃ

উৎপাদক:

উৎপাদকরা স্বভোজী শ্রেণির।

এরা নিজেদের খাদ‍্য নিজেরা তৈরি করে ও গ্রহন করে।

খাদক:

খাদকরা পরভোজী শ্রেণির।

এরা নিজেদের খাদ‍্য নিজেরা উৎপাদন করতে পারে না। খাদ‍্যের জন‍্য উৎপাদক ও অন‍্যান‍্য খাদকের ওপর নির্ভর করে।

২. পদার্থের যোগন:

উৎপাদক:

উৎপাদকরা খাদ্য তৈরীর সময় পরিবেশ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নেয় এবং উৎপন্ন অক্সিজেন পরিবেশে যোগান দেয়।

খাদক:

খাদক প্রাণীরা পরিবেশ থেকে অক্সিজেন নেয় এবং পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে।

৩. শক্তিঃ

উৎপাদক:

উৎপাদকরা সৌরশক্তিকে নিজদেহে আবদ্ধ করে।

খাদক:

খাদকরা সৌরশক্তিকে নিজদেহে আবদ্ধ করতে পারে না। উৎপাদক থেকে শক্তি লাভ করে।

৪. ক্লোরোফিলের উপস্থিতিঃ

উৎপাদক:

উৎপাদকের দেহে ক্লোরোফিল উপস্থিত থাকে।

খাদক:

খাদকের শরীরে কোন ক্লোরোফিল থাকে না।

৫. পুষ্টিস্তরে অবস্থানঃ

আরও দেখুন :উৎপাদক ও বিয়োজকের মধ‍্যে পার্থক‍্য উল্লেখ কর।

উৎপাদক:

এরা পুষ্টিস্তরের সবচেয়ে নীচে অবস্থান করে।

খাদক:

এরা পুষ্টিস্তরের দ্বিতীয় স্তর থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত অবস্থান করে।

৬. জীবের সংখ‍্যাঃ

উৎপাদক:

উৎপাদকের সংখ্যা খাদক প্রাণীদের তুলনায় বহুগুণ বেশি।

খাদক:

খাদক প্রাণীর সংখ‍্যা উৎপাদকের তুলনায় যথেষ্ট কম।

আরও দেখুন :উৎপাদক ও খাদকের মধ‍্যে পার্থক‍্য

৭. আয়তনঃ

উৎপাদক:

পরিবেশে মোট জীবভরের সিংহভাগ জুড়ে উৎপাদকরা অধিকার করে আছে।

খাদক:

মোট জীবভরের অনেক কম অংশ জুড়ে খাদক প্রাণীরা অধিকার করে আছে।

৮. স্থানিকতাঃ

উৎপাদক:

উৎপাদকরা স্বস্থানিক।(ভাসমান উদ্ভিদরা ব‍্যাতিক্রম)

খাদক:

খাদকরা স্বস্থানিক নয়। অর্থাৎ, এরা অস্থানিক।