📚বি.এ মাইনর বাংলা:1st Semester: চিকিৎসা সঙ্কট: পরশুরাম: প্রশ্নোত্তর(প্রশ্নের মান-২,৫,১০)📚

✍️প্রশ্নমান-২:

প্রশ্ন: কোন লেখক ছদ্মনামে চিকিৎসা সঙ্কট গল্পটি লিখেছিলেন? গল্পটি কি ধরনের রচনা?

উত্তর : রাজশেখর বসু 'পরশুরাম' ছদ্মনামে চিকিৎসা সঙ্কট গল্পটি লিখেছিলেন। এটি একটি রম্য রচনা।

প্রশ্ন : নন্দবাবু কোথা থেকে কীভাবে বাড়ি ফিরছিল?

উত্তর : নন্দবাবু হগ সাহেবের বাজার থেকে ট্রামে করে বাড়ি ফিরছিল।

প্রশ্ন: নন্দবাবুর বাড়ির ফেরার পথে কী ঘটনা ঘটে?

উত্তর : নন্দবাবু ট্রামে করে বাড়ি ফেরার পথে বিডন স্ট্রীটের একটি গলি থেকে বন্ধু বন্ধুকে বের হতে দেখে উৎফুল্ল হয়ে পড়ে। তখন নিজের দু'হাত বোঝাই বান্ডিল সমেত চলন্ত ট্রাম থেকে নামবার চেষ্টা করতেই নিজের ধুতির কোঁচায় পা জড়িয়ে সে ট্রাম থেকে নীচে পড়ে যায়।

প্রশ্ন: ট্রামের সহযাত্রীদের মন্তব্য শুনে নন্দবাবু কী বলেছিল?

উত্তর: ট্রামের সহযাত্রীদের মন্তব্য শুনে নন্দবাবু তার প্রত্যুত্তরে বলেছিল সে পড়ে গেলেও তার কোন আঘাত লাগেনি।

প্রশ্ন: নন্দবাবুর প্রতিবাদ শুনে এক যাত্রী কী বলে উঠে?

উত্তর: নন্দবাবুর যখন বলে তার আঘাত লাগেনি সেকথা শুনে এক যাত্রী বলে ওঠে 'লাগে নি কি মশায় খুব লেগেছে। দু'মাসের ধাক্কা বাড়ি গিয়ে টের পাবেন'।

প্রশ্ন: নন্দবাবুর দ্বিতীয়বার কেন বিবাহ করা হয়ে ওঠেনি?

উত্তর: নন্দবাবুর দ্বিতীয়বার বিবাহ না হয়ে উঠার প্রধান কারণ ছিল তার আলস্য। সে সিনেমা থিয়েটার ইত্যাদি দেখে ফুটবল ম্যাচ খেলে এবং বন্ধুবর্গের সাথে আনন্দে দিনযাপন করে দিন কাটিয়ে দিচ্ছিল।

প্রশ্ন: ডাক্তার তফাদার সম্বন্ধে কী জানা যায়?

উত্তর: ডাক্তার তফাদার M.D.M.R.A.S ডিগ্রীধারী একজন ডাক্তার। গ্রে স্ট্রীটে নিজের বিশাল বড় এক বাড়ি ছাড়াও তার দু'খানা মোটর এবং একটি ল্যান্ডো গাড়ি ছিল।

প্রশ্ন: নন্দবাবু ডাক্তার তফাদারের বাড়ি গিয়ে কী দেখে?

উত্তর: নন্দবাবু ডাক্তার তফাদারের বাড়ি গিয়ে দেখে ডাক্তারবাবু তখন একটি রোগীর পরীক্ষা করছে। রোগীটি স্থূলকায় এক মারোয়াড়ী ব্যক্তি। নগ্নগায়ে সে দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তারবাবু একটি ফিতা দিয়ে তার ভুঁড়ির পরিধি মাপছে।

প্রশ্ন: ডাক্তার তফাদারের মারোয়ারী রোগীকে পরীক্ষা করার ধরন কেমন ছিল?

উত্তর: ডাক্তার তফাদার মারোয়ারী রোগীর ভুঁড়ির পরিধি মেপে তাকে বলে তার ভুঁড়ি সওয়া ইঞ্চি বেড়ে গেছে। এরপর তার হাতের নাড়ী পরীক্ষা করে বলে নাড়ির স্পন্দন খুব ভাল আছে। জিভ দেখে রোগীকে বলে অসুস্থতার সামান্য কারণ আছে। ফলে আগামীদিন আবার তাকে আসতে হবে।

প্রশ্ন: ডাক্তার তফাদার নন্দবাবুর কি অসুখ হয়েছে বলে জানায় এবং এই রোগের চিকিৎসা তিনি কীভাবে করবেন বলে?

উত্তর: ডাক্তার তফাদার নন্দবাবুকে বলে তার সেরিব্রাল টিউমার উইথ স্ট্যাংগুলেটেড গ্যাংগলিয়া হয়েছে।এই রোগের চিকিৎসায় ডাক্তারবাবু প্রথমে ট্রিফাইন নামক যন্ত্রের সাহায্যে নন্দবাবুর মাথার খুলি ছিদ্র করে তার ঘাড় চিরে যেসব নার্ভ জট পাকিয়ে গেছে সেইসব নার্ভের জট ছাড়াবে।

প্রশ্ন: ডাক্তার তফাদারের ভিজিট কত ছিল?

উত্তর: ডাক্তার তফাদারের ভিজিট বত্রিশ টাকা ছিল।

প্রশ্ন: ডাক্তার তফাদার নন্দবাবুকে কী উপদেশ দেয়?

উত্তর : ডাক্তার তফাদার নন্দবাবুকে বলে সে যেন ভাত ডাল ইত্যাদি বিশেষ একটা না খায়। এগ-ফ্লিপ, বোনম্যারোর সুপ, চিকেন স্টু ইত্যাদি খাওয়াতে অসুবিধা নেই। বরফ জল বেশী মাত্রায় খেতে বলে। এরপর নন্দবাবুকে বলে অন্য আরেকজন ডাক্তারের সাথে কনসলটেশনের ব্যবস্থা করা যাবে। সাত দিন পর আবার নন্দবাবুকে ডাক্তারের চেম্বারে আসতে হবে।

প্রশ্ন: ডাক্তার তফাদারের কথা শুনে বন্ধুবাবু কি বলে?

উত্তর: বন্ধুবাবুর ডাক্তার তফাদারের পরামর্শ বিন্দুমাত্র পছন্দ না হওয়াতে সে বলে তার একটুও ইচ্ছা ছিল না নন্দবাবু এই ডাক্তারের কাছে যায়। সে আরও বলে মারোয়ারীর পেটে হাত বুলিয়ে ডাক্তারি করার পর এখন নন্দবাবুর মাথায় তুরপুন চালাবে।

প্রশ্ন: ডাক্তার তফাদারকে দেখিয়ে আসার পর বন্ধুরা নন্দবাবুকে কী পরামর্শ দিতে থাকে?

উত্তর: ডাক্তার তফাদারের অস্বাভাবিক কথাবার্তা শুনে ষষ্ঠীবাবু বলে তাদের পাড়ার তারিণী কবিরাজকে দেখান যেতে পারে। গুপীবাবু সেই প্রস্তাব খন্ডন করে বলে নন্দবাবুর মাথায় যদি বাস্তবিক কোন গণ্ডগোল হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথ চিকিৎসাই যুক্তিসঙ্গত। নিধুবাবু এতে প্রবল আপত্তি জানিয়ে পরামর্শ দেয় কবিরাজী চিকিৎসাই ভাল।

প্রশ্ন: গল্পে নেপাল ডাক্তারের চেম্বারের বর্ণনা কেমন ছিল?

উত্তর: নন্দবাবু হোমিওপ্যাথ নেপাল ডাক্তারের বাড়ি এসে দেখে একটি বিশাল ঘরের মেঝেতে ফরাশ পাতা রয়েছে। ঘরের চারিদিকে স্তূপীকৃত বই সাজান। নেপালবাবু ঘরের মধ্যে বসে রোগীর অপেক্ষা করছে। তার মুখে গড়গড়ার নল। ঘরটি তার ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে রয়েছে।

প্রশ্ন : তফাদার ডাক্তারের কথা শুনে তার পরিপ্রেক্ষিতে নেপাল ডাক্তার নন্দবাবুকে কী বলে?

উত্তর: তফাদার ডাক্তারের পরামর্শ শুনে নেপাল ডাক্তার যতপরনাই বিরক্তি দেখিয়ে নন্দবাবুকে বলে ডাক্তার তফাদারের মস্তিষ্ক গোবর ভরা আছে। শুধু তাই নয় তার টুপির ভিতর শিঙ জুতোর ভিতর ক্ষুর এবং প্যান্টের ভিতর ল্যাজ রয়েছে।

প্রশ্ন: নেপাল ডাক্তার ক্রমান্বয়ে নন্দবাবুকে কী কী জিজ্ঞাসা করে?

উত্তর: নেপাল ডাক্তার নন্দবাবুকে ক্রমান্বয়ে জিজ্ঞাসা করে তার ক্ষিদে, ঘুম, মাথা ধরা, পেট কামড়ান ইত্যাদি বোধ হয় কিনা।

প্রশ্ন: পেট কামড়ানোর কারণ হিসাবে নন্দবাবু নেপাল ডাক্তারকে কী বলেছিল?

উত্তর: পেট কামড়ানর কারণ হিসাবে নন্দবাবু নেপাল ডাক্তারকে বলেছিল সে কাবলী মটরভাজা খেয়েছিল।

প্রশ্ন: নেপাল ডাক্তার নন্দবাবুক পরীক্ষা করার পর কী বলে?

উত্তর: নেপাল ডাক্তার নন্দবাবুকে পরীক্ষা করার পর বলে আগে তার শরীর থেকে অ্যালোপাথিক ওষুধের বিষক্রিয়া দূর করতে হবে। এরপর তাকে ওষুধ দিয়ে সাতদিন পর আসল চিকিৎসা শুরু করবার উদ্দেশ্যে আসতে বলে।

প্রশ্ন: নেপাল ডাক্তার পথ্যর জন্য কী ধরনের খাবার খেতে বলে?

উত্তর: নেপাল ডাক্তার পথ্য হিসাবে নন্দবাবুকে পরামর্শ দেয় তার দু'বেলা রুটি আর মুগের ডালের জুস খাওয়া চলবে। ভাত এবং মাছ মাংস একেবারেই চলবে না। গরম জল খেতে হবে। কোনপ্রকার সেবন করা যাবে না। সাথে স্নানও বন্ধ রাখতে হবে।

প্রশ্ন: নেপাল ডাক্তারকে সর্বসাকুল্যে নন্দবাবু কত টাকা দিয়েছিল?

উত্তর: নন্দবাবুর ডাক্তারের ফী বত্রিশ টাকা এবং ওষুধের জন্য চার টাকা সর্বসাকুল্যে ছত্রিশ টাকা নেপাল ডাক্তারকে দিয়েছিল।

প্রশ্ন: নেপাল ডাক্তারের পর নন্দবাবু কোন চিকিৎসকের কাছে যায়? এবং তার নাম কি ছিল?

উত্তর: নেপাল ডাক্তারের পর নন্দবাবু কবিরাজী চিকিৎসকের কাছে যায়। তার নাম ছিল তারিণী কবিরাজ।

প্রশ্ন: নন্দবাবু তারিণী কবিরাজের চেম্বারে গিয়ে তাকে কী অবস্থায় দেখে?

উত্তর: নন্দবাবু তারিণী কবিরাজের বাড়ি গিয়ে দেখে শীর্ণ শরীরের ষাট বছরের গোঁফ কামানো তারিণী কবিরাজ শরীরে তেল মেখে আটহাতি ধুতি পরে একটি চেয়ারের উপর উবু হয়ে বসে তামাক খাচ্ছে।

প্রশ্ন: তারিণী কবিরাজের ঘরখানি কীরকম ছিল?

উত্তর: তারিণী কবিরাজের ঘরে একটি তক্তাপোশ ছিল। তক্তাপোশের উপর তেলচিটে একটি পাটি ও কয়েকখানি মলিন তাকিয়া রাখা ছিল। দেওয়ালে ছিল দুইটি ওষুধের আলমারি।

প্রশ্ন : তারিণী কবিরাজ নন্দবাবুকে নিজের চিকিৎসা করার কোন গল্প শোনায়?

উত্তর : তারিণী কবিরাজ নন্দবাবুর কাছে গল্প করে তার মামার উরুতে কিছু অসুবিধা। ঘটার দরুন সিভিল সার্জেন তার পা কেটে বাদ দিয়ে দেয়। তিনদিন অচৈতন্য। থাকার পর মামার জ্ঞান ফিরলে সে নিজের পায়ের খোঁজ করে এবং তারিণী কবিরাজকে ডেকে দিতে বলে। তারিণী কবিরাজ এসে তাকে চ্যবনপ্রাশ খাইয়ে দেয়। 

প্রশ্ন: তারিণী কবিরাজ চিকিৎসার করার আগে নন্দবাবুর কাছে কী কী জানতে চায়?

উত্তর: তারিণী কবিরাজ চিকিৎসা শুরুর প্রারম্ভে নন্দবাবুর কাছে জানতে চায় তার কোন কঠিন ব্যামো হয়েছিল কিনা। সকালে বমি ও রাতে তার ঘুম হয় কিনা। 

প্রশ্ন: তারিণী কবিরাজ তার চিকিৎসায় নন্দবাবুকে পথ্যর জন্য কি পরামর্শ দেয়?

উত্তর : তারিণী কবিরাজ নন্দবাবুকে পথ্যর জন্য বলে লেবুর রস ও মধু মিশ্রিত মুড়ি খেতে হবে। ভাত এবং লবন খাওয়া চলবে না। পরিবর্তে ওলসিদ্ধ, কচু সিদ্ধ, মাগুর মাছের ঝোল খাওয়া যেতে পারে। গরম জল ঠান্ডা করে খেতে হবে।

প্রশ্ন: কবিরাজ নন্দবাবুর কী ব্যামো হয়েছে বলে?

উত্তর: কবিরাজ বলে নন্দবাবুর উদুরি অর্থাৎ ঊর্ধ্বশ্লেষ্মা হয়েছে।

প্রশ্ন: কবিরাজ দেখিয়ে আসার পর নন্দবাবুর বন্ধুরা কে কী বলে?

উত্তর: কবিরাজ দেখিয়ে আসার পর নিধু ব্যাক্রোত্তিতে জানতে চায় কবিরাজের সাধ মিটেছে কিনা। গুপী বলে এসব বাজে চিকিৎসা না করিয়ে চেঞ্জে যেতে। বন্ধু বলে বিপত্নীক নন্দবাবুর এবার বিবাহ করা উচিত।

প্রশ্ন: বন্ধু বন্ধু বিবাহের কথা বললে নন্দবাবু কী বলে?

উত্তর: বিবাহের কথা শুনে নন্দবাবু হতাশামাখা স্বরে বলে এখন তার থাকা না থাকার ঘটনা যে কোন সময়েই ঘটতে পারে। এই বয়সে অনর্থক পরিবার এনে কোন লাভ নেই। কচি বয়সের বৌ এনে অনর্থক এক জঞ্জাল জোটান হবে।

প্রশ্ন: ষষ্ঠীবাবু বিবাহ সম্বন্ধে কী ধারণা পোষণ করত?

উত্তর: নতুন করে বিবাহের কথা প্রসঙ্গে ষষ্ঠীবাবু বলে পরিবার গাড়ির মতো। দুটিকেই ঘরে সহজে নিয়ে আসা যায় কিন্তু গাড়ির যেমন নিত্যদিনের মেরামতের খরচ যোগাতে প্রাণান্তকর অবস্থা হয় পরিবারের ক্ষেত্রেও একই অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। কোনসময় স্ত্রীর অম্লশূল গ্যাসের বেদনা, কোনসময় ছেলের ঠান্ডা লেগে জ্বর ইত্যাদি।

প্রশ্ন: হাকিমের নাম কী ছিল এবং সে কোথায় থাকত?

উত্তর : হাকিমের নাম ছিল হাজিক-উল-মুলুক বিন লকমান নারুল্লা গজন ফরুল্লাঅল হাকিম য়ুনানি। সে লোয়ার চিতপুর রোডে থাকত।

প্রশ্ন: হাকিম সাহেবকে দেখিয়ে আসার পর নন্দবাবু কী করে?

উত্তর: হাকিম সাহেবকে দেখিয়ে আসার পর নন্দবাবু বিষন্ন মনে বৈঠকখানার দরজা বন্ধ রাখা। সারা রাত বিছানায় অনিদ্রায় কাটিয়ে ভোর চারটে সময় নন্দবাবু প্রতিজ্ঞা করে আর কোনো বন্ধুর পরামর্শ সে গ্রহণ করবে না।

প্রশ্ন: নন্দবাবুর কী প্রতিজ্ঞা করে?

উত্তর: হাকিমকে দেখিয়ে আসার পরদিন ভোরে নন্দবাবু ট্যাক্সিতে যেতে যেতে প্রতিজ্ঞা করে ট্যাক্সির মিটার একটাকা হওয়ামাত্র সে সেখানেই গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়বে এবং চোখের সামনে কবিরাজ, হাতুড়ে, চাঁদসী, আলোপ্যাথ, হোমিওপ্যাথ যেই চিকিৎসক পড়বে তাকে দিয়েই নিজের চিকিৎসা করাবে।

প্রশ্ন: বৌবাজারে গাড়ি থেকে নামার পর কী হয়?

উত্তর: বৌবাজারে গাড়ী থেকে নামার পর নন্দবাবু একটি সাইনবোর্ড দেখতে পায়। যেখানে লেখা ছিল 'ডাক্তার মিস বি মল্লিক'। নন্দবাবু মিস শব্দটি বিশেষ লক্ষ্য না করে ঘরের পর্দা সরিয়ে ডাক্তারের ঘরে ঢুকে পড়ে।

প্রশ্ন: লেডি ডাক্তারের নাম কি এবং সে কোথায় থাকত?

উত্তর: লেডি ডাক্তারের নাম ছিল বিপুলা মল্লিক। সে একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ছিল এবং বৌবাজারে থাকত।

প্রশ্ন: লেডি ডাক্তার নন্দবাবুর কাছে কী জানতে চান?

উত্তর: লেডি ডাক্তার নন্দবাবুর কাছে তার পূর্বের যাবতীয় চিকিৎসা সংক্রান্ত ইতিহাস শুনে নন্দবাবুর কাছে জানতে চায় তার বাড়িতে কে কে আছে, কী কাজ করে, মোটর গাড়ি ইত্যাদি আছে কিনা।

প্রশ্ন: মিস মল্লিকের চিন্তান্বিত হাবভাব দেখে নন্দবাবু তাকে কি জিজ্ঞাসা করে? উত্তর: মিস মল্লিকের চিন্তান্বিত হাবভাব দেখে নন্দবাবু তার কাছে প্রশ্ন করে সে টিউমার নাকি কালাজ্বর নাকি পাথুরী নাকি উদরী নাকি হাইড্রফোবিয়া কোন অসুখটিতে আক্রান্ত।

প্রশ্ন: মিস মল্লিক নন্দবাবুকে অসুখের ব্যাপারে কী বলে?

উত্তর: নন্দবাবুর কাছে বহুবিধ অসুখের নাম শুনে ডাক্তার মিস মল্লিক তাকে বলে । নন্দবাবু যেসব অসুখের কথা চিন্তা করছে তার কোনটিই নন্দবাবুর হয়নি। তার একজন অভিভাবকের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

প্রশ্ন : গল্পের শেষ পর্যায়ে নন্দবাবু ও লেডি ডাক্তারের কী কথোপকথন হয়?

উত্তর: লেডি ডাক্তার নন্দবাবুকে যখন বলে যে তার কোন অসুখ হয়নি তখন নন্দবাবু বিচলিত বোধ করে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে তবে কি সে পাগল হয়ে গেছে। মিস মল্লিক নন্দবাবুর এহেন কথা শুনে খুব হেসে উঠে বলে সে তো আগেই বলে দিয়েছে যে নন্দবাবুর যত্নাদি নেবার জন্য বাড়িতে উপযুক্ত একজন লোকের প্রয়োজন।

প্রশ্ন: গল্পের শেষ পর্যায়ে কী দেখি?

উত্তর: ডাক্তার মিস মল্লিকের কাছে চিকিৎসার ব্যাপারে নন্দবাবু প্রথমে সাতদিন তারপর দুদিন এরপর সপ্তাহের প্রতিটা দিনই যাতায়াত শুরু করে। এরপর একদিন বয়স্কা পিসীমাকে পূণ্যির জন্য কাশীধামে রওনা করিয়ে নিজে বাজারে গিয়ে জমিয়ে বাজার করে জরিপাড় সূক্ষ্ম ধুতি ও সিল্কের পাঞ্জাবী পরে বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে যত্নসহকারে খাওয়ালো। মিসেস বিপুলা মিত্র ও নন্দবাবুর বিবাহের পর ডাক্তার মিত্র শুধু নিজের স্বামী ছাড়া অন্য কোন মানুষের চিকিৎসা করে না।

✍️প্রশ্নমান-৫:

প্রশ্ন: নন্দবাবু ট্রাম থেকে পড়ে যাবার পর ট্রামযাত্রীরা কীভাবে তাকে সমবেদনা জানিয়েছিল?

উত্তর : নন্দবাবু ট্রাম থেকে পড়ে যেতে শোরগোল ওঠে এবং ট্রাম শব্দ করে থেমে যায়। কিছু যাত্রী ট্রাম থেকে নেমে নন্দবাবুকে তুলে ধরে দাঁড় করায়। এই অবস্থা দেখে

কিছু যাত্রী যারা ট্রামের ভিতর ছিল তারা ট্রামের জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে নন্দবাবুকে সমবেদনা জানাতে থাকে। কেউ জানতে চায় তার দুটি পা কাটা গেছে কিনা। আবার কী কেউ বলে পড়ে গিয়ে নন্দবাবু বেশ আঘাত পেয়েছে তাই তাকে ক্ষানিকটা গরম দুধ ৮ি৯ খাওয়ানো হোক। কেউবা বলে তার মৃগী আছে কেউবা বলে সে ভির্মি খেয়েছে। কেউ আবার টিপ্পনী কেটে বলে নন্দবাবু মাতাল। কারো বা মন্তব্য শোনা যায় নন্দবাবু শহুরে - আদবকায়দা না জানা পাড়াগাঁয়ের এক অশিক্ষিত মানুষ।

প্রশ্ন: এই গল্পে নন্দবাবুর সম্বন্ধে কী জানা যায়?

উত্তর: এই গল্প পড়ে নন্দবাবুর সম্বন্ধে জানা যায় সে বছর চল্লিশের শারীরিক দিক থেকে দৈর্ঘ্যে প্রস্থে খর্বাকার ঈষৎ স্থূলাকৃতি একজন মানুষ। নন্দবাবুর মৃত পিতা পশ্চিমে কমিসারিয়েটে চাকরি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিল। সেই অর্থ মৃত্যুকালে সে তার একমাত্র সন্তান নন্দবাবুকে দিয়ে যায়। এছাড়াও অর্থ সহ কলকাতায় একটি বিশাল বাড়ি প্রচুর আসবাব এবং কোম্পানির কাগজপত্রও পুত্রের জন্য সে রেখে যায়। নন্দবাবুর অল্পবয়সে বিবাহ হলেও বিবাহের একবছর অতিক্রান্ত না হতেই স্ত্রী শে পরলোকগমন করে। সেই থেকে তিনি বিপত্নীক। তার মাও বহুদিন মৃতা। বাড়িতে নিজের জন বলতে একমাত্র বয়স্কা পিসী ছাড়া নন্দবাবুর আর দ্বিতীয় কেউ ছিল না।

প্রশ্ন: নন্দবাবুর বাড়ির আড্ডাখানায় বন্ধুরা তাকে চিকিৎসা নিয়ে কী পরামর্শ দিয়েছিল?

উত্তর: নন্দবাবুর ট্রাম থেকে পড়ে যাবার পর ভিন্ন ভিন্ন বন্ধুরা তাকে চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্নরকম পরামর্শ দিতে শুরু করে। যেমন গুপীবাবু বলে শরীরের উপর অযত্ন করা ঠিক নয়। শীতকালে ঐপ্রকার মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া ভাল লক্ষণ নয়। নন্দবাবুর শরীর কাহিল হয়েছে। ফিজিশিয়ান ডাক্তার তফাদার নন্দবাবুর বাড়ির কাছেই থাকে। নন্দবাবুর আগামীকাল সকালেই সত্তর তাকে গিয়ে দেখান উচিত। এই কথা শুনে অন্য বন্ধু বন্ধু বলে তার মতে নেপালবাবু একটু তিরিক্ষি মেজাজের হলেও একজন বিচক্ষণ হোমিওপ্যাথ ডাক্তার। তাকেই নন্দবাবুর দেখান ভাল। এবার ষষ্ঠীবাবু বলে উঠে এত অবেলায় কেউ ট্রামে চড়লে তাকে আছাড় তো খেতেই হবে। নন্দবাবুর পয়সার অভাব নেই কাজেই পুরনো আমলের আসবাব গাড়ি ইত্যাদি ছেড়ে তার এবার স্ফূর্তি করা শেখা দরকার।

প্রশ্ন: নেপাল ডাক্তারকে দেখাবার পর কি হল তা লেখো।

উত্তর: নন্দবাবুকে দেওয়া নেপাল ডাক্তারের পরামর্শ বন্ধু নিধুর ভাল না লাগাতে সে বলে মিছিমিছি এভাবে পয়সা নষ্ট করার কোন অর্থই হয় না। সে আগেই জানত নেপাল ডাক্তার বড্ড চালাক ব্যক্তি। বন্ধু গুপী তখন বলে সে আপিস থেকে জানতে পেরেছে ফরক্কাবাদ থেকে একজন হাকিম এসেছে। সেই হাকিম খুব প্রসিদ্ধ। রাজা মহারাজারা তার কাছে চিকিৎসা করাচ্ছে। নন্দবাবু তার কাছে গেলে মন্দ হয় না। একথা আবার বন্ধু ষষ্ঠীবাবুর মনঃপুত না হওয়াতে সে বলে হাকিমের ওষুধের অর্থই শরবৎ। শীতকালে ওসব না খাওয়াই ভাল। এরচেয়ে কবিরাজী চিকিৎসা শ্রেয়।

প্রশ্ন: নন্দবাবু হাকিমের কাছে উপস্থিত হলে তাদের মধ্যে কী কথাবার্তা হয়? 

উত্তর : নন্দবাবু হাকিমকে দেখাতে গেলে একজন ফেজ টুপি ও লুঙ্গিপরা লোক তাকে অভর্থনা জানিয়ে বলে সে হাকিমের মীরমুন্সী। তাকে নন্দবাবুর কী অসুখ হয়েছে জানালে সে তা লিখে হাকিম সাহেবের কাছে অসুখ সংক্রান্ত খবর পাঠিয়ে দেবে। এই কথা শুনে নন্দবাবু মুন্সীকে বলে তার কী অসুখ হয়েছে তা জানতে এবং সেই সংক্রান্ত চিকিৎসা করাতেই তার হাকিম সাহেবের কাছে আসা। তখন মুন্সী বলে উপসর্গ কী সেইটির ব্যাপারে যৎসামান্য হলেও কিছু জানাতে হবে। যেমন জ্বর, প্লীহা, রাতকানা, অর্শ (বাওআসির) ইত্যাদি। মুন্সীর থেকে অসুখের উদাহরণ শুনে নন্দবাবু বলে উঠে তার ওইসব রোগ কিছুই হয়নি শুধু প্রাণ ধড়ফড় করে। মুন্সী তার রোগ বুঝতে পেরে এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করে সে মোহর এনেছে কিনা। কারণ হাকিম সাহেব মোহর ছাড়া প্রণামী বা নজরানায় কিছু গ্রহণ করে না। নন্দবাবুর অবাক হওয়া চেহারা দেখে মুন্সী জানায় নন্দবাবুর কাছে মোহর না থাকলে কোন অসুবিধা নেই। সে পঁয়তাল্লিশ টাকা ও বাট্টার জন্য দু'টাকা এবং রেশমি রুমালের জন্য দুটাকায় বিনিময়ে তার ব্যবস্থা করে দেবে। দরবারে গিয়ে নন্দবাবুকে প্রথমে হাকিম সাহেবকে বন্দেগি জনাব বলে রেশমী রুমালের উপর মোহর প্রণামী রেখে তার সামনে পেশ করতে হবে।

প্রশ্ন: নন্দবাবু হাকিম সাহেবের দরবারে গিয়ে কী দেখে?

উত্তর: নন্দবাবু হাকিম সাহেবের দরবারে পৌঁছে দেখে বিশালাকৃতি একটি ঘরে গালিচা পাতা রয়েছে। গালিচার একপাশে মসনদ বা সিংহাসন পাতা। সেই সিংহাসনের উপর তাকিয়ায় হেলান দিয়ে বসে হাকিম সাহেব ফরসিতে ধূমপান করছে। বাবরি চুলের অনুমানিক পঞ্চান্ন বছরের হাকিম সাহেবের গোঁফ ছোট করে ছাটা। বুক পর্যন্ত লম্বা দাড়ির গোড়ার দিকটি সাদা, মধ্যভাগ লাল এবং একেবারে শেষভাগটি নীল রঙে রঞ্জিত। সাটিনের চুড়িদার ইজার সাথে বিশাল জোব্বা এবং মাথায় জরির কাজ করা টুপি পরে আছে সে। তার সামনে পিকদান, পানদান এবং আতরদানা রাখা রয়েছে। জনা চার-পাঁচেক পারিষদ হাকিম সাহেবের সামনে বসে তার প্রতিটা কথার অন্তে 'কেয়াবাৎ' বলছে। চাপদাড়িওয়ালা একটি লোক ঘরের কোণে বসে টুং-টাং শব্দে বিকট অঙ্গভঙ্গি করে সেতার বাজিয়ে চলেছে।

প্রশ্ন: হাকিম সাহেবের নন্দবাবুকে পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর: হাকিম সাহেব প্রথমে নন্দবাবুর মাথা পরীক্ষা করার জন্য বলে 'সর লাও' অর্থাৎ নন্দবাবুর মাথা পরীক্ষা করতে হবে। নন্দবাবু মাথা এগিয়ে দিলে হাকিম সাহেব তা টিপে পরীক্ষা করে বলে 'হড্ডি পিলপিলায় গয়া'। মুন্সী নন্দবাবুকে সে কথার বাংলা তর্জমায় জানায় নন্দবাবুর মাথার হাড় একেবারে নরম হয়ে গেছে। এরপর হাকিম সাহেব নিজের দাড়িতে আঙুল চালিয়ে বলে 'সুর্মা সুর্খ'। একথা শোনার পর হাকিম সাহেবের একজন লোক নন্দবাবুর চোখে সুর্মা লাগিয়ে দিয়ে যায়। মুন্সী বলে এতে নন্দবাবুর চোখ ঠান্ডা থাকবে রাতে ভাল ঘুম হবে। হাকিম এবার বলে ওঠে 'রোগন বব্বর'। মুন্সী বলবর নামে কারোকে ডেকে বলে অস্তরা নিয়ে আসতে। মুন্সীর কথা শুনে একজন নাপিত এগিয়ে এসে চট করে নন্দবাবুর মাথার মাঝখানে চৌকাকৃতির চুল ছেঁটে দিয়ে সেখানে দুর্গন্ধযুক্ত একটি প্রলেপ লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়। নন্দবাবু এই কান্ডে প্রবল আপত্তি জানালে হাকিম সাহেবের মুন্সি বলে নন্দবাবু কেন ঘাবড়াচ্ছেন। ওই প্রলেপটি খুব দামী বব্বরী সিংহীর মাথার ঘি।

প্রশ্ন: চিকিৎসা সংকট গল্পে আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা অন্তসারশূন্য চিত্রফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।

উত্তর: চিকিৎসা সংকট আমাদের বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার একটি জীবন্ত দলিল। আমাদের দেশ চিকিৎসা ব্যবস্থার যে অবস্থা তাই যেন পরশুরাম লেখনির মাধ্যমে সুন্দর তুলিকার সুনিপুণ টানে অঙ্কন করেছেন।

আলোচ্য গল্পে দেখা যায় নন্দবাবু ট্রাম থেকে নামতে পায়ে বেঁধে পরে যান। ফলে সহযাত্রীরা তাকে সেবা শুশ্রূষা করতে থাকে। ইতিমধ্যে নন্দবাবুর বন্ধু বন্ধুবাবু সেখানে এলে ট্রামটা চলে যায়। যদিও নন্দবাবুর কোথাও তেমন লাগেনি তথাপি তাকে চিকিৎসার জন্য সবাই তৎপর হয়।

কেউ তাকে হোমিওপ্যাথি দেখাতে বলে, আবার কেউ বা এলোপ্যাথি, কেউবা কবিরাজী দেখাতে বলে। নন্দবাবু একে একে হোমিওপ্যাথি, এলোপ্যাথি ও কবিরাজী ডাক্তার দেখায়। কিন্তু কেউই তার রোগ ধরতে পারে না।এভাবেই গল্পকার অসাধারণ দক্ষতার গুণে আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। 

প্রশ্ন: চিকিৎসা সংকট গল্পে নন্দবাবু ও মিস মল্লিকের যে প্রেমের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে তা আলোচনা করো।

উত্তর: চিকিৎসা সংকট গল্পের কেন্দ্রিয় চরিত্র নন্দবাবু। সে সাদামাটা সহজ সরল মানুষ। ট্রাম থেকে নামতে সে পড়ে যায়, ফলে সবাই তার সেবা শুশ্রুষা করতে থাকে।

বন্ধুদের পরামর্শে হোমিওপ্যাথি, এলোপ্যাথি, কবিরাজী, হাকিম প্রায় সমস্ত ডাক্তারই দেখানো হয়ে গেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে শেষপর্যন্ত নন্দবাবু ঠিক করে যে এক টাকা দিয়ে ট্যাক্সির মিটারে যতদূর যাওয়া যায় ততদূর গিয়ে নেমে পরবেন এবং নিকটবর্তী যে ক্লিনিক পরবে সেখানেই দেখাবেন। ঠিক তাই করলেন এমন সময় দেখতে পেলেন একটি সাইনবোর্ড তাতে লেখা আছে-ডাক্তার মিস. বি. মল্লিক। কিন্তু নন্দবাবু মিস শব্দটুকু দেখেনি। তাই সে সরাসরি চেম্বারে প্রবেশ করে। কিন্তু ভিতরে যেতেই দেখেন একজন মহিলা ডাক্তার বেরোনোর জন্য শারির আঁচলে সেফটি পিন লাগাচ্ছেন। তখন একটু ইতস্তত হয়ে নন্দবাবু দাঁড়িয়ে পরেন। কিন্তু মিস মল্লিক তাকে কি সমস্যা তা বলতে বলেন। মিস মল্লিক নন্দবাবুর বিষয়ে জেনে নিয়ে সব বুঝতে পারেন। কিন্তু নন্দবাবু যখন জানতে চান যে তার কি হয়েছে তখন মিস মল্লিক নন্দবাবুকে জানান যে তার আদৌ কিছু হয়নি তবে তার একজন সেবা করার লোকের দরকার। তাই কিছু ওষুধ দিয়ে সাতদিন পরে আসতে বলেন। নন্দবাবু প্রথমে সাতদিন পর, পরে দুই দিন পর এবং আরও পরে প্রায় প্রত্যেক দিন যেতে লাগলেন।

এরপর নন্দবাবু তার পিসিমাকে কাশীধামে পাঠিয়ে দিয়ে মস্ত বাজার করলেন এক ঝুড়ি গলদা চিংড়ি, এক ঝুড়ি মটন, ঘি, ময়দা, দই, সন্দেশ আনিয়ে বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনদের খাওয়ালেন। মিসেস বিপুলা মল্লিক নিজের স্বামী ভিন্ন অন্য রোগীর চিকিৎসা করলেন না।

এভাবেই নন্দবাবু ও ড. মিস বি. মল্লিকের মধুর প্রেমের পরিণতি দিয়ে কাহিনির পরিসমাপ্তি হয়েছে।

প্রশ্ন: চিকিৎসা সংকট গল্প অবলম্বনে নন্দবাবুর চরিত্র আলোচনা করো।

উত্তর: আধুনিক কালের জনপ্রিয় লেখক পরশুরাম। তিনি একজন দক্ষ শিল্পী, তার দক্ষ হাতের স্পর্শে যে কোন চরিত্র প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

আমাদের আলোচ্য নন্দবাবুর চরিত্রটিও তার ব্যতিক্রম নয়। আলোচ্য গল্পে নন্দবাবুর চরিত্রের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।

নন্দবাবু নিরীহ স্বভাবের মানুষ। তাইতো ট্রাম থেকে নামার সময় পড়ে গেলে সবাই তাকে যেমন খুশি তেমন নাচাতে থাকে। এছাড়াও ডাক্তার দেখানোর ব্যাপারেও বন্ধুরা যে ডাক্তার দেখাতে বলে সেই ডাক্তারই দেখাতে ছুটেছে। তার সহজ ও নিরীহ স্বভাবের চরিত্র বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

নন্দবাবু বন্ধুসৎসল মানুষ। বন্ধুদের মনেপ্রাণে ভালোবাসে। তাই বন্ধুদের কোন কথাই সে ফেলতে পারে না। তাই গুপি, বন্ধু, ষষ্ঠীবাবু, নিধুবাবু সবার কথা শুনে চলার চেষ্টা করেছে।

নন্দবাবু যুক্তিবাদী মানুষ। তাই যখনই ডাক্তার দেখাতে গেছে, ডাক্তার তাকে ঔষুধ লিখলেও ডাক্তার কি রোগের ঔষুধ দিচ্ছে? আসলে তার কি অসুখ হয়েছে তা সে জানতে চেয়েছেন। এ থেকে আসলে তার যুক্তিধর্মী মনের পরিচয় পাওয়া যায়।

নন্দবাবু নির্ভেজাল মানুষ। তাই মানুষের সাথে কোন ঝামেলায় সে জড়াতে চায়নি। তাই ডাক্তারা তাকে রোগ না ধরে ঔষুধ দিলেও সে তার মৃদু প্রতিবাদটুকু করেনি।

নন্দবাবু সবাইকেই সহজে বিশ্বাস করে নেয়। তাইতো বন্ধু বর্গের প্রত্যেকের পরামর্শ সে বিশ্বাস করেছে এবং বারবার সে ডাক্তারদের কাছে গেছে।

নন্দবাবু বিপত্নীক বৃদ্ধ। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে বিপত্নীক হলেও বিয়ে করার ইচ্ছা থাকলেও বিয়ে পর্যন্ত করেনি। এক বৃদ্ধা পিসিমার রান্না খেয়েই জীবনযাপন করে দিতে চান।

নন্দবাবু ভীতু স্বভাবের মানুষ। তাই তার ডাক্তার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোগের কথা বললে নন্দবাবু ভয় পেয়ে গেছে। তাই চিকিৎসার জন্য ছুটে বেরিয়েছে।

নন্দবাবু রোমান্টিক স্বভাবের মানুষ। তাই ডাক্তার মিস বি মল্লিকের কাছে গেলে, ডাক্তার মিস বি মল্লিক যখন জানায় যে তার কোন রোগ হয়নি। তার শুধু একজন সেবা করার লোকের দরকার। মিস বি মল্লিক তাকে প্রথমে সাতদিন পরে দেখা করতে বলেন। ফলে নন্দবাবু প্রথমে সাতদিন পর, তারপর তিন দিন এবং আরও পরে প্রায় প্রত্যেক দিন যেতে লাগলেন। আসলে মিস বি মল্লিকের প্রেমে সে প্রতিদিন চেম্বারের যেতে শুরু করে এবং পরে মিস বি মল্লিককে বিবাহ করেন।

আসলে পরশুরাম নন্দবাবুর চরিত্রে যেমন খারাপ গুণ দেখিয়েছেন তেমনি কিছু ভালো গুণও দেখিয়েছেন। আসলে লেখকের অপূর্ব বর্ণনার গুণে নন্দবাবুর চরিত্রটি দোষে গুণে ভরা রক্তে মাংসে গড়া এক জীবন্ত চরিত্র হিসাবে ফুটে উঠেছে।

✍️প্রশ্নমান-১০:

প্রশ্ন: চিকিৎসা সঙ্কট গল্পটির সংক্ষিপ্তসার লেখো।

উত্তর : চিকিৎসা সঙ্কট গল্পটি পরশুরামের একটি রম্য রচনা।

গল্পের নায়ক বছর চল্লিশের খর্বাকৃতি চেহারার নন্দবাবু।

তার মৃত পিতৃদেব পশ্চিমে কমিসরিয়েটে চাকরি করে প্রভূত অর্থ উপার্জন করেছিল। সেই অর্থ, বিশাল বাড়ি উত্তরাধিকার সূত্রে একমাত্র সন্তান নন্দবাবু লাভ করে। বিপত্নীক নন্দবাবুর বাড়িতে পিসীমা ছাড়া আর কেউ ছিল না। একদিন সে হগ সাহেবের বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় বন্ধু বন্ধুকে দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি ট্রাম থেকে নামতে গিয়ে নিজের ধুতির কোঁচায় পা জড়িযে নীচে পড়ে যায়।

নন্দবাবু এতে আঘাত না পেলেও তার যাবতীয় বন্ধুদের মনে হয় সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ফলে তার চিকিৎসার দরকার। এই চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে নানা বন্ধু নানারকম মত দিতে থাকে।

এক বন্ধু বলে বাড়ির কাছে এলোপ্যাথ ডাক্তার আছে। তাকে দেখানই ভাল। তার কথামতো নন্দবাবু এলোপ্যাথ M.D.M.R.S ডিগ্রিধারী ডাক্তার তফাদারের কাছে যায়। তার কাছে গিয়ে নন্দবাবু নিজের ট্রাম থেকে পড়ে যাবার ঘটনাটি বলে। ডাক্তার নন্দবাবুকে পরীক্ষা করে বলে সম্ভবত নন্দবাবুর সেরিব্রাল টিউমার উইথ স্ট্যাংগুলেটেড গ্যাংলিয়া হয়েছে। এই চিকিৎসায় ট্রিফাইন অস্ত্রের সাহায্যে মাথার খুলি ছেদ করতে হবে। সাথে ঘাড় চিড়ে নার্ভের জটও ছাড়াতে হবে। নন্দবাবুর ডাক্তারের কথাবার্তা সন্তোষজনক লাগে না। সে উঠে চলে আসে।

এইবার আরেক বন্ধু গুপীবাবুর পরামর্শ শুনে নন্দবাবু হোমিওপ্যাথ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে নেপাল ডাক্তারের কাছে যায়। সেও নন্দবাবুকে পরীক্ষা করে কোন সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারে না। ডাক্তারের ফী এবং ওষুধের দাম দিয়ে হতাশচিত্তে নন্দবাবু ঘরে ফিরে আসে।

এরপর ষষ্ঠীবাবু এগিয়ে আসে। সে বলে কবিরাজ দেখাতে। কবিরাজী চিকিৎসা করাতে এবার নন্দবাবু তারিণী কবিরাজের বাড়ি উপস্থিত হয়। সে নন্দবাবুকে খাবার-দাবারে অনেক নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে বলে তার উদুরি হয়েছে। পেটের গোলমাল। নন্দবাবু জানত আদৌ তার পেটের কোন ব্যামো নেই। সেখান থেকেও ভগ্ন মনোরথে নন্দবাবুকে ফিরে আসতে হয়।

এলোপ্যাথ হোমিওপ্যাথ কবিরাজী চিকিৎসায় যখন কোন সুরাহা হয় না তখন গুপীবাবু বুদ্ধি দেয় হাকিম সাহেবকে একবার দেখান যাক। হাকিম সাহেবের বাহ্যিক রকমসমক দেকে নন্দবাবুর প্রায় ভির্মি যাবার অবস্থা হয়। সে চিকিৎসার জন্য নন্দবাবুর মাথার তালুর চুল ছেঁটে সেখানে দুর্গন্ধযুক্ত প্রলেপ লাগালে নন্দবাবু কোনক্রমে পালিয়ে বাঁচে।

সমস্তরকম চিকিৎসা পদ্ধতি বিফলে গেলে নন্দবাবু প্রতিজ্ঞা করে বন্ধুদের কোন পরামর্শ সে গ্রহণ করবে না। এরপর দিন সে ট্যাক্সিতে চড়ে বেরোবে। মিটার এক টাকা হলেই সেখানে গাড়ি থামিয়ে হাঁটা শুরু করলে প্রথমেই যেই ডাক্তারের সাইনবোর্ড নজরে পড়বে তাকেই সে দেখাবে। এইভাবে বৌবাজারে ট্যাক্সি থেকে নেমে তার চোখে পড়ে ডাক্তার মিশ বিপুলা মল্লিকের সাইনবোর্ড। তার কাছেই নন্দবাবু নিজের চিকিৎসা শুরু করে। ডাক্তার প্রথমেই বুঝে গিয়েছিল নন্দবাবু কোন অসুখেই আক্রান্ত নয়। ক্ষাণিকটা একাকীত্ব। তাই ঘুরিয়ে পরামর্শ দেয় নন্দবাবুর দেখাশোনার জন্য একান্ত একজন মানুষের প্রয়োজন। মানসিক শান্তির জন্য চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে নন্দবাবু মিস মল্লিকের চেম্বারে যাতায়াত শুরু করে। ক্রমে নন্দবাবু ও ডাক্তার মিস বিপুলা মল্লিক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

প্রশ্ন: পরশুরামের চিকিৎসা সঙ্কট গল্পের 'হাস্যরস' আলোচনা করো।

উত্তর: পরশুরাম বাংলা সাহিত্যের একজন রসিক শিল্পী। তাঁর শব্দের জাদুতে বুদ হয়না এমন বাঙালি প্রায় নেই। পরশুরাম তার 'চিকিৎসা সঙ্কট' গল্পে হাস্যরসের চাষ করেছেন।

আমাদের আলোচ্য চিকিৎসা সংকট গল্পের হাস্যরস মূলত শব্দের জাদুতে। আলোচ্য গল্পে অপূর্ব শব্দ চয়ন পাঠককে মুগ্ধ করেছে। তাই তার গল্পে হাসতে যাদের মানা, রামগরুরের ছানা, তারাও হেসে কুটিকুটি হয়েছে।

আলোচ্য গল্পের শুরুতেই আমরা দেখি পঞ্চাশ উর্দ্ধ বয়সী নন্দবাবু দুই বগলে দুই বাণ্ডিল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গাড়ি থেনে নামতে গিয়ে ধুতির কোঁচায় পা বেঁধে নিয়ে পরে যান। নন্দবাবুর গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ায় পাঠককের মনে দুঃখ হওয়ার চেয়েও বর্ণনার গুণে পাঠক চিত্তে হাস্যরসের সঞ্চার করে।

আবার নন্দবাবুর পড়ে যাওয়াতে যখন যাত্রীরা হৈ-চৈ শুরু করে তখন গাড়িটি ঘ্যাচাং করিয়া থামিল। তারপর যাত্রীরা সমবেদনা জানাতে গিয়ে যে যার মতো বলতে থাকে- “আহা হা বড্ড লেগেছে", থোড়, গরম দুধ পিল, খেও'। 'দুটো পা-ই কি কাটা গেছে?' কেউ একজন বললো বৃদ্ধর মৃগি রোগ আছে, কেউবা বলছে ভার্মি রোগ, কেউবা বললো বৃদ্ধ মাতাল, কেউ বলল বাঙাল-বিভিন্ন জনের এরূপ মন্তব্য আমাদের হাস্যরসের স্ফুরোন দেয়।

আবার নন্দবাবুর কিছু না হওয়া সত্যেও তার বন্ধুরা যখন বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে নিয়োগ যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ডাক্তারের সন্ধান দেয় তাতেও হাস্যরসের সঞ্চার হয়। নন্দবাবু যখন গুণীর কথাশুনে ডাক্তার তফাদারের কাছে যান এবং যখন দেখেন ডাক্তার ফিতে দিয়ে রোগীর ভুড়ির পরিধি মাপছেন তখন হাসির সঞ্চার হয়।

আবার নন্দবাদু যখন নেপাল ডাক্তারের যায়। তখন নেপাল বাবু যখন জানতে পারেন যে, এর আগে তিনি তফাদারের কাছে দেখিয়েছেন তখন নেপালবাবু জানান যে তফাদারের মাথায় গোবর আছে তখন হাসির সঞ্চার হয়। তাছাড়া নেপালবাবু যখন নন্দকে জিজ্ঞাসা করে মাথায় ব্যথা বামদিকে? নন্দবাবু জানাল হ্যাঁ। তখন নেপালবাবু আবার জিজ্ঞাসা কনের না কি ডান দিকে। তখনও নন্দবাবু বলেন যে হ্যাঁ। তখন নেপালবাবু ধমক দিয়ে বলেন-ঠিক করে বলো তখনও আমাদের হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। এভাবেই একে একে ভিন্ন ডাক্তার দেখিয়ে যখন নন্দবাবু একপ্রকার ক্লান্ত তখন তিনি ঠিক করেন য, এক টাকা দিয়ে গাড়িতে যতদূর যাওয়া যায়, সেই পর্যন্ত গিয়ে কাছাকাছি যে ডাক্তার পাবে সেই ডাক্তারই দেখাবে। নন্দবাবুর এমন সিদ্ধান্ত আমাদের হাসির সঞ্চার করে।

এরপর নন্দবাবু ডাক্তার মিস, বি. মল্লিকের সাইনবোর্ড দেখে সেখানে প্রবেশ করে। যদিও তিনি মিস শব্দটি দেখতে পাননি। উক্ত ডাক্তার প্রসূতিরোগ বিশেষজ্ঞ হওয়ায় প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেন-'পেন আরম্ভ হয়েছে'? কিন্তু নন্দবাবু জানান যে তিনি কোন পেন টের পাচ্ছেন না। তারপর মিস মল্লিক জিজ্ঞাসা করেন-'প্রথম পোয়াতি?' তখন নন্দবাবু জানান তিনি নিজের চিকিৎসার জন্য এসেছেন। তখন হাসির বাঁধ ভেঙে যায়।

শেষ পর্যন্ত আমরা দেখি মিস মল্লিক তাকে ঔষুধ দেন তারপর ধীরে ধীরে নন্দবাবু মিস মল্লিকের প্রেমে পরেন এবং তাদের বিবাহ সম্পূর্ণ হয়।

গল্পের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত হাস্যরসের সঞ্চার হয়েছে। আর এখানেই পরশুরামের গল্পের সার্থকতা।

                             ..................

                         Presented by

      skacademyallinone.blogspot.com