🌹 একাদশ শ্রেণির ইতিহাস : প্রশ্নের মান-৮: প্রাচীন ভারতে নারী শিক্ষার বর্ণনা দাও।

 

📚প্রাচীন ভারতে নারী শিক্ষার বর্ণনা দাও।

👉উঃ  ভূমিকা: প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায়, বিভিন্ন যুগের সমাজে নারীর উত্থান বা পতন যাই হোক না কেন, প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন যুগে ভারতীয় নারীদের শিক্ষার বিষয়টি পরিমিতভাবে অব্যাহত ছিল। বৈদিক যুগ থেকে ভারতে নারী শিক্ষা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।

                        প্রাচীন ভারতে নারী শিক্ষা: 

[১] ঋগ্বেদিক যুগ: ঋগ্বেদিক যুগে নারী শিক্ষারও যথেষ্ট সুযোগ ছিল। এ যুগে ধর্ম, চরিত্র গঠন, ব্যক্তিত্ব বিকাশ ইত্যাদি ছিল শিক্ষার উদ্দেশ্য। এই যুগে মমতা, ঘেষা, লপামুদ্রা, বিশ্ববারা, বিশাখা প্রভৃতি জ্ঞানী নারীরা পরিচিত। যুগের নারীরাও বেদের অনেক স্তোত্র রচনা করেছেন।

[২] উত্তর-বৈদিক যুগ: সামগ্রিকভাবে, পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর মর্যাদা হ্রাস পায়, কিন্তু নারী শিক্ষার বিকাশ অব্যাহত ছিল। যুগের প্রতিটি কোণে, মহিলারা উচ্চ শিক্ষার অগ্রগামী ছিলেন। যে বয়সের নারীরা বিয়ের আগে শিক্ষা চর্চা করেছেন, তাদের নতুন বিয়ে এবং যারা জীবন, ধর্ম ও দর্শনের জন্য অবিবাহিত থেকে গেছেন। সাধনা করে জীবন কাটাতেন, তাদের বলা হতো 'ব্রহ্মবাদিনী'। এই যুগের সবচেয়ে বিখ্যাত মহিলারা হলেন গার্গী, মৈত্রেয়ী এবং অন্যান্য।

[৩] মহাকাব্য ও প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের যুগ: মহাকাব্যের যুগে নারীর মর্যাদা হ্রাস পেলেও সে যুগের অনেক নারী শিক্ষার চর্চা করত। মহাভারতে দ্রৌপদীকে 'পণ্ডিতা' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সমবয়সী অনেক নারী সামরিক শিক্ষা পেতেন। বিনয়পিতকে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সাক্ষরতা অর্জনে বাধা দেওয়া হয়নি। যুগের মহিলারাও সংস্কৃত কবিতা এবং নাটক রচনা করেছিলেন। সন্ন্যাসীদের রচিত সঙ্গীত 'থেরিগাথা' গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। চন্দনা, জয়ন্তী প্রমুখ উচ্চশিক্ষিত মহিলা ছিলেন।

[৪] মৌর্যযুগ: মৌর্যযুগে শিক্ষিত মহিলারাও রাজকীয় কাজে অংশ নিতেন। সমসাময়িক সংস্কৃত সাহিত্যে অনেক মহিলার উল্লেখ রয়েছে যারা লিখতে, পড়তে এবং সঙ্গীত রচনা করতে পারতেন। চিত্রকলায়ও তিনি দক্ষ ছিলেন। 

[৫] মৌর্য-পরবর্তী যুগ: মৌর্য-উত্তর যুগে বহু মহিলা উচ্চ শিক্ষা লাভ করছিলেন। পাণিনি বলেছেন যে এই সময়ে মহিলারা বেদ অধ্যয়ন করত। অধ্যাপককে বোঝাতে কাত্যায়ন তার কার্তিক গ্রন্থে "উপাধ্যায়" বা "উপাধ্যায়ী" শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এই সময়ে অনেক সম্ভ্রান্ত মহিলা বৈদিক স্তোত্র, সংস্কৃত কবিতা এবং নাটক রচনা করেছিলেন।

[৬] গুপ্ত যুগ: সমসাময়িক সাহিত্য থেকে জানা যায় যে গুপ্ত যুগের নারীরা বিভিন্ন সাহিত্য থেকে ইতিহাস ও কাব্যচর্চা করতেন। বাতসায়ান উল্লেখ করেছেন যে যুগের বিজ্ঞান সেই যুগের মহিলাদের বুদ্ধিকে তীক্ষ্ণ করেছিল। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আদর্শ স্ত্রীকে সুশিক্ষিত হতে হবে এবং তাকে পার্থিব আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখতে হবে। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কন্যা প্রভাবতী গুপ্তের মতে, গুপ্ত যুগে কাশ্মীর, উড়িষ্যা এবং অন্ত্রের মহিলারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতেন এবং প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করতেন। তবে সে যুগে সাধারণ দরিদ্র নারীদের শিক্ষার সুযোগ বিশেষ ছিল না।

[৭] হর্ষবর্ধনের সময়কাল: হর্ষবর্ধনের সময়ে চিত্রকলা, নৃত্য, সঙ্গীত প্রভৃতি শিক্ষা প্রচলিত ছিল। হর্ষবর্ধনের বোন রাজ্যশ্রী নিয়মিত সঙ্গীত, নৃত্য এবং অন্যান্য শিল্প চর্চা করতেন, বনভট্ট বলেন। মহিলারা সাধারণত তাদের পিতার বাড়িতে শিক্ষিত ছিল।

  উপসংহার: পরবর্তী যুগে ঋগ্বেদিক যুগে নারীর মর্যাদা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল। নারী সমাজে শিক্ষার ধারা অব্যাহত থাকলেও তারা মর্যাদায় পুরুষের সমান হতে পারেনি। তা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ নারীরা বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের নারীরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল।

                                 .............

         skacademyallinone.blogspot.com