📚বি.এ মেজর ও মাইনর বাংলা:1st Semester:একক-১: সাহিত্যের সংরূপ ও গঠন সংক্রান্ত প্রাথমিক ধারণা(সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য):নাটক📚

 ✍️প্রশ্নমান-২:

প্রশ্ন: নাটক কি বা কাকে বলে?

উত্তর: নাটক সাহিত্যতত্ত্বের একটি পারিভাষিক শব্দ। নাটকের অপর নাম দৃশ্যকাব্য। কোনো দ্বন্দ্বমূলক আখ্যান যদি চরিত্রসমূহের সংলাপের মাধ্যমে মূর্ত হয়ে ওঠে তাহলে তাকে নাটক বলে। নাটকে কাহিনি থাকে তবে, নাটকে কাহিনির চেয়ে মুখ্য চরিত্রসমূহের দ্বন্দ্ব। নাটকের মূল অঙ্গ হচ্ছে কাহিনি, চরিত্র, ঘটনাসমাবেশ ও সংলাপ।

সহজ ভাষায় বললে, মানুষের সুখ-দুঃখকে রঙ্গমঞ্চে স্বাভাবিক অভিনয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করাকে নাটক বলে। নাটক সংলাপ এবং অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চে প্রদর্শিত হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: নাটক কত প্রকার ও কী কী?

উত্তর: বাংলা নাটককে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (১) রসপ্রধান,(২) রূপপ্রধান।

রসপ্রধানকে আবার চারভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- (১) ট্রাজেডি, (২) মেলোড্রামা, (৩) কমেডি, (৪) ফার্স/প্রহসন।

রূপপ্রধানকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- (১) গীতিনাট্য,(২) নৃত্যনাট্য।

প্রশ্ন: নাটকের উপাদান কয়টি ও কি কি?

উত্তর: এরিস্টটলের মতে নাটকের উপাদান ৬টি। - (5) কাহিনি, (২) চরিত্র, (৩) সংলাপ, (৪) দৃশ্য, (৫) ভাবনা, (৬) সঙ্গীত। আবার অনেকের মতে, প্রত্যেক নাটকে প্রধান চারটি উপাদান থাকে। যথা- (ক) কাহিনি বা বিষয়, (২) চরিত্র, (৩) সংলাপ, (৪) ঘটনা-সমাবেশ।

প্রশ্ন: বাংলা নাটক প্রথম অভিনীত হয় কবে?

উত্তর: বাংলা নাটক প্রথম অভিনীত হয় ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে। হেরাসিম লেবেডফ নামে রাশিয়ান এক ব্যক্তি প্রথম The Disguise এবং Love is the best Doctor নামে দুইটি নাটক বাংলায় অনুবাদ করে এদেশের পাত্র-পাত্রীদের দিয়ে অভিনয় করান।

প্রশ্ন: বাংলা নাটক প্রথম মঞ্চে অভিনীত হয় কবে?

উত্তর: বাংলা নাটক প্রথম মঞ্চে অভিনীত হয় ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন: কলকাতার লালবাজারে 'প্লে-হাউজ' এ প্রথম রঙ্গমঞ্চ তৈরি হয় কবে? 

উত্তর: কলকাতার লালবাজারে 'প্লে-হাউজ' এ প্রথম রঙ্গমঞ্চ তৈরি হয় ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন: প্রথম বাংলা মৌলিক নাটক কোনটি?

উত্তর : তারাচরণ শিকদার রচিত 'ভদ্রার্জুন' হচ্ছে প্রথম বাংলা মৌলিক নাটক। এটি ১৮৫২ সালে রচিত হয়। এটি বাঙালি কর্তৃক রচিত প্রথম কমেডি নাটক। এ নাটকের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে অর্জুন দ্বারা সুভদ্রা হরণের কাহিনি। মহাভারত থেকে এ নাটকের কাহিনি সংগ্রহ করা হলেও এ নাটকে বাঙালি সমাজের বাস্তব পরিবেশ অঙ্কিত হয়েছে।

প্রশ্ন: বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক ও আধুনিক নাটক কোনটি? 

উত্তর: বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক ও আধুনিক নাটক হচ্ছে 'শর্মিষ্ঠা'। ১৮৫৯ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই নাটক রচনা করেন। পুরাণের কাহিনি অবলম্বনে এ নাটক রচিত হয়েছে।

প্রশ্ন: বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক ট্রাজেডি নাটক কোনটি? 

উত্তর: বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক ট্রাজেডি নাটক হচ্ছে 'কৃষ্ণকুমারী'। ১৮৬১ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই নাটক রচনা করেন। উইলিয়াম টডের 'রাজস্থান' গ্রন্থ থেকে এ নাটকের কাহিনি সংগ্রহ করা হয়েছে। এ নাটকের বিখ্যাত চরিত্র হচ্ছে-কৃষ্ণকুমারী, মদনিকা, ভীমসিং, বিলাসবতী। 

প্রশ্ন:বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক কমেডি নাটক কোনটি? 

উত্তর: বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক কমেডি নাটক হচ্ছে 'পদ্মাবতী'। ১৮৬০ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই নাটক রচনা করেন। গ্রিক পুরাণের Apple of Discord অবলম্বনে মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই নাটক রচনা করেন। 

প্রশ্ন: মীর মশাররফ হোসেন রচিত নাটকটির নাম ও বিষয়টি কি?

উত্তর: মীর মশাররফ হোসেন রচিত নাটকটি হচ্ছে 'বসন্ত কুমারী'। ১৮৭৩ সালে তিনি এই নাটক রচনা করেন। এ নাটকের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে-বৃদ্ধ রাজা বীরেন্দ্র সিংহের যুবতী স্ত্রী রেবতী সপত্নী পুত্র নরেন্দ্র সিংহকে প্রেম নিবেদন করেন। কিন্তু নরেন্দ্র সিংহ এই প্রেম প্রত্যাখ্যান করেন। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে রেবতী ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এ কারণে সমগ্র রাজ পরিবারটি ধ্বংস হয়ে যায়।

✍️প্রশ্নমান-৫:

১. পৌরাণিক নাটক কাকে বলে? পৌরাণিক নাটকের বৈশিষ্ট্য লেখো। 

উত্তর : ভারতীয় পুরাণের কাহিনী-অবলম্বী বিশেষ আদর্শনুযায়ী ভক্তির সাশ্রয়ী দেবানুগ্রহে মিলনান্তক যে নাটক সেই নাটককে বলা হয় 'পৌরাণিক নাটক'। বৈশিষ্ট্য: (১) ভারতীয় পুরাণের কাহিনী-অবলম্বী হবে। (২) মানবীয় প্রেমের বদলে প্রাধান্য-অবলম্বী হবে। (৩) এই শ্রেণির নাটকে বেচরিত্র অপরিহার্য্য।(৪) এই নাটক বিয়োগান্ত হয় না।(৫) নিয়তিবাদের বিশেষ ভূমিকা।(৬) ধর্মের জয় ঘোষণা।(৭) বিশেষ এক আদর্শ এই নাটকের ভিত্তি।

উদাহরণ : (১) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'সীতা', (২) মন্মথ রায়ের 'কারাগার'। 

২.সামাজিক নাটক কাকে বলে? সামাজিক নাটকের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর: সামাজিক মানুষের কথাই যে নাটকের উপজীব্য সেই নাটককেই সামাজিক নাটক বলে।

বৈশিষ্ট্য: (১) সামাজিক সমস্যা সামাজিক নাটকের প্রথম লক্ষণ। (২) নাট্যকাব্যের সমকালীন সামাজিক সমস্যাই সামাজিক নাটকের গুরুত্ব পেয়ে থাকে।

(৩) এই নাটক হয় বক্তব্য প্রধান। (৪) সমাজ সম্পর্কে নাট্যকাব্যের সুগভীর অভিজ্ঞতা ও মমত্ববোধ প্রকাশিত হয়।

(৫) সামাজিক নাটকের মূলরস হাস্য অথবা করুণ দুটিই হতে পারে।

(৬) সামাজিক নাটকে অনেক সময় আঞ্চলিক সমস্যাও প্রধান হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণ: মন্থথ রায়ের 'জীবনটাই নাটক', উৎপল দত্তের 'অঙ্গার', 'ঘুম নেই'।

৩. রূপক ও সাঙ্কেতিক নাটকের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

'উত্তর: (১) রূপকের কাজ বক্তব্য বিষয়কে গোপন করে তার একটা প্রতিরূপ খাড়া করা। সংকেত বা প্রতীকে অবশ্য আপাত কাহিনীটির অন্তরালে অন্য কোনো কথা থাকে কিন্তু কোন সমান্তর কাহিনীতে থাকে না-থাকে একটা অনুভূতি বা অব্যক্ত সংবেদন।

(২) রূপকে কাহিনী স্পষ্ট বোঝা যায় সাংকেতিক নাটকে বা অন্যান্য আখ্যানধর্মী নাটকে এই স্পষ্টতা মোটেই থাকে না।

(৩) রূপকের আবেদন সম্পূর্ণতা বুদ্ধির কাছে। সাংকেতিক আবেদন বোধের কাছে।

(৪) রূপক নাটকের অর্থ বিশ্লেষণ করা বা তার ব্যাখ্যা করা মোটামুটি ভাবে সহজ।সাংকেতিক নাটক অনুভূতি গ্রাহ্য।

(৫) রূপক নাটক উদ্দেশ্যমূলক। সাংকেতিক নাটক দর্শক গভীর অনুভবের সিংহদ্বারে পৌঁছে যান।

✍️প্রশ্নমান-১০:

১. নাটকের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তর : আমরা নিম্নোক্ত ভাবে নাটকের সংজ্ঞা দিতে পারি-মঞ্চে অভিনেতা অভিনেত্রীদের সাহায্যে মানবজীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা যখন সংলাপের আশ্রয়ে দর্শকের সামনে উপস্থিত করা হয়, তখন তা হয় নাটক।

রঙ্গমঞ্চে অভিনয়ের উপযোগী করে যে সাহিত্য রচিত হয়, তাকে সাধারণত নাটক বলে।

ইংরেজিতে বলা হয়-Drama is the creation and representation of life in terms of theatre.

আধুনিক সুপ্রসিদ্ধ নাট্যকার Granville Barker নাটকের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে বলেছেন-"A play is anything that can be made effective upon the stage of a theater by human agency. And I am not sure that this definition is not too narrow."

'নাটক' শব্দটির মধ্যেই রয়েছে সত্যের ইঙ্গিত। নট, নাট্য, নাটক এ তিনটি শব্দেরই মূল হল নট। আর নট্ এর অর্থ হল নড়াচড়া করা, অঙ্গচালনা করা ইত্যাদি। নাটকের ইংরেজি প্রতিশব্দ Drama-র মধ্যেও একই সত্য আমরা খুঁজে পাই। Drama শব্দের মূলে রয়েছে গ্রিক শব্দ Dracin, যার অর্থ 'to-do' অর্থাৎ কিছু করা।

নাটককে জীবনের দর্পণ বলা হয়। মানব জীবনের প্রতিদিনের ঘটনার শৈল্পিক অভিব্যক্তিই প্রকাশ পায় নাটকে। শৈল্পিক প্রকাশ এই অর্থে যে, প্রতিদিনের গতানুগতিক স্রোতধারায় ঘটে যাওয়া তুচ্ছ, অস্পষ্ট ঘটনাগুলোই সংলাপে মুখর হয়ে, সাহিত্যরসে সিঞ্চিত হয়ে, ভাবব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত হয়ে নাটকে নবরূপ পায়। নাট্যকার মানব জীবনের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরহ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরেন বলে নাটককে বলা হয় জীবনের প্রতিচ্ছবি। শ্রেণি অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার নাটকের বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন রকম। তবে নাটকের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ।

নাটকের বৈশিষ্ট্য: নাটক জীবনেরই সুদৃশ্য রূপায়ণ। দর্শন এবং শ্রবণ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বলে নাটককে একই সাথে দৃশ্যকাব্য ও শ্রব্যকাব্য বলা হয়ে থাকে।

নাটকের মধ্যে নাট্যকারের বলিষ্ঠ জীবনবোধ, জীবনদর্শন ও বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।

সংলাপ এবং নাটকীয়তা হল নাটকের প্রাণ। নাটকের আখ্যানভাগকে ভিত্তি করে কুশীলবদের চরিত্র ও সংলাপের মধ্য দিয়ে নাটকের নাটকীয়তা সৃষ্টি করা হয়। 

একটি সার্থক নাটকে ৫টি অংক এবং প্রতি অংকে ৩টি করে সর্বমোট ১৫টি দৃশ্য থাকে।

অংক ৫টিতে ঘটনা বিন্যাসের ৫টি বিশেষ পর্যায় বা অবস্থা সংস্থাপিত হয়। যেমন- প্রারম্ভ, প্রবাহ, উৎকর্ষ, গ্রন্থিমোচন এবং উপসংহার।

নাটক অভিনয় নির্ভর। অভিনেতা নিজেকে রূপান্তরিত করে নির্দিষ্ট চরিত্রের সাথে এক হয়ে যান। তাই নাটক হচ্ছে Imitation of life |

নাটককে Collective Art বলা হয়ে থাকে। কারণ, এতে একটি আখ্যানভাগের উপজীব্যে রঙ্গমঞ্চের পরিসরে পাত্র-পাত্রীর সংলাপ ও অভিনয়ের মধ্য দিয়ে গতিমান মানব জীবনের শিল্পীত প্রকাশ ঘটে থাকে। নাটকে ঘটনার দ্বন্দু নাটকীয় দ্বন্দ্বে রূপায়িত হয়। তখনই নাটকে আসে দুর্বার গতি।

                             .....................

                           Presented by

     skacademyallinone.blogspot.com