📚বি.এ মেজর ও মাইনর বাংলা:1st Semester:একক-১: সাহিত্যের সংরূপ ও গঠন সংক্রান্ত প্রাথমিক ধারণা(সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য): ছোটোগল্প 📚

✍️প্রশ্নমান-২:

প্রশ্ন: ছোটোগল্প কাকে বলে?

উত্তর: ছোটোগল্প হল লেখকের মননসঞ্জাত এমন এক পদ্যশৈলী যা স্বল্প আয়তনের মধ্যে একটি মাত্র ঘটনা ও কয়েকটি চরিত্রের আশ্রয়ে জীবনের অখণ্ড রূপকে উদ্ভাসিত করে জীবনে সত্যের প্রতিষ্ঠা ঘটায়।

প্রশ্ন: ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর: (ক) খুব স্বল্প পরিসরে কয়েকটি চরিত্রের আশ্রয়ে ছোটোগল্পের কাহিনী পরিবেশিত হয়।

(খ) ছোটোগল্পের কাহিনী একমুখী হয়ে থাকে।

(গ) ছোটোগল্পে ব্যঞ্জনাধর্মিতার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়।

(ঘ) রবীন্দ্রনাথের মতে ছোটোগল্পের শেষে অতৃপ্তির ভাব থাকে।

প্রশ্ন: ছোটোগল্প ও উপন্যাসের দুটি পার্থক্য লেখ।

উত্তর: (ক) ছোটোগল্পে ফুটে ওঠে জীবনের এক সংক্ষিপ্ত খণ্ডচিত্র। অপরদিকে উপন্যাসে থাকে জীবনের সুসংবদ্ধ শিল্পিত সামগ্রিক চিত্র।

(খ) ছোটোগল্পে দু-একটি চরিত্রের প্রাধান্য থাকে। উপন্যাসে বহুবিধ বিচিত্রধর্মী চরিত্রের প্রাধান্য থাকে।

প্রশ্ন: ইংরেজী সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটো গল্পকার কে?

উত্তর: এডগার অ্যালান পো।

প্রশ্ন: বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ও শ্রেষ্ঠ ছোটো গল্পকার কে?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

প্রশ্ন: রবীন্দ্রনাথের প্রথম ও শেষ গল্পের নাম কী?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের প্রথম গল্প 'ভিখারিনি' এবং শেষ 'মুসলমানীর গল্প'।

প্রশ্ন: বিভিন্ন ধারার ছোটোগল্পের উদাহরণ দাও।

উত্তর: (ক) সামাজিক-রবীন্দ্রনাথের 'দেনাপাওনা', সমরেশ বসুর 'আদাব'।

(খ) প্রেম বিষয়ক-রবীন্দ্রনাথের 'নষ্টনীড়', 'শেষের রাত্রি', প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'ভগ্নশেষ' প্রভৃতি।

(গ) অতিপ্রাকৃত-রবীন্দ্রনাথের 'ক্ষুধিত পাষাণ', 'মণিহারা', শরদিন্দু

বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'মর্কট' প্রভৃতি।

(ঘ) মনুষ্যেতর-শরৎচন্দ্রের 'মহেশ'। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কালাপাহাড়' প্রভৃতি।

(ঙ) প্রকৃতিকেন্দ্রিক-রবীন্দ্রনাথের 'অতিথি'।

(চ) মনস্তাত্ত্বিক-রবীন্দ্রনাথের 'পোস্টমাস্টার', 'শাস্তি', শরৎচন্দ্রের 'অভাগীর স্বর্গ' প্রভৃতি।

এছাড়া একাধিক শ্রেণী বিভাগ করা যেতে পারে।

প্রশ্ন: প্রকৃতিগত দিক থেকে ছোটোগল্পের বিভাগগুলি লেখ।

উত্তর: প্রকৃতিগত দিক থেকে ছোটোগল্পকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে-

যথা: (১) ঘটনামুখ্য গল্প বা Story of incident |

(২) চরিত্রমুখ্য গল্প বা Story of character |

(৩) প্রতীতি মুখ্য গল্প বা Story of impression |

প্রশ্ন: রবীন্দ্রনাথের কোন্ কবিতায় ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্য উল্লিখিত হয়েছে?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের 'সোনার তরী' কাব্যের 'বর্ষাযাপন' কবিতায় ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্য উল্লিখিত হয়েছে।

প্রশ্ন: ছোটোগল্পের বৃত্তগঠন কত রকমের হয়ে থাকে এবং কী কী?

উত্তর: ছোটোগল্পের বৃত্তগঠন তিন রকমের হয়ে থাকে।

যথা: (ক) সোপানারোহ বৃত্ত বা Stair step construction |

(খ) চকিতোন্নত বৃত্ত বা Rocket Construction |

(গ) ঘূর্ণরেখ বৃত্ত বা Circular construction |

প্রশ্ন: বিভিন্ন প্রকার বৃত্তের উদাহরণ দাও।

উত্তর: সোপানারোহ বৃত্ত-রবীন্দ্রনাথের 'কাবুলিওয়ালা'।

চকিতোন্নত বৃত্ত-রবীন্দ্রনাথের 'রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা'।

ঘূর্ণরেখ বৃত্ত-রবীন্দ্রনাথের 'নিশীথে'।

✍️প্রশ্নমান-৫:

প্রশ্ন: ছোটোগল্পের লক্ষণ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তর: ছোটোগল্পকে বলা হয় 'Peculiar Product of nineteenth century'। এখানে আছে জীবনের খণ্ডিত মুহূর্তের ছবি। এর লক্ষণগুলি নিম্নরূপ:

(১) ছোটোগল্পে একটিমাত্র কাহিনীই বিবৃত হয়। পার্শ্বকাহিনী প্রায় থাকে না বললেই চলে।

(২) ছোটোগল্পের কাহিনী হয় সংক্ষিপ্ত। তবে আয়তনের সংক্ষিপ্ততা ছোটোগল্পের অন্যতম লক্ষণ নয়, কেননা, রবীন্দ্রনাথের 'নষ্টনীড়', শরৎচন্দ্রের 'পরেশ' আয়তনে বড়ো হয়েও ছোটোগল্প কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রের 'যুগলাঙ্গুরীয়' আয়তনে ছোটো হয়েও উপন্যাস।

(৩) ছোটোগল্পে একটিমাত্র মহামুহূর্ত বা চরমক্ষণ থাকে। কাহিনী ধাপে ধাপে দ্রুতগতিতে সরল রৈখিক পথে সেই চরণ ক্ষণে (Climax) উপনীত হয়। গল্পের প্রতিটি মুহূর্ত রচিত হয় সেই Climax-এ দ্রুত পৌঁছানোর জন্যে।

(৪) ছোটোগল্পের ভাষা হয় কাব্যময়, তার গল্পের শেষে থাকে ব্যঞ্জনা।

(৫) ছোটোগল্পের রচনাশৈলী হয় ঘনপিনদ্ধ ও বেশ আঁটোসাঁটো। অনেক বলার লোভ সংবরণ করতে হয় তবে ছোটোগল্প হয়।

(৬) ছোটোগল্পে চরিত্র সংখ্যা কম থাকে। পার্শ্বচরিত্র থাকে না বললেই চলে।

প্রশ্ন: উপন্যাস ও ছোটোগল্পের প্রভেদ উল্লেখ কর।

উত্তর: আধুনিক গদ্যাসহিত্যের দুই বলিষ্ঠ শাখা হল উপন্যাস ও ছোটোগল্প। কিন্তু গল্পরসের সম্বন্ধের দিকে তাকিয়ে কেউ কেউ এই দুটির মধ্যে অগ্রজ-অনুজ সম্পর্ক আবিষ্কারের চেষ্টা করে বলেছেন-ছোটোগল্পের বিস্তৃতরূপ উপন্যাসে কিংবা উপন্যাসের সক্ষিপ্ত সংস্করণ ছোটোগল্প। এই উভয় কথাশিল্পের পার্থক্য সূত্রাকারে সাজিয়ে দেওয়া হল-

(১) উপন্যাসের বিষয়বস্তু বিশাল প্রেক্ষাপটে বিধৃত হয়, মানবজীবনের সমগ্র বা এক বৃহৎ অংশকে তুলে ধরা হয় এতে।

কিন্তু ছোটোগল্পে মানবজীবনের একটিমাত্র কাহিনী বা ঘটনাকে তুলে ধরা হয়।

(২) উপন্যাসে মূল কাহিনীকে পুষ্ট করার জন্য থাকে এক বা একাধিক উপকাহিনী। ছোটোগল্পে একটিমাত্র কাহিনী থাকে।

(৩) উপন্যাসের কাহিনী নদীর মত বাঁক নিতে নিতে সম্মুখে এগিয়ে চলে-ফলেতা বৈচিত্র্যময়তার স্বাদ দেয়।

কিন্তু ছোটোগল্প জ্যা-মুক্ত তীরের মত সরলরৈখিক পথে নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে ছুঁতে চায়।

(৪) উপন্যাসের কাঠামো কিছুটা শিথিল। এলায়িত ভঙ্গী উপন্যাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ছোটোগল্পের কাঠামো হয় দৃঢ় সংবদ্ধ।

(৫) যে কোনো চরিত্রকেই উপন্যাসের নায়ক করা যায় না, কতকগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্য একটি চরিত্রকে নায়ক পদবাক্য করে তোলে। ছোটোগল্পে এ সমস্যা নেই।

✍️প্রশ্নমান-১০:

প্রশ্ন: ছোটোগল্পের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

উত্তর: সংজ্ঞা: সাহিত্যের রূপরীতি আলোচনায় সংজ্ঞা নির্ণয় ও তার বিচার অত্যন্ত দূরূহ কাজ। ছোটোগল্পের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। তবুও ছোটোগল্পের লক্ষণ বৈশিষ্ট্যের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে ছোটোগল্পের সংজ্ঞা দেবার চেষ্টা করেছেন। নিম্নে এবিষয়ে সমালোচকদের কয়েকটি অভিমত তুলে ধরা হল-

সমালোচকদের অভিমত:

ডঃ উজ্জ্বল কুমার মজুমদার তাঁর সাহিত্য সমালোচনার 'রূপরীতি' গ্রন্থে বলেছেন- 

"এক"-"ছোটোগল্প হল এমন এক কাহিনী যা কোন ঘটনা, পরিবেশ বা মানসিকতাকে নির্ভর করে একটি ভাবগত পরিবেশ ঐক্যের প্রতিষ্ঠা করে এবং সেই প্রতিষ্ঠিত ভাবগত ঐক্যের গভীর প্রতীতি ক্রমশ নাটকীয় শীর্ষদেশ স্পর্শ করে, পাঠকের মনোভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে।"

"দুই"-হীরেন চট্টোপাধ্যায় ছোটোগল্পের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন-

"ছোটোগল্প লেখকের মানস প্রতীতি জাত একটি সংহত গদ্য কাহিনী, যার একতম বক্তব্য কোনো ঘটনা, চরিত্র, পরিবেশ অবলম্বন করে এক সংকটের মধ্য দিয়ে সমগ্রতা লাভ করে।"

"তিন"-এতদসত্বেও রবীন্দ্রনাথ ছোটোগল্পের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে 'সোনারতরী' কাব্যগ্রন্থের বর্ষাযাপন কবিতাতে যা বলেছেন, সেটি মনে হয় সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিমত-

"ছোট প্রাণ ছোটো ব্যথা         ছোটো ছোটো দুঃখ কথা

                       নিতান্তই সহজ সরল।

সহস্র বিস্মৃতিরাশি                     প্রত্যহ যেতেছে ভাসি

                     তারি দু-চারটি অশ্রুজল।

নাহি বর্ণনার ছটা                             ঘটনার ঘনঘটা,

                     নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ।।

অন্তরে অতৃপ্তি রবে                       সাঙ্গ করি মনে হবে

                     শেষ হয়ে না হইল শেষ।"

-সর্বোপরি ছোটোগল্পের একখানি সর্বজনগ্রাহী সংজ্ঞা নিরূপণ করে বলা যায়-একটিমাত্র দৃশ্যপটে স্থাপিত কোনো ঘটনার সংক্ষিপ্ত তীব্র বিন্যাস, ঘটনা সূত্রের আকস্মিক চরিত্রের চকিত উন্মোচন, কোনো একটি গূঢ় অনুভবের ওপর সন্ধানী আলোকপাত ক্রান্তিলগ্নে নাটকীয়তার চমক যে গদ্য কাহিনিতে লক্ষিত হয়, তাকে ছোটোগল্প বলে।

অথবা,

আয়তনের দিক থেকে সংক্ষিপ্ত, ভাবের দিক থেকে অখণ্ড, অনুভূতির দিক থেকে বৈচিত্র্য সম্পাদনকারী গদ্যে রচিত কাহিনীই হল ছোটোগল্প।

ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্য:

ছোটোগল্পের লক্ষণ তথা বৈশিষ্ট্যগুলি এভাবে সূত্রাকারে সাজানো যেতে পারে।

"এক"-ছোটোগল্প হবে সমহত, ক্ষুদ্রায়তন। তবে কতখানি ছোটো হবে, তার অবয়ব কোন ধরনের হবে তা নির্ভর করে রচয়িতার মানসিকতার ওপর।

"দুই"-ঘটনা ও ভাবের তীক্ষ্ণ ও তীর্যক একমুখীনতা ছোটোগল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

"তিন"-ছোটোগল্প ক্ষুদ্রাকৃতি উপন্যাস বা রোমান্স নয়; তাই সাহিত্য রূপে ঘটনা ও ভাবের পল্লবিত বিস্তার ও ব্যাখ্যামূলক বর্ণনা অপরিহার্য নয়।

"চার"-ছোটোগল্প জীবনের সামগ্রিক রূপের দর্পণ নয়; অখণ্ড রূপই এর অবলম্বন।

"পাঁচ"-ছোটোগল্পের সুসংহত সামগ্রিকতা নাট্যধর্মী।

"ছয়"-ছোটোগল্প এমন এক জায়গায় শুরু হয় এবং এমন এক জায়গায় শেষ হয় যে, পাঠকের অন্তরের গভীর অতৃপ্তি লালিত হয় তাতে। কারণ সমগ্র নদীই নয়, নদীর এক বাঁক থেকে আর এক বাঁক পর্যন্ত অগ্রগমনের ইতিহাস বর্ণিত হয় ছোটোগল্পে।

"সাত"-ছোটোগল্পে সংলাপ ব্যবহারে আধিক্য এড়িয়ে চলা হয়।

"আট"-ছোটোগল্প হয় এক চরিত্রকেন্দ্রিক।

"নয়"-আদর্শ ছোটোগল্পে একটি মাত্র মহামুহূর্ত বা Climax থাকে।

"দশ"-ছোটোগল্পের রচনাশৈলী ঘন পিনগ্ধ, আঁটোসাঁটো।

"এগারো"-ছোটোগল্পে অতি কথনের কোনো অবকাশ নেই। ভাষার সংযত ও সচেতন ব্যবহার, সংকেতময়তা ইত্যাদি ছোটোগল্প লেখকের প্রথম পাঠ।

"বারো"-ব্যঞ্জনাধর্মিতা ছোটোগল্পের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

প্রশ্ন: বিষয়বৈচিত্র্যে ছোটোগল্পের শ্রেণীবিভাগ কর।

উত্তর: বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যের কারণে ছোটোগল্পের বিষয় ভিত্তিক শ্রেণীবিভাগ দুরূহ ও বিতর্কিত কাজ তবুও ছোটোগল্পের আলোচকবর্গ মুখ্যত বিষয় ও তৎসহ আবহ আঙ্গিকের নিরিখে শ্রেণী বিভাজনের যে চেষ্টা করেছেন তা লিপিবদ্ধ করা হল-

(ক) প্রেমমূলক: নরনারীর প্রেম, দাম্পত্য, পরকীয়া, তথা অবৈধ প্রেমকে কেন্দ্র করে তাদরে সম্পর্কের বিচিত্র গতি, স্তর ভেদ দ্বিধা-সংশয় বিপর্যয়-উত্তরণ এই শ্রেণীর গল্পের বিষয়। উদাহরণ: রবীন্দ্রনাথের 'সমাপ্তি', প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'ভাস্মশেষ', মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'সর্পিল'।

(খ) সামাজিক: সামাজিক পরিবেশ ও সামাজিক রাজনৈতিক সমস্যা এই জাতীয় গল্পের কাহিনী বৃত্ত ও মূলভাবনার সারবস্তু। উদাহরণ: শত্রুচন্দ্রের 'মহেশ', রবীন্দ্রনাথের 'দেনাপাওনা', সমরেশ বসুর 'আদাব'।

(গ) প্রকৃতি মানস: এই ধরনের গল্পে মানব চরিত্র চিত্রিত হয় প্রকৃতি জগতের প্রেক্ষাপটে। উদাহরণ: রবীন্দ্রনাথের 'অতিথি', বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পুঁইমাচা', মনোজ বসুর 'বনমর্মর'।

(ঘ) অতিপ্রাকৃত: প্রকৃতি তথা বস্তু জগৎকে অতিক্রম করে আমাদের কল্পনাকে শিহরিত করে রেখেছে যে অতি প্রাকৃত রহস্যের জগৎ তারই পটভূমিতে রচিত হয় এ ধরনের গল্পের কাহিনী। উদাহরণ: রবীন্দ্রনাথের 'ক্ষুধিত পাষাণ', 'নিশীথে', অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্তর 'ছায়া', বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'অভিশপ্ত'।

(ঙ) হাস্যরসাত্মক: সামাজিক অসংগতি চরিত্রের নানা আতিশয্য ঘটনার অতিরঞ্জন ইত্যাদির মাধ্যমে হাস্যরস উজাড় করা জাতীয় গল্পের উদ্দেশ্য। উদাহরণ: রাজশেখর বসুর 'চিকিৎসা সংকট', 'বিরিঞ্চিবাবা', সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'প্যান্টের বোতাম', প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ের 'রসময়ীর রসিকতা'।

(চ) উদ্ভট: অসম্ভব বা অবাস্তব কাহিনী অবলম্বনে রচিত ফ্যান্টাসীধর্মী রচনাগুলি। উদাহরণ : কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ভগবতীর পলায়ন', রাজশেখর বসুর 'গগন চটি', সত্যজিৎ রায়ের 'অঙ্কস্যার'।

(ছ) সাংকেতিক বা প্রতীকীধর্মী: এই শ্রেণীর গল্পে আখ্যান ভাগের উপরিতলের পরিবর্তে তার গূঢ় তলের প্রতীকী ব্যঞ্জনায় মুখ্য আবেদন হয়ে ওঠে। উদাহরণ: বিমল করের 'বাঘ', শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'মরু' ও 'সংঘ', রবীন্দ্রনাথের 'তাসের দেশ'।

(জ) ঐতিহাসিক: ঐতিহাসিক ঘটনাকে অবলম্বন করে কিছুটা কল্পনাকে আশ্রয়

করে এই শ্রেণীর গল্পগুলি রচিত হয়। উদাহরণ: রবীন্দ্রনাথের 'দালিয়া', বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'প্রত্নতিত্ত্ব', শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'চন্দন মুর্তি'।

(ঝ) মনস্তাত্ত্বিক: মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব জটিলতা এবং চরিত্রের অন্তর্জগৎ এই শ্রেণীর গল্পে প্রাধান্য পায়। উদাহরণ: শরৎচন্দ্রের 'অভাগীর স্বর্গ', নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যাযের 'টোপ', রবীন্দ্রনাথের 'পোস্টমাস্টার'।

(ঞ) গার্হস্থ্য: মানুষের গার্হস্থ্য ও পারিবারিক জীবনের বহু বিচিত্র সমস্যা, সংঘাত, সম্পর্কের টানা-পোড়েন ইত্যাদি এই শ্রেণীর গল্পের মূলীভূত বিষয়। উদাহরণ: রবীন্দ্রনাথের 'মধ্যবর্তিনী', 'শাস্তি', শরৎচন্দ্রের 'মামলার ফল', অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ছেঁড়া পাজামা'।

বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যের কারণে ছোটোগল্পের বিষয়ভিত্তিক আরো কয়েকটি শ্রেণী আমাদের চোখে পড়ে। যেমন-বিজ্ঞান নির্ভর, মনুষ্যেতর, বাস্তবনিষ্ঠ, গোয়েন্দাগল্প, বিদেশী পটভূমিকাযুক্ত গল্প প্রভৃতি।

                              ...................

                             Presented by

      skacademyallinone.blogspot.com