📚বি.এ পরিবেশবিদ্যা (VAC):1st Semester:অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর: অধ্যায় -৪: জীববৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ। 📚

✍️ প্রশ্নের মান-৫/১০:

1. পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্বগুলি আলোচনা করো। রিভেট পপার প্রকল্প কী?

 অথবা, জৈব বৈচিত্র্যের সঠিক মূল্য উদাহরণসহ আলোচনা করো।

উত্তর:- জৈববৈচিত্র্যের বা পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব: মানুষ তথা সমগ্র জীবজগতের কাছে জৈববৈচিত্র্যের বা পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব বা মূল্য অপরিসীম। নীচে জৈববৈচিত্র্যের বিভিন্ন গুরুত্বগুলি বা মূল্যগুলি আলোচনা করা হল।

বাস্তুতান্ত্রিক মূল্য: বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা (ecological stability) বজায় রাখতে জৈববৈচিত্র্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কারণ, একই বাস্তুতন্ত্রে উপস্থিত জীবগোষ্ঠী পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে বসবাস করে। বাস্তুতন্ত্রে একটি প্রজাতির জীবের বিনাশ অন্য কোনো প্রজাতির বিপন্নতার কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রজাতি বৈচিত্র্য যত বাড়বে বা প্রজাতির সংখ্যা যত বাড়বে, সেই বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য তথা স্থিতিশীলতা তত বাড়বে। বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে যেমন বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদন ক্ষমতা মোটামুটি স্থির থাকে, তেমন বছরের বিভিন্ন সময়ের প্রাকৃতিক পরিবর্তনজনিত চাপ সহ্য করবার ক্ষমতা বেশি থাকে বা বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ প্রতিহত করার ক্ষমতাও বেশি থাকে। বাস্তুতন্ত্রের এই প্রজাতি বৈচিত্র্য কোনো সাময়িক ঘটনার ফল নয়, লক্ষাধিক বছরের বিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে উৎপাদক, খাদক, বিয়োজক ও পরিবর্তক থাকে। বাস্তুতন্ত্রের যে-কোনো একটি উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতির বিলুপ্ত হওয়ার অর্থ, সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ বা প্রাণীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত খাদ্য শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটা। যার ফলে অন্যান্য নির্ভরশীল প্রজাতিরাও তীব্র সংকটে পড়ে যায়। তাই বাস্তুতন্ত্রের সার্বিক ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে জৈববৈচিত্র্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

অর্থনৈতিক মূল্য: মানুষ তার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ওষুধপত্র প্রভৃতির জন্য সরাসরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। জৈববৈচিত্র্যের জন্যই মানুষ তার ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা প্রকৃতি থেকে মেটাতে সক্ষম হয়। মানুষ, বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে কেবল খাদ্য সামগ্রীই পায় তাই নয়, ওষুধ, কাঠ, কাগজ, তন্তু, রবার, আঠা, রজন, ট্যানিন ইত্যাদিও পায়। মানুষ বিভিন্ন প্রাণীবৈচিত্র্য থেকে মাছ, মাংস, দুগ্ধ-সামগ্রী, চামড়া, পালক, উল, লাক্ষা, মধু ইত্যাদি সংগ্রহ করে। বিভিন্ন জৈববৈচিত্র্যকে চিকিৎসাক্ষেত্রেও নানাভাবে ব্যবহার করা হয়। এককথায় বলতে গেলে খাদ্য ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য মানুষ বিভিন্ন জৈববৈচিত্তোর ওপর সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। আবার, জীবাণুর বা অন্যান্য উদ্ভিদ বা প্রাণীর সুষ্ঠ ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শিল্প সামগ্রী উৎপাদন করা হয়। বস্তুত, জৈববৈচিত্র্য অর্থনৈতিকভাবে বহু গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ মানুষকে উপহার দেয়।

পরিবেশ রক্ষায় জৈববৈচিত্র্য: পরিবেশ দূষণ রোধ করতে জীবমণ্ডলের (biosphere) সার্বিক সংরক্ষণ ও তার কার্যকারিতা বজায় রাখবার জন্য জৈববৈচিত্র্য আবশ্যক। পরিবেশে অক্সিজেনের সরবরাহ বজায় রাখতে, বৃষ্টিপাত ঘটাতে উদ্ভিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমানে সবুজ উদ্ভিদের ধ্বংস হওয়াই বিশ্ব উন্নায়ণের প্রধান কারণ।

জিন ভান্ডার হিসেবে জৈব বৈচিত্র্য: জৈব বৈচিত্র্য হল প্রকৃতপক্ষে বিপুল সংখ্যক জিনের ভান্ডার (gene pool) বিভিন্ন জীবের এই জিনের ভাঙার মানুষের কাছে এক অমূল্য সম্পদ। এই জিন ভাণ্ডারে অসংখ্য উত্তম গুণসম্পন্ন জিন রয়েছে, জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে যা সংগ্রহ করে অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন উদ্ভিদ বা প্রাণীতে স্থানান্তরিত করে পছন্দসই গুণসম্পন্ন উন্নতমানের ও উচ্চ ফলনশীল ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ বা প্রাণী তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। যার মাধ্যমে মানব সমাজের ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে।

নান্দনিক ও শিক্ষাগত মূল্য: বিভিন্ন প্রজাতির জীব, প্রকৃতিকে বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর করে তোলে। মানুষের সঙ্গে বন ও বন্যপ্রাণীর সম্পর্ক অতি প্রাচীন। যেকোনো দেশের জৈববৈচিত্র্য সেই দেশের সম্পদ। সেই সম্পদের নমুনা চিড়িয়াখানা, মিউজিয়াম, বোটানিকাল গার্ডেনে সংরক্ষণের মাধ্যমে তাদের সাথে সাধারণ মানুষের পরিচয় ঘটানো যায়। শিক্ষার্থীরাও জৈববৈচিত্র্য সম্বন্ধে ধারণা করতে পারে। ফলে নান্দনিক মূল্য (aesthetic value) ও শিক্ষাগত মূল্য বৃদ্ধি পায়।

নৈতিক মূল্য: প্রত্যেক জীবের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার পূর্ণ অধিকার আছে। 1982 সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্ব প্রকৃতি সম্পর্কিত ঘোষণাপত্রে এই চিন্তাধারা স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই আমাদের কর্তব্য প্রতিটি প্রজাতির জীবকে বাঁচিয়ে রাখা। এর জন্য দরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ (যেমন-এক্স-সিটু সংরক্ষণ, ইন-সিট সংরক্ষণ) এবং জৈববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করা।

রিভেট পপার প্রকল্প: স্ট্যানফোর্ড এবং পল এরলিচ 'রিভেট পপার প্রকল্প' (rivet popper hypothesis) প্রস্তাবনা করেন। এই প্রকল্প অনুযায়ী একটি বিমান যেমন হাজার হাজার রিভেট সংযুক্তির মাধ্যমে তৈরি হয়, তেমনি একটি বাস্তুতন্ত্রও তার বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হয়। রিভেট খুলে নিলে যেমন বিমানের কাঠামো ভেঙে যাবে, তেমনি মানুষ যদি বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন উপাদানের যথেচ্ছ ব্যবহার করে তাহলে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে।

2. জৈববৈচিত্র্যের ধরন বলতে কী বোঝ? জৈববৈচিত্র্যের ধরনের প্রকারভেদগুলি সংক্ষেপে লেখো। প্রজাতি-অঞ্চল সম্পর্ক বলতে কী বোঝ?

উত্তর:- জৈববৈচিত্র্যের ধরন: ভৌগোলিক অবস্থান ও সময়ভিত্তিক কারণে জৈববৈচিত্র্যের যে আনতি সৃষ্টি হয়,

তাকে জৈববৈচিত্র্যের ধরন (patterns of biodiversity) বলে।

জৈববৈচিত্র্যের ধরনের প্রকারভেদ: পৃথিবীর সর্বত্র জৈববৈচিত্র্য সমভাবে বণ্টিত নয়। ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে অর্থাৎ, পৃথিবীপৃষ্ঠের বিভিন্ন উচ্চতায়, বিভিন্ন অক্ষাংশে জৈববৈচিত্র্যের তারতম্য বা আনতি (gradient) দেখা যায়। আবার, সময়ভিত্তিক বা বিভিন্ন ঋতুভিত্তিক কারণেও জৈববৈচিত্র্যের এই আনতি বা তারতম্য দেখা যায়।

জৈববৈচিত্র্যের ধরন বিভিন্ন প্রকারের হয়। যেমন- (1) অক্ষাংশজনিত জৈববৈচিত্র্য আনতি, (2) উচ্চতাজনিত জৈববৈচিত্র্য আনতি, (3) ঋতুভিত্তিক জৈববৈচিত্র্য আনতি ও (4) জীব পর্যায়ভিত্তিক আনতি। এর মধ্যে অক্ষাংশজনিত এবং উচ্চতাজনিত আনতিকে মুখ্য আনতি (master gradient) বলা হয়।

(1) অক্ষাংশজনিত জৈববৈচিত্র্য আনতি (Latitudinal diversity gradient or LDG): অক্ষাংশের পরিবর্তনের সাথে সাথে জৈববৈচিত্র্যের পরিবর্তন ঘটে। দেখা গেছে, উচ্চ অক্ষাংশ থেকে যত নিম্ন অক্ষাংশের দিকে যাওয়া যায় অর্থাৎ, মেরু অঞ্চল থেকে যত নিরক্ষীয় অঞ্চলে যাওয়া যায়, জৈব বৈচিত্র্য তত বেশি দেখা যায়। এর মধ্যে নিরক্ষরেখার দুপাশে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখার মধ্যবর্তী উষ্ণ নিরক্ষীয় অঞ্চলে (23.5°N-23.5°S) এই জৈববৈচিত্র্য সবথেকে বেশি। এর কারণ, এই অঞ্চলের উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, সর্বাধিক সৌরশক্তি এবং ঋতুভেদে কম পরিবর্তন জীবের বেঁচে থাকার পক্ষে সর্বাধিক অনুকুল। যেমন- আমাজন নদী অঞ্চলের ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য (tropical rainforest) জৈববৈচিত্র্যে ভরপুর। এখানে প্রায় 40,000 প্রজাতির উদ্ভিদ, 3,000 প্রজাতির মাছ, 1,300 প্রজাতির পাখি, 428 প্রজাতির উভচর, 427 প্রজাতির স্তন্যপায়ী, 378 প্রজাতির সরীসৃপ ও 1,25,000 প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণী দেখতে পাওয়া যায়।

(2) উচ্চতাজনিত জৈববৈচিত্র্য আনতি (Altitudinal diversity gradient or ADG): উচ্চতার পরিবর্তনের সাথে সাথে জৈববৈচিত্রোর পরিবর্তন ঘটে। দেখা গেছে, উচ্চতার হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।

প্রতি 1,000m উচ্চতার বৃদ্ধিতে 6.5°C তাপমাত্রা কমে যায়। নির্দিষ্ট অঞ্চলের উচ্চতার সঙ্গে জৈববৈচিত্র্যের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। যেমন- পর্বতের বিভিন্ন উচ্চতায় জৈববৈচিত্র্যের সাংখ্যমানের পরিবর্তন হয়। পাদদেশে জৈববৈচিত্র্য সর্বাধিক হয় কিন্তু উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে থাকে। এর কারণ উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা ক্রমশ কমতে থাকে। আর এই ক্রমশ নিম্ন তাপমাত্রা জীবের বেঁচে থাকা প্রতিকুল হয়ে দাঁড়ায়, ফলে সেই পরিবেশে যারা নিজেদের অভিযোজিত করতে পারে কেবল তাদেরই দেখা মেলে। ফলে জৈববৈচিত্র্যের সংখ্যা কমে যায়।

(3) ঋতুভিত্তিক আনতি (Seasonal gradient): পরিবেশের ঋতুবৈচিত্র্যের ওপরও জৈববৈচিত্র্য নির্ভর করে।

বর্ষাকালে বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও উষ্ণতাও অনুকূল থাকায় এই সময় গাছপালার সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। আবার উদ্ভিজ্জ খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন তৃণভোজী পতঙ্গ বা প্রাণীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। অত্যন্ত গ্রীষ্মে বা প্রচন্ড শীতে প্রতিকূল পরিবেশে থাকায় এই জৈববৈচিত্র্য কমে যায়।

(4) জীব পর্যায়ভিত্তিক আনতি (Successional gradient): কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে স্থায়ী জীব সম্প্রদায় গঠিত হওয়ার আগে বিভিন্ন জীব প্রজাতির ধারাবাহিক প্রতিস্থাপন হওয়ার পদ্ধতিকে জীব-পর্যায়  বলে। কোনো স্থানের জীব-পর্যায়ের সাথে সাথে জৈববৈচিত্র্য বাড়তে থাকে, যতক্ষণ না সেই অঞ্চলে চরম জীব সম্প্রদায়  গঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন কারণ, যেমন- নতুন বাসস্থান সৃষ্টি, পরিযান , বিস্তার , প্রতিযোগিতা, বৃদ্ধি , পরিবেশের পরিবর্তন (environmental change) দ্বারা জীব-পর্যায় নিয়ন্ত্রিত হয়, তথা জৈববৈচিত্র্যও নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রাথমিক জীব-পর্যায় (primary succession)-এর তুলনায় গৌণ জীব-পর্যায় (secondary succession)-এর ক্ষেত্রে জৈববৈচিত্র্যের বৃদ্ধি দ্রুত হয়।

প্রজাতি-অঞ্চল সম্পর্ক: বিখ্যাত জার্মান প্রকৃতিবিদ ও ভূবিদ Alexander von Humboldt দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলের পর্যবেক্ষণের সময় লক্ষ করেন যে, কোনো একটি অঞ্চলে বসতিযোগ্য অঞ্চল (explored area) বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তবে এই প্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা একটি নির্দিষ্ট মাত্রা অবধিই সীমাবদ্ধ। বস্তুত, প্রজাতি-অঞ্চল সম্পর্ক (species-area relationship) বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রে (গুপ্তবীজী উদ্ভিদ, পাখি, বাদুড়, মিষ্টি জলের মাছ ইত্যাদি) আয়তাকার পরাবৃত্তের মতো হয়। 

3. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য কয়প্রকার কী কী? প্রকারভেদগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো। আলফা, বিটা ও গামা বৈচিত্র্যের তুলনা করো। 

উত্তর:- বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যের প্রকারভেদ: বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য তিন প্রকারের হয়, যথা- আলফা, বিটা ও গামা বৈচিত্র্য। এগুলির সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল।

আলফা বৈচিত্র্য (Alpha diversity): কোনো একটি নির্দিষ্ট বাসস্থানে প্রাপ্ত প্রজাতি বৈচিত্র্যকে আলফা বৈচিত্র্য বলে। ব্যাখ্যা ও উদাহরণ: আলফা বৈচিত্র্য অন্তঃ কমিউনিটি বৈচিত্র্যকে নির্দেশ করে। একটি ক্ষুদ্র অঞ্চল বা নির্দিষ্ট বাসস্থান বা কমিউনিটির অন্তর্ভুক্ত জীবগোষ্ঠী পরস্পরের সঙ্গে আলফা বৈচিত্র্য দ্বারা যুক্ত। এটি ওই অঞ্চলের প্রজাতি প্রাচুর্য নির্দেশ করে। 

বিটা বৈচিত্র্য (Beta diversity): একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক ক্ষেত্রের মধ্যে থাকা দুটি পৃথক বাসস্থানে উপস্থিত তুলনামূলক প্রজাতি প্রাচুর্যকে বিটা বৈচিত্র্য বলে।

ব্যাখ্যা ও উদাহরণ: বস্তুত পাশাপাশি অবস্থিত দুটি আলফা বৈচিত্র্যের প্রজাতি প্রাচুর্যের তুলনাই হল বিটা বৈচিত্র্য।একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক ক্ষেত্রে একটি পরিবেশ থেকে অন্য একটি পরিবেশে প্রজাতির পরিবর্তন বা প্রতিস্থাপন হার দ্বারা বিটা বৈচিত্র্য নির্ধারিত হয়। বিটা বৈচিত্র্যের মান বেশি হওয়ার অর্থ দুটি বাসস্থানে উপস্থিত সাধারণ (common) প্রজাতির সংখ্যা কম। 

গামা বৈচিত্র্য (Gamma diversity): ভিন্ন ভিন্ন ভৌগোলিক ক্ষেত্রের সমন্বয়ে গঠিত বৃহৎ ভৌগোলিক ক্ষেত্রের সামগ্রিক প্রজাতি প্রাচুর্যকে গামা বৈচিত্র্য বলে।

গামা বৈচিত্র্য = আলফা বৈচিত্র্য×বিটা বৈচিত্র্য

ব্যাখ্যা ও উদাহরণ: ভিন্ন ভৌগোলিক ক্ষেত্রে ভিন্ন বা একই রকম পরিবেশে প্রজাতির পরিবর্তন বা প্রতিস্থাপন দ্বারা গামা বৈচিত্র্য মাপা হয়। গামা বৈচিত্র্য, আলফা বৈচিত্র্য ও বিটা বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে গঠিত। গামা বৈচিত্র্যের সাহায্যে বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির পারস্পরিক সম্পর্ক (affinity) সম্বন্ধে জানা যায়। 

আলফা, বিটা ও গামা বৈচিত্র্যের তুলনা:

4 'গার্হস্থ্য জৈববৈচিত্র্য'-এর উপযোগিতা লেখো। কোনো স্থানের প্রজাতি বৈচিত্র্যের ওপর আগন্তুক প্রজাতির প্রভাব লেখো। 

উত্তর:- গার্হস্থ্য জৈববৈচিত্র্যের উপযোগিতা: গার্হস্থ্য জৈববৈচিত্র্য বলতে সেই সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বোঝানো হয়, যেগুলিকে গৃহে বা গৃহ পরিবেশের সান্নিধ্যে চাষ বা প্রতিপালন করা হয়। অর্থাৎ, মানুষের নিজের তৈরি পরিবেশে বসবাসকারী বা অভিযোজনের মাধ্যমে বেঁচে থাকা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈচিত্র্যকে গার্হস্থ্য জৈববৈচিত্র্য বলে এর কয়েকটি উদাহরণ হল (1) গ্রামাঞ্চলে অনেক বাড়ির বাগানে লেবু, আম, পেয়ারা, কাঁঠাল, বেগুন প্রভৃতি গাছ থাকে। (2) বহু বাড়িতে হাঁসমুরগী প্রতিপালন করা হয়।

গার্হস্থ্য জৈববৈচিত্র্য নানা কারণে আমাদের কাছে উপযোগী। এর উপযোগিতাগুলি হল-

(1) সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি ও আনন্দ উপভোগ: কতকগুলি উদ্ভিদ এবং প্রাণী আমাদের গৃহের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে। সেই কারণে আমরা আমাদের গৃহের উঠোনে বা বাগানে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগাই। গাছের সৌন্দর্য্য, ফুলের সৌন্দর্য্য আমাদের মুগ্ধ করে। এ ছাড়া আমরা বাড়িতে ময়না, কাকাতুয়া, টিয়া, কুকুর, বিড়াল, খরগোশ ইত্যাদি প্রতিপালন করি। এগুলি যেমন গৃহের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে অংশ নেয়। তেমনি এদের প্রতিপালনের মধ্যে দিয়ে অনেকে অবসর সময়ে তাদের সান্নিধ্যে আনন্দ উপভোগ তথা বিনোদনের কাজটি সম্পাদন করেন।

(2) খাদ্যের চাহিদা পূরণ: কতকগুলি উদ্ভিদ ও প্রাণীকে খাদ্যের চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে গৃহের নিকটবর্তী অংশে প্রতিপালন করা হয়। গ্রামাঞ্চলের বহু বাড়িতে উঠোনের কাছে লেবু, আম, পেয়ারা, কাঁঠাল, বেগুন, লংকা, কুমড়ো, লাউ প্রভৃতি ফল ও সবজির গাছ থাকে। এগুলি প্রয়োজনমতো খাদ্য সরবরাহ করে। মূলত ডিম ও মাংস পাওয়ার উদ্দেশ্যে বহু বাড়িতে হাঁস, মুরগি প্রতিপালন করা হয়। বর্তমানে খাদ্যের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের উচ্চ উৎপাদনশীল, সংকর প্রজাতির জীব সৃষ্টি করা হচ্ছে যারা রোগজীবাণু ও কীটপতঙ্গ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং বন্যা, খরা, তুষার জনিত প্রতিকূল আবহাওয়া-সহিষ্ণু। এগুলি গার্হস্থ জৈববৈচিত্র্যকে নতুন মাত্রা দান করছে।

(3) বিভিন্ন জাতের জীব সৃষ্টি বিভিন্ন জাতের শস্য ও প্রাণীদের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে চাষ করার ফলে অভিযোজন ঘটে নতুন প্রজাতি সৃষ্টি হয়েছে। যেমন- পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ করা হয় এমন ধানের প্রজাতি ঠান্ডা জলবায়ু সহ্য করতে পারে। ওই একই জাতের ধান সমতলে চাষ করলে তার কান্ড ও শিষ জোরালো হাওয়ায় সোজা দাঁড়িয়ে থাকার বৈশিষ্ট্য অর্জন করবে এবং রোদ ও বৃষ্টি সহ্য করতে পারবে। ফলে একই প্রজাতির ধানের দুটি জাত সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।

কোনো স্থানের প্রজাতি বৈচিত্র্যের ওপর আগন্তুক প্রজাতির প্রভাব: প্রজাতি বৈচিত্র্য বলতে বোঝায় কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় প্রজাতির জীবের উপস্থিতি এবং তাদের আপেক্ষিক প্রাচুর্য ভিন্ন। অন্যদিকে জীবের ভৌগোলিক বিস্তার অনুসারে, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের জৈববৈচিত্র্য দেখা যায়। অনেক সময়ে কোনো বিশেষ অঞ্চলের জীব প্রজাতি অন্য অঞ্চলে এসে বসবাস ও বিস্তার লাভ করে। এই ধরনের জীব প্রজাতিকে আগন্তুক জীবপ্রজাতি বলা হয়।

আগন্তুক প্রজাতির প্রভাবে স্থানীয় জৈববৈচিত্র্যের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন ঘটে। অনেকক্ষেত্রে আগন্তুক প্রজাতির প্রভাবে কোনো স্থানের স্থানিক প্রজাতি বৈচিত্র্য অবলুপ্তির পথে অগ্রসর হয়। সাধারণত কোনো অঞ্চলের দুর্বল স্থানীয় প্রজাতিদের মধ্যে কোনো প্রবল বা প্রকট আগন্তুক প্রজাতির অনুপ্রবেশ ঘটলে দুর্বল স্থানীয় প্রজাতি ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয় এবং আগন্তুক প্রজাতি অবলুপ্ত প্রজাতির জায়গা দখল করে।

আগন্তুক প্রজাতির অনুপ্রবেশের ফলে ভারতের বহু স্থানীয় প্রজাতি বৈচিত্র্য প্রভাবিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করা হল- (1) দক্ষিণ আমেরিকার নিজস্ব উদ্ভিদ কচুরিপানা (Eichhornia crassipes) আমাদের দেশে আনা হয়েছিল দূষণ নিবারণ ও সুন্দর ফুলের সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য। কিন্তু বর্তমানে এরা এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে এবং বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এদের প্রভাবে পুকুর, ডোবা ও জলাভূমির জল সম্পূর্ণরূপে আবৃত হয়েছে। এর ফলে বহু জলজ প্রাণী ধ্বংস হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এই শতাব্দীর শেষে আমাদের দেশে প্রায় 25% জলাভূমির প্রাণীর অবলুপ্তির কারণ হয়ে। দাঁড়াবে কচুরিপানা। (ii) আমেরি (ii) আমেরিকা থেকে আমাদের দেশে গম আমদানি করার সময় পার্থেনিয়াম (Parthenium hysterophorus) উদ্ভিদের আগমন ঘটে। পার্থেনিয়ামের রেণু আজ আমাদের দেশের বহু মানুষের অ্যালার্জি ও হাঁপানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। (iii) বাড়ির বা বাগানের সৌন্দর্য্যায়নের উদ্দেশ্যে মেক্সিকো থেকে ল্যান্টানা ক্যামেরা (Lantana camara) নামক এক প্রকার ছোটো গুল্মজাতীয় গাছ আমাদের দেশে আনা হয়েছিল। বর্তমানে ওই গাছ এমন ভাবে বিস্তার লাভ করছে যে, ভারতের বনভূমি এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। (iv) অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা ইউক্যালিপটাস গাছও (Eucalyptus obliqua) স্থানীয় উদ্ভিদ প্রজাতির প্রভূত ক্ষতিসাধন করছে। (v) আফ্রিকার ক্যাটফিস (Clarias gariepinus) ভারতের বিভিন্ন নদীতে ছাড়ার ফলে স্থানীয় ক্যাটফিস (Clarias batrachus) আজ বিপন্ন প্রজাতিতে পরিণত হচ্ছে। (vi) ভারতবর্ষের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে স্থানীয় শস্যের পরিবর্তে অর্থকরী ফসল হিসেবে কফি রবার, এলাচ, চা ইত্যাদি চাষ করার ফলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। শুধু ভারতবর্ষ নয়, ভারতবর্ষের বাইরে অন্যান্য দেশেও আগন্তুক প্রজাতি ব্যাপকভাবে ওই সকল স্থানের স্থানীয় প্রজাতির অস্তিত্বকে প্রভাবিত করছে। যেমন- (ক) ইউরোপ থেকে আসা খরগোশ অস্ট্রেলিয়াতে এমন ভাবে বিস্তার লাভ করে যে, তাদের প্রভাবে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ফসলের প্রভৃতি ক্ষতিসাধন ঘটে। (খ) সান ফ্রান্সিসকো উপত্যকায় ক্যালিফোর্নিয়ার স্থানীয় ঘাস প্রজাতি Spartina foliosa-এর সহিত আগন্তুক ঘাস প্রজাতি Spartina alterniflora সংকরায়ণ করার ফলে যে নতুন সংকর প্রজাতির ঘাস উৎপন্ন হয়, তা স্থানীয় ঘাস প্রজাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করছে।

5. জৈববৈচিত্র্যের বিনাশের কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর:- জৈববৈচিত্র্যের বিনাশের কারণ: জৈববৈচিত্রের মূল কারণগুলি নীচে আলোচনা করা হল।

(1) আবাসস্থলের সংকোচন: পৃথিবীতে জনসংখ্যার অত্যধিক চাহিদা পূরণ করার জন্য নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। এর ফলে উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ও তার সঙ্গে বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থলগুলিও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক প্রাণীর বিচরণের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দরকার। আবাসস্থলের সংকোচন হলে তারা ঠিক মতো প্রজনন করতে পারে না। মানুষের তথাকথিত উন্নয়ন মূলক কার্যকলাপ, যেমন বনাঞ্চল কেটে কৃষিজমির সম্প্রসারণ, আবাসন প্রকল্প তৈরি, কলকারখানা স্থাপন প্রভৃতির জন্য অরণ্যাঞ্চল ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে ও জৈববৈচিত্র্যের বিনাশ ঘটছে।

(2) বিদেশ থেকে আগত প্রজাতি: যেকোনো বাস্তুতন্ত্রের নিজস্ব গঠন বৈচিত্র্য থাকে। বাইরে থেকে হঠাৎ কোনো প্রজাতি এলে সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের গঠন বিনষ্ট হয়। এতে স্থানীয় প্রজাতির বৈচিত্র্য ভীষণভাবে হ্রাস পায়। যেমন- পার্থেনিয়াম নামক গুল্ম ও কচুরিপানা বিদেশ থেকে এসে এদেশে স্থাপিত হওয়ায় আমাদের বাস্তুতন্ত্র ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার খরগোশ আমদানি হওয়ার পর থেকে সেখানকার অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ বিনষ্ট হয়ে গেছে।

(3) বন্যপ্রাণী সংহার: বিভিন্ন বন্যজীবকে নির্বিচারে হত্যা করার ফলে সেই প্রজাতিগুলি ক্রমান্বয়ে বিপন্ন হয়ে পড়ছে। হাতির দাঁত, বাঘের চামড়া, গন্ডারের শিং প্রভৃতির জন্য সেই জীবদের এমন হারে হত্যা করা হয়েছে সে বর্তমানে তারা বিলুপ্তপ্রায় বলে গণ্য হচ্ছে। একই কারণে ডোডো পাখি, পর্যটক পায়রা, সমুদ্র গাভী ইত্যাদি প্রাণী সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়েছে।

(4) অত্যধিক হারে উদ্ভিদ-প্রজাতির আহরণ: বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা গুলি তাদের চাহিদা পূরণ করার জন্য বনাঞ্চল থেকে নির্বিচারে বিভিন্ন বৃক্ষলতা ও গুল্ম আহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে জৈব বৈচিত্র্যপূর্ণ বনাঞ্চল থেকে ভেষজ গুণসম্পন্ন গুল্মগুলি সংখ্যায় অতি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।

(5) বিভিন্ন প্রকারের দূষণ: বেশ কিছু প্রজাতি নির্দিষ্ট প্রকারের আবহাওয়া অথবা জল, বায়ু বা মৃত্তিকা দূষণের প্রতি অতি সংবেদনশীল হয়ে থাকে। সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে জলদূষণ, বায়ুদূষণ ও মৃত্তিকা দূষণের মাত্রাও অতি প্রভূত পরিমাণে বাড়ছে। এই দূষণের ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। প্রকৃতিতে প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পিছনে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশককেই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। প্রচন্ড বায়ু দূষণের ফলে পোল্যান্ডের একটি জাতীয় উদ্যানে একবার 43টি প্রজাতির উদ্ভিদ ও তিত প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়। বর্তমানে চিলি জাতীয় পাখির সংখ্যা হ্রাসের কারণও হল প্রকৃতির দূষণ। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, আগামী 30 বছরে পৃথিবীর গ্রীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা 2°C বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে পৃথিবীর 25% জীব বিলুপ্ত হতে পারে।

( 6) পরিকল্পনাবিহীন উন্নয়ন: যেকোনো উন্নয়নমূলক কাজে হাত দেওয়ার আগে পরিবেশের ওপর তার প্রভাব সম্পর্কে সমীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন। ভারতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বাঁধ, জলাধার, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে, যেগুলির পরিবেশগত ঝুঁকি আগে থেকে বিশ্লেষণ করা হয়নি। ফলে এইসব পরিকল্পনা রূপায়ণে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়েছে, কৃষিক্ষেত্র প্লাবিত হয়েছে, আদিবাসীরা বাস্তুভিটে হারিয়েছে এবং অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী চিরকালের জন্য বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

(7) অপর্যাপ্ত আইনি ব্যবস্থা: জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য ভারতে আজ পর্যন্ত সঠিক ও পর্যাপ্ত আইন প্রণয়ন করা হয়নি। ফলে আজও ভারতে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী নির্বিচারে নিধন করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রচলিত আইনগুলিও সঠিক পরিচালন ব্যবস্থার অভাবে প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। ভারতে যতদিন না উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা হবে ও কঠোরভাবে তা বলবৎ করা হবে ততদিন জৈববৈচিত্র্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ অসম্ভব।

(৪) প্রাকৃতিক বিপর্যয়: অতিবৃষ্টি, বন্যা, সুনামি, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প, দাবানল, ভূমিধবস, অগ্ন্যুৎপাত, তুষারপাত ইত্যাদির কারণেও বহু জীব প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটেছে।

6. পরিবেশগত ভারসাম্য বলতে কী বোঝ? উদাহরণসহ এর গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর:- পরিবেশগত ভারসাম্য: পরিবেশ বলতে আমরা আমাদের পারিপার্শ্বিক মানুষজন, জীবজন্তু, জল, মাটি, বাতাস, গাছপালা, ঘরবাড়ি এসবই বুঝি অর্থাৎ, পরিবেশ হল কোনো জীবের চারপাশে অবস্থিত সমস্ত সজীব ও জড় উপাদান দ্বারা গঠিত সামগ্রিক অবস্থা, যা জীবের জীবনকে প্রভাবিত করে। প্রকৃতি সৃষ্ট সজীব উপাদান ও নিজীব উপাদানের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে ওঠে। পরিবেশের প্রধান পাঁচটি উপাদান জল, বায়ু, আলো, মাটি ও জীব পরিবেশে নির্দিষ্ট অনুপাতে থেকে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। পরিবেশের প্রধান উপাদানগুলির কোনো একটি অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেলে বা হ্রাস পেলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। তাই পরিবেশগত ভারসাম্য বলতে বোঝায়- 'পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সামঞ্জস্যপূর্ণ সহাবস্থান'।

পরিবেশবিদদের মতে, পরিবেশগত ভারসাম্য হল একটি তত্ত্ব। এই তত্ত্বের মূল কথা হল- বাস্তুতন্ত্রের উপাদানগুলি ভৌত বা প্রাকৃতিক উপায়ে সাম্যাবস্থা বজায় রাখে। পরিবেশের মধ্যে বিভিন্ন উপাদানের আন্তঃক্রিয়ায় কখনো-কখনো কোনো উপাদানের কিছুটা বৃদ্ধি বা হ্রাস হয়। প্রকৃতির নিয়মেই তা আবার সাম্যাবস্থায় ফিরে আসে। এর ফলে উদ্ভিদকূল এবং প্রাণীকূল পরিবেশের মধ্যে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখে।

পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব পুরোপুরি পরিবেশগত ভারসাম্যের ওপর নির্ভরশীল।

পরিবেশগত ভারসাম্যের গুরুত্ব: পরিবেশে উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব ইত্যাদি জীবগোষ্ঠীর স্বাভাবিক জন্ম, বৃদ্ধি ও মৃত্যু ঘটলেও নিয়মিতভাবে ও সুশৃঙ্খলভাবে পুষ্টি স্তর অনুযায়ী এদের মধ্যে শক্তির নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ ঘটতে থাকে। এর ফলে পুষ্টির প্রতিটি স্তরে জীবগোষ্ঠীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে সমান থাকে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় থাকে।

পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার মধ্যে দিয়ে পরিবেশ তথা প্রকৃতি নিজের সম্পদের ভাণ্ডার পরিপুর্ন করে এবং মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। পরিবেশ তথা প্রকৃতিতে জিনগত ও প্রজাতিগত বৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে ভারসাম্য বজায় থাকে।

কিন্তু মানুষ সম্পদের অনিয়ন্ত্রিত আহরণ ও ব্যবহার করায় পরিবেশ দূষণের সঙ্গে সঙ্গে সম্পদের বিলুপ্তিও ঘটতে থাকে। তখন পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় যার বিরূপ প্রভাব আমাদের ওপর এসে পড়ে। এজন্য পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।

দিনের পর দিন পৃথিবীতে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। মানব পপুলেশনও সমহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের খাদ্য, বাসস্থান, প্রয়োজনীয় সামগ্রী, শিক্ষা প্রভৃতির চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে পরিবেশ থেকে বিপুল সংখ্যক গাছ কেটে সেই স্থানে রাস্তা, বাসগৃহ, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধীরে ধীরে পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে বহু জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। খরা, বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাচ্ছে, সঠিকভাবে পৃথিবীতে মানুষের তথা অন্য সকল জীবের অস্তিত্বের ওপরে পরোক্ষ আঘাত নেমে আসছে। পরিবেশের ভারসাম্য যদি সুস্থির অবস্থায় আনতে না পারা যায়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে জলচক্র, কার্বন চক্র, নাইট্রোজেন চক্র, অক্সিজেন চক্র ও সঠিকভাবে পরিচালিত হবে না। বাস্তুতন্ত্রের খাদ্য শৃঙ্খল ভেঙে পড়বে। সমগ্র জীবকুলকে এর জন্য বিপন্নতায় ভুগতে হবে।

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, পৃথিবীতে মানুষ সহ অন্যান্য জীবের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশগত ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার পেছনে মানুষের অবিবেচক কর্মকাণ্ডই অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী। তাই পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি হল- (1) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা, (ii) জলশিক্ষার প্রসার ঘটানো, (iii) শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগত উন্নয়নের মাধ্যমে মানব সম্পদের স্থিতিশীল উন্নয়ন ঘটানো, (iv) যুদ্ধ থেকে বিরত থাকা ও পারস্পরিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখা, (v) অরণ্য সম্পদ, জল সম্পদ ও জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা, (vi) বায়ুমণ্ডল ও ভূমির সুরক্ষা করা, (vii) পরিবেশ ও বন্য জীব প্রজাতির ক্ষতি না করা, (viii) যথাযথ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বর্জ্য, পদার্থের রূপান্তর ঘটিয়ে পরিবেশেপ্রত্যাবর্তন ঘটানো।

7. জৈববৈচিত্র্যের হটস্পট কাকে বলে? হটস্পট হওয়ার শর্তগুলি কী কী? বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশের জৈববৈচিত্র্যের হটস্পট গুলি সারণির আকারে লেখো।

উত্তর:- জৈববৈচিত্র্যের হটস্পট: জৈববৈচিত্র্যের প্রাচুর্য যুক্ত সর্বাধিক বিপদগ্রস্ত বাস্তুতান্ত্রিক অঞ্চল (ইকোরিজিয়ন)-কে হটস্পট বলে। ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী Norman Myers 1988 খ্রিস্টাব্দে 'The Environmentalist নামক পত্রিকায় 'বায়োডাইভারসিটি হটস্পট' কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন।

হটস্পট হওয়ার শর্ত: (i) হটস্পট হওয়ার প্রাথমিক শর্ত হল এনডেমিজম অর্থাৎ, যে অঞ্চলের কথা বলা হচ্ছে, সেখানকার সব প্রজাতিই যেন প্রাথমিকভাবে স্থানীয় প্রজাতি বা সেখান থেকে উদ্‌ভূত প্রজাতি হয়। (৯) অন্য কোনো অঞ্চল থেকে প্রজাতির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে প্রজাতি সংখ্যা বৃদ্ধি, হটস্পট হওয়ার পূর্বশর্ত হবে না।

কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল (CI) সংখ্যা স্বীকৃত Mittermeier-এর বই Hotspots Revisited" (2004) অনুযায়ী, জীববৈচিত্র্যের হটস্পট স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য দুটি বিশেষ শর্তকে তুলে ধরা হয়েছে- (i) হটস্পট অঞ্চলে অন্তত 1599টি সংবহন কলাযুক্ত এন্ডেমিক উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্ব থাকবে। (ii) এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের (প্রাথমিক বনাঞ্চল) অন্তত 70% প্রজাতিই যেন লুপ্ত হয়ে গিয়ে থাকে।

বিশ্বের পাঁচটি মহাদেশের জৈববৈচিত্র্যের হটস্পটের তালিকা:

(1) আফ্রিকা (০৪): (i) কেপ ফ্লোরিস্টিক রিজিয়ন, (।।) হর্ন অফ আফ্রিকা, (iii) কোস্টাল ফরেস্টস। অফ ইস্টার্ন আফ্রিকা, (iv) ইস্টার্ন অ্যাফ্রোমনটানে, (v) গিনিয়ান ফরেস্টস অফ ওয়েস্ট আফ্রিকা, (vi) স্যাকিউলেন্ট কারু, (vii) মাদাগাস্কার অ্যান্ড দ্য ইন্ডিয়ান ওশান আইল্যান্ডস্, (viii)ম্যাটাল্যান্ড-পোন্ডল্যান্ড-আলবানি।

(2) এশিয়া প্যাসিফিক (13): (i) হিমালয়, (ii) ইন্দোবর্মা, (ii) জাপান, (iv) ফিলিপিনস, (v) ইস্ট মেলানেশিয়ান আইল্যান্ড, (vi) নিউজিল্যান্ড (vii) মাউন্টেনস্ অফ সাউথ-ওয়েস্ট চায়না, (viii) নিউ ক্যালেডোনিয়া (ix) সুন্দাল্যান্ড, (x) ওয়ালেশিয়া, (xi) পলিনেশিয়া-মাইক্রোনেশিয়া, (xii) সাউথ-ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়া, (xiii) ওয়েস্টার্ন ঘাটস অ্যান্ড শ্রীলঙ্কা।

(3) ইউরোপ ও সেন্ট্রাল এশিয়া (04): (1) ককেশাস, (ii) ইরানো-আনাটোলিয়ান, (iii) মেডিটেরিনিয়ান বেসিন, (iv) মাউন্টেনস্ অফ সেন্ট্রাল এশিয়া।

4. নর্থ ও সেন্ট্রাল আমেরিকা (04): (i) ক্যালিফোর্নিয়া ফ্লোরিস্টিক প্রভিন্স, (ii) ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ডস, (Ⅲ) ম্যান্ড্রিয়ান পাইন-ওক উডল্যান্ডস, (iv) মেসোআমেরিকা

5. সাউথ আমেরিকা (05): (i) আটলান্টিক ফরেস্ট, (ⅱ) সেরাডো, (ⅲ) চিলিয়ান উইন্টার রেনফল ভ্যালডিভিয়ান ফরেস্ট, (iv) টাম্বেস-চোকো-ম্যাগডালেন্ডা, (v) ট্রপিকাল অ্যান্ডিজ।

৪. অবলুপ্তি কী? ব্যাখ্যা করো। অবলুপ্তির প্রকারভেদ আলোচনা করো। কোনো প্রজাতির অবলুপ্তি হবার প্রবণতাগুলি কী কী? অথবা, প্রজাতি অবলুপ্তির কারণগুলি লেখো।

উত্তর:- অবলুপ্তি: জীববিদ্যায় অবলুপ্তি বলতে বোঝায় কোনো জীব প্রজাতির পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া অর্থাৎ, উক্ত প্রজাতিটিকে তার স্বাভাবিক বাসস্থানে বা কৃত্রিম সংরক্ষণ স্থানেও দেখা যায় না।

কোনো জীব প্রজাতির অন্তিমতম সদস্যের পৃথিবী থেকে চিরকালের জন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াকেই জীববিদ্যায় অবলুপ্তি বলে। 

আলোচনা ও ব্যাখ্যা: যখন কোনো প্রজাতির ধারা একটিমাত্র জীবিত প্রজাতিসদস্যতে এসে দাঁড়ায়, তখন কার্যত ওই প্রজাতিটির অবলুপ্তি নিশ্চিত হয়ে যায়। ভবিষ্যৎ অবলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ।UCN-এর উদ্যোগে চরম বিপন্ন (critically endangered) জীবকুলকে সংরক্ষণ আওতাভুক্ত করা হয়েছে। আবার red list- যারা বন্য পরিবেশে অবলুপ্ত (extinct in wild) বলে চিহ্নিত তাদের কৃত্রিম পরিবেশে (চিড়িয়াখানা) রেখে সংরক্ষণ করা হয় এবং পরিকল্পনামাফিক প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়। এই কারণে স্বপ্রজননে সক্ষম একটি জীব গোষ্ঠী তৈরি হয় এবং পুনরায় তাদের বন্য পরিবেশে পুনঃস্থাপন (reintroduction) করা যায়।

আবার, খাদ্য-খাদকের সম্পর্কে আবদ্ধ জীবকুলে কোনো একটি বিশেষ জীব প্রজাতির অবলুপ্তি অপর কোনো জীবগোষ্ঠীর অবলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। একে 'পর্যায়ক্রমিক অবলুপ্তি (chains of extinction) বলে। এই ঘটনা 'কী-স্টোন' প্রজাতির অবলুপ্তির ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।

প্রজাতির অবলুপ্তির প্রকারভেদ: প্রজাতির অবলুপ্তি সাধারণত তিনভাবে ঘটতে পারে। এগুলি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল।

(1) প্রাকৃতিক অবলুপ্তি (Natural extinction): পরিবর্তনশীল পরিবেশে, নিজেদের অভিযোজিত করতে না পারায় বহু প্রাণী অবলুপ্ত হয়। যেমন-ডাইনোসর। এই প্রকার অবলুপ্তির হার অত্যন্ত কম।

(2) পুঞ্জ অবলুপ্তি (Mass extinction): প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য বহু প্রজাতির একত্রে পুঞ্জ-অবলুপ্তি (mass extinction) ঘটতে পারে। তুষার যুগে এইজাতীয় অবলুপ্তির অনেক ঘটনা ঘটেছে। লক্ষ লক্ষ বছর পরে এই জাতীয় অবলুপ্তি ঘটে থাকে।

(3) মনুষ্যসৃষ্ট কারণে অবলুপ্তি (Anthropogenic extinction): বহুযুগ ধরে মানুষের অবিবেচক আচরণ এবং কৃষি ও শিল্প বিপ্লবের জন্য বহু সংখ্যক জীব অবলুপ্ত হয়েছে। ফলে জৈববৈচিত্র্যের ব্যাপক ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে যে, এইভাবে চলতে থাকলে একবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে পৃথিবীর বর্তমান প্রজাতিকুলের প্রায় 50 শতাংশই অবলুপ্ত হবে।

অবলুপ্তির প্রবণতা: প্রজাতির যেসব বৈশিষ্ট্যের জন্য তাদের মধ্যে অবলুপ্ত হবার প্রবণতা লক্ষ করা যায়, সেগুলি হল- (i) জীবগোষ্ঠীর ছোটো পপুলেশন আয়তন এবং প্রজননের কম হার (যেমন- নীল তিমি), (ii) দেহের বৃহৎ আকার (যেমন- বাঘ, সিংহ), (iii) নির্দিষ্ট পরিষান পথ ও বাসস্থান (যেমন- নীল তিমি, হুপিং সারস) এবং( iv) নির্দিষ্ট সংকীর্ণ স্থানে বিস্তৃতি (যেমন- দ্বীপের প্রজাতিসমূহ)। (v) জিনগত বৈচিত্র্যের অভাব।

অবলুপ্তির কারণ: ধরে নেওয়া হয়, কোনো প্রজাতি (99%) সৃষ্টির প্রায় 1 কোটি বছর পর স্বাভাবিক ভাবে অবলুপ্ত হবে। কিন্তু কোনো প্রজাতির ক্রম অবলুপ্তি বো অবলুপ্তির বিশেষে কিছু প্রত্যক্ষ বা । পরোক্ষ কারণ থাকে। এই কারণগুলি হল- (1) জীব প্রজাতি যে পরিবেশে থাকে তার পরিবর্তন ঘটলে নতুন পরিবেশে ওই প্রজাতির প্রজননে বিঘ্ন ঘটার কারণে প্রজাতি ক্রমশ বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যায়। (ii) অভিব্যক্তিতে প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে যোগ্য প্রজাতি থেকে যায় আর দুর্বল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। (ii) বসতি খণ্ডীভবন বা বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রজাতি বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। (iv) খাদ্যের অমিল, বিভিন্ন রোগের শিকার হয়েও প্রজাতি অবলুপ্ত হয়ে যায়।(v) পারস্পরিক সহযোগী জীবের বিলুপ্তি কোনো কোনো জীবের অবলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (vi) আবহাওয়ার পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও কোনো কোনো স্থানিক প্রজাতির বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। (vii) অতিরিক্ত বৃক্ষচ্ছেদন, চোরা শিকার, খাদ্যের জন্য বা অন্য কারণে জীব প্রজাতির সংগ্রহ এবং কুসংস্কারের দরুন কোনো প্রজাতির নিধন বিলুপ্তির অন্যতম কারণ।

9. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। 

উত্তর:- বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

সংজ্ঞা ও উদাহরণ: জৈববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করার জন্য কোনো প্রাকৃতিক অঞ্চলকে নির্দিষ্ট ক্রিয়াকর্ম ভিত্তিক কতকগুলি অংশে বিভক্ত করা হলে, তাকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ বলে।

ভারতের বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ গুলির মধ্যে নীলগিরি, সিমলিপাল, মানস, অচানকমার, অমরকণ্টক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্যের তুলনায় বৃহৎ আকারের সংরক্ষিত অংশ যা অনেক সময়ে এক বা একাধিক জাতীয় উদ্যানকে এর অন্তর্ভুক্ত করে নেয়।

বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের বিভিন্ন অঞ্চল: বায়োস্ফিয়ার মুখ্যত তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত। যথা- (i) কোর বা কেন্দ্রীয় অঞ্চল মানুষের প্রবেশ, আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত), (ii) বাফার অঞ্চল (মানুষের নিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকার) এবং (iii) ট্রানজিশন বা শ্যানুপুলেশন অঞ্চল (স্থানীয় বাসিন্দা ও সংরক্ষণে নিযুক্ত কর্মীদের সমান প্রবেশ অধিকার)। ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীনে বর্তমানে 1৪টি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।UCN ক্যাটেগোরি V প্রকৃতির সংরক্ষিত অঞ্চল।

উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব: Man and the Biosphere Programme (যা, MAB নামে পরিচিত)-এর অধীনে 1971 খ্রিস্টাব্দে UNESCO-এর পক্ষ থেকে Biosphere Reserve Programme (BRP) সর্বপ্রথম আরম্ভ করা হয়। বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব মূলত তিনটি।

(1) সংরক্ষণ কার্য: বায়োস্ফিয়ারের অন্তর্গত স্থলভাগ, বাস্তুতন্ত্র ও জীবজগতের প্রজাতিগত ও জিনগত বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ এবং মানুষ ও প্রকৃতির আন্তঃসম্পর্কের উন্নতি সাধন।

(2) উন্নয়ন কার্য: অর্থনৈতিক ও মানব উন্নয়নের লক্ষে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং বাস্তুসংস্থানগত বৈশিষ্ট্য সমূহ সযত্নে বজায় রাখা।

(3) লজিস্টিকস্: আঞ্চলিক, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা, পর্যবেক্ষণ, শিক্ষা এবং তথ্যের আদান প্রদানে সহায়তা।

10. জৈববৈচিত্র্য আইন, 2002-এর উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি লেখো। বায়োডাইভারসিটি ট্রিটি কী?

উত্তর:- জৈববৈচিত্র্য আইন, 2002: ভারতবর্ষে জৈববৈচিত্র্য রক্ষা, সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য 2002 সালে জৈববৈচিত্র্য আইন প্রনয়ণ করা হয়েছে। এই আইনে জীববৈচিত্র্যের গবেষণা, ব্যবসা ও অন্যান্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য কতকগুলি বাধা-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই আইনের উল্লেখযোগ্য বিষয় গুলি 2pi - (i) জৈববৈচিত্র্য হল সব ধরনের বাস্তুতন্ত্রের সকল উৎস থেকে গৃহীত জীব সমূহের বিভিন্নতা এবং প্রজাতির ও বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্র্য। (ii) 'জীব সম্পদ' এর অর্থ হল মানব জীবন বস্তু ব্যতিরেকে উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অণুজীব কিংবা তাদের দেহাংশ, তাদের জিনবস্তু এবং প্রকৃত ও সম্ভাবনাময় ব্যবহারযোগ্য উপজাত বস্তু (মূল্য সংযোজিত উৎপন্ন বস্তু ছাড়া)। (iii)জাতীয় জৈববৈচিত্র্য অথরিটির অনুমোদন ছাড়া ভারতবর্ষে যে-কোনো জীববৈচিত্র্যের ওপর গবেষণা, সমীক্ষা করা যাবে না। (iv) জৈববৈচিত্র্য বিষয়ে গবেষণার ফলাফল জাতীয় জৈববৈচিত্র্য অথরিটির অনুমতি ছাড়া বিদেশের কোনো বস্তু, ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে দেওয়া যাবে না। (v) জৈববৈচিত্র্য আইন প্রয়োগের জন্য জাতীয় জৈববৈচিত্র্য অথরিটি, রাজ্য জৈববৈচিত্র্য পর্ষদ এবং পঞ্চায়েত জৈববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা কমিটি এই তিনটি সাংগঠনিক কাঠামো গঠনের কথা বলা হয়েছে। (vi) জৈববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা কমিটি নিজ নিজ অঞ্চলে সব ধরনের জীববৈচিত্র্যের বিষয়ে নথি প্রস্তুত করে রাজ্যস্তরে জমা দেবে এবং কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা কোনো জৈববৈচিত্র্য বাণিজ্যিক কারণে সংগ্রহ করলে তার ওপর সেস বা লেভি ধার্য করতে পারবে। (vii) কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা জৈববৈচিত্র্য আইন অমান্য করলে পাঁচ বছর জেল অথবা দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা দুটি একসাথে প্রযোজ্য হতে পারে।

বায়োডাইভারসিটি ট্রিটি: 1992 সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে যে বসুন্ধরা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তাকে জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বা Conservation on Biological Diversity (CBD)-এর জন্য 150 টি দেশ ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি দলিলে স্বাক্ষর করে যা বায়োডাইভারসিটি ট্রিটি (Biodiversity treaty) নামে পরিচিত।

এই দলিলের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হল- (i) জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ। (ii) জৈববৈচিত্র্য থেকে প্রাপ্ত সম্পদ আহরণের দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্ত। (iii) জিনগত সম্পদের পক্ষপাতহীন ব্যবহারের সুযোগের ব্যবস্থা।

11. জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কাকে বলে? জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা লেখো।

উত্তর:- জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ: যে পদ্ধতিতে জৈববৈচিত্র্যের পরিমিত ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয় এবং জৈববৈচিত্র্যকে ক্ষতিকারক প্রভাব, অপব্যবহার ও ধ্বংস থেকে রক্ষা করা হয়, তাকে জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বলে। এর ফলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের প্রয়োজন অনুসারে জৈববৈচিত্র্যের ব্যবহার করতে পারে।

জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা: 'ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস' (IUCN) দ্বারা প্রকাশিত 'রেড ডাটা বুক'-এ যে তথ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে, তা থেকে জানা যায় কেবলমাত্র শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের অফুরন্ত উৎস হিসেবে জৈববৈচিত্র্যকে ভাবা ঠিক নয়, বরং জৈববৈচিত্র্য আমাদের স্বাস্থ্য, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান, উৎপাদনমূলক ও অর্থকরী ভূমিকা প্রভৃতি ক্ষেত্রে নানানভাবে আমাদের বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাকে বাড়িয়ে তোলে। জৈববৈচিত্র্য নানানভাবে মানুষের উপকারে আসে, মানুষ বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ, কাঠ, কাগজ, তন্তু, রবার, আঠা, রেজিন, ট্যানিন ইত্যাদি পায়। বিভিন্ন প্রাণী বৈচিত্র্য থেকে মাছ, মাংস, দুগ্ধসামগ্রী, চামড়া, পালক, উল, লাক্ষা, মধু ইত্যাদি সংগ্রহ করে। এ ছাড়া জীবাণুর সুষ্ঠু এবং নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শিল্প সামগ্রী উৎপাদন করা হয়। এক কথায় জৈববৈচিত্র্য অর্থনৈতিকভাবে বহু গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ মানুষকে উপহার দেয়। নীচে জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণের অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা গুলি উল্লেখ করা হল।

(1) শক্তি সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য: শক্তির মূল উৎস সূর্যালোক অর্থাৎ সৌর শক্তি। সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষের সময় সৌরশক্তি শোষণ করে রাসায়নিক শক্তিতে পরিবর্তন করে। উৎপাদকের দেহেই প্রকৃত শক্তি নিহিত থাকে। প্রাকৃতিক নিয়মে ইকোসিস্টেমে ওই শক্তি প্রবাহিত হয়। শক্তিপ্রবাহ অক্ষুণ্ণ রাখতে জৈববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ একান্ত আবশ্যক।

(2) খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য: বিশ্বের খাদ্যভাণ্ডার অটুট রাখতে এবং জীবমণ্ডলে খাদ্যের সুরক্ষা অপরিবর্তিত রাখতে জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। অভাবের সময় খাদ্যভাণ্ডার পুষ্টির উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে। এ ছাড়াও মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত তেল এবং তেল জাতীয় দ্রব্য বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া যায়। এগুলির মধ্যে সরষের তেল, সয়াবিন তেল, নারকেল তেল, বাদাম তেল, রাইস ব্র্যান অয়েল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

(3) জিন ভাণ্ডার অটুট রাখার জন্য: আমরা দৈনন্দিন জীবনে যেসব উদ্ভিদ বা উদ্ভিদাংশকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি, তাদের অসংখ্য বন্য প্রজাতি (wild species) প্রকৃতির বিভিন্ন বনভূমিতে ছড়িয়ে থাকে। সেগুলির মধ্যে উৎকৃষ্ট গুণসম্পন্ন জিন থাকে। ওইসব উদ্ভিদ সংগ্রহ করে প্রযুক্তির মাধ্যমে পছন্দমতো উদ্ভিদে রূপান্তরিত করা সম্ভব। এর থেকে উন্নতমানের এবং উচ্চ ফলনশীল প্রজাতি পাওয়া যাবে। তাই বলা যায়, জিন ভান্ডার অটুট রাখার জন্য জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা দরকার।

(4) চিকিৎসাক্ষেত্রে ওষুধ প্রস্তুতির জন্য: বিভিন্ন প্রকার রোগ-ব্যাধি নিরাময় করার জন্য ভেষজ উদ্ভিদ আমাদের জীবনে অমূল্য সম্পদ হিসেবে কাজ করে। বহু ওষুধ আমরা ব্যাকটেরিয়া, শ্যাওলা, ছত্রাক ও বিভিন্ন সপুষ্পক উদ্ভিদ থেকে পাই। জৈববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব না থাকলে, মানুষের জীবনও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।

(5) মানুষের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য: জৈববৈচিত্র্য অর্থনৈতিকভাবে বহু গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ মানুষকে উপহার দেয়। মানুষ বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ, কাঠ, কাগজ, তন্তু, রবার, আঠা, রেজিন, ট্যানিন ইত্যাদি পায়। বিভিন্ন প্রাণী বৈচিত্র্য থেকে মাছ মাংস, দুগ্ধসামগ্রী, চামড়া, পালক, উল, লাক্ষা, মধু ইত্যাদি সংগ্রহ করে।

(6) পৃথিবীর অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য: জীবমণ্ডলের অস্তিত্ব ও কার্যাবলী কেবলমাত্র একই প্রজাতির জীবের পারস্পরিক ক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের প্রজাতির পারস্পরিক নির্ভরশীলতার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর অস্তিত্ব বজায় রয়েছে। নানান উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির পারস্পরিক নির্ভরশীলতাই প্রকৃতির ভারসাম্য এবং জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

(7) সংস্কৃতিগত ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য: জৈববৈচিত্র্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আমাদের দেশের সাহিত্যে ও সংস্কৃতিতে বন ও বন্য প্রাণীর বিভিন্ন ধরনের বর্ণনা আমরা দেখতে পাই। জৈববৈচিত্র্যকে সুন্দরভাবে বর্ণনার মধ্যে দিয়ে বহু সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে। সেই দিক থেকে বলা যায়, সংস্কৃতিগত ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি।

12. স্বস্থানিক (In-situ) সংরক্ষণ বলতে কী বোঝ? এই সংরক্ষণের উদ্দেশ্য এবং গুরুত্ব লেখো। ইন-সিটু এবং এক্স-সিটু সংরক্ষণের পার্থক্য লেখো।

উত্তর:- স্বস্থানিক (In-situ) সংরক্ষণ: যখন কোনো জীবকে তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকার ও বংশবিস্তার করার সমস্ত সুবিধা প্রদান করে সংরক্ষণ করা হয়, তখন তাকে স্বস্থানিক সংরক্ষণ বা In-situ সংরক্ষণ বলে। সাধারণত কোনো জীবের প্রাকৃতিক বাসস্থান অঞ্চলে অভয়ারণ্য বা জাতীয় উদ্যান নির্মাণ করে তার স্বস্থানিক সংরক্ষণ করা হয়। স্বস্থানিক সংরক্ষণের কয়েকটি উদাহরণ হল (1) সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানে বাঘ সংরক্ষণ। (ii) অসমের কাজিরাঙায় গন্ডার সংরক্ষণ।

স্বস্থানিক সংরক্ষণের উদ্দেশ্য: স্বাস্থানিক সংরক্ষণের উদ্দেশ্য গুলি 2pi - (i) বিপদগ্রস্ত লুপ্তপ্রায় কোনো জীবকে তার প্রাথমিক পরিবেশে অর্থাৎ যে প্রাকৃতিক পরিবেশে সে জন্মলাভ করেছে এবং বেড়ে উঠেছে, সেই পরিবেশে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। (ii) সংরক্ষণের দ্বারা নির্দিষ্ট জীবটি যাতে আপন পরিবেশে পুনরায় সঞ্জীবিত হতে পারে, তার জন্য ব্যবস্থা করা। (iii) বিপন্ন লুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণীদেরকে মানুষের অনুপ্রবেশ এবং ক্ষতিসাধনের হাত থেকে রক্ষা করা।

স্বস্থানিক সংরক্ষণের গুরুত্ব: স্বস্থানিক সংরক্ষণ বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কয়েকটি গুরুত্ব উল্লেখ করা হল- (i) স্বস্থানিক সংরক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, সংরক্ষিত বন ইত্যাদির মাধ্যমে বিপন্ন জীবকে রক্ষা করা হয়। (ii) বিভিন্ন ধরনের সংরক্ষিত অঞ্চলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বাস্তুরীতিকে বজায় রাখা হয়। (iii) বিভিন্ন প্রকার কৃষি জৈববৈচিত্র্য এবং গৃহপালিত প্রজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যায়। (iv) এই প্রকার সংরক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন বিপদগ্রস্ত লুপ্ত প্রজাতির পুনরুদ্ধার ঘটানো যায়। (v) এইপ্রকার সংরক্ষণে প্রজাতির বিবর্তন প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকে এবং সংরক্ষিত জীবগুলি বেঁচে থাকার জন্য প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা অর্জন করে। (vi) এর মাধ্যমে পরিবেশের পুনঃস্থাপন ঘটিয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।