📚বি.এ মেজর বাংলা:তাজমহল-বনফুল: প্রশ্নোত্তর(প্রশ্নের মান-২,৫,১০)📚

✍️ প্রশ্নমান-২:

প্রশ্ন: 'বনফুল' ছদ্মনামধারী কথাসাহিত্যিকের প্রকৃত নাম লেখ।

উত্তর: 'বনফুল' ছদ্মনামধারী কথা সাহিত্যিকের প্রকৃত নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়।

প্রশ্ন: বনফুলের জন্ম, মৃত্যু কত খ্রিস্টাব্দে হয়?

উত্তর: বনফুলের জন্ম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে। মৃত্যু ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে।

প্রশ্ন: বনফুলের 'তাজমহল' গল্পটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে?

উত্তর: বনফুলের 'তাজমহল' গল্পটি 'বনফুলের ছোটোগল্প সমগ্র' (প্রথম খন্ড) গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই গ্রন্থের ভূমিকা লেখেন পবিত্র সরকার।

প্রশ্ন: বনফুলের কতকগুলি উপন্যাসের নাম লেখ।

উত্তর: 'তৃণখন্ড' (১৯৩৫), 'বৈতরণী তীরে' (১৯৩৬), 'কিছুক্ষণ' (১৯৩৭), 'দ্বৈরথ'(১৯৩৭), 'মৃগয়া' (১৯৮১)।

প্রশ্ন: বনফুলের কতকগুলি গল্পগ্রন্থের নাম লেখ।

উত্তর : 'অদৃশ্যলোকে', 'ত্বণী', 'নবমঞ্জরী', 'ঊর্মিমালা' ইত্যাদি।

প্রশ্ন: 'তাজমহল' ছাড়া বনফুলের আরও কতকগুলি ছোটোগল্পের নাম লেখ।

উত্তর : 'তাজমহল' ছাড়া বনফুলের আরও কয়েকটি ছোটোগল্পের নাম হোল-'বাড়তি মাশুল', 'শ্রীপতি সামন্ত', 'শিল্পী', 'জাগ্রত দেবতা', 'সমাধান', 'শেষ রক্ষা' ইত্যাদি।

প্রশ্ন: তাজমহল কোথায় অবস্থিত? এটি কে নির্মাণ করেন?

উত্তর : 'তাজমহল' উত্তর প্রদেশের আগ্রায় অবস্থিত। তাজমহল নির্মাণ করেন সম্রাট শাজাহান। তার স্ত্রী মমতাজের সমাধিস্থলের উপর। 

প্রশ্ন: তাজমহল কী? এটি কার স্মৃতির উদ্দেশ্য নির্মাণ করা হয়েছিল?

উত্তর : তাজমহল হল একটি প্রেমের স্মৃতি সৌধ। সৌধটি মমতাজের সমাধিস্থলের উপর নির্মিত। তাজমহল মমতাজের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য মোগল সম্রাট শাজাহান এটি বানিয়েছিলেন।

প্রশ্ন: 'তাজমহল' গল্পের গল্পকথক প্রথম আগ্রা গিয়েছিলেন কিসের জন্য?

উত্তর: গল্পকথক প্রথম আগ্রা গিয়েছিলেন তাজমহল দেখতে। প্রথম দর্শনের সে বিস্ময়টা এখনও তাঁর মনে আছে।

প্রশ্ন: কিসে করে কথক তাজমহল দেখতে আগ্রা যাচ্ছিলেন?

উত্তর: গল্পকথক ট্রেনে করে আগ্রা স্টেশনে যাচ্ছিলেন তাজমহল দেখার জন্য।

প্রশ্ন: আগ্রা স্টেশনে ট্রেন তখনও পৌঁছায় নি। তখন একজন সহযাত্রী কী বলে উঠেছিল? সেকথা শুনে কথকই বা কি করেছিল?

উত্তর: তখন একজন সহযাত্রী বলে উঠেছিল,-“ওই যে তাজমহল দেখা যাচ্ছে।”-আর একথা শুনে কথক তাড়াতাড়ি জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে ছিলেন।

প্রশ্ন: দূর থেকে প্রথম দর্শনে কথক কেমন তাজমহল দেখেছিলেন?

উত্তর: দূর থেকে তাজমহল দেখে কথক দমে গিয়েছিলেন। চুন করা সাধারণ একটা মসজিদের মতো ওই তাজমহল। তবু নির্ণিমেষে চেয়েছিলেন। হাজার হোক তাজমহল। শাজাহানের তাজমহল।

প্রশ্ন: অবসন্ন অপরাহ্নে বন্দী শা-জাহান কোন দিকে চেয়ে থাকতেন? তাঁর মনে কোন্ ভাবনার উদয় হোত?

উত্তর: অবসন্ন অপরাহ্নে বন্দী শা-জাহান তাজমহলের দিকে চেয়ে থাকতেন। তাঁর মনে এই ভাবনার উদয় হোত যে,-"মমতাজের বড় সাধের তাজমহল।"

প্রশ্ন: কথক কবে দ্বিতীয়বার তাজমহল দর্শন করেছিলেন?

উত্তর : পূর্ণিমার পরদিন। তখনও চাঁদ ওঠে নি। জ্যোৎস্নার পূর্বাভাস দেখা দিয়েছে পূর্ব দিগন্তে। সেই দিন সন্ধ্যার পর কথক দ্বিতীয়বার তাজমহল দর্শন করেছিলেন।

প্রশ্ন: দ্বিতীয়বার তাজমহল দেখতে গিয়ে গেট পেরিয়ে ঢুকতেই লেখকের অনুভূতি কী?

উত্তর: গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই একটা অস্ফুট মর্মর ধ্বনি কানে এল। ঝাউ-বীথি থেকে নয়-মনে হল যেন সুদূর অতীত থেকে, মর্মর ধ্বনি নয়, যেন চাপা কান্না। ঈষৎ আলোকিত অন্ধকার পুঞ্জীভূত তমিশ্রার মতো স্তুপীকৃত-ওইটেই কি তাজমহল?

প্রশ্ন: পরবর্তীকালে লেখক বহুবার তাজমহলকে দেখেছেন। কোন্ কোন্ পরিস্থিতিতে, কোন্ কোন্ ঋতুতে দেখেছেন?

উত্তর: অন্ধকারে, জ্যোৎস্নালোকে, সন্ধ্যায়, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরতে বহুবার বহুরূপে লেখক তাজমহলকে দেখেছেন।

প্রশ্ন: তাজমহল সম্পর্কে লেখকের আর মোহ নেই কেন?

উত্তর: তাজমহলকে লেখক এতবার দেখেছেন যে আর চোখে লাগে না। চোখে পড়েই না। পাশ দিয়ে গেলেও নয়। তাজমহলের পাশ দিয়ে প্রায়ই লেখককে আজকাল যাতায়াত করতে হয়। কারণ আগ্রার কাছেই এক দাতব্য চিকিৎসালয়ে তিনি ডাক্তার হয়ে এসেছেন। সে কারণে তাজমহল সম্বন্ধে লেখকের আর মোহ নেই।

প্রশ্ন: আউটডোর সেরে লেখক যখন বারান্দা থেকে নামছিলেন তখন তিনি কি দেখলেন?

উত্তর: আউটডোর সেরে বারান্দা থেকে নামবার সময় লেখক দেখলেন,-এক বৃদ্ধ মুসলমান গেট দিয়ে ঢুকল। পিঠে প্রকান্ড একটা ঝুড়ি বাঁধা। ঝুড়ির ভারে মেরুদন্ডটা বেঁকে গেছে বেচারীর।

প্রশ্ন: প্রথম দর্শনে লেখক বৃদ্ধ মুসলমানকে কি ভেবে ছিলেন? বৃদ্ধ ঝুড়ি নামাতেই লেখক কি দেখতে পেলেন?

উত্তর: প্রথম দর্শনে লেখক বৃদ্ধ মুসলমানকে মেওয়াওলা ভেবেছিলেন। বৃদ্ধ ঝুড়িটা নামাতেই লেখক দেখলেন ঝুড়ির ভেতর, মেওয়া নয়, একটি বোরখাপরা মহিলা বসে আছে। ঐ মহিলা বৃদ্ধের বেগম।

প্রশ্ন: বৃদ্ধের চেহারা কেমন?

উত্তর: বৃদ্ধের চেহারা অনেকটা বাউলের মতো, আলখাল্লা পরা, ধপধপে সাদা দাড়ি।

প্রশ্ন: বৃদ্ধ লেখকের কাছে কিজন্য এসেছিলেন?

উত্তর: বৃদ্ধ লেখকের কাছে এসেছিলেন তার বেগমের চিকিৎসা করাবার জন্য।

প্রশ্ন: বৃদ্ধের বেগমের কাছে যেতেই দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল কেন?

উত্তর: হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে বোরখা খুলতেই ব্যাপারটা বোঝা গেল। 'ক্যাংক্রাম্ আরিস!' মুখের আধখানা পচে গেছে। ডানদিকের গালটা নেই। দাঁতগুলো বীভৎসভাবে বেরিয়ে পড়েছে। তাই দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল।

প্রশ্ন: হাসপাতালের বারান্দা থেকে বৃদ্ধের বেগমের কোথায় ঠাঁই হয়েছিল? উত্তর: সকলের আপত্তির কারণে হাসপাতালের বারান্দা থেকে বেগমের ঠাঁই হয় হাসপাতাল চত্বরের একটা বড় গাছের তলাতে।

প্রশ্ন: “কি হচ্ছে এখানে মিয়া সাহেব?"-এর উত্তরে বৃদ্ধ কি বলেছিল?

উত্তর: “বেগমের কবর গাঁথছি হুজুর।"

প্রশ্ন: শেষ পর্যন্ত লেখক নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন কেন?

উত্তর: লেখক গরীব বৃদ্ধের ভিক্ষাবৃত্তি জীবনের পরিচয় পেয়ে তার নাম জানতে চাইলে বৃদ্ধ জানায় তার নাম,- 'ফকির শা-জাহান।'-এই নাম শুনেই শেষ পর্যন্ত লেখক নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।

প্রশ্ন: 'আলমগীর নির্মম ছিলেন না'-আলমগীর কে? আলমগীর কী করেছিল?

উত্তর : আলমগীর হল শাজাহানের পুত্র ঔরঙ্গজেব। এটি ঔরঙ্গজেবের উপাধি। পিতা শাজাহানের ইচ্ছানুযায়ী ঔরঙ্গজেব শাজাহানের মৃত্যুর পর মমতাজের পাশেই তারও কবর দিয়েছিল।

প্রশ্ন: দারাসেকো কে? তার কবর কোথায় আছে?

উত্তর: দারাসেকো হল মমতাজ ও শাহাজাহনের বড় পুত্র। দারাসেকোর কবর আছে মমতাজ ও শাজাহানের কবরের পাশে।

প্রশ্ন: বৃদ্ধ শাজাহানের চেহারা কেমন ছিল?

উত্তর: বৃদ্ধ শাজাহানের চেহারা ছিল অনেকটা বাউলের মতো। আলখাল্লা পরা ধবধপে সাদা দাঁড়ি ছিল।

প্রশ্ন: “সম্রাট শা-জাহান চলেছেন প্রিয়া সন্নিধানে!"-এখানে 'প্রিয়া' কে?

উত্তর: এখানে 'প্রিয়া' বলতে মমতাজকে বোঝান হয়েছে।

প্রশ্ন: "আর একটা কবরও ছিল...." কবর কী? 'আর একটা কবর' বলতে কার কবরের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: মুসলিমদের মৃতদেহ যে স্থানে সমাধিস্থ করা হয় তাকে বলা হয় কবর। 'আর একটা কবর' বলতে দারাসেকোর কবরের কথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন: “পূর্ণিমার পরদিন।"-'পূর্ণিমার পরদিন' গল্প লেখক কী করেছিল? পূর্ণিমার পরদিনকে কী বলে?

উত্তর: 'পূর্ণিমার পরদিন' গল্প কথক দ্বিতীয়বার তাজমহল দর্শন করেন। পূর্ণিমার পরদিনকে বলা হয় প্রতিপদ।

প্রশ্ন: “সেইদিন সন্ধ্যার পর দ্বিতীয়বার দর্শন করতে গেলাম তাজমহল।" -কোনদিন গল্পকথক দ্বিতীয়বার তাজমহল দর্শন করেন?

উত্তর : পূর্ণিমার পরদিন সন্ধ্যার পর গল্পকথক দ্বিতীয়বার তাজমহল দর্শন করেন।

প্রশ্ন: 'তাজমহল' দেখতে আসা নিরীহ আগন্তুকদের ঠকিয়ে কারা বেশি ভাড়া নিত?

উত্তর: টাঙ্গা গাড়ির চালকরা তাজমহল দেখতে আসা লোকদের ঠকিয়ে বেশি পয়সা নিত।

প্রশ্ন: বৃদ্ধ তার স্ত্রীকে হাসপাতালে এসেছিল কেন?

উত্তর: বৃদ্ধ ছিল নিতান্ত গরিব। তার ডাক্তারবাবুকে বাড়িতে দেখানোর পয়সা ছিল না; তাই সে স্ত্রীকে দাতব্য চিকিৎসালয়ে নিয়ে আসে ডাক্তারবাবুকে দেখানোর জন্য।

প্রশ্ন: 'তাজমহল' গল্পের লেখক 'তাজমহল'-কে কখন দেখেছেন?

উত্তর: 'তাজমহল' গল্পের লেখক 'তাজমহল'কে "অন্ধকারে, জ্যোৎস্নালোকে, সন্ধ্যায়, উষায় শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরতে বহুবার বহুরূপে" দেখেছেন।

প্রশ্ন: "তাজমহলের পাশ দিয়ে প্রায়ই যাতায়াত করতে হয় আজকাল।" -গল্পলেখককে আজকাল প্রায়ই তাজমহলের পাশ দিয়ে কেন যাতায়াত করতে হয়?

উত্তর: কারণ গল্প লেখক এখন আগ্রার কাছে এক দাতব্য চিকিৎসালয়ে ডাক্তার হয়ে এসেছেন।

প্রশ্ন: ফকির শা-জাহানের স্ত্রীকে হাসপাতালের বারান্দায় রাখা যায়নি কেন? তার কী হয়েছিল?

উত্তর: বৃদ্ধ ফকির শা-জাহানের স্ত্রীর মুখের আধখানা পচে গিয়েছিল। ডানদিকের গালের মাংস না থাকায় দাঁতগুলো বীভৎসভাবে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল যার থেকে এত দুর্গন্ধ উঠেছিল যে হাসপাতালের কম্পাউন্ডার, ড্রেসার, মেথর কেউ তার কাছে যাচ্ছিল না। এবং অন্যান্য রোগিরাও গন্ধে থাকতে পারছিল না তাই তাকে হাসপাতালের বারান্দা থেকে কাছের একটা বড়ো গাছের নীচে আশ্রয় নিতে হয়।

প্রশ্ন: 'তাজমহল' গল্পে বৃদ্ধ মুসলমানের পিঠের ঝুড়িতে কী ছিল?

উত্তর: 'তাজমহল' গল্পে বৃদ্ধ মুসলমান ফকির শা-জাহান পিঠের ঝুড়িতে করে তার স্ত্রীকে ডাক্তারবাবুকে দেখানো জন্য দাতব্য চিকিৎসালয়ে নিয়ে আসে।

প্রশ্ন: 'তাজমহল' গল্পের লেখকের পেশা কী ছিল? উত্তর : 'তাজমহল' গল্পের লেখক পেশায় ছিলেন একজন ডাক্তার।

প্রশ্ন: গল্পকথক ডাক্তারকে যে মুসলিম বৃদ্ধ তার বৃদ্ধা স্ত্রীকে দেখাতে আনে তার নাম কী?

উত্তর : বৃদ্ধ মুসলিমটির নাম ছিল-ফকির শা-জাহান।

প্রশ্ন: ফকির শা-জাহানকে তার স্ত্রীকে ঝুড়িতে করে আনতে দেখে গল্পকথক ডাক্তার কী ভেবেছিল?

উত্তর: ডাক্তার ভেবেছিল কোন মেওয়াওলা মেওয়া বিক্রি করতে এসেছে।

প্রশ্ন: ফকির শা-জাহানের স্ত্রীর কী অসুখ হয়েছিল?

উত্তর : ফকির শা-জাহানের স্ত্রীর 'ক্যাংক্রাম্ অরিস' নামক রোগ হয়েছিল।

প্রশ্ন: বৃদ্ধ মুসলমানের বিবির কী রোগ হয়েছিল? রোগের ফলে তার চেহারা কেমন হয়েছিল?

উত্তর: বৃদ্ধ মুসলমান ফকির শা-জাহানের বিবি 'ক্যাংক্রাম্ অরিস' রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। এই রোগের ফলে বৃদ্ধের বিবির মুখের আধখানা পচে গিয়েছিল। ডানদিকের গালের মাংস ছিল না। যার ফলে তাঁর দাঁতগুলো বাইরে বেরিয়ে এসেছিল।

প্রশ্ন: "কি হচ্ছে এখানে মিয়া সাহেব”-একথা কে, কাকে জিজ্ঞাসা করে? সে কোথায় কী করছিল?

উত্তর : একথা ডাক্তার ফকির শা-জাহানকে জিজ্ঞাসা করে। ফকির শা-জাহান মাঠের

মাঝে তার বেগমজানকে কবর দেওয়ার জন্য কাদা দিয়ে ইঁট গাঁথছিল।

প্রশ্ন: "আমি 'কল' থেকে ফিরছি, হঠাৎ চোখে পড়ল বুড়ো দাঁড়িয়ে ভিজছে।"- 'কল' বলতে এখানে কি বোঝান হয়েছে?

উত্তর: 'কল' বলতে রোগি দেখতে যাওয়ার ডাকের কথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন: "চাদরের তলায় রয়েছে বেগম সাহেব।"-কার বেগম সাহেবের কথা এখানে বলা হয়েছে?

উত্তর: এখানে ফকির শা-জাহানের বেগম সাহেবের কথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন: "সেদিন 'আউট-ডোর' সেরে বারান্দা থেকে নামছি,"-আউট-ডোর' কী?

উত্তর: হসপিটালের দু'টি বিভাগ 'আউট-ডোর' ও 'ইন-ডোর'। আউট-ডোর হচ্ছে হসপিটালের বহির্বিভাগ। হসপিটালে রোগিকে ভর্তি না করেও এখানে রোগি দেখান যায়। সকল রোগিরাই হসপিটালের এই পরিষেবা পেয়ে থাকেন।

প্রশ্ন: শা-জাহান কী করত?

উত্তর: শা-জাহান ভিক্ষা করত।

প্রশ্ন: 'কী নাম তোমার?'-কে, কাকে তার নাম জিজ্ঞাসা করেছে?

উত্তর: ডাক্তার ফকির শা-জাহানকে তার নাম জিজ্ঞাসা করে।

✍️প্রশ্নমান-৫:

১.“দেখিনি তো কখনও তোমাকে। কি নাম তোমার?” “ফকির শা-জাহান।”-এই নাম উচ্চারণ কিভাবে ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছে?

উত্তর : প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক বনফুলের লেখা একটি বিখ্যাত ছোটোগল্প 'তাজমহল'। এই গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র ফকির শা-জাহান।

লেখক একদা দেখেন কতকগুলো ভাঙা ইট আর কাদা নিয়ে বুড়ো তাঁর মৃত বেগমের কবর গাঁথছে। লেখক ওরফে ডাক্তার গরীব বৃদ্ধের ভিক্ষাবৃত্তি জীবনের পরিচয় পেয়ে তার নাম জানতে চাইলে বৃদ্ধ জানায় তার নাম,-"ফকির শা-জাহান।"-বৃদ্ধের এই নাম উচ্চারণই গল্পে অনবদ্য ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছে।

শা-জাহান মমতাজের প্রতি প্রেমের স্মৃতিতে তাজমহল নির্মাণ করিয়েছেন। আর 'তাজমহল' গল্পে জনৈক বৃদ্ধ ফকির শা-জাহান তার বেগমের প্রতি প্রেমের স্মৃতিতে নিজ হাতে বেগমের কবর গেঁথেছে। দিন রাত অসুস্থ বেগমের যে সেবাযত্ন সে করেছে ইতিহাসের শা-জাহানও বোধ হয় মমতাজের জন্য তা করেননি। বৃদ্ধের প্রেম এবং কবর নির্মাণ ইতিহাসের শাজাহানের মমতাজের প্রতি প্রেম ও শ্বেত পাথরে নির্মিত তাজমহলকে ব্যঞ্জিত করেছে। আর এই ব্যঞ্জনা 'তাজমহল' নামকরণটিকেও সার্থক করে তুলেছে।

২. 'এসব খবরও পুরানো হয়ে গেছে'-কার লেখা, কোন গল্পের অংশ? এখানে কী কী খবরের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর : উক্ত অংশটি বনফুলের লেখা 'তাজমহল' গল্পের অংশ।

গল্পকথক প্রথমবার দিনের বেলা দূর থেকে তাজমহল দেখেছিলেন, তারপর সন্ধ্যারাতে। এরপর আগ্রার কাছেই তিনি একটি হাসপাতালে ডাক্তারি করতেন। ফলে দূর থেকে তাজমহলের প্রতি তার যে মোহ, সে মোহ আজ আর সেভাবে নেই। তবে এই তাজমহলকে ঘিরে একাধিক মানুষ বিভিন্ন ভাবে উপকৃত হয়েছে-কোন কনট্রাক্টার তাজমহল থেকে কত টাকা উপার্জন করেছে, তাজমহলের দৌলতে হোটেলবালা কীভাবে রাজা হল, ফেরিওয়ালাগুলো বাজে পাথরের তাজমহল বানিয়ে কত পয়সা পেত, কিংবা টোঙাবালা কীভাবে নিরীহ লোক ঠকিয়ে বেশি ভাড়া নিত-এইসব খরচের কথা এখানে বলা হয়েছে।

৩. 'গোড়া থেকে শুনুন তাহলে'-কোন কথা বলা হয়েছে এখানে? অথবা, 'তাজমহল' গল্পে ফকির শাজাহানের পত্নীপ্রেম সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তর: 'তাজমহল' বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য সৃষ্টি। এটি একটি প্রেমের সৌধ। সেই প্রেম মোঘল সম্রাট শাজাহান ও তার পত্নী মমতাজের। ইতিহাসের সেই অমর প্রেম থেকে এ গল্পের কথক ফকির শাজাহান সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন এখনে সেই কথার গোড়া থেকে আমাদের শুনিয়েছেন।

গল্পকথক একদিন চিকিৎসা করে বেরিয়ে আসছেন ঠিক সেই সময় একজন বৃদ্ধ পিঠে ঝুড়ি নিয়ে ডাক্তারের কাছে উপস্থিত হয়। ঝুড়ির ভারে বৃদ্ধ বেঁকে গেছে; ঝুড়ি দেখে ডাক্তার প্রথমে ভেবেছিলেন কোনো মেওয়াওয়ালা। কিন্তু পরক্ষণে তার ভুল ভাঙে। ঝুড়ির মধ্যে বোরখা পরা এক নারী। তার ক্যাংক্রাম অরিস হয়েছে। বিশ্রি দুর্গন্ধ তবু সে তার পত্নীকে সেবা করে চলেছে। পিঠে নিয়ে বয়ে চলেছে। দুরারোগ্য থেকে বাঁচানোর জন্য এতকষ্ট করে সে তার পত্নীকে পিঠে করে এখানে নিয়ে এসেছে। যার দুর্গন্ধে হাসপাতালের কোনো কর্মীরা তার কাছে যায় না। সেখানে পত্নী প্রেমে এমনই বিভোর তার কাছে রোগের দুর্গন্ধ তুচ্ছ। এছাড়া তার পত্নীকে এতটাই ভালোবাসে যে, নিজে বৃষ্টির জলে ভিজে অসুস্থ পত্নী যাতে না ভিজে যায় তার জন্য চাদরের দুটি ঘুট বিরে দাঁড়িয়ে আছে। আবার তার মৃত্যু যখন হয়েছে, তাকে কিন্তু ফেলে পালিয়ে যায় নি ফকির শাজাহান, পরিবর্তে তার স্ত্রীর জন্য কবর পর্যন্ত খুঁড়েছে। এইভাবে তাজমহল গল্পের দ্বিতীয় অংশ জুড়ে রয়েছে তাদের ভালোবাসার চিত্র।

৪. 'তাজমহল সম্বন্ধে আর মোহ নেই'-কার কেন মোহ নেই আলোচনা কর। 

উত্তর : বনফুলের লেখা 'তাজমহল' গল্পের গল্পকথকের এই উক্তি। গল্পকথক পেশায় ডাক্তার। তিনি যখন প্রথমবার ট্রেনের জানালা দিয়ে দিনের আলোতে দূর থেকে তাজমহলকে দেখেছিলেন তখন তার মনে হয়েছিল চুনকাম করা একটা মসজিদ মাত্র। দিনের বেলায় তাজমহলকে দেখার অনুভূতির পর সন্ধ্যারাতেও তিনি তাজমহল দেখতে গেছেন। সেখানে গিয়ে তিনি অনুভব করেছেন অনেক যন্ত্রণা এখানে চাপা পড়ে আছে এবং কথককে যেন মমতাজের স্বপ্নই অভ্যর্থনা করেছে। এছাড়া তাজমহলকে ঘিরে নানা শ্রেণির মানুষ কীভাবে ধনী হয়ে উঠেছে তার কাছে আজ সবই পুরানো হয়ে গেছে। আগ্রায় থাকতে থাকতে, রোগীর চিকিৎসা করতে করতে, ইতিহাসের এই প্রেমের স্মৃতি সৌধটি কথককে আর আকৃষ্ট করতে পারে না। তাজমহলের ইতিহাস ও বর্তমান সবই তার জানা হয়েছে। ফলত তাজমহল সম্বন্ধে আর মোহ নেই তার।

৫. "আধখানা মুখে বীভৎস হাসি"-তার হাসি কীসের ইঙ্গিত দেয়? বর্ণনা করো।

উত্তর: লেখক আগ্রার কাছে এক দাতব্য চিকিৎসালয়ে ডাক্তার হয়ে আসেন। তখন এক বৃদ্ধ আসেন ডাক্তারের কাছে। সেই বৃদ্ধ মুসলমান। পিঠে একটা প্রকাণ্ড ঝুড়ি। সেই ঝুড়ির মধ্যে ছিল ক্যাংক্রাম অরিস-এ আক্রান্ত তার স্ত্রী। মুখের আধখানা পচে গেছে ডান দিকের গালটা নেই। দাঁতগুলো বীভৎস ভাবে বেরিয়ে গেছে। দুগন্ধে কাছে দাঁড়ানো যায় না। ইনডোরে জায়গা না থাকায় তারে হাসপাতালে বাইরে থাকতে বললেন, কিন্তু দুর্গন্ধের জন্য তাদের বাইরেও ঠাঁই হলনা। তারা থাকল হাসপাতালের সামনে বড় গাছতলায়। সেভাবেই বৃদ্ধ তার স্ত্রী-কে সেবা করত।

একদিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। লেখক কল থেকে ফিরছেন। চোখে পড়ল সেই বৃদ্ধ জলে ভিজছে। একটা চাদরের দুটো খুঁট গাছের ডালে বাঁধা আর দুটো খুঁট সে নিজে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সেই চাদরে বৃষ্টি আটকাচ্ছে না ফলে বৃদ্ধের স্ত্রীও ভিজছে। ঠকঠক করে কাঁপছে। আর এই পৃথিবীর মানুষের মনুষ্যত্বের কথা ভেবে হাসছে। তার হাসির মধ্যে ফুটে উঠেছে দ্বিমাত্রিক ব্যঞ্জনা। এক উদাসীন পৃথিবীর স্বার্থমগ্ন ব্যক্তিদের আভিজাত্যের আস্ফালনের বিরুদ্ধে নির্মম ভ্রুকুটি দুই, এই হাসি অনেক প্রশান্তির, তৃপ্তির। কেননা বৃদ্ধ স্বামী হিসাবে কোনো কার্পণ্য করেনি। সে তার সবটুকু দিয়ে তার স্ত্রীর সেবা করে চলেছে। সুস্থ হয়তো তার স্ত্রী হবে না তবুও তিনি তার সেবা করে সাধ মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তার হাসির মধ্যে এই পৃথিবীর স্বার্থপরতাই ফুটে উঠেছে।

৬. 'সত্যি কথাই বলতে হল'-কোন সত্যি কোন প্রেক্ষাপটে বলতে হয়েছিল ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : লেখক এক দাতব্য চিকিৎসালয়ে ডাক্তার হয়ে আসেন আগ্রার কাছে। তার কাছে আসে এক বৃদ্ধ মুসলমান। পিঠে ছিল একটা ঝুড়ি তাতে ছিল তার ক্যাংক্রাম অরিস-এ আক্রান্ত স্ত্রী। সে উর্দু ভাষায় বলল-নিজের বেগমকে পিঠে করে বয়ে এনেছে সে লেখককে দেখাবে বলে। লেখক দেখলেন তার স্ত্রীর মুখের আধখানা পচে গেছে। ডান দিকের গালটা নেই। দাঁতগুলো বীভৎসভাবে বেরিয়ে পড়েছে। দুগন্ধে কাছে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। ইনডোরে জায়গা না থাকার জন্য হাসপাতালে বারান্দাতে থাকতে বললেন তাদের। কিন্তু এতই দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল কম্পাউন্ডার ড্রেসার এমনকি মেথর পর্যন্ত কাছে যেতে রাজি হলনা। ফলে তাদেরকে সেখান থেকেও বিতাড়িত করতে হল। তাদের ঠাঁই হল হাসপাতালের সামনে বড়ো গাছের তলায়। বৃদ্ধ সেখানেই দিনরাত তার স্ত্রীর সেবা করে চলেছে।

একদিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। লেখক কল থেকে ফিরছেন, হঠাৎ চোখে পড়ল বৃদ্ধ জলে দাঁড়িয়ে ভিজছে। একটা চাদরের দুটো খুঁট গাছের ডালে বেঁধেছে অন্য দুটো খুঁট বৃদ্ধ নিজে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু চাদরে জল আটকাচ্ছে না, সেই সামান্য চাদরের আচ্ছাদনে বেগম আপাদমস্তক ভিজে গেছে। থরথর করে কাঁপছে। আধখানা মুখে বীভৎস হাসি হাসছে। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। লেখক বললেন এখন হাসপাতালের বারান্দাতেই চল। বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করে তার স্ত্রীর বাঁচবার আশা আছে কিনা, তখন লেখক সত্যি কথাটাই বলেছিলেন যে তার স্ত্রীর বাঁচবার আশা নেই।

৭. "বেগমের কবর গাঁথছি হুজুর।"-এই কবর গাঁথার মধ্যে দিয়ে বক্তার মানসিকতা আলোচনা করো।

উত্তর: লেখকের কাছে এক বৃদ্ধ আসে ক্যাংক্রাম্ অরিস-এ আক্রান্ত তার স্ত্রীকে নিয়ে। মুখের আধখানা পচে গেছে। ডানদিকের গালটা নেই। দুর্গন্ধে কাছে দাঁড়ানো যায় না। ফলে তাদের স্থান হয়েছিল হাসপাতালের বাইরে বড়ো গাছতলায়। একদিন বৃষ্টিতে লেখক দেখলেন সেই বৃদ্ধ ও তার স্ত্রী ভিজছেন। তাদেরকে লেখক হাসপাতালের বারন্দায় যেতে বলেন। তখন বৃদ্ধ লেখককে জিজ্ঞাসা করে তার স্ত্রীর বাঁচবার কোনো আশা আছে কিনা। তখন লেখক জানান তার স্ত্রীর বাঁচবার আশা নেই। পরদিন লেখক দেখলেন গাছতলায় আর তারা নেই।

তার কয়েকদিন পর লেখক কল থেকে ফিরছেন। তখন তিনি সেই বৃদ্ধকে দেখলেন। ঝাঁ ঝাঁ করছে দুপুরের রোদ। বুড়ো কী যেন করছে বসে বসে। কাছে গিয়ে তিনি দেখলেন বুড়ো কতকগুলো ভাঙা ইট আর কাদা দিয়ে কী যেন গাঁথছে। বুড়োকে জিজ্ঞাসা করায় সে উত্তর দিল বেগমের কবর গাঁথছি। এই কবর গাঁথার মধ্যে লেখক বৃদ্ধের অন্তরের টানকে তুলে ধরেছেন। কথায় কথায় লেখক জানতে পারলেন বৃদ্ধ তাজমহলের আশেপাশে ভিক্ষা করেন এবং তার নাম ফকির শা-জাহান। এই কথোপকথনে উঠে এসেছে গল্পের Climax। প্রিয় পত্নী বেগমের শেষকৃত্য সুসম্পন্ন করতে ব্যস্ত

ফকির শা-জাহান। 'প্রচণ্ড ঝাঁ ঝাঁ রৌদ্রের দুপুরে একান্ত নিভৃতে কতকগুলি ভাঙা ইট আর কাদা নিয়ে বুড়ো কী যেন গাঁথছে'। গল্পের শেষ অংশে কোনো ব্যঞ্জনা তুলে ধরা রা হয়নি। কোনো ভেদাভেদ তুলে ধরা হয়নি। তুলে ধরা হয়েছে এক অন্তরের ভালোবাসা, দায়িত্ব, কর্তব্য। এখানে তুলে ধরা হয়েছে এই পৃথিবীর প্রতিটি নারী পুরুষ নির্বিশেষে তাজ জীবনে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতনতা।

৮.'তাজমহল' গল্প অবলম্বনে বৃদ্ধ ফকির শা-জাহান চরিত্রের পরিচয় দাও।  

উত্তর : বনফুলের 'তাজমহল' গল্পের বিশিষ্ট চরিত্র বৃদ্ধ ফকির শা-জাহান। গল্পে পেনে বৃদ্ধের চরিত্র বৈশিষ্ট্যগুলি অনবদ্যভাবে ফুটে উঠেছে।

একদিন আউটডোর সেরে বারান্দা থেকে নামবার সময় লেখক দেখেন,-"এক বৃদ্ধ মুসলমান গেট দিয়ে ঢুকল। পিঠে প্রকান্ড একটা ঝুড়ি বাঁধা।" ঝুড়ির ভারে বৃদ্ধের মেরুদন্ডটা বেঁকে গেছে। ঝুড়ির ভেতরে ছিল তার বেগম। বৃদ্ধের চেহারাটা অনেকটা বাউলের মতো, আলখাল্লা পরা। ধপ ধপে সাদা দাড়ি তার।

বৃদ্ধটি গরিব। । সে তাঁর স্ত্রীকে এনেছে লেখককে দেখাবার জন্য। 'ফি' দেবার সামর্থ্য নেই। তাই লেখককে মেহেরবানি করতে বলে।

বৃদ্ধের বেগমের মরণ রোগ। 'কাংক্রাম্ আরিস!' মুখের আধখানা পচে গেছে। ডানদিকের গালটা নেই। দাঁতগুলো বীভৎস ভাবে বেরিয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। কম্পাউন্ডার, ড্রেসার, এমন কি মেথর পর্যন্ত কাছে যেতে রাজী হয়নি। বৃদ্ধ কিন্তু নির্বিকারভাবে বেগমের সেবা করে চলে। এতে বেগমের প্রতি বৃদ্ধের ভালোবাসা যে কত গভীর তার প্রমাণ মেলে।

সকলের আপত্তিতে হাসপাতালের বারান্দা থেকে বেগমের ঠাঁই হয় হাসপাতাল উত্ত- চত্বরের একটা বড় গাছের তলাতে। এক মুষলধারে বৃষ্টির দিন লেখক দেখেন, “চাদরের তলায় রয়েছে বেগম সাহেব। নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে ভিজছে লোকটা!" উত্তন এতে পত্নী প্রেমের সাথে সাথে বৃদ্ধের, কর্তব্যবোধেরও প্রকাশ ঘটেছে।

এরপর একসময় লেখক দেখলেন গাছতলা ফাঁকা, কেউ নেই। কয়েক দিন পর লেখক বৃদ্ধকে তাঁর বেগমের কবর গাঁথতে দেখেন। সেইসময়ও বৃদ্ধ লেখককে 'সেলাম' করতে ভোলেন না। এতে বৃদ্ধের শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ প্রকাশ পেয়েছে। 

লেখক বৃদ্ধের ভিক্ষাবৃত্তি জীবনের পরিচয় পেয়ে জানতে পারেন বৃদ্ধের নাম, 'ফকির শা-জাহান।' আর বৃদ্ধের এই নাম উচ্চারণই গল্পটিতে অনব্যদ ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে দিয়েছে। যাতে ইতিহাসের শাজাহান ও মমতাজ এবং জনৈক বৃদ্ধ ফকির শা-জাহান ও তাঁর বেগম মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

৯. 'তাজমহল' গল্পে গল্পকথকের প্রথম তাজমহল দর্শনের অভিজ্ঞতার কাহিনি বর্ণনা কর।

উত্তর: বনফুলের 'তাজমহল' গল্পটি উত্তম পুরুষে ব্যক্ত হয়েছে। গল্পকথক পেশায় ডাক্তার। আগ্রার কাছে তার চিকিৎসালয়। তাই তার গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সহযাত্রীকে নিয়ে আগ্রার উদ্দেশ্যে ট্রেনে রওনা দেন। এর পূর্বে গল্পকথক কখন আগ্রা আসেননি। তাই সম্রাট শাজাহানের তৈরী প্রেমের স্মৃতিসৌধের প্রতি তার একাট বিশেষ টান ছিল। যে কারণে তাদের ট্রেন আগ্রা স্টেশনে পৌঁছানোর আগে ট্রেন থেকে তাজমহল দেখা যায়, তা দেখে তার সহযাত্রী যখন বলে, 'ওই যে তাজমহল দেখা যাচ্ছে।' তখন গল্পকথক তাড়াতাড়ি ট্রেনের জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে তাজমহল দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু দূর থেকে দিনের আলোয় তাজমহলকে দেখে তিনি নিরুৎসাহ হয়ে পড়েন। কারণ তার কাছে মনে হয়েছে চুনকাম করা সাধারণ একটা মসজিদ মাত্র। তবু নির্মিশেষে চেয়ে দেখেছেন। এই ভাবেই গল্পকথক তার প্রথম তাজমহল দর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।

১০. 'আর একটা কবরও ছিল........হয়তো এখনো আছে'-কার লেখা কোন গল্পের অংশ? এখানে কার কবরের কথা বলা হয়েছে? 'হয়তো এখানো আছে' একথা বলার কারণ কী?

উত্তর: 👉বনফুলের লেখা 'তাজমহল' গল্পের অংশ।

👉গল্পকথক প্রথম যখন আগ্রা গিয়েছিল তখন ট্রেন থেকে তাজমহলকে দেখে তার মনে হয়েছিল চুনকাম করা সাধারণ একটি মসজিদ। তবু তিনি স্বীকার করেছিলেন প্রেমের অমর সৌধ তাজমহল। মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্পর্কে কথক জানে, তাই মমতাজের স্মৃতি সৌধের পাশে সম্রাট শাজাহানকেও কবরস্থ করা হয়েছিল সে কথা তার জানা। এখানে শাজাহানের কবরের কথা বলা হয়েছে।

👉ইতিহাস স্থবির, কালের নিয়মে অনেক কিছু বিলুপ্ত হয়ে যায়। কথক যখন তাজমহল দর্শনে গেছেন তা কয়েক শতক পর। তাই সেখানে ইতিহাসের সকল উপাদান অবশিষ্ট থাকবে তা বলা যায় না। তাই মমতাজ ও শাজাহানের বড় পুত্র দারাকেও পিতা-মাতার পাশের কবর দেওয়া হয়েছিল। সেকথা গল্প কথক ইতিহাস থেকে জানেন। কিন্তু বর্তমানে সে কবর আছে কিনা তার জানা নেই সে কারণে তিনি 'হয়তো এখনো আছে' বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

১১. 'তাজমহল' গল্পে শা-জাহানের স্ত্রীর কী হয়েছিল? তাঁর শেষ পরিণতি কী হয়েছিল?

উত্তর: 'তাজমহল' গল্পে আমরা দু'জন শা-জাহানের সঙ্গে পরিচিত হই। একজন ইতিহাসের চরিত্র মোগল সম্রাট শা-জাহান। অপরজন গল্পকারের দেখা আগ্রার পথের ভিখারি শা-জাহান। এখানে দ্বিতীয় শা-জাহানের কথাই বলা হয়েছে। যার স্ত্রী 'ক্যাংক্রাম অরিস' রোগে আক্রান্ত ছিল।

ধূসর ইতিহাসের নায়ক শা-জাহান প্রেমের প্রতীক। লেখকের দেখা শা-জাহান চরিত্রের মধ্যেও সেই বৈশিষ্ট্যটিই লক্ষণীয়। তাই সে তার ক্যাংক্রাম্ অরিস রোগে আক্রান্ত মুখের আধখানা পচে যাওয়া স্ত্রীকে ঝুড়িতে চাপিয়ে পিঠে করে ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে আসে তার চিকিৎসার জন্য। ডাক্তারবাবুও তার স্ত্রীর যথাবিধি চিকিৎসা করে কিন্তু যেদিন সে ডাক্তারবাবুর কাছে শোনে তার স্ত্রী আর বাঁচবে না তারপর সে হাসপাতালের নিকটের বটতলা থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। কয়েকদিন পর ডাক্তারবাবু যখন কল থেকে ফিরছেন তখন দেখেন সে স্ত্রীর জন্য কবর খুঁড়েছে, তার স্ত্রী মারা গেছে।

১২. 'সেই দিন সন্ধার পর দ্বিতীয়বার দর্শন করতে গেলাম তাজমহল'-বক্তা কে? কোন গল্পের অংশ? দ্বিতীয়বার তাজমহল দর্শনের অভিজ্ঞতা নিজের ভাষায় লেখ।

উত্তর: 👉উক্ত অংশের বক্তা হল তাজমহল গল্পের গল্পকথক।

👉এটি বনফুলের 'তাজমহল' গল্পের অংশ।

গল্পকথক পেশায় ডাক্তার হলেও যেমন ইতিহাস সচেতন, তেমনি সৌন্দর্যপ্রিয় ও দার্শনিক মানুষ। দূর থেকে দিনের বেলায় তাজমহলকে প্রথম দেখে তার মনে হয়েছিল একটি চুনকাম করা মসজিদ মাত্র। তবু সেটি তাজমহল এই সত্যটি স্বীকার করে নিয়েছিল। তাই পূর্ণিমার পরের দিন সন্ধ্যার গোড়ায় দ্বিতীয় বার তাজমহল দর্শন করতে যায়। সন্ধ্যা রাতে তাজমহল দেখে তার যে অনুভূতি হয়েছে-গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই তার কানে এসেছে অস্ফুট মর্মধ্বনি। যেখানে শত ঐশ্বর্যে চাপা পড়ে গেছে হৃদয়ের কথা। সে কারণে তা যেন তার কাছে মনে হয়েছে চাপা কান্না। তারপর ধীরে ধীরে যত ভিতরে অগ্রসর হয়েছেন তখন তাজমহলের মিনার, গম্বুজ সবকিছুই স্পষ্ট হয়েছে। সেইসঙ্গে চাঁদের আলোয় আবিষ্কার করেছেন, 'জ্যোৎস্নার স্বচ্ছ ওড়নায় অঙ্গ ঢেকে রাজ-রাজেশ্বরী শা-জাহান স্বয়ং।' এবং গল্পকথক মুগ্ধ দৃষ্টিতে নির্বাক হয়ে চেয়ে থেকেছেন।

✍️প্রশ্নমান-১০:

১.'তাজমহল' গল্পে মোগল সম্রাট শাজাহান ও গল্পের প্রধান চরিত্র বৃদ্ধ ফকির শাজাহান যেন একসূত্রে গাঁথা-ব্যাখ্যা কর।

অথবা,বনফুলের লেখা 'তাজমহল' গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

অথবা, 'তাজমহল' গল্পের বিষয়বস্তু লেখো।

উত্তর: কাহিনী, ঘটনা ও চরিত্র রূপায়ণের দিক থেকে বনফুলের 'তাহমহল' গল্পটি বিস্তৃত পরিসরের নয়। খুব সংহত শিল্পবিন্যাস এ গল্পের বৈশিষ্ট্য। বনফুল তাঁর অন্যান্য গল্পের মতো এ গল্পেও অত্যন্ত সচেতনভাবে মিতবাক। মূল চরিত্র মাত্র দু'টি-গল্পকথক ও বৃদ্ধ এক মুসলমান ফকির। এ গল্পের শেষ দু'টি বাক্য না পড়লে গল্পের তাৎপর্য ধরা পড়েনা। অদ্ভুত চমকের ভেতর দিয়ে সেখানে প্রকাশিত হয় এক গভীর জীবনসত্য, ঘটে যায় ইতিহাসের এক অদ্ভূত পুনরাবৃত্তি। গল্পে তৃতীয় একটি চরিত্র আছে যদিও সেই চরিত্রের কোন সক্রিয় ভূমিকা নেই। তবুও চরিত্রটি বৃদ্ধ মুসলমান ফকিরের গভীর পত্নীপ্রেমের মাধ্যম হিসাবে গল্পকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

'তাজমহল' গল্পের দুটি অংশ। প্রথম অংশে গল্পের কথক চরিত্রের প্রথম আগ্রা আগমন আগ্রার বিখ্যাত তাজমহল দর্শনের জন্য। আর দ্বিতীয় অংশে দেখা যায় তিনি আগ্রার একজন অস্থায়ী বাসিন্দা। এখন তিনি এখানকার এক দাতব্য চিকিৎসালয়ের ডাক্তার। প্রথমবার তাজমহল দর্শনে এসে তিনি যখন ট্রেনের জানালা দিয়ে প্রথম তাজমহলকে দেখেন তখন তাঁর তাজমহলকে মনে হয়েছিল চুনকাম করা একটা সাধারণ মসজিদ। কিন্তু এবারও তিনি যখন দ্বিতীয় বার তাজমহলকে দর্শন করলেন তখন তাঁর কাছে তাজমহল ধরা দিল ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে। তাঁর বিস্মিত চেতনাপটে সমস্ত মূর্ত হয়ে উঠল। "জ্যোৎস্নার স্বচ্ছ ওড়নায় অঙ্গ ঢেকে রাজ-রাজেশ্বরী শাজাহান মহিষী মমতাজের স্বপ্নই অভ্যর্থনা করলে যেন" তাকে এসে। তিনি “মগ্ন দৃষ্টিতে নির্বাক হয়ে চেয়ে” রইলেন।

আর গল্পের দ্বিতীয়াংশে তিনি এই তাজমহলের প্রতি আকর্ষণ হারিয়েছেন। তাজমহলকে তিনি এতবার দেখেছেন যে "আর চোখে লাগে না। চোখে পড়েই না।” এখানেই আসে গল্পের আসল মোড়। গতানুগতিক জীবনযাপনের মধ্যে হঠাৎ একদিন তাকে একজন মেওয়াওয়ালা মনে হলেও পরে তিনি বুঝতে পারেন তিনি তার স্ত্রীকে আউটডোরে তাঁর সাক্ষাৎ হয় এক বৃদ্ধ মুসলমান ফকিরের সঙ্গে। প্রথম দেখে তাঁর এখানে এনেছেন চিকিৎসা করানোর জন্য। তার স্ত্রীর হয়েছে ক্যাংক্রাম অরিস। মুখের অর্ধেক পচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কেউ সামনে যেতে চাইছে না। বৃদ্ধ নির্বিকার। দিনরাত সে সেবা করে চলেছে তার স্ত্রীকে। সকলের আপতিতে বারান্দা থেকে সরাতে হলো। হাসপাতালের কাছে একটা বড় গাছের তলার তারা আশ্রয় নিল। মুসলধারে বৃষ্টির মধ্যেও স্ত্রীর মাথায় চাদর ধরে দাঁড়িয়ে সে নিজে ভিজে স্ত্রীকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। যখন সে ডাক্তারের থেকে জানতে পারে স্ত্রীর বাঁচার কোন আশা নেই, পরদিন থেকে তাদের আর দেখা যায়না। গল্পের একেবারে শেষে গল্পকথক যখন 'কল থেকে' ফিরছেন তখন দেখেন সেই বৃদ্ধ মুসলিম চরিত্রটি "কতকগুলো ভাঙ্গা ইট আর কাদা নিয়ে কি যেন গাঁথছে।" তিনি বৃদ্ধের জানতে পারেন তার বেগম মারা গেছে তাই সে বেগমের কবর গাঁথছে। পূর্বে ডাক্তার তার নাম জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন বোধ না করলেও এবার তার নাম জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় তার নাম 'ফকির শা-জাহান'। এই কথায় ডাক্তার নির্বাক হয়ে গেলেন।

গল্পের এই দুটি অংশ। প্রথম অংশে ইতিহাস অরা ইতিহাস খ্যাত চরিত্রেরা গল্পের বক্তার মনে প্রভাব ফেলেছে আর দ্বিতীয়াংশে ইতিহাসের ভিত্তিভূমিতে দাঁড়িয়ে তিনি আর এক ইতিহাসকে দর্শন করেছেন। গভীর পত্নীপ্রেমে বেগম মমতাজের ভালোবাসার স্মারক হিসাবে সম্রাট শাহ্-জাহান তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন। আর এই আগ্রাতেই গরিব এক বৃদ্ধ মুসলিম তার রোগগ্রস্ত স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার কবরের উপর দেওয়াল গাঁথছেন। ইতিহাসের এহেন পূর্নদর্শন ঘটল লেখকের। বৃদ্ধ চরিত্রটি গল্পে একজন সাধারণ চরিত্র হয়েও যেন ইতিহাসের সঙ্গে মিলেছে তার বেগমের প্রতি তার ভালোবাসার যোগ সূত্রে। চরিত্রটির মধ্যে অন্য কোন বিশেষত্ব পাওয়া না গেলেও চরিত্রটি গল্পে কেবলমাত্র বেঁচে রইল পত্নীর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন রূপেই।

গল্পের শা-জাহান চরিত্রটির বিশেষণে দেখা যায় রাজঐশ্বর্যের মধ্যে থেকে সম্রাট শা-জাহান যেমন তাঁর পত্নী মমতাজের প্রতি ভালোবাসার সম্মান স্বরূপ তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন ফকির শা-জাহানও সেরূপ একজন ভিখারী ব্যক্তি হয়েও স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসার শ্রদ্ধা স্বরূপ কবর গেঁথেছেন। ইতিহাসের সম্রাট শাহজাহানকে এই বাস্তবের শা-জাহান কিছুটা হলেও ছাড়িয়ে গেছে। কারণ তিনি ঐশ্বর্যের মধ্যে প্রেমকে দেখেননি, দেখেছেন মাটির কাছাকাছি দাঁড়িয়ে। তাই তার পত্নীর তিনি কবর গেঁথেছেন মাটির প্রাঙ্গণে। তাই সমালোচক লিখেছেন, "জীবনের ও প্রাণ প্রকাশের রূঢ় বাস্তবধর্মে এই প্রেম ব্যাঙ্গার্থে কোথাও সৌধ তাজমহলের থেকেও নিত্য ধ্রুবতারা। আর গল্পের নায়ক চরিত্রটি এই অর্থে একজন পরাজিত সম্রাট।" ইতিহাসের শা-জাহান হেরে গেছিলেন তাঁর আত্মীয়ের কাছে কিন্তু ফকির শা-জাহান হার মেনেছেন এক দুরারোগ্য ব্যাধির কাছে। যা সে সারাতে পারেনি। তাই সে 'একজন পরাজিত সম্রাট'।